Wednesday 29 December 2010

সরকারের দুর্নীতি ও দলবাজি রুখতে কঠোর আন্দোলন : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দু’টি ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অপরটি দলবাজি। এই দুইয়ের গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে জনগণের মৌলিক অধিকার। মুখ খুলে কেউ সত্য কথাও বলতে পারছেন না। সরকারের দুর্নীতি ও দলবাজি রুখতে নতুন বছরে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, সরকারি দলের লোকজনের অবাধ দুর্নীতির কারণে টিআইবির রিপোর্টে বিচার বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। সর্বত্র দুর্নীতি ও দলীয়করণে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আর এমন চেতনা থেকেই বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে নিয়ে বিবেকবিবর্জিত বক্তব্য দেয়া হয়েছে। তিনি শাহরিয়ার কবিরের শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নিজ বিবেক থেকেই প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
গতকাল সোমবার সকালে পৃথক দু’টি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় মুক্তাঙ্গনে ছাত্রদল দক্ষিণ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন তিনি। ছাত্রদল দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইসহাক সরকারের মুক্তি দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছাত্রদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিবের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এম ইলিয়াস আলী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির অর্থনৈতিক সম্পাদক আবদুস সালাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরি এ্যানি এমপি, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে দুর্নীতির মহোত্সব চলছে। সর্বত্রই দলীয়করণ চলছে। সরকার জুলুমের রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বাড়িতে থেকে উচ্ছেদ করেছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে। এমপি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করে শারীরিক নির্যাতন করছে। সানাউল্লাহ বাবুর হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, চৌধুরী আলমের খোঁজ মেলেনি, কমিশনার আরিফকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলনকে কারাবন্দি, লুত্ফর রহমান বাবর ও নাসির উদ্দিন পিন্টুকে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জনপ্রতিনিধিদেরও রেহাই দিচ্ছে না। এ সরকারের কাছে কেউই নিরাপদ নয়। সরকার দেশে ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই হয় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না হয় মানহানি মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে বিরাজমান অবস্থা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ।
জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। ১/১১-এর সময় তার সংগ্রামী ভূমিকা জাতি কখনোই ভুলবে না। শাহরিয়ার কবির তার সম্পর্কে যা বলেছেন তা বিবেক থেকেই প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত।
শ্রদ্ধা নিবেদনে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বাবুল আহমেদ, জাসাস-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক মনির খান, যুগ্ম সম্পাদক এসএম বিপাশ আনোয়ার, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদারসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে ‘নব্য রাজাকার’ আখ্যায়িত করে শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, শাহরিয়ার কবির নিজের চিন্তা-চেতনা থেকে অনেক কথাই বলতে পারেন। কিন্তু খোন্দকার দোলোয়ার সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে তার সম্পর্কে আরও জানা উচিত ছিল। দেলোয়ার একজন প্রবীণ, অভিজ্ঞ ও প্রগতিশীল রাজনীতিক।
তিনি বলেন, দেলোয়ার সাহেব অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং শোষণের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবন থেকেই নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন। তার সম্পর্কে এমন বক্তব্য শাহরিয়ার কবির প্রত্যাহার করবেন বলে আশা করছি।

No comments:

Post a Comment