Monday 2 January 2012

বাংলাদেশ ইসলাম বিদ্বেষ










রকিবুল হক
বর্তমান মহাজোট সরকারের তিন বছরে দেশে চরমভাবে বিদ্বেষের শিকার হয় ইসলাম, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান। ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না মর্মে নির্বাচনী ওয়াদা দেয়ার পর তা ভঙ্গ করে সরকার একের পর ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এতে হতবাক হয়ে যায় মানুষ। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা বাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু, বোরকাবিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য, আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন মহলের কটূক্তি, আলেমদের নির্যাতন, দাড়ি-টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, জেহাদি বইয়ের নামে অপপ্রচার, ইসলামী রাজনীতি দমন ও মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ সরকারের ব্যাপক ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। বর্তমান সরকার ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডা নিয়ে ক্ষমতায় এসে পরিকল্পিতভাবে ইসলামবিরোধী এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে বলে ইসলামী দলের নেতারা মন্তব্য করেছেন।
ইসলামবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন : শুধু ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডই নয়, গত তিন বছরে সরকার একের পর এক কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেশকিছু আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও গত তিন বছরে সরকার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর, বোরকাবিরোধী তত্পরতা ও পরিপত্র জারি, সংশোধনীর নামে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসে সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব আইন করছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ নেতা ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।
সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মাথায় মরহুম অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, শুরু থেকেই তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন। পরবর্তীতে ওই কমিটির ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির যে রিপোর্ট দেয়—তা প্রত্যাখ্যান করে সেটি সংশোধন বা বাতিলের জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এসব দাবি ও আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে ওই বছর ২৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের ডাক দিলে সরকার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তা স্থগিত করা হয়। কিন্তু সে দাবি আর বাস্তবায়ন করেনি সরকার।
‘নাটোরের সরকারি রানী ভবানী মহিলা কলেজে বোরকা পরে আসতে মানা’ শিরোনামে ২২ আগস্ট একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং এ সম্পর্কে কোর্টের তত্পরতার পর সরকারও উদ্যোগী হয়। বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সরকার গত বছরের ৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতির খসড়া অনুমোদন করে। এটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য ব্যাপক আন্দোলন, এমনকি হরতাল পালিত হলেও এখনও পর্যন্ত সরকার অনড় অবস্থানে রয়েছে। এদিকে গত বছরের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী গ্রহণ করে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন করা হয়। শুধু তাই নয়, এতে বিসমিল্লাহর বিকৃত অনুবাদ সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া সংবিধান থেকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন সংক্রান্ত ধারা বাদ দেয়া হয়েছে।
কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য : গত তিন বছরে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের লাগামহীন ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত বক্তব্যে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গত বছর অক্টোবরে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন—‘এবার গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে।’ একই বছর ১৩ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন—‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই।’ আর সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন—‘সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়া মুছে ফেলা হবে।’ ২০০৯ সালে পৃথক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা হবে।’
২০০৯ সালের ১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, ‘কওমী মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমী মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এসব কওমী মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপমণ্ডূকতার সৃষ্টি করছে। ’৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ’৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাত্ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।’ একই বছর পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা।’ রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো কওমী মাদরাসাগুলো গজিয়ে উঠেছে।’ গত ১০ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।’
মন্ত্রীদের পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজালের বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যও ছিল আলোচনার বিষয়। ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে (!)। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়।’ গত বছর ১০ ডিসেম্বর ইমামদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘রাসূল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা ইহুদিদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন।’ এর ক’দিন আগে তিনি বলেছিলেন, ‘জিহাদ বিদায় করতে হবে।’ ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। এছাড়া মার্চের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়।
আল্লাহ, রাসুল ও ইসলাম নিয়ে কটূক্তি : গত তিন বছর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহল থেকে আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলাম নিয়ে অসংখ্য কটূক্তি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের শাস্তির দাবিতে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সত্ত্বেও সরকার তাদের শাস্তির পরিবর্তে অনেককে পুরস্কৃত করেছে। ২০১০ সালের ১ আগস্ট বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট দেবনারায়ণ মহেশ্বর পবিত্র কোরআন শরিফের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। রিট আবেদনে তিনি দাবি করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর বড় ছেলে ইসমাইলকে (আ.) কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বলে যে আয়াত পবিত্র কোরআন শরিফে রয়েছে, তা সঠিক নয়। তিনি দাবি করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) তাঁর ছোট ছেলে হজরত ইসহাককে (আ.) কোরবানি করতে নিয়ে যান। এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা ও কোরআনের আয়াত শুদ্ধ করার জন্য দেবনারায়ণ মহেশ্বর আদালতের কাছে প্রার্থনা করেন। আদালত রিট খারিজ করে দেয়ার পর দেবনারায়ণের এ চরম হঠকারি ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে দেবনারায়ণকে পুলিশের পাহারায় এজলাস থেকে বের করে তাদের ভ্যানে প্রটেকশন দিয়ে আদালত এলাকার বাইরে নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে যায়।
গত বছর ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পিতৃভূমি টুঙ্গিপাড়ার জিটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস দশম শ্রেণীর ক্লাসে দাড়ি রাখা নিয়ে সমালোচনাকালে হজরত মোহাম্মদকে (সা.) ছাগলের সঙ্গে তুলনা করেন। এতে ওই ক্লাসের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে শঙ্কর বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়া থেকে পালিয়ে যায়। একই বছর ২৬ জুলাই ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র হজ নিয়ে কটূক্তি করেন। সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গে এক সভায় তিনি মন্তব্য করেন, ‘এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করে। মুহাম্মদও ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। তাহলে মুসলমানদের মুহাম্মদের হজ করা স্থান মক্কায় গিয়ে হজ না করে ওই ১৫-১৬টি বিয়ে করা লোকের বাড়িতে গিয়ে হজ করলেই তো হয়।’ এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সরকার তাকে অন্যত্র বদলি করে শাস্তির আড়ালে পদোন্নতি দেয়।
একইভাবে মানিকগঞ্জে বিশ্বজিত মজুমদার কর্তৃক রাসুল (সা.) এর জন্ম এবং পবিত্র কোরআন নিয়ে কটূক্তি, বাগেরহাটের এক হিন্দু কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদকে শিব লিঙ্গের সঙ্গে তুলনা, খুলনার পাইকগাছায় আরেক হিন্দু মহান আল্লাহ সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ হাইস্কুল গেটের কোরআনের আয়াত সংবলিত সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা, বাগেরহাটের কচুয়ায় এক হিন্দু কর্তৃক মহান আল্লাহর ছবি ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্কন করা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে রাসুল (সা.) সম্পর্কে হিন্দু কর্তৃক চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক হিন্দুর (সা.) প্রতি কটূক্তিসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের ইসলামবিরোধী বক্তব্য স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড : দেশের সর্ববৃহত্ সরকারি ইসলামী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে গত তিন বছরে ব্যাপক দুর্নীতি, ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সর্ব মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও জজ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হিসেবে শামীম মোহাম্মদ আফজাল নিয়োগ পাওয়ার পরপরই শীর্ষ আলেমরা তাকে একজন প্রতিষ্ঠিত মাজারপন্থি ও কবর পূজারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। নিয়োগ পাওয়ার পর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি অবশ্য একথার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের একাধিক পীরের ঘনিষ্ঠ মুরিদ দাবিদার শামীম মোহাম্মদ আফজাল তার ধ্যান-ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এরই মধ্যে মাজার-খানকাপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। এসব জায়গায় হাক্কানি আলেম-ওলামাদের দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলাম ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতেই ইসলামী চিন্তা-চেতনা বিরোধী এই ডিজিকে আওয়ামী লীগ সরকার নিয়োগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী।
২০১০ সালে রমজানে সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে ইফার উদ্যোগে তাদের পছন্দের আলেমদের নিয়ে ১০০ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হলে সারাদেশে বিতর্কের ঝড় ওঠে। একপর্যায়ে ফিতরার সর্বনিম্ন ১০০ টাকার স্থলে ৪৫ টাকা নির্ধারণে বাধ্য হয় তারা। দীর্ঘদিন ধরে হামদ, নাত ও ইসলামী সঙ্গীত তথা ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিশেষ ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে সেই ঐতিহ্য ম্লান হতে চলেছে। এখন এসব সংস্কৃতির বদলে অশ্লীল নাচ-গানের আসরের আয়োজন করা হয়। ২০১০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। অনুষ্ঠানে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে করমর্দনও করেন ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজাল। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার একতারা এবং শরীর দুলিয়ে নাচ-গানে বিব্রত অবস্থায় পড়েন উপস্থিত ইমামরা। এছাড়া ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে জাতীয় শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে হামদ ও নাতের বিচারক হিসেবে এমন শিল্পীদের আনা হয় যাদের অনেকেই ইসলামি সঙ্গীতের ধারার সঙ্গে পরিচিত নয়। এ নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একইবছর ২৭ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ঘটে সবচেয়ে বড় ঘটনা। ওইদিন আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে ডিজির অনুরোধে ইমামদের সামনে মার্কিন তরুণ-তরুণীরা পরিবেশন করে অশ্লীল ব্যালে নৃত্য। অবশ্য এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানায় ব্যালে ড্যান্স নয় ৩৫ সেকেন্ডের ‘সুয়িং ড্যান্স’ পরিবেশন করা হয়। গত বছর ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠান উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে ফাউন্ডেশনের পরিচালক হালিম হোসেন খান অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে জনতার হাতে আটকের ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় ও তাকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে। আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ তেমন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
২০১০ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের বিতর্কিত খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন কর্তৃক জাতীয় ঈদগায় ঈদুল ফিতরের নামাজে ভুল করা নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
জঙ্গিবাদী জিহাদি বই নিয়ে অপপ্রচার ও নির্যাতন : বর্তমান সরকারের তিন বছরে আলেম-ওলামা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দমনে ব্যাপকভাবে ‘জঙ্গি ও জিহাদি বই’ বিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী, বিরোধী মতকে দমন বা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এটি। পুলিশ যখন যাকে ইচ্ছা জিহাদি বই পাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে। এ সময় বিভিন্ন ইসলামী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়। পুলিশ জিহাদি বই উদ্বারের নামে যেসব পুস্তক আটক করে এর কোনোটিই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়।
২০০৯ সালের ১৯ জুন রাজশাহীতে জঙ্গি সন্দেহে ১৫ নারী ও শিশুকে গ্রেফতার করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওইদিন বিকালেই মুচলেকা দিয়ে তাদের মুক্ত ঘোষণার পর আবার ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে ব্যাপক তদন্ত করেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য পায়নি। শেষপর্যন্ত আদালত তাদের বেকসুর খালাস দিলে জুলাই মাসের ১ তারিখে ১১ দিন কারাবাস শেষে ১৫ জন নিরপরাধ নাগরিক মুক্তি পান। এরপরও পুলিশ সারাদেশে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী বইপত্রকে জিহাদি বই আখ্যায়িত এবং বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে ধর্মীয় বই সংরক্ষণকারীদের জঙ্গি অভিযোগে গ্রেফতার নির্যাতন চালায়।
আলেমদের গ্রেফতার নির্যাতন : গত তিন বছরে দেশকে অনৈসলামিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকার আলেম-উলামাদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের মাধ্যমে নিষ্ক্রীয় এবং ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখার চেষ্টা চালায় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে আলেমরা যাতে মাঠে নামতে না পারেন সে জন্যই নানা উদ্যোগ নেয়া হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ২০০৯ সালের মে মাসে মিথ্যা একটি মামলায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আন্দোলনের মুখে তাকে ছেড়ে দেয় সরকার। এরপরও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়নসহ সরকারের বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গত বছরের ৪ এপ্রিল মুফতি আমিনীর ডাকে সারাদেশে হরতাল পালনের পর ষড়যন্ত্রের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছুদিনের মাথায় তার ছেলে অপহরণ, তাকে গৃহবন্দি এবং ভিত্তিহীন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে রাখা হয়েছে।
২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কথিত অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আটক করা হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে। ওই মামলায় জামিন পেলেও পরে তাদের অন্য মামলায় আটক ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। গত বছরের ৪ এপ্রিলের হরতাল উপলক্ষে আগের দিন যশোরে আলেমদের একটি মিছিল বের হলে পুলিশ তাতে হামলা ও গুলি চালায়। এতে এক মাদরাসা ছাত্র ও হাফেজ নিহত হয়।
দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি : আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি বেড়ে যায়। তার প্রমাণ আবারও পাওয়া গেছে গত তিন বছরে।
২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল বরিশালের নিউ সার্কুলার রোডের এক বাড়িতে র্যাব হানা দিয়ে বোরকা পরে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য জড়ো হওয়ার অপরাধে ২১ নারীকে গ্রেফতার করে। র্যাব সাংবাদিকদের কাছে তাদের অভিযানের সংবাদ জানালে তা ফলাও করে ছাপা হয়। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য না পেয়ে ২১ পরহেজগার নারীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। ঘটনার দীর্ঘ ২ মাস পর ২৩ জুন আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেন। একইভাবে বোরকা পরার অপরাধে ২০০৯ সালের ৩ জুলাই পিরোজপুর জেলার জিয়ানগরে ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীদের প্ররোচনায় পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে তিন তরুণীকে গ্রেফতার করে। তারপর পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তিন তরুণীকে ঢাকায় টিএফআই সেলে নিয়ে আসা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেফতারকৃত তরুণীদের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন অমর সিংহ। এ সময় তাদের বোরকা খুলতে বাধ্য করে মহাজোট সরকারের দিনবদলের পুলিশ। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদেও কোনো জঙ্গি সংযোগের কাহিনী বানাতে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাইনাল রিপোর্ট দিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি থেকে অবশেষে তিন অসহায়, নিরপরাধ তরুণী মুক্তি পায়।
২০১০ সালের ৩ এপ্রিল সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয় যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. একেএম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি ক্লাসে ‘মধ্যযুগীয় পোশাক বোরকা’ পরা যাবে না এবং এটি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো পোশাক হতে পারে না বলে ফতোয়া জারি করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি বিভাগীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়, তবে আমার ক্লাসে কোনো ছাত্রীকে আমি বোরকা পরতে দেব না।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর ইডেন ও বদরুন্নেছা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ইডেন কলেজে বোরকা পরা ছাত্রীদের ধরে বোরকা খুলে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও তল্লাশির নামে পর্দানশীন ও নামাজি ছাত্রীদের হয়রানির ঘটনা ঘটে। এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের রুম থেকে ইসলামী বই পুস্তককে জিহাদী বই বলে তা জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রশাসনের সহায়তায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সারাদেশে বোরকাধারী ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পায়জামা-পাঞ্জাবি ও বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেন এক শিক্ষক। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাইখুল ইসলাম জিয়াদ নামের এক শিক্ষক বোরকা পরায় তিন ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দেন। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমান সরকারকে ইসলামবিরোধী হিসেবেও আখ্যায়িত করেন সংশ্লিষ্টরা।
ইসলামী রাজনীতি দমন : মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র শুরু করে। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে এই নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ার শুরুতে অনেক মন্ত্রী-এমপি ঘোষণা দেন। সরকারের এই মনোভাবে আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে তত্পর হয়ে ওঠে ইসলামী সংগঠনগুলো। এক পর্যায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসে সরকার। কিন্তু কৌশলে ধর্মীয় দলগুলোকে দমনের পথ বেছে নেয় তারা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যে সরকারের আল্লাহর ওপর আস্থা নেই, দুর্গার ওপর আস্থা থাকে তাদের আর কিছু বাকি থাকে না। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনকে খতম করার জন্য প্রতিবেশী দেশের ইঙ্গিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ৪০ বছরের মীমাংসিত ইস্যু এনে গায়ের জোরে রায় দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, বৃহত্ ইসলামী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংসের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত তিন বছরে দলের আমির মাওলানা নিজামী ও শীর্ষ অনেক নেতাসহ ৩ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। পাইকারিভাবে হামলা-মামলা ও জামায়াতের রাজপথের কর্মসূচি দমন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে দলের ৫ শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন।
অপর দিকে গত তিন বছরে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫ জন নিহত, বহু সংখ্যক আহত হয়। আটক হন ১০ হাজারের মতো নেতাকর্মী। এদের মধ্যে এখনও ২৮৫ জন কারাগারে রয়েছেন।
গত বছরের ৪ এপ্রিল মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ডাকে সারাদেশে হরতাল পালিত হওয়ার সময় থেকেই ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির কর্মকাণ্ডের ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্র : গত তিন বছর ধরে মাদরাসা ও এর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চলেছে নানা ষড়যন্ত্র। সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত নতুন ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় ও ইসলামী শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে। আধুনিকায়নের নামে মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে করা হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত প্রথা বাদ দিয়ে অযৌক্তিক শর্তারোপের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, এ সরকার ইসলাম ধ্বংসে যত কাজ করার দরকার তার সবই অবলম্বন করছে। শেখ হাসিনার সরকার বাদশাহ আকবরের মতো দ্বীনে এলাহী প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। তার কাছে মুসলামানদের কোনো দাম নেই, রবীন্দ্রনাথ ও নাস্তিক-মুরতাদদের দাম রয়েছে। আসলে এ সরকার ইসলাম ধ্বংসের এজেন্ডা নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে এবং সেই কাজ করছে। তাই এ সরকারের পতন ছাড়া এ দেশে ইসলাম রক্ষার আর কোনো পথ খোলা নেই। খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। গোড়া থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি বৈরী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। ইসলামের কথা শুনলেই তাদের মাথাব্যথা হয়। তাদের সময় দেব নারায়ণদের মতো ইসলাম বিদ্বেষীরা উত্সাহিত হয়।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/01/02/125056

Sunday 1 January 2012

সর্বব্যাপী অনিশ্চয়তায় শুরু নতুন বছর ২০১২















ইলিয়াস খান

স্বাগত ২০১২। শুভ ইংরেজি নববর্ষ। বিদায়ী ২০১১ সালের হতাশা, দুঃশাসন, বঞ্চনাকে পেছনে ফেলে ভালো কিছু প্রাপ্তির স্বপ্ন নিয়ে মানুষ শুরু করছে নতুন বছর আজ। সর্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে নতুন বছরের আগমন।
নতুন প্রত্যাশায় আজ উদিত হয়েছে নতুন বছরের সূর্য। সব ধরনের স্থবিরতা কাটিয়ে নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। দেশে ফিরে আসুক শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বস্তি, গতিময়তা।
২০১১ সালটি ছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের জন্য গভীর হতাশার। কোনো সুসংবাদ আসেনি ৩৬৫ দিনে। হত্যা, সংঘর্ষ, দুর্ঘটনা, বিরোধী মতের প্রতি দমন-পীড়নসহ নানা দুঃসংবাদের মধ্য দিয়ে কেটেছে দিনগুলো। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি কোথাও কোনো সুখবর ছিল না। বরং নানা দুঃসংবাদ এ সময়ে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে জনমন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার বেদনায় নীল হয়েছে দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী। এ সময়ে স্থবিরতা গ্রাস করেছে আমাদের অর্থনীতি, বিনিয়োগ, রাজনীতি, সংসদ, প্রশাসন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে। সর্বোপরি আমাদের সার্বিক জনজীবনকে। তারপরও মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে নতুন বছর নিয়ে।
বিতর্কিত হলেও একটি নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক শাসনের আকাঙ্ক্ষায় ২০০৯ সালে যে ব্যাপক প্রত্যাশা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার যাত্রা শুরু করেছিল, তিন বছর গড়িয়ে সে প্রত্যাশার খুব কমই পূরণ হয়েছে। কিন্তু নতুন বছরে দেশের মানুষের প্রত্যাশা সব হতাশা, সব গ্লানি কাটিয়ে উঠে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সচল হবে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংসদ ও প্রশাসন।
বারবার ব্যর্থ হলেও কতগুলো চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে নতুন বছর শুরু করছে মহাজোট সরকার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর অঙ্গীকার করা সরকার চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম যেন কোনোভাবেই টেনে ধরতে পারছে না। অস্থিতিশীল বাজারকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন বছর শুরুর ঠিক তিনদিন আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় এ চ্যালেঞ্জ আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিঘরে একজনকে চাকরি দেয়ার বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন দূরের কথা, গত বছরে সার্বিকভাবে কর্মসংস্থানের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিও সম্ভব হবে না। আইনশৃঙ্খলার সার্বিক উন্নয়নসহ ক্রসফায়ারের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করাও সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর হারও মারাত্মকভাবে কমে গেছে। কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে বরং অনেক শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছে।
গত বছর রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম অস্থিরতা ছিল। ১৯৭২-৭৫ সালের মতো গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে সরকার ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থা চালু করেছে। বিরোধী দলকে মিটিং মিছিল পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছে মানুষ। এ অবস্থার অবসানে নতুন বছরে সংশ্লিষ্টরা সক্রিয় হবেন বলে ব্যাপক প্রত্যাশা রয়েছে জনমনে।
বছর শেষে সরকারের সার্বিক কর্মকাণ্ড নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মন্ত্রীদের নানান বক্তব্য বছরজুড়েই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সরকার বিভিন্ন মামলা-হামলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় জনগণ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখেনি। অর্থনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য দেখতে চায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায়, দেশের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের ভূমিকার মূল্যায়ন করতে চায়। টিপাইমুখে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ভারতের বাঁধ নির্মাণ এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তি, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, ট্রানজিট, এশিয়ান হাইওয়ের নামে ভারতকে করিডোর প্রদান, সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধসহ বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
প্রশাসনে দফায় দফায় ব্যাপক রদবদল, ওএসডি ও চাকরিচ্যুতির মধ্য দিয়ে যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটা সামাল দিতে না পারলে নতুন বছরেও প্রশাসনিক স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। অবসরে যাওয়া সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের যেভাবে দলীয় বিবেচনায় দু’তিনটি পর্যন্ত প্রমোশন দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল কিংবা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নতুন করে যে বৈষম্য ও ক্ষোভের জন্ম দেয়া হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে সমস্যা থেকেই যাবে। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর দলীয় ক্যাডারদের চাপ কমাতে না পারলে মাঠ পর্যায়েও অবস্থার উন্নতি হবে না। এসব বিষয়ে নজর দিয়ে এগুলোর সুরাহা করাও নতুন বছরে সরকারের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা কিংবা ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার মতো মামলাগুলো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পুনঃতদন্তের নামে মানুষকে হয়রানির পথ সরকার পরিহার করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা হবে বলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা।
সাংবাদিকদের হয়রানি ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়ে সরকার যে সমালোচনার মধ্যে পড়েছে, সেটা থেকে মুক্ত হতে নতুন বছরে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। মিডিয়ার সঙ্গে লড়াই করে অন্যায়ভাবে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করে কোনো সরকারই সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমান সরকারও পারবে না, ইতিহাসের এই শিক্ষা না নিলে সরকারকে এর খেসারত দিতে হবে বড় আকারে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিং কিংবা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার না হওয়া এবং সরাসরি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ দেশের মানুষ গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে। মানুষ রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। অবস্থার উন্নতি না হলে সরকারের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় তারা সক্রিয় না হলে এর মাশুল সরকারকে দিতে হবে। নতুন বছরে জনগণের প্রত্যাশা থাকবে। সরকার অন্তত জনগণের কাছে দেয়া তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করুক। স্থবিরতা কেটে গিয়ে দেশ আবার সচল হয়ে উঠুক। গণতন্ত্র পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাক। সচল হয়ে উঠুক সংসদ ও প্রশাসন। উন্নয়ন ও উত্পাদনে নতুন গতি সঞ্চারিত হোক।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া ছিল জাতির নৈতিকতার ওপর চপেটাঘাত। কিন্তু এর জন্য দায়ী মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে বাদ না দিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারের এ গোঁয়ার্তুমি জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা মানুষের ক্ষোভকে তুঙ্গে নিয়ে গেছে। নতুন বছরে বিভিন্ন ধরনের দুর্ভোগের অবসান চায় মানুষ।
গত এক বছরে সরকার জাতীয় জীবন বিপর্যস্ত করতে নানা অঘটন ঘটিয়েছে। এর অন্যতম সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী সংযোজনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিল, শেয়ারবাজার লুটপাট, গুপ্তহত্যা, পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতি, ফালানীসহ বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা, ঢাকা দ্বিখণ্ডিতকরণ, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপসারণ, বাংলাদেশ থেকে মনমোহনের প্রাপ্তি, আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে গণবিস্ফোরণ, পুলিশ হেফাজতে অ্যাডভোকেট এমইউ আহমেদের মৃত্যু, সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে ২৮৮ দিন জেলে নির্যাতন শেষে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, মিরসরাই ট্র্যাজেডি, জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর হামলা, খুনিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ইত্যাদি। বছরের শেষ দিকে এসে মহাজোট সরকার যেভাবে তার ফ্যাসিস্ট শাসন উন্মুক্ত করেছে তাতে মানুষের হতাশা আরও বাড়ছে।
তারপরও মানুষ নতুন বছর নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। সুন্দর আগামীর স্বপ্নে তারা বিভোর। কেবল সময়ই বলে দেবে কেমন যাবে তাদের আজ শুরু হওয়া নতুন বছরটি, স্বপ্ন কতটা পূরণ হবে।

অর্থনৈতিক মহামন্দার কবলে দেশ








সৈয়দ মিজানুর রহমান

সরকারের তিন বছর যেতে না যেতেই অর্থনৈতিক মহামন্দার কবলে পড়েছে গোটা দেশ। ব্যাংকে চলছে টাকার হাহাকার, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি; দেখা দিয়েছে বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণের আকাল, ধস শিল্প উত্পাদনে, নতুন কর্মসংস্থান প্রায় বন্ধ।
মন্দা এতোটাই প্রকট যে, রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ করতে পুরোপুরি ব্যাংক ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে সরকার। অর্থসঙ্কটে সরকার এখন নিজেই ব্যাংকের সব টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এ টাকার প্রায় পুরোটাই খরচ হচ্ছে রাজস্ব বা অনুন্নয়ন খাতে। বন্ধ হয়ে গেছে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। গতি নেই এডিপির।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা অর্থনীতির এই বেহাল দশার জন্য স্থানীয়ভাবে একদিকে সরকারের সম্প্রসারিত রাজস্ব নীতি; অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকুচিত মুদ্রানীতি, দুর্নীতি-অনিয়ম এবং কিছুটা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাকে দায়ী করেছেন। অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অর্থনীতির এই নাজুক দশা স্বীকার করলেও পরিস্থিতি উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে দেশের এখন অর্থনীতি এক গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি।
নাজুক ব্যাংকিং খাত : বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার এক বছরের মাথায় দেশের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা দেখা দেয়। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমিয়ে দেয়। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে চলছে টাকার হাহাকার। ব্যাংকগুলোর সব টাকা সরকার নিয়ে নিচ্ছে। ফলে প্রায় এক বছর ধরে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের বড় ঋণ দেয়া প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিজেদের সঙ্কটের মধ্যেই সরকারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যাংকের সব টাকা ধার ও ঋণ হিসেবে দিচ্ছে। চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণের প্রাক্কলন ছিল ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের পাঁচ মাস যেতে না যেতেই সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের বেপরোয়া ব্যাংক ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। কলমানি মার্কেটেও পাওয়া যাচ্ছে না টাকা। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাসে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ২১ হাজার ৩২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের চাহিদা মেটাতে অর্থায়ন করেছে ১২ হাজার ৮৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বাকি টাকা দিয়েছে তফসিলি ব্যাংক।
ভয়াবহ সঙ্কটে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক : সরকারের ঋণের চাহিদা মেটাতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো চরম অর্থসঙ্কটে পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক এরই মধ্যে বেসরকারি খাতে তাদের সব ধরনের ঋণ বিতরণ গুটিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকটি এতোই তারল্য সঙ্কটে যে, তাদের দৈনন্দিন কাজ চালাতে অন্য ব্যাংক থেকে ধারদেনা করতে হচ্ছে। সরকারের ঋণের চাহিদা মেটাতে গিয়ে সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের অবস্থাও নাজুক। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বেসরকারি ব্যাংকের ওপর; চাপ বাড়ছে কলমানি মার্কেটেও। ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কটের কারণে কলমানি সুদের হার কয়েক মাস ধরেই ২০ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার প্রাক্কলন করেছিল ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ ধরা হয় ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা।
গড় মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটে : স্বাধীনতার পর দেশে গড় মূল্যস্ফীতি কখনও ডাবল ডিজিট (দশ শতাংশের বেশি) অতিক্রম করেনি। এই রেকর্ড ভেঙেছে বর্তমান সরকার। চলতি বছরের (২০১১) মার্চে প্রথমবারের মতো দেশে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির রেকর্ড সংগ্রহ ও প্রকাশ করে থাকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ গত নভেম্বরে যে ডাটা প্রকাশ করেছে তাতেও গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর মার্চ মাস থেকেই টানা ডাবল ডিজিট চলছে গড় মূল্যস্ফীতি। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক কষ্টে আছেন। থমকে গেছে অর্থনীতির অন্যান্য সূচক। জিডি প্রবৃদ্ধিও ৭ শতাংশ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য, দেশে পয়েন্ট টু পয়েন্ট অর্থাত্ আগের বছরের নভেম্বর মাসের তুলনায় ২০১১ সালের নভেম্বরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়ে ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ। নভেম্বরে গ্রাম অঞ্চলে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। আর শহরে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। এ সময়ে গ্রামে খাদ্যপণ্যে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ; খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশে দাঁড়ায়। যা আগস্টে ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, জুলাইয়ে ১০ দশমিক ৯৬, জুনে ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ, মে মাসে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ, এপ্রিলে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ, মার্চে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৯ দশমিক ৭৯ এবং জানুয়ারিতে ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ।
কমে গেছে রেমিট্যান্স : দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। আর রেমিট্যান্সের বেশিরভাগ আয় আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে। তবে দেশটির সঙ্গে বড় ধরনের কূটনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে গত তিন বছরে। ফলে সৌদি আরবে নতুন করে যেমন জনশক্তি রফতানির দরজা বন্ধ, তেমনি বাংলাদেশীদের কাগজপত্র নবায়নও বন্ধ। ফলে প্রতি মাসেই হাজার হাজার বাংলাদেশী ফিরে আসছে সৌদি আরব থেকে। আর এ কারণে গোটা রেমিট্যান্স আয়ে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের বিপর্যয়। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি কমে আসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রিজার্ভের ওপর। ২২ মাস পর গত সেপ্টেম্বর মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে ৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। এরপর রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারে উঠলেও এখন আবার আশঙ্কাজনক হারে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত ১৫ নভেম্বর রিজার্ভ কমে ৯ দশমিক ৬২৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়, যা গত ২৯ নভেম্বরে ৯ দশমিক ২৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নভেম্বরে রেমিট্যান্স আয় হয়েছিল ৯৯৮ মিলিয়ন ডলার। শতাংশের হিসাবে এ বছর নভেম্বরে রেমিট্যান্স আয় কমেছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রেমিট্যান্স বাবদ আয় হয়েছে ৪ হাজার ৯২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪৬ মিলিয়ন ডলার বেশি। অর্থাত্ প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
রিজার্ভ কমছে, বাড়ছে ডলারের দাম : বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ৯৩৫ কোটি ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম ও খাদ্য আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয় সরকারকে। যে হারে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে, সে হারে রেমিট্যান্স আসছে না। স্বাভাবিকভাবেই রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলার দুর্বল হয়ে পড়লেও তিন বছরে টাকার ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিপরীত প্রবণতা। গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ১০ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গতকাল ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম ছিল ৮২ টাকা; যেখানে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর ডলারের দাম ছিল ৭০ টাকা ৬৪ পয়সা। দাম বেশি হলেও চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যায় না ডলার, ফলে আমদানিকারকরা পড়ছেন বিপাকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ায় দেশের অর্থনীতির ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে—আমদানি ব্যয় বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষের ঝুঁকি। ডলার সঙ্কটের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স আয়ের গতি কমে আসার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে আসায় রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে ডলারের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
স্থবির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড : গত বেশ কয়েক বছর ধরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন স্থবির। অর্থবছরের ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত এডিপির মাত্র ২০ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সরকার। চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এডিপি বরাদ্দ ৪৬ হাজার টাকা থেকে মাত্র ৯ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আইএমইডি জানায়, গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল এ বছরের সমান শতকরা ২০ ভাগ। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয়েছিল শতকরা ২৩ ভাগ। আর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ছিল শতকরা ১৮ ভাগ।
দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থাগুলো বৈদেশিক সহায়তা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও গত অর্থবছরে ৩১ হাজার কোটি টাকার সহায়তা অনাদায়ী থাকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বৈদেশিক সহায়তা এসেছে মাত্র ৪১ কোটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ে বৈদেশিক সহায়তা ছাড় হয়েছিল ৬১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে গত এক বছরের ব্যবধানে অর্থছাড়ের পরিমাণ কমে গেছে ২০ কোটি ৫ লাখ মার্কিন ডলার। শতকরা হিসাবে এক বছরে বৈদেশিক সহায়তা কমেছে ৩৩ ভাগ। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ সময়ে ১৮৭ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল দাতাদের পক্ষ থেকে। এ হিসাবে প্রতিশ্রুতির শতকরা ৭৮ ভাগ বৈদেশিক সহায়তাই অনাদায়ী রয়ে গেছে।
ইআরডি জানিয়েছে, অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ২৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করেছে দাতারা। আর অনুদান হিসেবে এসেছে ১৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে এ সময়ে ছাড় হয়েছে ৪১ কোটি ৩৮ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে এ পাঁচ মাসে বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে মোট ৪০ কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলার, এর মধ্যে আসল ৩২ কোটি ৪০ আর সুদ হচ্ছে ৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার। হিসাব কষে দেখা যায় নিট বৈদেশিক অর্থের ছাড় হয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া : অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান মনে করেন, দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে এই অস্থিরতা বাড়ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকার যে হারে ভর্তুকি বাড়াচ্ছে এবং রাজস্ব খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে, তাতে দেশে বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে সরকার সভরেন লোন বা সার্বভৌম ঋণ করতে যাচ্ছে, এটা আরও বিপদ ডেকে আনবে।
এ বিষয়ে সাবেক অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সার্বিক অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়েছে। সরকারের ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ভর্তুকির মাত্রাও অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ব্যাংকে চলছে ভয়াবহ তারল্য সঙ্কট। এতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও ঋণ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমে যাচ্ছে। এসব সমস্যার সব একসঙ্গে যোগ হওয়ায় অর্থনীতি বেকায়দায় পড়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে বৈদেশিক সাহায্যের অবমুক্তিতে পিছিয়ে পড়া।’ তিনি পরামর্শ দেন, বিদেশি সহায়তা ও বৈদেশিক ঋণের যে ১৩ বিলিয়ন ডলার পাইপলাইনে পড়ে রয়েছে, তা কীভাবে ছাড় করা যাবে সে ব্যবস্থা করা দরকার।
ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, সরকারের অর্থনীতি দ্বৈতশাসনের কবলে পড়েছে। একদিকে সরকার বলছে, তারা সম্প্রসারিত রাজস্বনীতি বাস্তবায়ন করবে; অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঙ্কুচিত মুদ্রানীতি হাতে নিয়েছে। আর একসঙ্গে এই দুই নীতিই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিপদ ডেকে এনেছে।
বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার আমার দেশকে বলেন, সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বেশি টাকা নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাবে—এটাই স্বাভাবিক। আর বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেলে দেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হবে না; বাড়বে না নতুন কর্মসংস্থান।

পুলিশি হামলায় মিছিল পণ্ড : মাদরাসা ছাত্র ভর্তি বৈষম্য দূর না হলে কঠোর আন্দোলন














বার্তা ২৪ ডটনেট
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মাদরাসা ছাত্ররা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে উল্লেখ করে মাদরাসা ছাত্রঐক্য পরিষদ বলেছে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পছন্দের বিষয়ে তাদের ভর্তির সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বারবার এ বৈষম্য দূরের দাবি জানালেও সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্ণপাত করা হচ্ছে না। ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলন চলবে’ বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন পরিষদের নেতারা।
গতকাল বিকালে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক ও মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি হাফেজ মহিউদ্দিন মাসুম।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা ছাত্রদের ইংরেজি ও বাংলায় ভর্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ঐক্য পরিষদ। এ সময় পুলিশ হামলা চালিয়ে মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পরিষদের আহ্বায়কসহ সাত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার হয়।
হামলার পর তাত্ক্ষণিক সমাবেশের আয়োজন করে পরিষদের নেতারা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মাদরাসা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ও ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মঈনুদ্দিন, ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আবদুুল হান্নান, মাদরাসা ছাত্র সংহতি লীগের সভাপতি ও ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসাইন, মাদরাসা ছাত্র ফোরামের সভাপতি ও ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসাইন হেলালী ও মাদরাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের প্রচার সম্পাদক আবুল হাশেম মোল্লা।

Wednesday 21 December 2011

সরকারের একগুঁয়েমিতে সহিংসতার পথে রাজনীতি : ঢাকায় বিএনপির ১২০ জন রিমান্ডে, সারাদেশে দুই ডজন মামলা













মাহাবুবুর রহমান
রাজনীতি আবারও সহিংস হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে অব্যাহত বাধা, গণগ্রেফতার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়িতে সারাদেশে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সর্বাত্মক আক্রমণে র্যাব-পুলিশ ও মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। রাজপথে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে কোনো কর্মসূচিই নির্বিঘ্নে করতে দেয়া হচ্ছে না। কর্মসূচিতে চলছে অব্যাহত বাধা ও হামলা। রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে চলছে মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন। পুরনো ঘটনায় সারাদেশে ২৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার পর এবার রোববারের সহিংসতায় প্রায় দু’ডজন মামলায় কমপক্ষে ১৫ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গণগ্রেফতারে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে পুলিশ-র্যাব ও সরকারি দল রাজপথ দখলে রাখছে। বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেয়া হচ্ছে না। চলছে চোরাগোপ্তা হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ। রাজপথে বিস্ফোরিত হচ্ছে বোমা ও ককটেল। বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে সরকারের তত্পরতায় গত দু’দিন রাজধানীতে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়। হরতালের মতোই র্যাব-পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ছিল সক্রিয়। বিএনপি অফিসে ব্যারিকেড দিয়ে অঘোষিত ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। নেতাকর্মীদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। কোথাও মিছিল করতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশ-র্যাবের ঘেরাওয়ের মধ্যে গতকাল নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে দলটি। সমাবেশ থেকে আগামীকাল ঢাকায় গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পুলিশ-র্যাবের তত্পরতার মধ্যেই নয়াপল্টন এলাকায় চারটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। ভীতিকর পরিস্থিতিতে কর্মব্যস্ত মানুষ রাস্তায় বেরুলেও সবার মধ্যে ছিল আতঙ্ক। যানজটের ঢাকার অধিকাংশ সড়ক ছিল ফাঁকা।
রোববার মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনাকে ঘিরে সংঘটিত সহিংসতায় জরুরি আইনে চারটিসহ ঢাকায় ১২টি মামলা করা হয়েছে। এতে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে পরিচিত বেশকিছু নেতাসহ ১০ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেফতার ১২০ জনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এছাড়া সিলেটে সাত মামলায় দেড় হাজার এবং রাজশাহীতে দু্রত বিচার আইনের এক মামলায় ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৬ জনকে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
রোববার রাত থেকে বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় তল্লাশি চলছে। সারাদেশে পুলিশ বাহিনী ব্যস্ত রয়েছে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযানে। বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজন ও অজ্ঞাত স্থানে থাকছেন। অনেকে মোবাইল বন্ধ করে বিকল্প সিম ব্যবহার করছেন। ঢাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাসা থেকেই নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কর্মীরা। চট্টগ্রামে মামলা ও গ্রেফতার অভিযান না চললেও সরকারি নিপীড়নের বিরুদ্ধে গত দু’দিন রাজপথে ছিলেন নেতাকর্মীরা। তারা দু’দিন অব্যাহত প্রতিবাদ সমাবেশে করেছেন নগরীতে। রাজশাহী মহানগর যুবদল সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে গতকাল থানা ঘেরাও করেন নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশের লাঠিচার্জে ২০ নেতাকর্মী আহত হন। ১২ জনকে আটক করা হয়। সিলেটে গত রোববার এক বাসযাত্রীর মৃত্যুসহ বিক্ষিপ্ত সহিংসতার ঘটনায় চার থানায় সাতটি মামলা করেছে পুলিশ। এতে বিএনপি ও ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ ১২০ নেতাকর্মীসহ দেড় সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া গতকাল দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা শহরে সহিংসতার অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
গত রোববার বিএনপি আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পুলিশের বাধাকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারাদেশে সহিংসতায় দু’জন মারা যান। অনুষ্ঠানটি বাধাগ্রস্ত করতে পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে বিএনপির মিছিল জমায়েতে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের ক্যাডারবাহিনী। এতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘাতে ঢাকা নগরীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশে বিক্ষোভ ও গাড়িভাংচুর করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনায় বাধা ও নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিএনপি গতকাল দেশব্যাপী প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে। পূর্বঘোষিত বিজয় শোভাযাত্রার কর্মসূচিকে প্রতিবাদ সমাবেশ হিসেবে ঘোষণা দেয় দলটি। সে অনুযায়ী দেশে কয়েকটি জেলা শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের হলেও ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ নগরী ও জেলায় পুলিশ বিএনপি-নেতাকর্মীদের রাস্তায়ই নামতে দেয়নি।
নয়াপল্টনের আশপাশ এলাকায় হরতালের আবহ : কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তিন স্তরের পুলিশি বেষ্টনী ও র্যাবের মহড়ায় গতকাল পূর্বঘোষিত বিজয় শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল করতে পারেনি বিএনপি। দলটির কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশ-র্যাবের তত্পরতায় হরতালের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নয়াপল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর, পুরানাপল্টন ও ফকিরাপুল এলাকায় র্যাব-৩-এর দশটি গাড়ির সারিবদ্ধ মহড়ায় দুপুর ১২টা থেকেই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। পৌনে ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মাইক স্থাপন করলে তাও পুলিশ কেড়ে নেয়। ১টায় বিএনপি কার্যালয় ঘিরে ফেলে পুলিশ। এ সময় রায়টকার, সাঁজোয়া যান, পানির গাড়িসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরাপুল মোড় এবং নয়াপল্টনের রাস্তার প্রতিটি গলির মুখে পুলিশি প্রহরা ও তল্লাশি বসানো হয়। অনেক সাংবাদিককে পরিচয়পত্র দেখানোর পর ঢুকতে দেয়া হয়। পুলিশি তল্লাশিতে পথচারী নারী-পুরুষরা হয়রানির শিকার হন।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে থাকেন। বিক্ষিপ্তভাবে হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মী ১২টার মধ্যে কার্যালয়ে প্রবেশ করলেও ১টার পর কাউকে আশপাশে ভিড়তে দেয়নি পুলিশ। জাতীয় প্রেস ক্লাব, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর ও ফকিরাপুলের বিভিন্ন ভবনে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলেও পুলিশ-র্যাবের মহড়ায় তারা বেরুতে পারেননি। পল্টন থানার দুই সাব ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশের দুটি দল ঘুরে ঘুরে আশপাশে ভিড় করা মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পুলিশ বেষ্টনী পেরিয়ে ১২টার দিকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক কার্যালয়ে আসেন। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম থাকায় নির্ধারিত সময় বেলা আড়াইটায় মিছিল বের করার চেষ্টাও করেনি বিএনপি। বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে সাবেক এমপি শাহীনা খান ও রহিমা খন্দকারসহ চারজন মহিলা কর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুলিশ আটকে দিলে শাহীনা খান বলেন, ‘আমাদের অফিসে আমরা ঢুকব। আপনারা আটকাচ্ছেন কেন?’ পুলিশ নিশ্চুপ থাকলে তিনি জানতে চান, ‘আপনারা কী ১৪৪ ধারা জারি করেছেন?’ তখন একজন কনস্টেবল বলেন, ‘উপরের নির্দেশ আছে’। পুলিশের সঙ্গে বচসা চলতে থাকলে পৌনে ৩টায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও ছাত্রদল নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতার নেতৃত্বে ২০/২৫ জন মহিলা কর্মী জড়ো হন। তারা দলীয় কার্যালয়ের গেটে পুলিশ ব্যারিকেডকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে থাকেন। ২টা ৫০ মিনিটে পল্টন থানার ওসির নির্দেশে তাদের কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকার সুযোগ দেয়া হয়। বেলা ৩টার দিকে হোটেল ’৭১-এর সামনে হঠাত্ দু’টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। কে বা কারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা কেউ বলতে পারেনি।
পুলিশি বেরিকেড সম্পর্কে এডিসি মোল্লা জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘রোববার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তারা সহিংসতা চালিয়েছে। এজন্য তাদের বিক্ষোভ মিছিলের অনুমতি নেই। একসঙ্গে বেশি লোক জড়ো হলে সহিংসতা ঘটাতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনারের মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে স্বল্প পরিসরে সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।’
ঢাকায় ১২ মামলায় আসামি দশ হাজার : রাজধানীতে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে চারটি মামলা রয়েছে দ্রুত বিচার আইনে। এসব মামলায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অজ্ঞাতনামা ১০ সহাস্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এতে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আব্দুস সালাম, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক সরাফতুল্লাহ সফু ও ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল হক রয়েলসহ বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি হিসেবে পরিচিত অনেক নেতাকর্মীর নাম রয়েছে।
বিভিন্ন থানায় গ্রেফতার হওয়া ১২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল ১৬ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শাহবাগ, রমনা, পল্টন, মতিঝিল, তেজগাঁও এবং বাড্ডা থানায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর ৯টির বাদী পুলিশ। অন্যদিকে বোমা বিস্ফোরণে নিহত আরিফুজ্জামান আরিফের পিতা জয়নাল আবেদিন বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
আমাদের সিলেট অফিস জানায়, সিলেটে রোববারের সহিংস ঘটনায় চার থানায় ৭টি মামলা করা হয়েছে। এতে দেড় হাজারের বেশি লোককে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে বিএনপি ও ছাত্রদলের ১২০ জনের মতো নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। পুলিশকে লাঞ্ছিত করার মামলায় তিনশ’ থেকে চারশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দক্ষিণ সুরমায় বাসযাত্রী পুড়ে মরার ঘটনায় একটি হত্যা মামলা, বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একটি এবং পুলিশকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে। তবে পুলিশ মামলার আসামিদের গতকাল পর্যন্ত নাম প্রকাশ করেনি। ইকবাল, আফজাল হোসেন, নিজাম ও সাব্বিরকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। শাহপরান থানায় যানবাহন ভাংচুরের ঘটনায় ছাত্রদল নেতা দিনারসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১১-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। জালালাবাদ থানায় ছাত্রদল নেতা কাজী মেরাজ, মাহবুব চৌধুরীসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে গাড়ি ভাংচুর মামলার আসামি করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানায় ২টি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হলেও পুলিশ অভিযুক্তদের নাম জানাতে পারেনি।
দক্ষিণ সুরমার চণ্ডিপুল এলাকায় সিলেট থেকে হবিগঞ্জগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১ জন বাসযাত্রী পুড়ে মারা যান। এছাড়া নগরীর সোবাহানিঘাট, মেন্দিবাগ, কুমারপাড়া ও সুবিদবাজার, চৌহাট্টা ও পাঠানটুলা এলাকায় আরও ১৫-২০টি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে
রাজশাহী অফিস জানায়, গতকাল রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে গ্রেফতার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিএনপি কর্মীরা থানা ঘেরাও করলে পুলিশ আরও ১১ জনকে গ্রেফতার করে।
সকাল সোয়া ১০টায় মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে আটক করে পুলিশ। পরে তার মুক্তির দাবিতে দুপুরে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার সামনে বিক্ষোভ করায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এ সময় মহিলাকর্মীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। সেখান থেকে ৬ নেতাকর্মীকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এ ঘটনায় নগরজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
খুলনা অফিস জানায়, রোববার গভীররাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা সাবেক কাউন্সিলর হাসিবুল হক বাবলা, জামায়াতের নায়েবে আমির মাস্টার শফিকুল আলম, জেলা কৃষক দল সভাপতি নুরুল হুদা খান বাবুসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া আরও শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা রাতভর অভিযান চালায়।
বিকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, বিজয়ের এ মহান মাসে মুক্তিযুদ্ধের সোল এজেন্ট দাবিদার আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকায় সারাদেশ থেকে সংবর্ধনায় যোগ দিতে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের লাঠিপেটা করেছে। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন। আহত ও গ্রেফতার হয়েছেন সহস্রাধিক। এ ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপির সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মনিরুজ্জামান মনি, শফিকুল আলম মনা, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সৈয়দা নার্গিস আলী, এসএম মোর্শেদ আলম, শেখ মোশারফ হোসেন, মীর কায়সেদ আলী প্রমুখ।
এদিকে রোববার রাতে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা হলেন ২৩নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুল হক বাবলা, সাধারণ সম্পাদক নাসির খান, জেলা কৃষক দল সভাপতি নুরুল হুদা খান বাবু, খালিশপুর থানার ৯নং ওয়ার্ড কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রউফ, ১২নং ওয়ার্ড কমিটির সহ-সভাপতি মো. জামালউদ্দিন, সোনাডাঙ্গা থানার ১৮নং ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান মনি, মাসুদ হোসেন ও মো. মনিরুজ্জামান। তবে গতকাল সোমবার বিকালে তাদের আদালতে পাঠানো হলে প্রত্যেকে জামিন লাভ করেন। জামিন লাভের পর সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে এলে তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। তাদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদ হোসেন রনি, অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট একেএম শহিদুল আলম, অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান চৌধুরী তুষার, অ্যাডভোকেট মহসিন মোল্লা প্রমুখ।
এছাড়া পুলিশ জামায়াত ও শিবিরের যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে তারা হলেন নগরীর দিলখোলা রোডের একটি মেস থেকে ছাত্রশিবিরের কমার্স কলেজ সেক্রেটারি ইমরান হোসেন, সিদ্দিকুর রহমান, রাজা আহমেদ, আলমগীর হোসেন ও আসাদুজ্জামান, খালিশপুর থানা এলাকা থেকে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মাস্টার শফিকুল আলম ও মো. আলাউদ্দিন, দৌলতপুর থানা এলাকা থেকে শিবির নেতা আবুল বাশার, রিয়াজুল ইসলাম, আকবর হোসেন, আবদুল্লাহ মনি, সোহাগ হোসেন, ফারুক হাসান মামুন, রোহানুল আলম, শফিকুল ইসলাম নয়ন ও মো. আল আমিনকে গ্রেফতার করে এবং খানজাহান আলী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামায়াত নেতা নাসিরউদ্দিন গাজী, এসএম কামাল ও ওলিয়ার রহমানকে গ্রেফতার করে।
বরিশাল অফিস জানায়, রোববার ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ ও সরকারি দলের হামলার প্রতিবাদে জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি নেতারা বক্তৃতা করেন।
রংপুর প্রতিনিধি জানায়, পুলিশি বেষ্টনীতে গতকাল দিনব্যাপী রংপুর জেলা বিএনপির কার্যালয় ঘেরাও ছিল। পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাহাজ কোম্পানির দিকে আসতে থাকলে পুলিশ সালেক পাম্পের সামনে বেরিকেড দিয়ে বাধা দেয়। পুলিশের বাধায় নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। সেখানেই প্রতিবাদ সমাবেশ করে জেলা বিএনপির নেতারা। এ সময় বক্তব্য রাখেন রংপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, শহিদুল ইসলাম মিজু, মামুনুর রশিদ মামুন, সুলতান আলম বুলবুল প্রমুখ।
যশোর অফিস জানায়, সোমবার সকালে যশোর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জেলা বিএনপি। সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ জেলা বিএনপির কার্যালয় ঘিরে রাখে। তবে পুলিশ অ্যাকশনে যায়নি।
সকাল ১১টার মধ্যে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে উপস্থিত হয় দলটির নেতাকর্মীরা। এসময় সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল হুদার সভাপতিত্বে এতে বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, দেলোয়ার হোসেন খোকন প্রমুখ। সভা শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।
আমাদের উজিরপুর প্রতিনিধি জানায়, গতকাল বাসায় তল্লাশি চালিয়ে উজিরপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আকন, ছাত্রদল নেতা সবুর হাওলাদার, এনামুল মীর্জা ও লাবিদ হাওলাদারকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

Monday 5 December 2011

সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতির অফিসে তুলকালাম : ভাসানী জিয়া ওসমানীর ছবি নামিয়ে ভাংচুর আওয়ামী আইনজীবীদের


স্টাফ রিপোর্টার

ছবি টাঙানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পুলিশ পাহারায় সুপ্রিমকোর্ট বার সমিতির সভাপতির কক্ষের দরজা ভেঙে হামলা চালিয়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি ভাংচুর করেছেন সরকারদলীয় আইনজীবীরা। এ সময় বাধা দিতে গেলে বিএনপি সমর্থক দুই আইনজীবীর ওপর হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে। হামলাকারীরা সভাপতির কক্ষে ভাংচুর চালান। এতে দরজা-জানালাসহ কক্ষের বিভিন্ন আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তছনছ করা হয় কক্ষের বিভিন্ন জিনিসপত্র। এ সময় হামলাকারীরা সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতিসহ বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের খুঁজতে থাকেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। প্রায় আধাঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডবে পুরো সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ তাণ্ডবে অংশ নেয়া আইনজীবীদের বেশিরভাগই ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। ভাংচুর সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, কারা ভাংচুর করেছে আমি জানি না। তবে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। সভাপতির এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে উত্তেজনা তৈরি হয়। অন্যদিকে আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা বলেন, সরকার সমর্থক আইনজীবীরা সভাপতির কক্ষ তছনছ করেছেন। সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনার জন্য আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের কিছু কর্মকর্তাকে দায়ী করে এর শাস্তি দাবি করেন সাধারণ আইনজীবীরা। তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় ও সুপ্রিমকোর্ট ইউনিটের কোনো নেতাকে তখন দেখা যায়নি এবং প্রতিক্রিয়া নেয়ার জন্যও কাউকে পাওয়া যায়নি।
গতকাল পৌনে ১টার দিকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে সভাপতির কক্ষে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও জেনারেল ওসমানীর ছবি টাঙানো হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির বিপরীত পাশে টাঙানো হয় এ তিন নেতার ছবি। এ সময় আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি গত ১৭ নভেম্বর সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা রাখায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ছবি সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষে টাঙানো হবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ছবি টাঙিয়েছি।
ছবি টাঙানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বেলা পৌনে ২টার দিকে সভাপতির কক্ষের সামনে একদল আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী উপস্থিত হন। একে একে সেখানে হাজির হন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু, একরামুল হক টুটুল, মনিরুজ্জামান রুবেল, মো. সেলিম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ কামরুল হাসান খান আসলামসহ প্রায় ২৫ জন আইন কর্মকর্তা। আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তখন বিএনপি সমর্থক একদল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের অফিসের সামনে হরতালের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে সভাপতির অফিসের সামনে থাকা আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা হরতালবিরোধী পাল্টা স্লোগান দেন। প্রায় ১৫ মিনিটব্যাপী মিছিল পাল্টা মিছিলের একপর্যায়ে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা সভাপতির কক্ষে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু দরজা তালাবদ্ধ থাকায় তারা ঢুকতে পারছিলেন না। আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীদের একজন পাশে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বলেন, আপনি এখন এসেছেন, ওসিকে বলেছিলাম এখানে ফোর্স নিয়ে আরও আগে আসতে। তিনি দেরি করলেন কেন? সব কয়টারে বুঝাবো এবার। পুলিশ কর্মকর্তা জবাবে বলেন, আমরা আছি। আপনার উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। আইনজীবী বলেন, আমরা সভাপতির কক্ষ থেকে জিয়ার ছবি নামাব, এখানে থাইকেন। পরে ওই আইনজীবী একদল পুলিশ সঙ্গে নিয়ে সভাপতির কক্ষের পেছনের দরজার দিকে যান। সমিতির সভাপতি তখন কক্ষে ছিলেন না। সমিতির সহ-সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক এ সময় সরকারি আইনজীবীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। সামনের দিকের দরজা ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে তারা কক্ষের পেছনের দিকের দরজায় যান। পেছনের দরজা ভেঙে তারা সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করেন। আওয়ামী আইনজীবীরা দরজা ভেঙে সভাপতির কক্ষে প্রবেশ করেই অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে জিয়াউর রহমানসহ তিন নেতার ছবি নামিয়ে আনেন। এ সময় মাসুদ রানা ও মানিকসহ কয়েকজন বিএনপি সমর্থক আইনজীবী বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের কিল-ঘুষি মারেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। স্টিলের মই দিয়েও তাদের পেটানো হয়। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের ওপর চলে কিল-ঘুষিসহ মারধর। পুলিশ আওয়ামী আইনজীবীদের সহায়তায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। বিএনপির স্বল্পসংখ্যক আইনজীবী সেখানে টিকতে না পেরে সমিতির দক্ষিণ হলে গিয়ে অবস্থান নেন।
বেলা পৌনে ৩টায় সুপ্রিমকোর্টের দক্ষিণ হলে তাত্ক্ষণিক এক প্রতিবাদ সভায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম রফিকুল হক তালুকদার বলেন, সরকার সমর্থক আইনজীবীরা সভাপতির কক্ষ তছনছ করেছেন। সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনার জন্য আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের কিছু কর্মকর্তাকে দায়ী করে এর শাস্তি দাবি করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট আবদুস শহিদ, অ্যাডভোকেট আইয়ুব আলী, ড. আরিফা জেসমিন, অ্যাডভোকেট পারভীন জেসমিন প্রমুখ। তখন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা হিসেবে যারা সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনে নিজেদের দাবি করেন, তারা কেউ তখন উপস্থিত ছিলেন না। বরং যারা পেছনের সারিতে থাকেন, তাদেরই প্রতিবাদ ও সমাবেশ করতে দেখা গেছে।
অপরদিকে সমিতির উত্তর হলে সভা করেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। জগলুল হায়দার আফ্রিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি নুরুল ইসলাম সুজন, মোতাহার হোসেন সাজু, আসলামসহ আরও অনেকে। সভায় মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, প্রতিবাদের জন্যই আমরা বিচ্ছিন্ন আইনজীবীদের একত্র করেছি। তারা সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চান। ভবিষ্যতে এ ছবি টাঙানো হলে হাত ভেঙে দেয়া হবে। নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, সুপ্রিমকোর্টের একটি ঐতিহ্য আছে। আইনজীবীরা রাজপথের পাশাপাশি সুপ্রিমকোর্টেও তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সভাপতি-সম্পাদক রাজনৈতিক চিন্তা থেকেই তাদের কক্ষে এসব ছবি টাঙিয়েছেন। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর ছবি সুপ্রিমকোর্টে টাঙাতে দেয়া হবে না। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের আরও বলেন, সাধারণ আইনজীবীরা শুরু থেকেই ছবি টাঙানোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ছবি টাঙানো হয়েছে। ভাংচুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত কি-না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আমারও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সমিতি ভবনে কী হয়েছে তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। তবে আইনজীবী সমিতির সভাপতি বারকে বিভক্ত করেছেন। এমনকি তিনি যুদ্ধাপরাধীদেরও পক্ষাবলম্বন করছেন।
গত ১৭ নভেম্বর সমিতির এক সাধারণ সভায় সভাপতি ও সম্পাদকের কক্ষে ভাসানী, ওসমানী ও জিয়ার ছবি টাঙানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা এর আগেও কয়েকদফা বিক্ষোভ করেছিলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তখন বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর পাশে আর কারও ছবি টাঙানো হবে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অন্যদিকে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, সংবিধানের কোথায়ও এ ধরনের কথা লেখা নেই।
গতকাল রাতে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশ-কে জানান, এ ন্যক্কারজনক ঘটনা আওয়ামী লীগেরই মানায়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবিকে অবমাননা করা মানে দেশের স্বাধীনতাকে অবমাননা করা। তিনি বলেন, আজ বেলা সোয়া ১টায় সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাবে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।

Tuesday 29 November 2011

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর অন্য রকম প্রতিবেদন

বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০১১
মানবজমিন ডেস্ক: বাংলাদেশে স্থাপিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। এতে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। আগামী নির্বাচনের আগে এই বিচার করা গেলে বিরোধী দলকে দুর্বল করে দেয়া যাবে। আর এসব ঘটলে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস লেখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। গতকাল অনলাইন নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি ওই পত্রিকার ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। এর লেখক ব্যাংককের সাংবাদিক টম ফেলিক্স জোয়েনক। তার প্রতিবেদনের শিরোনাম- এ ওয়ার ক্রাইমস কোর্ট অ্যান্ড এ ট্রাভেসটি অব জাস্টিস। এতে বলা হয়েছে, পুরান ঢাকায় ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া একটি সরকারি ভবন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের প্রত্যক্ষদর্র্শীদের সাক্ষ্যের কপি একত্রিত করে স্ট্যাপলিং করছেন কেরানিরা। বাংলাদেশ সরকারের মতে, ওই যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ওই সব কেরানির মাথার ওপর একটি মানচিত্র দেখা যায়, তাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর পাশের কক্ষেই বসেন বাংলাদেশে স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান তদন্তকারী আবদুল হান্নান খান। ২০১০ সালের মার্চে এই আদালত স্থাপন করে বাংলাদেশ সরকার। এর উদ্দেশ্য, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য অপরাধ কোন ব্যক্তি, গ্রুপ, সশস্ত্র বাহিনী, প্রতিরক্ষা অথবা সহযোগী বাহিনীর কেউ করে থাকলে তাদের বিচার করে শাস্তি দেয়া। আবদুল হান্নান খান পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক। তিনি অমায়িক লোক। তার মধ্যে কোন তাড়াহুড়ো নেই। তিনি ধীর স্থির মানুষ। তাকে দেখে মনে হয় রাজনীতিতে তার কোন আগ্রহ নেই। তিনি বলেছেন, তার সংস্থা ৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে। তাদের মধ্যে গত ২০শে নভেম্বর প্রথম জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই ইসলামপন্থি দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। ৮৯ বছর বয়সী এই দলটির সাবেক প্রধান গোলাম আযম সহ জামায়াতে ইসলামীর প্রায় সবাই, বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র প্রথম সারির দু’জন নেতার সঙ্গে সাঈদীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। এখনও কোন বিচার হয়নি। তবে এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নামমাত্রই আন্তর্জাতিক আদালত। এর প্রধান লক্ষ্য- ওই সব বাংলাদেশী, যারা পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল। মনে হচ্ছে এই আদালতের মাধ্যমে সরকার দেশের ভিতরে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য পাকিস্তানের সাবেক সেনা সদস্যদের, যারা বাংলাদেশে সহিংসতার জন্য দায়ী তাদের বিচার করা ও শাস্তি দেয়া রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর। এর ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুরোপুরিভাবে ভেঙে যেতে পারে। তাছাড়া, দুই দেশের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় তা করা সম্ভাবও নয়।
এ ঘটনায় আরও লোকজন গ্রেপ্তার করা হবে নিশ্চিত। আবদুল হান্নান খান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ৬ সদস্য, বিএনপি’র ২ সদস্য সহ আরও মোট ১০ সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছেন। এছাড়া, আছেন আশরাফুজ্জামান খান নামে এক মার্কিন নাগরিক, মইনুদ্দিন চৌধুরী নামে এক বৃটিশ নাগরিক। অভিযোগ আছে, তারা দু’জনেই আধা-সামরিক সংস্থা বলে পরিচিত আলবদরের নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে এই আলবদরই বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। আবদুল হান্নান খান বলেন, এর মধ্যে আশরাফুজ্জামান খান থাকেন নিউ ইয়র্কে এবং মইনুদ্দিন চৌধুরী থাকেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। তাদের এত দূরে থাকাটা বিচার ব্যবস্থায় একটি বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, এই বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে না। কারণ, এ দু’ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেই তাদেরকে অভিযুক্ত করা হবে এবং বিচার করা হবে।
আদালত বিচারের প্রহসনে রূপ নিচ্ছে। অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল। এখন দৃশ্যত সরকার আদালতকে রাবারস্ট্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করছে। বেশির ভাগ বাংলাদেশীর কাছে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৫ সালে। তখন বর্তমান আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বপ্রণোদিত একটি দল (প্যানেল) ১৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ হাজির করেন। তাদের মধ্যে বর্তমানে ৭ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের জন্য অপেক্ষা করছেন। ১৯৯৫ সালের ওই প্যানেলে ছিলেন একজন বিচারক। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের ডিফেন্স টিম ওই বিচারকের অপসারণ দাবি করছে। যদিও প্রত্যাশিত নয়, তবুও যদি জামায়াতে ইসলামীর পুরো নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করা হয় এবং দুই বছরের মধ্যে ফাঁসি দেয়া হয় তাহলে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি বেশ দুর্বল হয়ে পড়বে। এ রকম নগ্ন দলীয় বিচারিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জন্মের প্রকৃত ইতিহাস লেখার কাজকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলবে। ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বাধীন তদন্ত সংস্থা ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। এই কমিটির এমএ হাসানের মতে, পাকিস্তানি সেনারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। তারাই নৃশংসতার শতকরা ৯৫ ভাগ সংঘটিত করেছিল। দেশভাঙার চেষ্টা ব্যর্থ করতে তাদেরকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তারা একটি তত্ত্বের ভিত্তিতে এসব কাজ করেছিল। তাহলো- দুই পাকিস্তানের ইসলামিক একত্বের সঙ্গে কোন কিছুর আপস করা হবে না। এখনও তাদেরকে আদালতে আনা হয়নি। পাকিস্তানিদের প্রতি অনুগত হাজার হাজার বিহারি অভিবাসীকে যেসব স্বাধীনতাপন্থি হত্যা করেছিল তাদের কোন সদস্যকেও আদালতে আনা হবে না।
বর্তমান অভিযুক্তদের তালিকা দেখে মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সুবিধা নিতে চায়। আর তা হলো- আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বাধীন যুদ্ধাপরাধের বিচার অনুমোদনের বিষয়টিকে সামনে এনে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ ভাল কাজ করেছেন তা দেখানো।
বিবাদীপক্ষ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীকে নিযুক্ত করেছে। কিন্তু সরকার কার্যত তাদেরকে আদালতে উপস্থিত হতে দেয়া ঠেকিয়ে দিয়েছে। এমনকি তাদেরকে বাংলাদেশে ঢুকতেই দেয়া হয়নি।
রাজনীতিকরণের এই অবস্থার মাঝে এমএ হাসান পক্ষপাতহীন অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। কয়েক বছর আগে, তিনি যুদ্ধাপরাধের অপরাধে জড়িত সন্দেহে সরকারকে ১৭৭৫ জনের একটি তালিকা দিয়েছেন। বর্তমানে যাদের বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে তারাও রয়েছেন ওই তালিকায়। এতে আরও নাম আছে আওয়ামী লীগ জোটের কিছু ব্যক্তির ও পাকিস্তানের সাবেক কিছু সেনা সদস্যের। এমএ হাসানের অফিসে গত মঙ্গলবারের সাক্ষাতের শেষে তিনি দায়মুক্তির চলমান ধারায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি ঢাকার গণহত্যার একটি মানচিত্র দেখান। এতে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ সহ দেখানো হয়েছে ৪৮টি গণকবর।

সর্বশেষ আপডেট বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০১১ ০১:২৭