Friday 30 July 2010

ডাউকিতে ২৪ বাংলাদেশী আটক, সীমান্তে তোলপাড়

Manobzamin | Saturday, 31 July 2010
সিলেট অফিস: ভারতের ডাউকি সীমান্ত থেকে বিএসএফ ও ভারতীয়রা ২৪ বাংলাদেশী নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে। তবে বিডিআর এ ব্যাপারে গতকাল বিকাল পর্যন্ত কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। তবে এ বিষয়টি নিয়ে সীমান্তে তোলপাড় চলছে। তামাবিল সীমান্তের ওপারের ভারতের ডাউকি শহরে বৃহস্পতিবার বিকালে কেনাকাটা করতে গেলে বাংলাদেশের ২৪ জন নাগরিককে খাসিয়া ও বিএসএফ আটক করে।
বাংলাদেশের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল, নলজুরি, আলু-বাগান ও মোকামপুঞ্জি এলাকার ৩০-৩৫ জনের নারী-পুরুষ ভারতের ডাউকিতে বাজার করতে যান। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্ধা হওয়ায় তারা প্রায়ই ডাউকি বাজারে যাতায়াত করতেন। বিএসএফ কিংবা ভারতীয় খাসিয়ারা কখনও তাদের কোন বাধা নিষেধ করেনি। বুধবার ভারতের রংহংকং বস্তির জমিদার টেরা খাসিয়ার ভাগ্নে ব্রি খাসিয়ার পুত্র ডিমী খাসিয়াকে (২৪) আটকের পর বাংলাদেশী সীমান্তবর্তী লোকদের উপর ুব্ধ হয়ে ওঠে ভারতীয় খাসিয়ারা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে ডাউকি বাজারে বাংলাদেশী নাগরিক আটক করতে খাসিয়া ও বিএসএফ অভিযান চালায়। এ সময় ২৪জন লোককে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১১ জন মহিলা ও ১৩ জন পুরুষ। তামাবিল এলাকার ৮জন মহিলা ও ১১জন পুরুষ, আলু-বাগান এলাকার ৩ জন মহিলা ও ২জন পুরুষ রয়েছেন। অভিযানের সময় আলু-বাগান এলাকার স্যাম’র স্ত্রী বিথী নামে একজন পালিয়ে আসেন। বিথী জানিয়েছেন, আমরা ডাউকি বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম। প্রায় সময় আমরা সেখানে যাই। কিছু পান-সুপারিসহ সামান্য কেনাকাটা শেষ চলে আসব এমন সময় সেখানকার খাসিয়ারা দলবদ্ধভাবে বিএসএফ’র সহযোগিতায় বাঙালিদের গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। আমাদের সঙ্গে থাকা নারী-পুরুষসহ ২৪ জনকে আটক করে। তিনি জানান, তাদের এলাকার রুবেল ও রাসেলসহ আরও ৩ মহিলাকে আটক করা হয়। গতকাল এ ব্যাপারে বিডিআরের ২১ রাইফেল ব্যাটেলিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জহিরুল আলম জানিয়েছেন, সীমান্তের লোকজন প্রায় সময় ওপারে যায় বলে শুনেছেন। তবে ২৪ বাংলাদেশী নাগরিক আটকের বিষয়টি তারা নিশ্চিত নয়। তিনি জানান, স্থানীয় এলাকাবাসী কিংবা বিএসএফ’র প থেকে কোন কিছুই জানানো হয়নি। কেউ কোন অভিযোগ দিলে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। এদিকে সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট সীমান্তে ভারতীয়দের আগ্রাসন বাড়ছেই। বিএসএফ’র পাশাপাশি ভারতীয় খাসিয়ারা প্রায় ৫ মাস ধরে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএসএফ’র সহযোগিতায় ভারতীয়রা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জমি দখল ও চাষাবাদ কাজ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশী কৃষকদের ২৬টি গরু গতকাল পর্যন্ত্ত ফেরত দেয়নি ভারত। জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার ১২৭৭ থেকে ১২৮২ নং সীমান্ত পিলার পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিএসএফ’র সহযোগিতায় ভারতীয়রা ভূমি দখল ও চাষাবাদ কাজ করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় দিকে তামাবিল, শ্রীপুর ও মিনাটিলা এলাকায় হালচাষ করতে নামে। বিডিআর জানায়, ১২৭৭ নং ৩-এস পিলার’র আমস্বপ্নপুর এলাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১শ’ গজ ভেতরে প্রবেশ করে জমি দখল ও চাষাবাদ চালায়। এছাড়া আলু-বাগান খাসিয়া হাওর ও পাগলাটিলা এলাকায় আরও ১০-১৫ জন ভারতীয় নাগরিক চাষাবাদ করতে নামে। এ সময় সীমান্তে টহলরত বিডিআর হেন্ড মাইক ও বাঁশি বাজিয়ে ভারতীয়দের চলে যাওয়ার আহবান জানায়। বিডিআর’র বাধা উপো করে ভারতীয় নাগরিকরা চাষাবাদ অব্যাহত রাখে। প্রায় ৩ ঘণ্টা অবস্থান করে তারা ওপারে চলে যায়। তবে গতকাল শুক্রবার কেউ নামেনি।

http://202.79.16.19/index.php?option=com_content&task=view&id=6043&Itemid=1

গার্মেন্ট শিল্পে ফের অস্থিরতা : পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে মহাখালী রণক্ষেত্র



স্টাফ রিপোর্টার |
নতুন মজুরি কাঠামোর প্রতিবাদে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মহাখালী, গুলশান ও বনানী এলাকা। শ্রমিকরা এই এলাকায় ৫ ঘণ্টা বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ ও ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ দফায় দফায় বেধড়ক লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরাও পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা নাসা গার্মেন্টসহ বিভিন্ন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে তৈরি পোশাক রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া একটি গাড়িতে আগুন দেয়, অন্তত ১০টি বাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। শ্রমিকরা গুলশান, বনানী, মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকায় ব্যাংক, শপিংমল, সরকারি-বেসরকারি ভবন, দোকাটপাট ও বিভিন্ন গার্মেন্ট ভবনে ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় এসব এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ যানজট দেখা দেয় এবং মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও গুলশান থানায় ৪টি মামলা করা হয়েছে। এতে ২১ জন এজাহারভুক্ত আসামিসহ দেড় হাজার শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে। এ খবরে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।



বিক্ষোভে অংশ নেয়া শ্রমিকদের দাবি ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা এবং আগস্ট মাস থেকেই সেটা কার্যকর করা। এই দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই হাজার হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিক স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বিক্ষোভে অংশ নেয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। মহাখালী, বনানী ও তেজগাঁও এলাকার গার্মেন্টগুলোতে তাত্ক্ষণিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। পুলিশ ও সরকার সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের একটি অংশ মাইকিং করে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে শ্রমিকদের প্রতিনিধি দল বিজিএমইএ ভবনে আলোচনার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে বলে উল্লেখ করে। শ্রমিকরা এসব অনুরোধ উপেক্ষা করে অবরোধ চালিয়ে যেতে থাকে এবং ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে স্লোগান দেয়। দুপুর ১২টার পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে মগবাজার-মহাখালী, মহাখালী-গুলশান, বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারী গার্মেন্ট শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়।
বিক্ষোভ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিএমইএ ভবন ও আশপাশের এলাকা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, বনানী, মহাখালী, গুলশান, রামপুরা, মিরপুর, পল্লবী, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জসহ গার্মেন্ট কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, দাঙ্গা পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও যেসব এলাকায় গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক রয়েছে, ওইসব এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। অসন্তোষের আশঙ্কায় সাভারের আশুলিয়ায় অর্ধশতাধিক গার্মেন্ট দুপুরের পর ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলেন, নতুন ঘোষিত মজুরি একটি শুভংকরের ফাঁকি। এখানে ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার নয়; বরং ২ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। বিষয়টির ব্যাখা দিয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা খান বলেন, মজুরি বোর্ড মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে এই মজুরি ঘোষণা করেছে। এখানে মূল মজুরি ২ হাজার টাকা, বাসা ভাড়া ৮শ’ টাকা ও চিকিত্সা ভাতা ২শ’ টাকা ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা কেন, বাংলাদেশের শিল্প কারখানা অধ্যুষিত কোনো এলাকাতেই এক রুমের একটি বাসাও ৮শ’ টাকায় ভাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির দাবি মজুরি বোর্ডের নতুন এই ঘোষণা বিশ্বাসঘাতকতা, শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। ৮০ শতাংশ গড় বেতন বৃদ্ধির প্রচারণাকেও ভাঁওতাবাজি বলে মনে করছেন শ্রমিকরা।
পুলিশের দাবি, এই বিক্ষোভের পেছনে একটি মহলের ইন্ধন রয়েছে। বিক্ষোভের পর ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে তাত্ক্ষণিকভাবে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার একেএম শহীদুল হক খান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি কোনো ষড়যন্ত্রে না জড়ানোর জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
গুলশান জোন পুলিশের সহকারী কমিশনার নুরুল আলম জানান, নতুন মজুরির বিষয়টি টেলিভিশন ও পত্রিকায় দেখেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শ্রমিকরা। তারা সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে মহাখালী এবং গুলশান শুটিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরই শ্রমিকরা ভাংচুর ও হামলা চালায়। তাদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বাধা দেয়া মাত্রই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে মহাখালী-গুলশান সড়কের সরকারি তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আশপাশের অফিস ও দোকানে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাংচুর চালায়। এ সময় রাস্তায় চলাচল করা যানবাহনেও তারা ভাংচুর শুরু করে। শ্রমিকরা লোহার রড, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল দিয়ে বিভিন্ন ভবন ভাংচুর করে। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে এই রাস্তায় কয়েক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ শ্রমিকদের তাড়া দিয়ে লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। দুপুর ১২টার দিকে এই সড়কে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গুলশান লিংক রোডে একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে কিছু পোশাক এনে আগুন দেয়। এছাড়াও তারা পুরনো টায়ার রাস্তায় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গাড়ি এসে আগুন নেভায়। নাসা গার্মেন্টের এক কর্মকর্তা জানান, ডেলিভারি দেয়ার জন্য বেশকিছু পোশাক তৈরি করা ছিল। শ্রমিকরা দারোয়ানদের মারধর করে পোশাকগুলো রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, পুলিশ কাছাকাছি থাকলেও পোশাকগুলো রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। পুলিশ সময়মত উদ্যোগ নিলে পোশাকগুলো রক্ষা করা সম্ভব হতো।
সকাল ১১টার দিকে গুলশান-১ থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে ভাংচুর করে। তারা সামনে যা পেয়েছে, তাই ভেঙেছে। এ সময় কয়েকটি দোকান লুট হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় গুলশান-১ নম্বরে নাভানা টাওয়ার, ওয়াশিংটন হোটেল, জব্বার টাওয়ার, উদয় টাওয়ার, বালিয়াড়ি ভবন, হাবিব মার্কেট, কামাল টাওয়ারসহ অর্ধশত মার্কেট ও ভবন ভাংচুর হয়। রড ও শাবল দিয়ে মার্কেটের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে শ্রমিকরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এ সময় সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলশান-১ থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এ সময় কয়েকটি যানবাহনও ভাংচুর করে। নাভানা টাওয়ারের সামনে একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাস্তায় শ্রমিকরা টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল করে। নাভানা টাওয়ারের নিচে একটি চশমার দোকানে ঢুকে ভাংচুর ও লুটপাটও করেছে তারা। এর কিছুক্ষণ পরই আগোরা চেইন শপিংমলে ঢুকে হামলা চালানো হয়।
আলী হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, মালিকপক্ষ আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ন্যূনতম মজুরি যা নির্ধারণ করেছে তা আমরা নিরুপায় হয়ে মেনে নিয়েছি। কিন্তু তা আগামী মাস থেকে বাস্তবায়ন করলে শ্রমিকদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি হতো না। তারা নভেম্বর থেকে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়া মানে আমাদের ৩ মাস পিছিয়ে দেয়া। সামনে রমজান মাস, ঈদ ও কোরবানিতে আগের বেতনেই আমাদের কাজ করতে হবে। এরপর দেখা যাবে নভেম্বর মাসেও ওই মজুরি বাস্তবায়ন হয়নি। সব মিলিয়ে এক ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে মালিক ও সরকার। শাহআলম নামে এক শ্রমিক বলেন, আমরা পত্রিকা ও টেলিভিশনে খবর দেখেই বুঝতে পেরেছি আন্দোলন থেকে আমাদের দূরে রাখার জন্য আপাতত দায়সারাভাবে একটি বেতন কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। ন্যূনতম বেতন ৩ হাজার টাকা হলেও আমরা মেনে নিতাম। কিন্তু তা না করে আমাদের মজুরি ধরা হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা আর বাকি ১ হাজার টাকা বাসা ভাড়া ও চিকিত্সা খরচ। তিনি বলেন, এখন ঢাকায় রিকশা চালালেও এক বেলায় ৩শ’ টাকা রোজগার করা যায়। তারপরও এই মুহূর্তেই ঘোষিত কাঠামো বাস্তবায়ন করা হলে আমরা তা মেনে নিতাম। কিন্তু এই সামান্য বেতনও দেয়া হবে তিন মাস পরে। তিনি আরও বলেন, মালিক পক্ষ ও সরকার তাদের অবস্থানেই অনড় থাকলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। অপর এক নারী শ্রমিক বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আমাদের জন্য যে বেতন কাঠামো দেয়া হয়েছে তা নিয়েও এক ধরনের প্রহসন চলছে। এখন এর সমাধান না হলে ৩ মাস পর আবার আন্দোলন করতে হবে। দুটি ঈদে আমাদের আগের মতোই সেই ন্যূনতম মজুরি গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আন্দোলন না করলে আমাদের কথা কেউ শোনেন না।
তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় ঢাকা ডাইং নামে একটি কারখানার শ্রমিক জুয়েল জানান, নতুন বেতনের কথা তিনি শুনেছেন, তার বেতন কত বাড়বে, আদৌ বাড়বে কিনা সেটা তিনি নিশ্চিত নন। তবে তার কয়েক সহকর্মী বলেছেন, এতে তাদের কোনো বেতন বাড়বে না।
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় জেশন ওষুধ কারখানার শ্রমিক আবদুর রহমান বলেন, সকালে মহাখালী থেকে যখন আন্দোলন করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা গুলশানের দিকে যাচ্ছিল, তখন আমরা কাজ বন্ধ করে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করি। তখন ভিতর থেকে আমাদের নিষেধ করা হয়। আমাদের বের হতে না দেয়ায় বাইরে থেকে এই ওষুধ কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। এ সময় পাশেই নাসা গ্রুপের গুদামে হামলা চালায় শত শত শ্রমিক। তারা ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে ৮/১০টি গাড়ি ভাংচুর করে। ভিতর থেকে তৈরি পোশাক রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দুপুর ১২টার পর থেকে পুলিশের ব্যাপক অ্যাকশনের মুখে মহাখালী, বনানী ও গুলশান এলাকার রাস্তা থেকে শ্রমিকরা সরে যায়। জুমার নামাজের সময় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে এবং রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আড়াই ঘণ্টা পর সকাল ১১টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তায় জড়ো হওয়া শ্রমিকদের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন তেজগাঁও অঞ্চলের উপ-পুলিশ কমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। মাইক দিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের নিয়ে আমরা বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের কাছে যাব। তার আগে আপনারা রাস্তা ছেড়ে দিন।
শ্রমিকরা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, মজুরি বোর্ডের কর্মকর্তা ও বিজিএমইএ নেতারা এসে ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণ করে আগস্ট মাস থেকে এর বাস্তবায়নের ঘোষণা দিলেই তারা অবরোধ তুলে নেবেন। পরে পুলিশের ব্যাপক অ্যাকশনের মুখে দুপুর ১২টার দিকে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ সময় শ্রমিকরা বিপুলসংখ্যক ইট জোগাড় করে পুলিশের দিকে ছুড়তে থাকে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার। জাতীয় শ্রমিক জোট, গার্মেন্ট শ্রমিক জোট এবং গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনসহ শ্রমিক ও গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন নতুন মজুরি কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর বিশৃঙ্খলা হতে পারে। তাই তিনি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকার সংসদ সদস্যদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
শ্রমিক সংগঠনের নতুন মজুরি প্রত্যাখ্যান : ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণাকে শুভংকরের ফাঁকি ও প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোটের নেতা সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের মূল মজুরি ৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বর্তমান বাজারদর বিবেচনা না করে মজুরি বোর্ড মূল মজুরি ২ হাজার টাকা ঘোষণার সুপারিশ করে এবং মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের জন্য মূল মজুরি ২ হাজার টাকা ঘোষণা করেছে। এই টাকায় কোনো অবস্থাতেই একটি শ্রমিক পরিবারের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ সব দেশেই ন্যূনতম মজুরি আমাদের নতুন ঘোষিত মজুরির চেয়ে দিগুণেরও অনেক বেশি। তাই তারা মূল মজুরি ৫ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানান।
এই মজুরি কাঠামোকে মালিক তোষা হিসেবে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, এটি শুভংকরের ফাঁকি। তারা কোনোভাবেই এই নতুন মজুরি মেনে নেবেন না। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম বলেন, নতুন ঘোষিত মজুরি শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছুই নয়। এখানে ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা ৩ হাজার টাকার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে মূল মজুরি ২ হাজার টাকা মাত্র। বাকি ৮শ’ টাকা বাসা ভাড়া ও ২শ’ টাকা চিকিত্সা খরচ। দেশের শিল্প কারখানা অধ্যুষিত কোনো এলাকাতেই এই দামে বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে না এবং এই টাকা দিয়ে একটি পরিবার কোনোভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই মজুরি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ) সভাপতি ফয়জুল হাকিম নতুন মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ১৩শ’ ক্যালরি খাবার প্রয়োজন, যার জন্য ব্যয় হয় ৬০ টাকা। সেই হিসাবে চারজনের সংসারে মাসে ন্যূনতম ব্যয় ৭ হাজার ২শ’ টাকা। তার ওপর ঘর ভাড়া, চিকিত্সা , শিক্ষা ও বিনোদন ব্যয়। এসব কিছু অস্বীকার করে ৩ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/31/36803
-----------------------------------------------------------------------

তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশানে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ
দোকান ব্যাংক গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর


নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ৩১-০৭-২০১০



বিক্ষুব্ধ তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার একপর্যায়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন গলিতে পুলিশের লাঠিপেটা

ছবি: জিয়া ইসলাম

*

সরকারঘোষিত মজুরির প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার পোশাকশ্রমিকেরা রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশানসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেছেন। সকাল সাড়ে আটটা থেকে তিন ঘণ্টা ধরে তাঁরা বিক্ষোভের নামে বিপণিবিতান, ব্যাংক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ২০০ স্থাপনা ও যানবাহন ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে অন্তত ৫০ জন আহত হন। এ ঘটনায় দুই থানায় মোট চারটি মামলা হয়েছে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার টাকা ঘোষণা করে সরকার। শ্রমিকেরা পাঁচ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরিসহ আগামী মাস থেকেই তা কার্যকর করার দাবিতে রাস্তায় নামেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও শ্রমিকেরা জানান, পাঁচ-ছয় হাজার পোশাকশ্রমিক গতকাল সকালে কাজে যোগ না দিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় কারখানার সামনে জমায়েত হন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে কয়েকটি কারখানা ও কারখানার সামনে রাখা যানবাহন ভাঙচুর করে তাঁরা। ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কয়েক দিনের চলমান শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এ এলাকায় গতকাল বেশির ভাগ কারখানাই বন্ধ ছিল। কারখানার সামনে থেকে শ্রমিকদের ছোট ছোট জটলা সকাল সোয়া আটটা থেকে রাস্তায় এসে জড়ো হয়। সাড়ে আটটার দিকে তেজগাঁও এলাকায় শ্রমিকদের সংখ্যা কয়েক হাজার হয়। শ্রমিকেরা কারওয়ান বাজারসংলগ্ন এফডিসি ক্রসিং থেকে শুরু করে সাতরাস্তা-মহাখালী থেকে বনানী ক্রসিং, তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোড পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। তখন তেজগাঁও, বিমানবন্দর ও গুলশান সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কগুলো ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়ে। এফডিসি সিগন্যাল থেকে শুরু করে সাতরাস্তা, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বনানী পর্যন্ত রাস্তা শ্রমিকেরা দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
সকালে ফাঁকা রাস্তায় শ্রমিকেরা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু যানবাহন ভাঙচুর করেন। মহাখালী ক্রসিং পুরোপুরি দখলে নিয়ে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মহাখালী ও গুলশান এলাকায় শত শত শ্রমিক রাস্তায় নামেন। তাঁদের সঙ্গে তেজগাঁও এলাকারও কিছু শ্রমিকও যোগ দেন। হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। সকাল নয়টার দিকে তাঁরা মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান-১ হয়ে গুলশান-২ পর্যন্ত মিছিল করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা দুই ঘণ্টা ধরে মহাখালী (আমতলী), ওয়্যারলেস গেট হয়ে গুলশান-১ ও ২-এর রাস্তার দুই ধারের দুই শতাধিক দোকান, ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ, হোটেল, মার্কেট ও যানবাহনে ভাঙচুর চালান।
যেসব প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা হয়: নাভানা শপিং কমপ্লেক্স, জারা মার্কেট, হাবিব সুপার মার্কেট, মলয় ক্যাপিটাল সেন্টার, ম্যাসিভ লাইটিং হাউস, সিমেন্স শোরুম, সেফরন, কাদেরিয়া টাওয়ার, অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, স্যামসং শোরুম, ট্রাফেল রেস্টুরেন্ট, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, স্যোশাল ইসলামিক ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক। এ ছাড়া চেকোস্লোভাকিয়া কাউন্সিলরের কার্যালয়, মেয়র ভবন, গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ার, কুমুদিনী ট্রাস্ট, শপার্স ওয়ার্ল্ড, সুপার শপ আগোরা, নাফি টাওয়ার, উদয় টাওয়ার, বেজ গ্যালারি, নাভানা ফার্নিচার, লোটাস কামাল টাওয়ার-২, সুবাস্তু ইমাম স্কয়ার, মলি টাওয়ার, আর এম সেন্টার, জব্বার টাওয়ার, হোটেল ওয়াশিংটন, রূপায়ণ সেন্টার, রয়্যাল থাই রেস্টুরেন্ট, আলমাস সুপার শপ, হোটেল ওয়াশিংটন, বাটারফ্লাই শোরুম, র‌্যাংগস মোটর, মিতসুবিশি মোটরস, জেসন ওষুধ কোম্পানি, অ্যারিস্টোক্র্যাট রেস্টুরেন্ট, বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে এ আর গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডসহ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এবং তেজগাঁও লিংক রোডে নাসা গ্রুপ, এর ভেতর থাকা পাঁচটি প্রাইভেট কার ও পিকআপ ভাঙচুর করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু গুলশান এলাকায় দেড় শ বিপণিবিতান, ব্যাংক, হোটেল ও রেস্তোরাঁ ভাঙচুর করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকেরা গুলশান-১-এর গোল চত্বরে রাস্তার দুই ধারে অতর্কিতে বিপণিবিতানে ভাঙচুর শুরু করেন। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাঁরা পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রায়হানসহ পুলিশের ১০ সদস্য আহত হন। সেখানে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন শ্রমিকেরা।
গুলশান-১-এর কাছে জারা মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শিশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মার্কেট ভাঙচুরের সময় হামলাকারীরা চিৎকার করে বলেন, ‘এরা ধনী, এদের জিনিসপত্র ক্ষতি হলে সরকারের কাছে খবর যাবে।’ ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, এই হামলার পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে।
গুলশান-১-এর গোল চত্বরে কর্তব্যরত টহল পুলিশের সহকারী কমিশনার আনিসুজ্জামান জানান, সকাল ১০টার পর প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক অতর্কিতে ব্যাংক, বিপণিবিতানে ভাঙচুর শুরু করে। বাধা দিতে গেলে তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করেন। সকাল ১০টার দিকে তেজগাঁও এলাকায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা একত্র হয়ে মহাখালী আন্তজেলা বাসটার্মিনালের সামনে জড়ো হন। তাঁরা রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। যাত্রীবাহী বাস রক্ষায় পরিবহনশ্রমিকেরাও টার্মিনালের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে নেমে পড়েন। পুলিশ কর্মকর্তারা শ্রমিকদের বিচ্ছিন্নভাবে ও হাতমাইকে বারবার রাস্তা ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে রিকশায় মাইক লাগিয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির শ্রমিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার ভাই। আপনাদের দুঃখ আমি বুঝি। রাস্তা ছেড়ে দেন। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করব।’ শ্রমিকেরা তাঁর কথা না শুনে উল্টো স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর লাঠিপেটা করে। শ্রমিকেরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ঢিল ছোড়েন। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে এ অবস্থা চলার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্রমিকেরা রাস্তা ছেড়ে অলিগলিতে ঢুকে পড়েন। দুপুর একটার দিকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যান চলাচল শুরু হয়।
গুলশানে ভাঙচুর হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ প্রভৃতি।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে দু-তিন হাজার শ্রমিক বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশ তাঁদের বারবার বুঝিয়েও রাস্তা থেকে সরাতে পারেনি। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গতকাল দুপুরে গিয়ে মহাখালী থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দু-একটি ছাড়া সব স্থাপনারই কাচ ভাঙা দেখা যায়। দুপুরে তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশান এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঢিল, ভাঙা কাচের গুঁড়া আর গাছের ভাঙা ডাল পড়ে থাকতে দেখা যায়। আন্দোলনরত শ্রমিকেরা সড়ক বিভাজকের কাঁটাতারের বেড়ার খুঁটি ও গাছ উপড়ে ফেলেন।
জানা যায়, সকাল আটটা থেকে পাঁচ ঘণ্টা মহাখালী আন্তজেলা বাসটার্মিনাল থেকে কোনো বাস ঢাকার বাইরে ছেড়ে যায়নি। বাইরে থেকেও কোনো বাস আসেনি। রাস্তার পাশে দাঁড়ানো বাসগুলো না ভাঙার জন্য অনুরোধ করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। একপর্যায়ে বাসগুলোকে রক্ষায় পরিবহনকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।
ভৈরব থেকে সকালে ঢাকায় এসেছেন চলনবিল পরিবহনের চালক বেলাল। রাস্তার পাশে রাখা বাসটি নিয়ে প্রতি মুহূর্ত তাঁর কেটেছে চরম উদ্বেগের মধ্যে। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ছিলেন এ অবস্থায়। বেলাল বলেন, ‘আমি চিন্তা করতাছিলাম, আমার ভাড়া মারনের কাম নাই। গাড়ি নিয়া বাড়ি যাইতে পারলেই হয়।’
মহাখালীর জেমিনি গার্মেন্টসের পারভীন আক্তারের দাবি, সরকারঘোষিত তিন হাজার টাকায় তাঁর সংসার চলবে না। আর নভেম্বর থেকে মজুরি বাস্তবায়নের কথা বলে মালিকেরা ঈদ বোনাস না দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এই মাস থেকেই মজুরি বাস্তবায়ন চান তাঁরা।
আরেক শ্রমিক লিয়াকত বলেন, ‘খাইতে লাগে এক হাজার টাকা, বাসা ভাড়া দেড় হাজার টাকা আর বাকি ৫০০ টাকা থিকা বাড়িতে পাডানো, কাপড়চোপড়, অন্যান্য খরচ ক্যামনে চলব।’
গতকাল ছিল ৩০তম বিসিএস পরীক্ষা। তেজগাঁও অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আসা-যাওয়ার সময় যানবাহন না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। মহাখালী থেকে শত শত মানুষ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ফার্মগেটের দিকে রওনা হয়।
মহাখালী ফ্লাইওভারের পাশের একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সকাল নয়টার দিকে হাজার তিনেক শ্রমিক ফ্লাইওভারের নিচে সড়কে এসে জড়ো হন। তাঁরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কিছু যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে তাঁদের সরিয়ে দেয়।
কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট জীবন কুমার রায় প্রথম আলোকে জানান, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থেকে ৫০-৬০ জন করে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ফ্লাইওভারের নিচে জড়ো হন। এঁদের অধিকাংশই মহখালীর আমতলী হয়ে গুলশান-১-এর দিকে এবং বাকিরা বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকার পোশাক কারখানা থেকে শ্রমিক নামিয়ে আনেন।
মামলা: গতকাল সন্ধ্যায় ভাঙচুরের ঘটনায় গুলশান-১-এর নাভানা শপিং কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাত-আট শ পোশাকশ্রমিককে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় নাভানা টাওয়ারে আইল্যান্ডার নামের একটি চশমার দোকানে লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এতে মোট আসামি দেড় থেকে দুই হাজার পোশাকশ্রমিক। চারটি মামলাতেই ১০ পোশাকশ্রমিক নেতাকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মোশরেফা মিশু, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, মন্টু ঘোষ, সুলতান বাহার, নাসিমা নাসরিন, কল্পনা আখতার, রুহুল আমিন, বাবুল আকতার ও আবুল হোসেন। রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শিল্পাঞ্চল থানায় দুজন ও গুলশান থানায় আটজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামালউদ্দিন বলেন, মামলায় বলা হয়, এজাহারভুক্ত আসামিরা অস্ত্রশস্ত্রে (দা, লাঠি, রড, ককটেল) সজ্জিত হয়ে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাংক, হোটেল, বিপণিবিতানে ভাঙচুর করেছেন। তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা করেছেন এবং সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন।
পল্টনে বিক্ষোভ-সমাবেশ: ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবিতে পল্টন ও প্রেসক্লাব এলাকায় গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ ও সমাবেশে করেছেন পোশাকশ্রমিকেরা। এ সময় তেজগাঁওয়ে পোশাককর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানায় শ্রমিক সংগঠনগুলো।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ট্রেড ইউনিয়ন সংহতি ও গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যপরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শ্রমিকেরা এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
নাসিমা আকতার নামের এক পোশাকশ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার টাকার দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু মজুরি নির্ধারণ করা হলো তিন হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ঢাকায় বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।’
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকলিমা আকতার বলেন, তিন হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হলেও এর মধ্যে অসংখ্য মারপ্যাঁচ আছে। কারণ শিক্ষানবিশ অবস্থায় একজন শ্রমিক আড়াই হাজার টাকা পাবেন। এখন তাঁকে টাকা কম দিতে হয়তো বছরের পর বছর শিক্ষানবিশ রাখা হবে।
তেজগাঁওয়ে আহত শ্রমিক বিবি আমেনা ও নাসরিন বেগম বলেন, ‘অপারেটর হিসেবে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করি। কিন্তু এখনো বেতন দুই হাজার ৭০০ টাকা। ন্যূনতম মজুরি কবে হবে, কবে পাওয়া যাবে, সেটি কেউ বলতে পারছে না।’

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-31/news/82786

BJI top leaders arrest is a part of pre-planned crackdown on opposition party

Wednesday 28 July 2010

সংবিধান এবং সরকারের গোপন এজেন্ডা

শা হ আ হ ম দ রে জা
সংবিধান সংশোধনের জন্য সরকারের নেয়া উদ্যোগ আস্থার পরিবর্তে জনগণের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। এর প্রথম কারণ সংবিধানসম্মত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরাসরি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে পা না বাড়িয়ে ক্ষমতাসীনরা আদালতের একটি বিতর্কিত রায়কে অবলম্বন করেছেন, অজুহাত বানিয়েছেন। রায়টির নানাদিক নিয়ে এরই মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে পুনরাবৃত্তিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু এটুকু স্মরণ করাই যথেষ্ট যে, এটা যে মামলার রায় সে মামলার আবেদনে পঞ্চম সংশোধনী কোনো বিষয় ছিল না। মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল পুরনো ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে। এরই সূত্র ধরে ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট দেয়া রায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ উঠেছে প্রথম থেকে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি ফজলে কবির আসলে নিজেদের এখতিয়ারের সীমা অতিক্রম করে রায়টি দিয়েছেন। এটা অনেকটা জুতা সেলাই করতে গিয়ে চণ্ডি পাঠ করার মতো ব্যাপার। দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদ জড়িত রয়েছে বলে একটি সিনেমা হলের মালিকানাসংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে পঞ্চম সংশোধনীর মতো রাষ্ট্রীয় বা সংবিধানের কোনো বিষয়কে টেনে আনা সমীচীন মনে করেননি আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, সংশোধনীসহ সংবিধানসংক্রান্ত সব বিষয়ে এখতিয়ার রয়েছে কেবল জাতীয় সংসদের। এ প্রসঙ্গে সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের বক্তব্য উল্লেখযোগ্য। একই মামলার লিভ টু আপিলের শুনানিতে অংশ নিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, পঞ্চম সংশোধনী দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদে পাস হয়েছিল। সেটা বাতিল বা সংশোধন করার এখতিয়ারও একমাত্র সংসদেরই, কোনো বিচারপতির নয়। টিএইচ খান আরো বলেছেন, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ হাইকোর্ট বিভাগকে কিছু ক্ষমতা দিয়েছে সত্য, কিন্তু তাই বলে সংসদে পাস হওয়া কোনো সংশোধনী বাতিলের ক্ষমতা দেয়নি।
সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের যুক্তি ও বক্তব্যের পর্যালোচনায় পরিষ্কার হয়েছে, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার মতো কার্যক্রমের এখতিয়ার সংবিধান শুধু জাতীয় সংসদকেই দিয়েছে। সংবিধান কীভাবে সংশোধন করতে হবে সে কথাও সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে। প্রয়োজন পড়লে কোনো বিচারপতি বড়জোর এর ব্যাখ্যা দিতে পারেন, কিন্তু নিজেই পঞ্চম সংশোধনীর মতো কোনো ‘অ্যাক্ট অব পার্লামেন্ট’কে বাতিল করতে পারেন না। এ সম্পর্কিত উদাহরণের সংখ্যাও কম নয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি এফকেএমএন মুনীম, বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন এবং বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী সামরিক ফরমানের বৈধতা দিয়ে গেছেন। তারা সামরিক শাসনকে বাতিল না করে অনুমোদন দিয়েছেন। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালত হিসেবে হাইকোর্টের জন্য সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা নেয়া ও মেনে চলা বাধ্যতামূলক। ফলে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার এবং পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার এখতিয়ার হাইকোর্টের কোনো বিচারপতির থাকতে পারে না। কারণ, সুপ্রিমকোর্টের পূর্ববর্তী প্রধান বিচারপতিরা এর বৈধতা দিয়ে গেছেন।
অন্যদিকে এ রায়কে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ সরকার তত্পর হয়ে উঠেছে। সরকার জাতীয় সংসদকে থানা-পুলিশের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। ক্ষমতাসীনরা এমনভাবেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন যেন থানা-পুলিশের মতো জাতীয় সংসদের জন্যও আদালতের রায় কার্যকর করা বাধ্যতামূলক! যেন ঠিক এ মুহূর্তে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল না করা হলে মহাভারত একেবারে অশুদ্ধ হয়ে যাবে! সংশয় বেড়ে যাওয়ার অন্য একটি কারণ হলো, ক্ষমতাসীনরা শুধু পঞ্চম সংশোধনীই বাতিল করতে চাচ্ছেন না, রায়টিকে অজুহাত বানিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানও পুনর্বহাল করতে চাচ্ছেন—যদিও রায়ে তেমন কোনো নির্দেশনা নেই। এ জন্য তারা সংবিধান সংশোধন করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। কিন্তু এ প্রক্রিয়াতেও ক্ষমতাসীনরা নিজেদের উদ্দেশ্যের ব্যাপারে মানুষের মনে আস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে সংসদীয় কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করা দরকার। ‘সর্বদলীয়’ কমিটির ঘোষণা দিলেও সরকার প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে পর্যন্ত কমিটিতে রাখেনি। বিএনপির মাত্র একজন সদস্যের নাম চেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন সরকারি দলের চিফ হুইপ। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কার্যপ্রণালী বিধি অনুসারে চিফ হুইপ বিরোধী দলের নেত্রীকে এ ধরনের চিঠি লিখতে পারেন না। পারেন সংসদ নেত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার অনুপস্থিতিতে উপসংসদ নেত্রী সাজেদা চৌধুরী। বিষয়টি ক্ষমতাসীনদের না জানার কথা নয়। তা সত্ত্বেও চিফ হুইপকে দিয়ে চিঠি পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো, বিএনপি যাতে ক্ষুব্ধ হয়, কোনো সদস্যের নাম না পাঠায় এবং সংসদীয় কমিটিকে বর্জন ও প্রত্যাখ্যান করে। তেমন অবস্থায় সরকার জনগণকে বলতে পারবে, তারা বিরোধী দলকেও কমিটিতে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বিরোধী দলই আসেনি! ক্ষমতাসীনরা একে কৌশল হিসেবে চমত্কার মনে করতে চাইলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা আসলে খুবই কাঁচা খেলা। অমন খেলার উদ্দেশ্য কিশোর-কিশোরীরাও বুঝতে পারে।
অন্য একটি কারণেও সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়েছে। ‘সর্বদলীয়’ নামের সংসদীয় কমিটিতে জামায়াতে ইসলামী, বিজেপি ও এলডিপির কাউকে রাখা হয়নি। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে যে রাখা হবে না সে ঘোষণা ক্ষমতাসীনরা প্রথম থেকেই দিয়ে এসেছেন। এ ব্যাপারে বিগত কয়েক দিনে বিশেষ করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে খুবই সোচ্চার দেখা গেছে। টিভির টকশোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিস্টার সেনগুপ্ত পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, জামায়াতকে ‘রাখার প্রশ্নই ওঠে না’। অন্যদিকে সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ক্ষমতাসীনদের রয়েছে কি না। কারণ আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পর জামায়াত বাংলাদেশের চতুর্থ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতিটি সংসদে জামায়াত প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। বর্তমান সংসদেও দলটির প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘ডিজিটাল’ নির্বাচনে হারিয়ে দেয়া হলেও প্রতি আসনে গড়ে ৮৬ হাজার ৫৪৬টি করে ৩৮ আসনে জামায়াত পেয়েছিল ৩২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮২ ভোট। এর সঙ্গে রয়েছেন বাকি ২৬১ আসনে জামায়াতের ভোটাররা—যারা বিএনপিসহ চারদলীয় জোট প্রার্থীদের ভোট দিয়েছিলেন। সবচেয়ে রক্ষণশীল হিসেবে প্রতি আসনে যদি ১০ হাজার করে ধরেও ৩৮ আসনে প্রাপ্ত ভোটের সঙ্গে যোগ করা হয় তাহলে দেখা যাবে, দেশে জামায়াতের ভোটার রয়েছেন অন্তত ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮২ জন। জামানত বাজেয়াপ্ত না হওয়াসহ সামগ্রিক অর্জনের ক্ষেত্রেও জামায়াত ছিল যথেষ্ট সম্মানজনক অবস্থানে। আওয়ামী লীগ চারটি আসনে এবং জাতীয় পার্টি ১২টি আসনে জামানত হারিয়েছে। ১৫৫৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৩২ জনের অর্থাত্ ৬০ শতাংশেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কিন্তু জামায়াতের একজন ছাড়া কারো জামানত বাজেয়াপ্ত হয়নি। যার বাজেয়াপ্ত হয়েছিল তিনিও ৩২ হাজার ৫২৭ ভোট পেয়েছিলেন। সুতরাং গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান থাকলে জামায়াতকে সংসদীয় কমিটিতে ‘রাখার প্রশ্নই ওঠে না’ ধরনের মন্তব্য করার সুযোগ থাকতে পারে না। ‘সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল’ দলগুলোর সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হলে সে কমিটিতে জামায়াতের এমপিদের রাখতে হবে। এটাই গণতন্ত্রের নির্দেশনা। অন্যদিকে বাদ তো দেয়া হয়েছেই, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে দিয়ে একথা পর্যন্ত বলানো হয়েছে যে, কমিটিতে জামায়াতকে ‘রাখার প্রশ্নই ওঠে না’। প্রশ্ন কেন উঠবে না—সে প্রশ্নই বরং জোরেশোরে উঠেছে। কারণ, সরকার এমন দু-একজনকেও কমিটিতে রেখেছে, যারা নিজেদের দলের নাম নিয়ে নির্বাচন করার সাহস পর্যন্ত পাননি। জিতেছেন আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে।
১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল করার আড়ালে সরকারের গোপন কয়েকটি এজেন্ডা রয়েছে বলে প্রচারণার ফলেও জনমনে ভীতি ও সংশয় ছড়িয়ে পড়েছে। এসব বিষয়ে খোলামেলাভাবেই জানিয়ে চলেছেন ক্ষমতাসীনরা। তারা বলেছেন, সংবিধানের ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদ পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল বাতিল করা হবে। ক্ষমতাসীনরা অবশ্য ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। যেমন বিভিন্ন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কিছু ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় ছাড়া বর্তমান সংবিধানকে সম্পূর্ণরূপে ১৯৭২-এর অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া হবে। বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ ও রাষ্ট্রধর্ম প্রধানমন্ত্রী বর্ণিত ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধান। কথার মারপ্যাঁচে প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্বহাল করা হলেও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বাদ দেয়া হবে না। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাইকোর্টের রায় অনুসারে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বহাল থাকার কথা নয়। সরকার রাষ্ট্রধর্ম-সংক্রান্ত বিধানও বাতিল করে দেবে। একই সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দল বাতিল করার পাশাপাশি সংবিধানে এমন আরো অনেক পরিবর্তনও সরকার করবে—যেগুলো বিশেষ করে মুসলিম জনগণের চিন্তা, বিশ্বাস ও স্বার্থের পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রী শুধু নন, অন্য মন্ত্রী ও নেতারাও বিভিন্ন সময়ে সরকারের এসব উদ্দেশ্য পরিষ্কার করেছেন। যেমন—সর্বশেষ উপলক্ষে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে গেলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ থাকবে না। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও সমপ্রতি বেশ কিছু উপলক্ষে স্পষ্টভাষায় জানান দিয়েছেন। তিনি আবার নাম ধরে বলেছেন, ১৯৭২-এর সংবিধান পুনর্বহাল করা হলে জামায়াতে ইসলামীর মতো ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনীতি করার সুযোগ থাকবে না। এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশপ্রেমিকরা সঠিকভাবেই আশঙ্কা করছেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার আড়ালে সরকার আসলে ইসলামী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে এমন কিছু বিষয়, যেগুলোর মীমাংসা না করে সংবিধান সংশোধন করার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যেমন—১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে চাইলে সরকারকে প্রথমেই ঘোষণা দিয়ে স্বীকার করতে হবে, তাদের নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান অনেক ক্ষেত্রেই ভুল ও অন্যায় করেছিলেন। জনগণকে এ কথাও জানাতে হবে যে, ১৯৭২ সালের সংবিধানও ‘অক্ষত’ ছিল না। বরং মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সংবিধানকে চার-চারবার ‘কাটাছেঁড়া’ এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় ‘ক্ষতবিক্ষত’ করা হয়েছিল। ‘কাটাছেঁড়া’ এবং ‘ক্ষতবিক্ষত’ করার কাজটুকু করেছিলেন স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রবর্তন করেছিলেন এবং এই আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতন চালিয়েছিলেন। এর পরপর তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব ভারতের হাতে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বেরুবাড়ি তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আদায় করতে পারেননি তিনবিঘা করিডর। পাশাপাশি রয়েছে চতুর্থ সংশোধনী—যার মাধ্যমে দেশে সংসদীয় পদ্ধতির স্থলে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি প্রবর্তন করা এবং বাকশালের একদলীয় শাসন চাপানো হয়েছিল। সমগ্র এই প্রক্রিয়া ও কর্মকাণ্ডের একমাত্র নির্দেশদাতা, নিয়ন্ত্রক ও লাভবান ব্যক্তি ছিলেন শেখ মুজিব। ‘জাতীয় প্লাটফর্ম’ হিসেবে ‘সাময়িক কালের’ জন্য বাকশাল গঠন করা হয়েছিল—এ ধরনের যুক্তি দেয়া হলেও তেমন কোনো কথা চতুর্থ সংশোধনীর কোথাও কিংবা বাকশালের গঠনতন্ত্রে ছিল না। গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন ধারা-উপধারা বরং এ কথাই প্রমাণ করেছে যে, রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের প্রশ্নাতীত একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য নিয়েই বাকশাল গঠন করা হয়েছিল। তিনি এমন একজন চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন, যাকে নির্বাচিত করার কোনো প্রক্রিয়া বা বিধানেরই উল্লেখ ছিল না বাকশালের গঠনতন্ত্রে বা সংবিধানে। অর্থাত্ পরোক্ষভাবে এ কথাই ঘোষণা করা হয়েছিল যে, শেখ মুজিব আজীবন বাকশালের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকবেন।
১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে চাইলে মাঝখানে প্রবর্তিত বাকশাল ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। স্বীকার করতে হবে, শেখ মুজিব বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করেছিলেন। সরকারকে সেই সঙ্গে বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করতে হবে এবং ভারতের দখল থেকে বেরুবাড়ি ফেরত আনতে হবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে তারা সংবিধানের এখানে কিছু ওখানে কিছু পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন। তা ছাড়া এ ধরনের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোয় জনমত যাচাই এবং গণভোট অনুষ্ঠান করাও গণতন্ত্রে একটি অবশ্যপালনীয় কর্তব্য— যেমনটি দ্বাদশ সংশোধনী পাস করার পর করেছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার। ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট সংসদে শেখ মুজিব প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি বাতিল করে সংসদীয় পদ্ধতি প্রবর্তন উপলক্ষে সংসদে সংবিধানের সংশোধনী সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা সত্ত্বেও এ প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করা হয়েছিল। অন্যদিকে বাকশাল গঠন ও চতুর্থ সংশোধনী পাস করার সময় শেখ মুজিব যেমন গণতন্ত্রসম্মত চিন্তাটুকু করেননি, তেমনি বর্তমান পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করছেন না। গণভোট দূরে থাকুক, সরকার এমনকি বিরোধী দলগুলোকে পর্যন্ত সংসদীয় কমিটিতে নেয়নি। এ জন্যই জনগণের সমর্থন ও গ্রহণযোগ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারের সফলতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকারের উচিত সংবিধান সংশোধনের সমগ্র প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে রাখা। দেশের সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদেরও সম্পৃক্ত করা দরকার। কারণ, সংবিধান পুতুল খেলার মতো বিষয় নয়।
লেখক : সাংবাদিক
ই মেইল : shahahmadreza@yahoo.com
http://amardeshonline.com/pages/details/2010/07/23/35828%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8

Monday 26 July 2010

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া | যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান

কূটনৈতিক প্রতিবেদক | Prothom Alo ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০১০, ১২ শ্রাবণ ১৪১৭, ১৪ শাবান ১৪৩১

আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এই বিচার-প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজনীতিকে না জড়াতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল সোমবার ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চার শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ওই দুই দূতাবাসের পক্ষ থেকে ওই মন্তব্য করা হয়েছে।
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা যাতে ন্যায়বিচার ও আইনি সুরক্ষা পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিচার-প্রক্রিয়া যাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়, সেটাও দেখতে হবে।
মার্কিন মুখপাত্র আরও বলেন, ‘বিচার-প্রক্রিয়াকে কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো উচিত হবে না। যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার বিষয়টি খুব জরুরি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’
এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্য তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত হচ্ছে কি না সেটা খুব জরুরি।
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশের জনগণের যে প্রত্যয় রয়েছে, সেটা আমরা বুঝতে পারি’—মন্তব্য করেছেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক মুখপাত্র।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই (যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে) যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে তাদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-07-27/news/82011


যুদ্ধাপরাধ বিচারে নিরপেক্ষতা ও আন্তর্জাতিক মান চায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য
কূটনৈতিক রিপোর্টার
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। একইসঙ্গে তারা এ বিচারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এবং এটাকে রাজনীতিকরণ না করার তাগিদ দিয়েছে।
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ শুরু হওয়ার পর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ও ব্রিটিশ হাইকমিশন তাদের সরকারের এ মনোভাবের কথা জানায়।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের একজন মুখপাত্র জানান, অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার হওয়া যে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ভালো আচরণ করার পাশাপাশি তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া উচিত। এছাড়া এ বিচার রাজনৈতিকভাবে না হয়ে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া উচিত।
এদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনের একজন মুখপাত্র জানান, যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের মনোভাব সম্পর্কে যুক্তরাজ্য অবগত। তবে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার ও বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানের দেখতে চায়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধের বিচার করা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এ বিচার রাজনৈতিকভাবে নয়, সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/27/36388

Democracy Crisis in Bangladesh



WASHINGTON, July 22 /PRNewswire-USNewswire/ -- A coalition of faith leaders and human right activists (The Coalition for Freedom and Democracy in Bangladesh) is calling upon members of congress and the state department to express their disapproval of the series of arrests and political crackdown against the political opposition to the Awami League (AL), the ruling political party in Bangladesh. The AL came to power in December 2008 after two years of military rule. Bangladesh often referred to as a moderate "democratic developing" country is the home of ten percent of the world Muslim population.

This coalition is concerned that the current Awami League government is suppressing free speech and the right of dissent in that nation. Over the last eighteen months, the AL has closed down newspapers and a television station, neutered an independent judiciary, and unjustly arrested many opposition leaders and students. On June 29th, 2010, the Secretary General and Deputy Secretary General of the Bangladesh Jamat Islami (BJI), the largest democratic Islamic party and part of the political opposition, were arrested on what many human rights groups have categorized as frivolous charges.

A member of the coalition, Reverend Grayland Hagler, stated that "our government must not betray the values of democracy and open governance for the people of Bangladesh. The support for autocratic regime betrays our values as Americans and citizens of the world. As people of faith we must be advocates for global justice."

Also, the American Muslim Task Force for Civil Rights and Elections, a national Muslim umbrella organization, expressed concern that these crackdowns both jeopardize the rule of law in Bangladesh and increase the volatility that already exist in the region.

A Bengali dissent living in Washington D.C. area, who asks not to be identified by name for fear of family reprisal, said that "If a great country like America continues to support this government's repressive policies, it will alienate the majority of the Bangladeshi people who embrace pluralism, democracy and political change through peaceful means."

The coalition describes itself as a human rights and democracy advocacy campaign for the people of Bangladesh, and stated that the primary goal of the campaign is to call the American people and government to adopt new policies in support of democracy and human rights in Bangladesh. The group also calls on the United Nations Human Rights Council to launch an investigation into human right abuses in that nation.

SOURCE The Coalition for Freedom and Democracy in Bangladesh

http://www.prnewswire.com/news-releases/democracy-crisis-in-bangladesh-99015424.html

http://news. yahoo.com/ s/usnw/20100722/ pl_usnw/DC38904

http://boston. bizjournals. com/prnewswire/ press_releases/ Bangladesh/ 2010/07/22/ DC38904

http://newsblaze. com/story/ 2010072207020200 001.pnw/topstory .html

http://boston. bizjournals. com/prnewswire/ press_releases/ Bangladesh/ 2010/07/22/ DC38904

http://www.sunheral d.com/2010/ 07/22/2350022/ democracy- crisis-in- bangladesh. html

http://www.forbes. com/feeds/ prnewswire/ 2010/07/22/ prnewswire201007 221001PR_ NEWS_USPR_ ____DC38904. html

http://www.foxbusin ess.com/story/ democracy- crisis-banglades h/

http://americanidol izing.com/ gossip/Democracy -Crisis-in- Bangladesh- 5087527.html

http://www.sacbee. com/2010/ 07/22/2907767/ democracy- crisis-in- bangladesh. html

http://uspolitics. einnews.com/ article.php? nid=895925

http://classic. cnbc.com/ id/38360850

http://www.thestree t.com/story/ 10814263/ 1/democracy- crisis-in- bangladesh. html

http://1click. indiatimes. com/article/ 005g6Y46I88wO? q=Bangladesh

Sunday 18 July 2010

ফিরে এলো আমার দেশ : আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় বহাল




বিশেষ প্রতিনিধি
অনিশ্চয়তা ও রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের ঐতিহাসিক রায়ে দেশপ্রেমিক জনতার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর দৈনিক আমার দেশ আজ আবার প্রকাশিত হলো। নিপীড়নের অমানিশা কাটিয়ে আলোর প্রস্ফুটন ঘটল সর্বোচ্চ আদালতের এক ঐতিহাসিক রায়ে। আমার দেশ প্রকাশে চেম্বার জজের স্থগিতাদেশ খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
গতকাল প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আপিলের শুনানি শেষে এই রায় দেন । এর ফলে আমার দেশ প্রকাশে আর কোনো বাধা রইল না। এ অবস্থায় হাইকোর্টের রায়ে ১১ থেকে ১৫ জুন ৫ দিন পত্রিকা সীমিত আকারে প্রকাশের দীর্ঘ ৩৩ দিন পর আজ আবার আমার দেশ প্রকাশিত হচ্ছে।
এখন দেশবাসী অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন আমার দেশ-এর সাহসী সম্পাদক, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষের অকুতোভয় সৈনিক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জন্য। লাখো-কোটি প্রতিবাদী জনতা দেশ-বিদেশে সংগ্রাম করছেন মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে। মাহমুদুর রহমানকে গত ২ জুন ভোরে গ্রেফতারের পর একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে ১২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় এবং অমানুষিক দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। হাইকোর্ট ৪টি মামলায় তাকে জামিন দিলেও নতুন নতুন মামলা দিয়ে তাকে আটক রাখা হয়েছে। হাইকোর্টের রায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে চেম্বার জজ স্থগিতও করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, দৈনিক আমার দেশ প্রকাশনা ঢাকা জেলা প্রশাসকের এক আদেশবলে গত ১ জুন পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় সরকার। জেলা প্রশাসকের এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আমার দেশ পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনোয়ার-উন-নবী মজুমদার হাইকোর্টে রীট আবেদন করেন। গত ১০ জুন জেলা প্রশাসকের এ আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের বেঞ্চ সরকারের অন্যায় আদেশ স্থগিত করে ঐতিহাসিক আদেশ দেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের পর ১১ জুন থেকে ১৫ জুন মোট ৫ দিন পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল করলে সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার বিচারপতি এস কে সিনহা গত ১৫ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দেন। চেম্বার বিচারপতির এ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আমার দেশ-এর পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজের কাছে রিভিউ পিটিশন দাখিল করলে আদালত ১৫ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন।
কিন্তু ১৫ জুলাই আপিল বিভাগের কার্য তালিকায় আমার দেশ-এর বিষয়টি ১৫ নম্বর আইটেম থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে কাভার না করায় শুনানির জন্য সেদিন আদালতে উত্থাপিত হয়নি। গতকাল ওই আপিলের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতির স্থগিতাদেশ খারিজ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্ট। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল মতিন, বিচারপতি শাহ আবু নইম মমিনুর রহমান, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহা।
দৈনিক আমার দেশ-এর পক্ষে শুনানিতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। এ সময় আদালতে বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান, অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন, ব্যারিস্টার মুন্সী আহসান কবির, ব্যারিস্টার এহসান, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট মুশফিকুর রহমান তুহিন, অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট তৌফিক হোসেন, ব্যারিস্টার ইমরান, ব্যারিস্টার বেলায়েত, ব্যারিস্টার আরমান, অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা সোমাসহ শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রাহমান। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ সময় আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, এ রায়ের ফলে দৈনিক আমার দেশ প্রকাশে আর কোনো বাধা রইল না। এটি আমাদের নয়, সাংবাদিকদের জয়। স্বাধীন সাংবাদিকতার জয়। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান কোনো বিষয় নয়, মাহমুদুর রহমান উপলক্ষ মাত্র। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত এবং নিশ্চিত হলো।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এ রায়ের ফলে সংবাদপত্র এবং মিডিয়ার বিজয় হলো।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরকার অসত্ উদ্দেশ্যে আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করেছে এবং মাহমুদুর রহমানের আবেদন এক বছর পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখেছে। প্রথম পুলিশি তদন্তে বলা হয়, কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এক বছর পর ভেরিফিকেশনে বলা হয়, দেয়া যাবে না। আপিল বিভাগের এ রায়ের ফলে সংবাদপত্র ভারমুক্ত হলো। আশা করি, মাহমুদুর রহমানও একই প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবেন। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রায় দ্রুত ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর পত্রিকার অগণিত পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শুভানুধ্যায়ী ফোনে জানতে চান—পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে কিনা? পত্রিকা যথারীতি প্রকাশিত হচ্ছে জেনে তারা কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেন। পাঠকরা উদ্বেগাকুল কণ্ঠে মাহমুদুর রহমানের অবস্থা জানতে চান।
এদিকে সুপ্রিমকোর্টের আদেশের পরই দৈনিক আমার দেশ কার্যালয় আগের মতোই কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে। সাংবাদিক ও কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে আমার দেশ-এর অনলাইন সংস্করণও প্রকাশ করা হয়।
আমার দেশ-এর প্রকাশনা বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে করা রিটের শুনানিতে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতা সম্পর্কিত মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আমার দেশ-এর প্রকাশনা বাতিল করে সংবিধানের এ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে সরকার।
সরকারপক্ষে এম কে রহমান বলেন, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েই পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রকাশক আলহাজ্ব হাসমত আলী অনেক আগেই পদত্যাগ করেছেন। পত্রিকাটির ডিক্লারেশন তার নামে। পদত্যাগ করার পরও বেআইনিভাবে তার নামে পত্রিকাটি প্রকাশ করা হতো। এসব কারণে যথাযথভাবেই প্রকাশনা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আলহাজ্ব হাসমত আলীকে প্রকাশক করে ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে দৈনিক আমার দেশ প্রকাশিত হয়। এরপর ২০০৮ সালে সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান আমার দেশ-এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ১ জুন পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করায় এবং ডিসি বরাবর একটি দরখাস্ত দেয়। রাতে কোনো ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শন ছাড়াই ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়েছে বলে প্রেসে পত্রিকার কিছু কপি ছাপা হওয়ার পরই এর ছাপা ও বিতরণ পুলিশ দিয়ে জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে কয়েকশ’ পুলিশ আমার দেশ অফিস ঘেরাও করে। কিন্তু কোনো বৈধ ওয়ারেন্ট ছাড়া পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে চাইলে সাংবাদিক-কর্মচারীরা আপত্তি জানান। একপর্যায়ে ভোর ৪টার দিকে পুলিশ জোর করে আমার দেশ অফিসে ঢুকে সাংবাদিকদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে তার রুম থেকে ধরে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের আগে প্রকাশক হাসমত আলীকে দিয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা মামলার কথা বলা হলেও ২ জুন ভোরে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অফিসে তাকে গ্রেফতার করতে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে আরেকটি মামলা দেয়া হয়। প্রথম মামলায় মাহমুদুর রহমানকে আদালত জামিন দিলেও দ্বিতীয় মামলায় তাকে জেলে পাঠানো হয়। ৩ জুন মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২ জুন কোর্টে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। একইদিনে হিযবুত তাহ্রীরের অপর একটি মামলায় মাহমুদুর রহমানকেও আসামি করা হয়। ৪ জুন মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে উত্তরায় সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়। একইদিনে মাহমুদুর রহমানকে পুলিশের কাজে অফিসে ও কোর্টে বাধা দেয়ার দুটি মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরদিন হিযবুত তাহ্রীরের মামলা ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে আরও ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন নিম্ন আদালত। ৮ জুন রাতে মাহমুদুর রহমানকে একদিনের রিমান্ডে নেয় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পরদিন তাকে দ্বিতীয় দফায় ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। ১২ দিনের রিমান্ডে দ্বিতীয় দিনে ক্যান্টনমেন্ট থানা হাজতে এবং একাদশ দিনে ডিবি অফিস থেকে র্যাব-১ কার্যালয়ের টিএফআই সেলে নিয়ে তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়। যার বর্ণনা দু’দফায় মাহমুদুর রহমান নিজে আদালতে দিয়েছেন। এ ছাড়া জেলখানায়ও মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে তিনি আদালতে অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া তিনি দু’দিন আদালতে কথা বলার সুযোগ পান। সেখানে তিনি বলেছেন, সরকারের দুর্নীতি-অনিয়ম তুলে ধরা ও ভারতের আগ্রাসী তত্পরতার বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই তাকে গ্রেফতার এবং পত্রিকা বন্ধ ও তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।
আমার দেশ বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানান সর্বস্তরের মানুষ, মানবাধিকার কর্মী, সম্পাদক, বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং পেশাজীবী নেতারা। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের ২৮ জন সম্পাদক এক যুক্ত বিবৃতিতে আমার দেশ-এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখা এবং সম্পাদককে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। বিএফইউজে ও ডিইউজের দুই অংশের নেতারা অনুরূপ বিবৃতি দেন। গত ১২ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে আমার দেশ পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সম্পাদকরা গণতন্ত্রের স্বার্থে আমার দেশ পুনঃপ্রকাশ এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি জানান। আমার দেশ-এর সাংবাদিক-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবে গত দেড় মাস ধরে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছেন। পাশাপাশি আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বাতিলের সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। তিনদিন শুনানি শেষে হাইকোর্ট আমার দেশ-এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখার পক্ষে রায় দেন। পরে চেম্বার জজ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। এর বিরুদ্ধে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে রিভিউ পিটিশন দাখিল করলে ১৫ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য হয়।
হাইকোর্টের রায়ের পরপরই আমার দেশ অফিসে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। সারাদেশ থেকে পত্রিকার এজেন্ট ও হকাররা যোগাযোগ করে তাদের চাহিদার কথা জানান। ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও সময় ও প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতার কারণে সীমিত পরিমাণে ক্ষুদ্র কলেবরে ছাপতে হয়েছে আজকের ‘আমার দেশ’।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/07/19/35293

আমার দেশ প্রকাশে কোনো বাধা নেই: সুপ্রিম কোর্ট




Sun 18 Jul 2010 1:04 PM BdST

rtnn ঢাকা, ১৮ জুলাই (আরটিএনএন ডটনেট)-- দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা স্থগিত করে সরকারের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর আগে সরকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে পত্রিকাটির প্রকাশনার পক্ষে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ওই আদেশ ১৫ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি স্থগিত করে দেন।

চেম্বার বিচারপতির ওই আদেশ আজ রবিবার প্রত্যাহার করে নেয় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। আদালতের আদেশে বলা হয়, ‘স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।’

আজ বেলা সাড়ে ১২টায় প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

এ রায়ের ফলে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশে আর কোনো বাধা রইল না বলে জানিয়েছেন আমার দেশ এর আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক।

আদালতে আজ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ প্রমুখ।

এদিকে পত্রিকার উপ-সম্পাদক আবদাল আহমদ আরটিএনএনকে জানিয়েছেন, আগামীকাল পত্রিকা প্রকাশ করা হবে।

প্রসঙ্গত, ১ জুন বৈধ প্রকাশক না থাকার অভিযোগে আমার দেশের প্রকাশনা বাতিল করা হয়। পরে ২ জুন ভোররাতে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরটিএনএন ডটনেট/এমইউএ/এমএম_১৩৪৯ ঘ.

http://rtnn.net/details.php?id=26143&p=1&s=3


আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশে বাধা নেই

ঢাকা, ১৮ জুলাই (শীর্ষ নিউজ ডটকম): দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশে চেম্বার জজের স্থগিতাদেশ খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রোববার প্রধান বিচারপতি মো. ফজলুল করিমের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ সংক্রান্ত আপিলের শুনানি শেষে এ রায় দেয় আদালত। উল্লেখ্য, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশনা অবৈধ সংক্রান্ত অভিযোগে ঢাকা জেলা প্রশাসকের এক আদেশ বলে গত ১ জুন পত্রিকাটির

প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় সরকার। জেলা প্রশাসকের এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক আনোয়ার-উন-নবী হাইকোর্টে আবেদন করেন।গত ১০ জুন জেলা প্রশাসকের এ আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের ওই রায়ের পর ১১ জুন থেকে ১৫ জুন মোট ৫ দিন পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিল করলে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি এসকে সিনহা গত ১৫ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দেয়। চেম্বার বিচারপতির এ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আমার দেশ পত্রিকার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হয়। রোববার ওই আপিলের শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতির স্থগিতাদেশ খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার পক্ষে শুনানি করেন বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। সরকার পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এনকে রাহমান।

আমার দেশ পত্রিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক সাংবাদিকদের জানান, এ রায়ের ফলে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশে আর কোন বাধা রইল না। এটি আমাদের নয়, সাংবাদিকদের জয়। স্বাধীন সাংবাদিকতার জয়।

তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান কোন বিষয় নয়। মাহমুদুর রহমান উপলক্ষমাত্র। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত এবং নিশ্চিত হলো।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এ রায়ের ফলে সংবাদপত্র এবং মিডিয়ার বিজয় হলো।

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকার অসত উদ্দেশ্যে আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করেছে এবং মাহমুদুর রহমানের আবেদন এক বছর পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখেছে। ১ম পুলিশী তদন্তে বলা হয়, কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এক বছর পর ভ্যারিফিকেশনে বলা হয়, দেয়া যাবে না। আপিল বিভাগের এ রায়ের ফলে সংবাদপত্র ভারমুক্ত হলো। আশা করি মাহমুদুর রহমানও একই প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবে। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে।

(শীর্ষ নিউজ ডটকম/ জেডএইচ/ জেইউ/ এমএইচ/১৪.৩০ ঘ.)
http://www.sheershanews.com/index.php?option=com_content&view=article&id=22550:2010-07-18-06-38-12&catid=52:2009-07-24-13-37-08&Itemid=59