Wednesday 29 June 2011

সরকারি টাকায় বিদেশ সফরের হিড়িক












কাদের গনি চৌধুরী
সরকারি ও প্রজেক্টের টাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পোষ্যদের বিদেশ সফরের হিড়িক পড়েছে। গত এক মাসে অন্তত ৩০টি টিম বিদেশ সফর করেছে। বর্তমানে ১৭টি টিম বিদেশে আছে। আগামী এক মাসে আরও অন্তত ১০টি টিমের বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে।বাংলাদেশ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম শহিদ খানের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় ও এলজিইডির কর্মকর্তা এবং তাদের ফ্যামিলির একটি বিশাল বহর বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছে। সেখান থেকে এ বিশাল বহর যাবে কানাডায়। সেখান থেকে ১০ জুলাই দেশে ফেরার কথা রয়েছে তাদের। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করছেন পিএসসহ পাঁচ কর্মকর্তা। এপিএস রঞ্জিত কুমারের নেতৃত্বে অন্য দল গেছে অস্ট্রেলিয়া, চীন ও সিঙ্গাপুরে। আইন সচিব সহিদুল করিম ও পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস গতকাল রাতে গেলেন আমেরিকা। প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. জাফর আহমেদ খান সফরে আছেন থাইল্যান্ডে। সেখান থেকে যাবেন সিঙ্গাপুরে। বিআরটিএ সচিব আবুল বাসারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গেল দক্ষিণ কোরিয়ায়। শিগগিরই আরও একটি দল যাবে অস্ট্রেলিয়া।বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুুল লতিফ সিদ্দিকী এক মাসের জন্য গেছেন কানাডা; মন্ত্রীর বাসার কর্মচারী রুবেলের নেতৃত্বে একটি টিম সফরে আছে চীনে। সচিব আশরাফুল মকবুলের পিএস ফিরোজের নেতৃত্বে আরও একটি দল আছে চীনে। শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর পিএস কবীর আহমেদ সফরে আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ডি এম ফারুকের নেতৃত্বে একটি টিম গেছে মালয়েশিয়া। পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী একেএম রফিক আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ যাচ্ছে ইন্ডিয়া। গত রোববার রাতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কাউন্সিলের (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৩৮তম বৈঠকে যোগ দিতে কাজাখস্তানে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বৈঠক শেষে লিথুয়ানিয়ায় যাবেন। সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রুনিয়াস অ্যাজুবালিসের সঙ্গে ভিলনিয়াস শহরে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। এরপর তিনি ৩ জুলাই যুক্তরাজ্যে যাবেন। সেখানে তিনি পূবালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। ৫ জুলাই তিনি ঢাকা ফিরবেন।এভাবে অন্তত ১৯টি টিম এখন বিদেশে আছে। দীর্ঘদিন বিদেশ সফর শেষে সপ্তাহখানেক আগে দেশে ফিরেছেন শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, জনপ্রশাসন সচিব ইকবাল মাহমুদ ও পরিবেশ সচিব মেজবাহ উল আলম।শুধু মন্ত্রী-সচিবরাই বিদেশ যাচ্ছেন না, সরকারি ও প্রকল্পের টাকায় বিদেশ সফরে আছেন প্রকল্প পরিচালক, মন্ত্রীদের পিএস-এপিএস, পিও, এমনকি বাসার কর্মচারীও। সূত্র জানায়, জুন মাস এলেই বিদেশ সফরের হিড়িক পড়ে যায়। প্রকল্পের টাকার ব্যয় দেখাতে এবং মন্ত্রী-সচিবকে খুশি করতে এ সময় প্রকল্প পরিচালকরা এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিদেশ সফরে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বহুল আলোচিত জনতার মঞ্চের কর্মকর্তা সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান, জনতার মঞ্চের আরেক নেতা উপ-সচিব আনসার আলী খান, এলজিইডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহেদুজ্জামান, এলজিইডির আরআইআই পি-২ প্রকল্প পরিচালক মাহবুবুর রহমান ও এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন পরিবারসহ গত শনিবার আমেরিকা ও কানাডা সফরে বের হয়েছেন। আসবেন ১০ জুলাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের এ বিশাল খরচ বহন করছে এলজিইডির আরআইআইপি-২ প্রকল্প থেকে।নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান যুক্তরাজ্যে সফরে গেছেন ২৫ জুন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে এ ট্যুরে আছেন পিএস সোহরাব হোসেন শেখ, উপ-সচিব আলাউদ্দিন ফকির, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর জোবায়ের আহমদ ও হক অ্যান্ড সন্স লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক শাহ আজিমুল হক। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি এ সফরে গেছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে মন্ত্রী যাবেন দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েই ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশনের শিপইয়ার্ডে উদ্ধারকারী জাহাজের কিল লেইং অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। দেশে ফিরবেন ৩ জুলাই।নৌপরিবহনমন্ত্রীর এপিএস রঞ্জিত কুমারের নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধি দল গত বুধবার অস্ট্রেলিয়া, চীন ও সিঙ্গাপুর সফরে বের হয়েছে। এ টিমে রয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শহিদুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক জামিলুর রহমান ও সাদিকুল ইসলাম। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নৌ-সহায়ক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করার লক্ষ্যে দুটি কর্মসূচির আওতায় চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদার মেসার্স অরুপ এন্টারপ্রাইজ কর্তৃক মেলবোর্ন ও চীনের সাংহাইয়ে অবস্থিত ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের জন্য গেছেন এই পাঁচ কর্মকর্তা। আসার পথে তারা দু’দিন সিঙ্গাপুরে থাকবেন। সূত্র জানায়, এ প্রতিনিধি দলে প্রজেক্ট ডিরেক্টর এমদাদুল হকের নাম থাকলেও নৌমন্ত্রী ওই নাম বাদ দিয়ে তার এপিএসের নাম যোগ করেন। ফলে বাদ পড়ে যান স্বয়ং প্রজেক্ট ডিরেক্টর। অথচ এসব যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য পিডির যাওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। এ প্রোগ্রামে মন্ত্রীর এপিএস ও মন্ত্রণালয়ের ডিএসের কাজ কি জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মন্ত্রী যাদের নাম দিয়েছেন তারাই বিদেশ গেছেন। গত রোববার রাতে বিআরটিএ’র আরও একটি দল গেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ দলে রয়েছেন বিআরটিএ’র সদস্য (প্রকৌশল) ফিরোজ আহমেদ, বিআইডব্লিউটিএ সচিব আবুল বাশার ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার (মেরিন) হাসান মাহমুদ তারেক। মাত্র এক মাস আগে ইন্ডিয়া সফরে গিয়েছিলেন বিআরটিএ’র সদস্য (প্রকৌশল) ফিরোজ আহমেদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শহিদুল ইসলাম এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (ট্রাফিক) সফিকুল হক। মার্চে বিআইডব্লিউটিএ’র আরেকটি প্রতিনিধি দল আমেরিকা সফর করে। এ দলে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া, চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল মতিন, ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার নুরজামাত বিশ্বাস, নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ ও পরিচালক (নৌ-সওপ) এমদাদুল হক।বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে কানাডা সফরে আছেন। তিনি সেখানে এক মাস থাকবেন বলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয সূত্র জানিয়েছে। কানাডা থেকে দেশে ফিরে আসার পরপরই তার স্পেনে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে। স্পেনে তার সফরসঙ্গী হবেন বিটিএমসি চেয়ারম্যান, বিজেএমসি চেয়ারম্যান, শিল্প ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ (মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা) মকবুল আহমেদ, আইয়ুব নবী খান, উপ-সচিব আজহারুল ইসলামসহ ১২ জন। মন্ত্রীর বাসার কর্মী রুবেলকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। তিনি বিজেএমসি’র অর্থনিয়ন্ত্রক আলতাফ হোসেনের সঙ্গে চীনে গেছেন। সচিবের পিএস ফিরোজ এখন সফরে আছেন চীনে। একটি ওয়ার্কশপে অংশ নিতে তাকে চীনে পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে সফরে আছেন মন্ত্রীর এপিএস আনিসুর রহমান। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ ওয়ার্কশপ উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিবদের জন্য আয়োজন করলেও পাঠানো হয় সহকারী সচিব পদমর্যাদার এ দুই কর্মকর্তাকে। এর আগে মন্ত্রীর পিও মনিরুজ্জামানকে সরকারি টাকায় পাঠানো হয় ফিলিপাইনে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। কোনো কোনো কর্মকর্তা দেড় বছরে ১৫ বার পর্যন্ত বিদেশ সফর করেছেন। মন্ত্রণালয়ের পিআরও সরকারি টাকায় তিনবার বিদেশ সফর করেছেন।পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুগ্ম সচিব অরুপ চৌধুরী গত দেড় বছরে ১৫ বার বিদেশ সফর করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কানাডা, জার্মানি (২ বার), শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো (২ বার), থাইল্যান্ড (২ বার), পানামা, চীন, কোরিয়া, সুইডেন, ভুটান, ইন্ডিয়া ও জাপান। এ দেড় বছরে তিনি ৬৬ দিন বিদেশে ছিলেন। উপ সচিব মঞ্জুরুল হান্নান খান দেড় বছরে ১৪ বার বিদেশ সফর করেছেন। এই দেড় বছরে তিনি ৯১ দিন ছিলেন বিদেশে। সর্বশেষ ১৮ দিন জার্মান সফর শেষে ১৭ জুন তিনি দেশে ফেরেন। এর আগে তিনি সফরে করেন ইউএই, থাইল্যান্ড (২ বার), মালে, সুইজারল্যান্ড, মেক্সিকো (২ বার), কানাডা, উরুগুয়ে, জার্মানি (২ বার), লন্ডন (২ বার)। সচিব মেসবাহ উল আলম ৬ মাসে বিদেশ সফর করেছেন ৬ বার। পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রীর পিএস একেএম রফিক আহমেদ ১৪ মাসে বিদেশে গেছেন ৭ বার। যুগ্ম সচিব শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী গেছেন ৪ বার, সিনিয়র সহকারী সচিব জাহিদ হোসেন মুন্সী ৫ বার। সরকারি টাকায় বিদেশ ট্যুর করেছেন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস, পিআরও পর্যন্ত। এপিএসকে পাঠানো হয়েছে জার্মানি আর পিআরও গেছেন জেনেভা, চীন, দুবাই ও ইন্ডিয়া। সূত্র জানায়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ২৪ কর্মকর্তা গত দেড় বছরে ১০৪ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। এ সময় তারা ৫৪৫ দিন ছিলেন বিদেশে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখানকার কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণে নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা করছেন না। যখন সুযোগ পান চলে যান বিদেশে। এ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগে ২ জন যুগ্ম সচিব রয়েছেন। গত ১৫ জুন এ দু’সচিব (মুজিবুর রহমান ও মোহাম্মদ মোস্তফা) একসঙ্গে প্যারিস সফরে যান। দশ দিনের সফর শেষে দেশে ফেরেন রোববার। একনাগারে ১০ দিন দু’জন যুগ্ম সচিব অফিসে না থাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এসময় পড়ে থাকে তাদের রুমে।এর আগে টেকনিক্যাল যন্ত্র পরিদর্শনে নেদারল্যান্ডস যান নৌ মন্ত্রণালয়ের ৫ নন-টেকনিক্যাল কর্মকর্তা। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। জানা যায়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তিনটি ড্রেজার মেশিনসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ কেনার জন্য পৃথক দুটি প্রকল্প পরিদর্শনে নেদারল্যান্ডস সফরে যান ১০ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে পাঁচজনেরই কোনো কারিগরি জ্ঞান ছিল না। ‘কারিগরি পরিদর্শন’ নামে এ সফরে যান হুইপ ও নৌ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনের সহকারী একান্ত সচিব। ‘দুটি ড্র্রেজার ক্রেনবোট, ক্রু-হাউসবোট ও টাগবোটসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম দফায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৬ সদস্য নেদারল্যান্ডস যান। তারা হলেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া, প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আবদুল মতিন, নৌ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শহিদুল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনের সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়াদুদ মিয়া, বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (পরিকল্পনা) মোশারেফ হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আহম্মদ সাঈদ। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান আবদুল মালেক মিয়া, উপসচিব শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ ওয়াদুদ মিয়া ও মোশাররেফ হোসেনের কোনো কারিগরি জ্ঞান নেই বলে জানা গেছে। এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে এক বছরেই ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। দাফতরিক ভ্রমণ, আন্তর্জাতিক কর্মশালায় অংশ নেয়া ও ড্রেজার ক্রয়ে দফায় দফায় বিদেশ আসা-যাওয়ায় জন্য এ খরচ হয়েছে বলে জানায় বিআরডব্লিউটিএ। বিআরডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের এ ভ্রমণ বিলাসিতা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। ওই বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদল সাংবাদিকদের বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা এক বছরেই এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ভ্রমণ বাবদ খরচ করেছেন। কমিটির কাছে তা মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়নি। আমরা তাদের জানিয়েছি, ‘উই আর নট হ্যাপি।’ এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বৈঠকে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয় দাফতরিক ভ্রমণ, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী পরিদর্শন বা কর্মশালায় অংশগ্রহণ ও ড্রেজারসহ অন্য নৌসামগ্রী ক্রয়ের জন্য দফায় দফায় বিদেশ গমনে এ অর্থ ব্যয় করেছেন তারা। তবু আমরা মনে করি, এ ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত ও বিলাসী। একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে শুধু ভ্রমণ বাবদ এত টাকা খরচ মোটেই সন্তোষজনক নয়।বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের নামে গত এক বছরে বিশ্বের ১৮টি দেশে শিক্ষা সফর করেছেন পিএসসি’র কর্মকর্তারা। এতে সময় ব্যয় হয়েছে তিন মাসেরও বেশি।২০১০ সালে এডিবি’র অর্থায়নে গুড গভর্নেন্স প্রোগ্রামের আওতায় কমিশনের কর্মকর্তারা এ সফর করেন। এতে কী পরিমাণ আর্থিক ব্যয় হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১০’-এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, আধুনিকীকরণ ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে পিএসসি’র চেয়ারম্যান, সদস্য ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ৯টি টিম বিভিন্ন দেশে পৃথকভাবে সর্বমোট ৯৩ দিন এ সফরে অংশ নেন। সফরের মেয়াদ ছিল সর্বোচ্চ ১১ দিন। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কোনো কোনো দেশে একই বছরে একাধিকবার সফর করেছেন টিমের সদস্যরা। সফরকৃত দেশগুলো হচ্ছে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভিয়েতনাম, চীন, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি ও সুইজারল্যান্ড।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি নির্দেশ অমান্য করেই সরকারের দাপুটে আমলারা ঘন ঘন বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। সরকারি কাজে তাদের এই বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্টতার চেয়ে দাপট ও প্রভাবকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এতে সরকারের যেমন আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি কর্মঘণ্টারও অপচয় হচ্ছে, আর সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাহত। আমলাদের বিদেশ সফরের জন্য সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই এবং এ কারণেই এসব অনিয়ম ও ক্ষতির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বছর দেড়েক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সরকারি কর্মকর্তা বছরে সর্বাধিক কতবার বিদেশ সফরে যেতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না দাপুটে আমলাদের কারণে।জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবদুল করিম সরকারের শীর্ষস্থানীয ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে চার দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেন। পরিপত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, যুগ্ম সচিব ও সংস্থা প্রধানের একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি সচিবকে বছরে চার বারের বেশি বিদেশ ভ্রমণে যেতে নিষেধ করা হয়। বিদেশের সেমিনার বা ওয়ার্কশপে অন্য দেশের কোন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন, তা জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়। একইসঙ্গে এ ধরনের ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে সচিবদের অংশগ্রহণ পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।এর আগে ২০০৯ সালের ১৫ জুন সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন। একজন কর্মকর্তা বছরে সর্বোচ্চ কতবার বিদেশ সফরে যেতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ ধরনের নির্দেশনার পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব জরুরি ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্যক্তিগত ও দাফতরিক কারণে কারা বিদেশে যেতে পারবেন, তা নির্ধারণ করা হয। জনপ্রশাসন সচিবকে একই বছরের ২১ জুলাই পরিপত্র জারির উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তার এ নির্দেশনা পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নেয়, একাধিক বৈঠকও করে। কিন্তু কোনো পরিপত্র জারি করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে ব্যস্ত থাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দাফতরিক কাজ চলছে ঢিমেতালে। বিদ্যমান বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালার ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা নিয়মিত সফর করছেন। দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা, সভা-সেমিনারে যোগদান কিংবা প্রশিক্ষণের অজুহাতে অহরহ বিদেশ সফর করছেন তারা। যুগ্ম সচিবরাই বেশি বিদেশ সফর করছেন। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের সময় যারা ডিসি ছিলেন এবং যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তারা বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না। যুগ্ম সচিবদের মতো বিদেশ সফরে পিছিয়ে নেই সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারাও, যে কারণে মন্ত্রণালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে না যথাসময়ে। জমে থাকছে জনগুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র। যুগ্ম সচিবরা সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও বিদেশ সফরসংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে সফর করছেন। বিদ্যমান নীতিমালায় বছরে চার বারের বেশি বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোনো কোনো কর্মকর্তা তা আমলে আনছেন না। এক বছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সফর সম্পর্কে কর্মকর্তাদের একাধিকবার সতর্ক করলেও তার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বিদ্যমান নীতিমালায় যুগ্ম সচিবের বিদেশ সফরে ছুটির জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় এই সুযোগ নিচ্ছেন তারা। কোনো কোনো প্রভাবশালী যুগ্ম সচিব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে কৌশলে রাজি করিয়ে বিদেশ সফর অব্যাহত রেখেছেন। খোদ জনপ্রশাসন সচিব এক বছরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেন। তার বিদেশ সফরসংক্রান্ত সঠিক তথ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি।

গণপ্রতিরোধে ভারতকে ভূমি ছাড় দেয়া স্থগিত











মো. দেলোয়ার হোসেন জৈন্তাপুর (সিলেট)
গণপ্রতিরোধের মুখে সিলেটের তামাবিল সীমান্তে বাংলাদেশের জমি ভারতকে ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ স্থগিত করেছে সরকার। লোকদেখানো ভারত-বাংলাদেশ যৌথ জরিপের মাধ্যমে তামাবিল স্থলবন্দর সংলগ্ন তিন একর জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়ার খবর পেয়ে স্থানীয় জনগণ, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। স্থানীয় জনগণ, সীমান্তরক্ষী, এমনকি জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের মতামত উপেক্ষা করে উপরের নির্দেশে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের কিছু অংশ ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে—এ খবর শুনে গতকাল সকাল থেকেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এক পর্যায়ে এই বিক্ষোভে এলাকার সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরাও শরিক হন। এলাকাবাসীর চাপের মুখে এক পর্যায়ে জরিপ কাজ স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে জৈন্তাপুরের ডিবির হাওর ও কেন্দ্রিবিলের প্রায় ৫৫ একর জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে প্রায় এক হাজার একর জমি যৌথ জরিপসহ নানা অজুহাতে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকে ভারত চাপ দিয়ে আসছে। অতীতের সরকারগুলো কখনও এগুলো আমলে না নিলেও বর্তমান সরকারের আমলে ইতোমধ্যে জৈন্তাপুরের পদুয়ায় সাড়ে তিনশ’ একর জমি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা সীমান্তে ম্যাপ পাল্টে প্রায় ৫০০ বিঘা জমি ভারত তার দখলে নিয়েছে বলে গত ডিসেম্বরে জাতীয় দৈনিকে খবর বেরিয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২টি এলাকায় জিরো পয়েন্টের ৫০ গজের মধ্যে ভারতকে কাঁটাতারেরবেড়া নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জিরো পয়েন্টের দেড়শ’ গজের মধ্যে কোনো দেশেরই স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। এভাবে বর্তমান সরকারের আমলে নানা অজুহাতে বাংলাদেশের বহু ভূখণ্ড ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জকিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারত বাংলাদেশের নিজস্ব ভূখণ্ডেও স্থাপনায় বাধা দিচ্ছে। সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় সীমান্ত এলাকা নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত্ বিরোধ চলে আসছিল। সীমান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দিল্লি ও ঢাকায় এবং সিলেট ও ডাউকিতে একাধিকবার উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হয়। জরিপ টিম সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিলেট সীমান্তের অপদখলীয় ভূমি চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে গত ডিসেম্বর থেকে সীমান্তে উভয় দেশের জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। ভারতের চাপের মুখে ও অবৈধ দাবির প্রেক্ষিতে বহুবার জরিপ কাজ স্থগিত হয়ে যায়। এ নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ উচ্চ পর্যায়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও কোনো সফলতা আসেনি। গত ২ ও ৩ জুন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার সঞ্জয় ভাট্টাচার্য ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামালের নেতৃত্বে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ডাউকি ও তামাবিলে একাধিক বৈঠকের পর সিলেটের সীমান্ত এলাকার ১০টি স্থান চিহ্নিত করা হয়। এ থেকে ৪টি স্থান পাদুয়া, সোনারহাটের লিংকহাট, তামাবিল, নলজুরী এলাকার কিছু স্থান ভারতকে ছেড়ে দেয়ার গোপন সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ ও ৫ জুন পাদুয়া সীমান্তের ১২৭০নং মেইন পিলার থেকে ১২৭১-এর ৭এস পিলার পর্যন্ত বিএসএফ পোস্ট থেকে ৫০ মিটার ভূমি ভারতকে ছেড়ে দেয়ার লক্ষ্যে ৩টি স্থানে প্রায় ৩৫০ একর ভূমি বাঁশের খুঁটি বসিয়ে ভারতকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তাতে ভারতীয় বিএসএফ ও নাগরিকরা সন্তুষ্ট না হয়ে বাংলাদেশের পিয়াইন নদী পর্যন্ত প্রায় হাজার একর ভূমি দাবি করায় জরিপ কাজ স্থগিত হয়ে যায়।উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে গতকাল সকাল ১১টায় তামাবিল জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ১২৭৫নং পিলারের ১ এস থেকে ৭ এস পর্যন্ত প্রায় ৩ একর ভূমি ভারতকে বুঝিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে উভয় দেশের যৌথ সার্ভে দল সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক জরিপ মো. দবির উদ্দিন এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক জরিপ এসানপ্লাইসহ উভয় দেশের ১৫/২০ জন সদস্য। উভয় দেশের প্রতিনিধিরা জরিপ কাজ শুরু করলে স্থানীয় সীমান্তবাসী, কয়লা ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের গণপ্রতিরোধের মুখে জরিপ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ভারতকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ছেড়ে দেয়ার প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করে। সংবাদ পেয়ে সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমদ চৌধুরী ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় সাবেক এমপি বলেন, দেশ বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ করা হয়, ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। ২০০২ সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ জরিপ টিমের উদ্যোগে সীমান্ত জরিপ কাজ হয়। সীমান্তের ভূমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। তখন ভারত কোনো প্রতিবাদ করেনি। দীর্ঘদিন পর ভারতীয় আগ্রাসী তত্পরতায় মনে হচ্ছে, এটা বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেন, গত বছর তামাবিল স্থলবন্দর থেকে সরকার ৫০ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার ৪২২ টাকা রাজস্ব আয় করে। এই স্থলবন্দরের ৩ একর ভূমি ভারতকে সরকার কিসের বিনিময়ে দিতে চায়? দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সীমান্তবাসীর সঙ্গে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও এই আগ্রাসী তত্পরতা প্রতিহত করব। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, বর্তমানে সীমান্তবাসীর বাধারমুখে জরিপ কাজ স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জরিপ টিমের সহকারী পরিচালক দাবির উদ্দিন বলেন, উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমান্তের অপদখলীয় ভূমি ভারতকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের লক্ষ্যে আমরা জরিপ কাজ করছি। তামাবিল এলাকায় অপদখলীয় ভূমি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার অপদখলীয় ভূমি নাই বলে এলাকাবাসীকে জানান।কয়লা ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন, সারওয়ার হোসেন সেদু, মনিরুজ্জামান মিন্টু, কয়লা শ্রমিক সভাপতি বাচ্চু মিয়া, সেক্রেটারি লিটন মিয়াসহ সীমান্তবাসী প্রতিবাদ সভায় বলেন, সরকার এই স্থলবন্দর থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। বর্তমানে তামাবিল স্থলবন্দরে যে ভূমি রয়েছে তা ব্যবসায়ীদের সংকুলান হচ্ছে না। কিসের স্বার্থে গোপন চুক্তিতে সরকার ভারতকে তামাবিল স্থলবন্দরের ভূমি ছেড়ে দেয়ার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমরা জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করব। এর আগে বিজিবি ৫ ব্যাটালিয়নের সিও লে. কর্নেল মো. শফিউল আলম জানান, উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে উভয় দেশের জরিপ দল কাজ করছে। জমি ছেড়ে দেয়া বা পিলার স্থাপনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। পাদুয়া সীমান্তে বাঁশের খুঁটি বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ প্রক্রিয়ায় কাজ করা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে।এ বিষয়ে জরিপ অধিদফতরের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সীমান্ত সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। বিষয়টি ঝুলন্ত না রেখে সব মহলের গ্রহণযোগ্য সমাধান হোক—এটিই প্রত্যাশা করি। যাতে উভয় রাষ্ট্রের সীমান্তবাসী শান্তিতে বসবাস করতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালে সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়। এখন আর সীমান্ত নির্ধারণের প্রশ্নই ওঠে না। তবে উভয় দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত যা হবে, এ বিষয়ের ওপর আমার বলার কিছু নেই। দুটি রাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই বলা যাবে না। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় দুটি জরিপ টিমকে প্রায় সময় সীমান্তে জরিপ কাজ করতে দেখা যায়। তবে এতে কোনো সফলতা আসেনি। স্থানীয় জরিপ টিমের টিম লিডার সহকারী পরিচালক (জরিপ) মো. দবির উদ্দিন বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না। তবে যা করছি উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই করছি। আমাদের কাজকর্ম দেখে বুঝে নিন আমরা কী করছি।১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ যৌথ জরিপের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়। ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্টে (এলবিএ) উল্লেখ আছে—চুক্তি স্বাক্ষরের ৬ মাসের মধ্যে অপদখলীয় ভূমি কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ ছাড়াই হস্তান্তর করতে হবে। বাংলাদেশ তা মানলেও ভারতীয়রা এখনও তা মানেনি। ফলে প্রতিনিয়ত সমস্যা লেগেই আছে। ২০০২ সালে সীমান্তে উভয় দেশের মাঠ পর্যায়ে যে জরিপ হয়েছে, তাতে ১০টি স্থানের জমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও বাংলাদেশ সরকারের নামে রেকর্ড হয়। তখন ভারত কোনো প্রতিবাদ করেনি। জমি ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি এমদাদ হোসেন জানান, আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আকুল আবেদন, কোনো অপশক্তি যেন আমাদের এক ইঞ্চি ভূমিও নিতে না পারে। তামাবিল স্থলবন্দর থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। এ স্থলবন্দরের কিছু জায়গা ভারতকে ছেড়ে দিলে সীমান্তের ব্যাপক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাবে, কয়লা ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হবেন, হাজার হাজার পাথর, বালু ও কয়লা শ্রমিক বেকার হওয়াসহ সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা বর্তমানে শান্তিতে উভয় দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছি। হঠাত্ করে জমি দেয়ার সিদ্ধান্ত কোনো মহলই মেনে নিতে পারবে না। তামাবিল স্থলবন্দর রক্ষার্থে প্রয়োজনে সীমান্তবাসীকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আগামী ২০ জুন গোয়াইনঘাট উপজেলার সোনার হাটের লিংকহাট সীমান্ত এলাকার বেশ কিছু ভূমি ভারতকে ছেড়ে দিতে পারে বাংলাদেশ। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ জরিপ কাজ চলবে বলে জানা যায়।
১২ পয়েন্টে বাংলাদেশের ভূখণ্ড দখলে নিয়ে বেড়া : এর আগে গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তের ৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অনুমতি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নেয় ভারত। প্রথমে বিডিআর এ কাজে বাধা দিলেও উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে তারা কেবল সরেই আসেনি, মাপঝোক করে স্থাপনা তৈরির জন্য বিএসএফকে জায়গাও বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে। সীমান্তের ৪৬ পয়েন্টে বাংলাদেশের ভূমিতে বেড়া নির্মাণের চেষ্টা দীর্ঘদিন থেকে ভারত করে আসছিল। কিন্তু সফল হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বছর জানুয়ারিতে ভারত সফর ও ৫০ দফা সমঝোতা স্মারকের পরই সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে আবারও সক্রিয় হয় ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কিং টিম সরেজমিনে ভারতের দাবিকৃত জায়গাগুলো পরিদর্শন করে।। কিমিটি ৬টি শর্ত সাপেক্ষে সীমান্তের ১২২টি পয়েন্টে বাংলাদশের জমিতে বেড়া নির্মাণ করতে দেয়ার নীতিগম সিদ্ধান্ত দেয়। শর্তগুলোর মধ্যে ছিল তিনবিঘা করিডোর ইস্যু নিষ্পত্তি করা, ৩২টি ফেনসিডিল কারখানা সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেয়া, ছিটমহল সমস্যার স্থায়ী সমাধান, পঞ্চগড় ও বাংলাবন্ধায় পর্যটন সুবিধা দেয়া এবং অপদখলীয় ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধান ইত্যাদি। কিন্তু এসব ইস্যুর সমাধান ছাড়াই গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে আখাউড়াসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ১২টি স্থানে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে মাত্র ৫০ গজের মধ্যে ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে। এতে করে এসব স্থানে কার্যত বাংলাদেশের একশ’ গজ ভূমির ওপর অধিকার নষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সংবিধান সংশোধন কমিটির রিপোর্ট সংসদে উত্থাপিত : তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন










সংসদ রিপোর্টার
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অনুপস্থিতিতে গতকাল জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট উত্থাপিত হয়েছে। সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির চেয়ারপার্সন ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধির ২১১ বিধির (১) উপবিধি অনুযায়ী রিপোর্ট উত্থাপন করেন। বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠনের সাড়ে ১০ মাস পর তাদের রিপোর্ট উত্থাপন করা হয়েছে। এসময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। সংসদে সভাপতিত্ব করছিলেন স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ।কমিটি তাদের রিপোর্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে গণতন্ত্রের পরিপন্থী উল্লেখ করে এ ব্যবস্থা বিলুপ্তের সুপারিশের পাশাপাশি মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে সংসদ ভাঙার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের বিধান সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহর নিচে অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য পরিভাষা সংযোজন এবং শর্তসাপেক্ষে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ রাখা, আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের মূলনীতি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ ’৭২-এর সংবিধানের ৪ মূলনীতি পুনঃপ্রবর্তন, সরকারি-আধাসরকারি অফিসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা, জাতীয় পরিচয় ‘বাঙালি’, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে চিহিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি, নারী আসন ৫টি বৃদ্ধি করে ৫০টি করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়া নির্বাচন কমিশনার চারজন করা, রাষ্ট্রপতির জারিকৃত জরুরি অবস্থার মেয়াদ ১২০ দিন নির্দিষ্টকরণ, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ও ভোটার হতে না পারা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা, বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর রাখা, ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে ’৭২-এর অনুরূপ করা, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সংহতি রক্ষা সংবলিত ধারার বিলুপ্তি, সংবিধানে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল নামে নতুন তিনটি তফসিল সংযোজন করে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত, বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত শেষে অর্থাত্ ২৬ মার্চের রাতের প্রথম দিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্তসহ ৫১ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত সার্চ কমিটির প্রস্তাব বাদ দিয়ে বিশেষ কমিটি করে ৫ জন কমিশনার রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। পরে স্পিকার রিপোর্টটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। এদিকে কমিটির সদস্য রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু ১, ৩ ও ১৭ নং সুপারিশে আপত্তি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রতিবেদনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার সুপারিশ থাকার প্রতিবাদে এরই মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও শরিক দল জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপী হরতাল করেছে।চল্লিশ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ৫১টি সুপারিশ ছাড়াও কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বৈঠকে আলোকচিত্র রয়েছে। প্রতিবেদনটির প্রথম অংশে কমিটির চেয়ারপার্সনের ৮ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যের শেষ লাইনে ‘এ রিপোর্ট গ্রহণের জন্য কমিটি সর্বসম্মতক্রমে সুপারিশ করছে’ বাক্যটির ‘সর্বসম্মতক্রমে’ শব্দটি কেটে দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট উত্থাপন করার সময় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়ে ১৯৭২ সালে তারই নেতৃত্বে জাতি যে সংবিধান পেয়েছিল, সেটি ছিল পৃথিবীর অন্যতম লিখিত একটি শ্রেষ্ঠ সংবিধান। ১৯৭৫ সালে জাতি শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারেই হারায়নি, সে সঙ্গে স্বাধীনতার মূল চেতনার পথও হারিয়েছিল। এরপর অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় দখল শুরু হয়। এ কারণে ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি যেন এভাবে ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেজন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি অসহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংবিধানে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান ছিল। দলীয় সরকারের অধীনে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচনের বিরুদ্ধে এদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিধানটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শুরুতে এ ব্যবস্থাটি বিশ্বে অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে এ ব্যবস্থায় বেশকিছু সাংবিধানিক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া ১/১১ খ্যাত পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় এদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ না করে নিজেরাই সরকার বনে দেশ শাসন শুরু করে এবং তা দু’বছর পর্যন্ত প্রলম্বিত করে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এই জাতি দীর্ঘ দু’বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে অগণতান্ত্রিক সরকারের শাসনের কবলে পড়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সাংবিধানিক দুর্বলতার সুযোগে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দুজন প্রধান শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক রাখে। গণতন্ত্রের অব্যাহত যাত্রা ব্যাহত হয়, শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের চরিত্র হনন করা হয় এবং একইসঙ্গে সুকৌশলে আইনের অপব্যাখ্যা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ দু’বছর প্রলম্বিত করা হয়।তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি গণতন্ত্রের পরিপন্থী। অতিসম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন। কমিটির সদস্য আদালতের এ রায় মেনে নিয়ে এ ব্যবস্থার পরিবর্তনে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার ধারা অব্যাহত রাখা শ্রেয় বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তবে অসহিষ্ণু রাজনৈতিক সংঘাত এড়াতে বিরোধী দল সংসদে এসে সাংবিধানিক পন্থায় যে প্রস্তাব রাখবে—তা নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু করে সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে বলে কমিটি মনে করে। জাতি এখনও আশা করছে বিরোধীদলীয় নেতা ও তার দলের সদস্যরা সংসদে উপস্থিত হয়ে সংবিধান সংশোধন আলোচনায় অংশগ্রহণ করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারার বিকাশে মূল্যবান অবদান রাখবেন।সাজেদা চৌধুরী বলেন, বিগত (বিএনপি ও জামায়াত জোট) সরকারের সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির ছত্রছায়ায় এদেশে জঙ্গিবাদের মতো অপশক্তির জন্ম ও প্রসার লাভ করে। অথচ ইসলামসহ কোনো ধর্মই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। এমনকি ইসলামে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িও নিষিদ্ধ আছে। দেশের উন্নতি নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক মদতে জঙ্গিবাদের উত্থান বন্ধ করতে হবে। কমিটির সদস্যরা মনে করেন, ধর্মের অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা যে কোনো মূল্যে রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী আজ চলছে পরিবর্তনের পালাবদল। অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি—সব ক্ষেত্রেই প্রথাগত ধ্যান-ধারণার অচলায়তন ভেঙে দিচ্ছে। এসব বিবেচনায় পৃথিবীর বহু রাষ্ট্র তাদের সংবিধান আধুনিক ও যুগোপযোগী করে নিচ্ছে। তবে বিশেষ কমিটি সংবিধানের কোনো মৌলিক পরিবর্তনের সুপারিশ করেনি। কেবল ’৭২ সালের যে সংবিধান জাতিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী দিকনির্দেশনা দিয়েছিল, সেটাই পালন করেছে কমিটি। এই বিশেষ কমিটির সুপারিশের আলোকে গণতন্ত্র ফিরে পাবে তার আপন চলার গতি, ধর্ম হবে যার যার, রাষ্ট্র হবে সব ধর্মের, ভবিষ্যত্ প্রজন্ম পাবে আগামী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এ রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা।কার্যপ্রণালী বিধির ২৬৬ বিধি অনুযায়ী গত বছরের ২১ জুলাই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে বিশেষ কমিটির সদস্যদের নাম প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতভাবে তা পাস হয়। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে চেয়ারপার্সন এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কো-চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্যের ‘সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এসময় প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কাছে তাদের প্রতিনিধির নাম চাওয়া হলে তারা নাম পাঠায়নি। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন—আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রহমত আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু, নারী ও শিশু প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, ফজলে রাব্বী মিয়া, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বর্তমান প্রেক্ষাপট, আন্তর্জাতিক সামগ্রিকতা, সংবিধানের বেশ ক’টি সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিমকোর্টের রায় এবং কমিটিতে প্রাপ্ত মতামত ও প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বিশেষ কমিটি ২৭টি বৈঠক করে। এর মধ্যে সংবিধান সংশোধন বিষয়ে মতামত নিতে দেশের সাবেক ৫ জন প্রধান বিচারপতি, মূল সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণপরিষদের ১৮ জন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ, দেশের প্রথিতযশা ২৬ জন সম্পাদক, বিশিষ্টজন ২৬ এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ও পুরনো রাজনৈতিক দল এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম নেতারা মতামত দেন। সুপারিশ তৈরি করার আগে এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গেও ক’বার বৈঠক করে কমিটি। কিন্তু বিশেষ কমিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও তাদের অধিকাংশ সুপারিশ মেনে নেয়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য প্রস্তাবনাও ওই সুপারিশে স্থান পায়নি।

সংবিধান সংশোধনে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন সুপারিশগুলো হচ্ছে :১. সংবিধানের প্রস্তাবনার ওপর সন্নিবেশিত হবে—‘বিছমিল্লাহির রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহের নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’।২. সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে ক) ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের’ শব্দের পরিবর্তে ‘জাতীয় মুক্তির ঐতিহাসিক সংগ্রামের’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। খ) প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হবে—‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোত্সর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এ সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’৩. সংবিধানের অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হবে—২ ক) রাষ্ট্রধর্ম- প্রজাতন্ত্রেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।৪. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪-এ নতুন দফা (৫) সংযোজিত হবে—‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধাসরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।’৫. রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমমন্ত্রীর প্রতিকৃতি বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৪ ক) বিলুপ্ত হবে।৬. অনুচ্ছেদ ৬-এর পরিবর্তে ‘৬ (১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। (২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন’ প্রতিস্থাপিত হবে।৭. অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তির বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৭-এর পর নতুন অনুচ্ছেদ ৭ক) সন্নিবেশিত হবে। এতে এটিকে অপরাধ বিবেচনায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে বলে উল্লেখ করা হয়। অপরাধে দোষী ব্যক্তি সংসদেও আইন দ্বারা অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।৮. সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য করার জন্য নতুন অনুচ্ছেদ ৭(খ) সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘এ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম ক-ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০-সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।’৯. অনুচ্ছেদ-৮-এর রাষ্ট্রীয় মূলনীতির দফা ১ ও ১(ক)-এর পরিবর্তে ‘(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা এ নীতিসমূহ এবং তত্সহ এ নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে,’ প্রতিস্থাপিত হবে।১০. বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯-এ প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’১১. অনুচ্ছেদ ১০-এ প্রতিস্থাপিত হবে, ‘সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি—মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।’১২. ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার ও (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন-বিলোপ করা হইবে,’ প্রতিস্থাপিত হবে।১৩. অনুচ্ছেদ ১৮-এর পর নতুন অনুচ্ছেদ ১৮(ক) পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সন্নিবেশিত হবে। এতে বলা হয়, ‘পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন-রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত্ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’১৪. ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন,’ অনুচ্ছেদ ১৯-এর দফা (৩) সংযোজিত হবে।১৫. উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ নামে ২৩ (ক) নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হবে। সুপারিশে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’১৬. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫-এর দফা (২) বিলুপ্ত হবে।১৭. অনুচ্ছেদ ৩৮-এর পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হবে, ‘সংগঠনের স্বাধীনতা—(১) জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে : তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এ সংবিধানের পরিপন্থী হয়।’১৮. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২-এর দফা ২ ও ৩-এর পরিবর্তে ‘২ এ অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখলের বিধান করা হইবে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ কিংবা ক্ষতিপূরণ নির্ণয় ও প্রদানের নীতি-পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হইবে; তবে অনুরূপ কোনো আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান অপর্যাপ্ত হইয়াছে বলিয়া সেই আইন সম্পর্কে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না,’ প্রতিস্থাপিত হবে।১৯. অনুচ্ছেদ ৪৪-এর পরিবর্তে মৌলিক অধিকার বলবত্করণ ‘(১) এ ভাগে প্রদত্ত অধিকারসমূহ বলবত্ করিবার জন্য এ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) এ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোনো আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে সকল বা উহার যে কোনো ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন,’ প্রতিস্থাপিত হবে।২০. মূল সংবিধানের কতিপয় আইনের হেফাজত-সংক্রান্ত বিধান এবং যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে ৪৭ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ রয়েছে। ২১. নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদকালে কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা (অনুচ্ছেদ ৫৮ ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে। ২২. নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২ক পরিচ্ছেদ (অনুচ্ছেদ ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮ঙ)। এতে বলা হয়, সংবিধানের ২ক পরিচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে।২৩. অনুচ্ছেদ ৬১-এ সংশোধনের সুপারিশে বলা হয়, ‘নিয়ন্ত্রিত হইবে এবং যে মেয়াদে ৫৮খ অনুচ্ছেদের অধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকিবে সেই মেয়াদে উক্ত আইন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পরিচালিত হইবে,’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘নিয়ন্ত্রিত হইবে’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।২৪. সংসদে নারী আসন বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৬৫-এর ক দফার (৩)-এর ‘পয়তাল্লিশটি আসন’ শব্দগুলোর পরিবের্তে ‘পঞ্চাশটি আসন’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।২৫. সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা ৬৬ অনুচ্ছেদের ক দফায় ‘ঙ তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইবুন্যাল) আদেশের অধীন যে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া থাকেন;’ খ দফায় ‘(ক) দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করিলে; কিংবা (খ) অন্যক্ষেত্রে পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করিলে,’ প্রতিস্থাপিত হবে।২৬. অনুচ্ছেদ ৭০-এ ‘রাজনৈতিক দল হইতে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া—(১) কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি—(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না,’ প্রতিস্থাপিত হবে।২৭. রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিলে সম্মতিদান বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৮০-এর ক দফা (৩)-এর ‘সম্মতি দান করিবেন’ শব্দগুলির পরে ‘কিংবা তাহাতে সম্মতি দানে বিরত রহিলেন ঘোষণা করিবেন’ শব্দ সন্নিবেশিত হবে। খ দফা (৪)-এর ‘মোট সংসদ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের দ্বারা’ শব্দগুলো বিলুপ্ত হবে।২৮. আর্থিক ব্যবস্থাবলী সম্পর্কিত বিলে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৮২-এর শর্তাংশে ‘তবে শর্ত থাকে যে’ শব্দগুলো ও কমার পরিবর্তে ‘কোন অর্থ বিলে’ শব্দগুলো সন্নিবেশিত হবে।২৯. সংসদ ভঙ্গ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতার সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের দফা (১)-এর ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।৩০. সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯৫-এর পরিবর্তে ‘৯৫(১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন’ প্রতিস্থাপিত হবে। বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকে এ অনুচ্ছেদে ২ ও ৩ দফাও প্রতিস্থাপিত হবে।৩১. সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও বিচারকের ন্যায় অপসারণযোগ্য পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের অপসারণ পদ্ধতি বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯৬-এ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রেখে কিছু সুপারিশ রাখা হয়েছে।৩২. অনুচ্ছেদ ৯৮-এর সুপ্রিম কোর্টেও অতিরিক্ত বিচারকগণ বিষয়ে ‘যে কোনো অস্থায়ী মেয়াদের জন্য আপিল বিভাগে আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।৩৩. অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের বিচার বিভাগীয়/আধা বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগের বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯৯-এ বলা হয়, তারা প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। তবে আপিল বিভাগে ওকালতি বা কার্য করতে পারবেন।৩৪. সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ ‘সুপ্রিম কোর্টের আসন—রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকিবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে কোনো স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে’ প্রতিস্থাপন হবে।৩৫. সংবিধানের ১০১ ও ১০২ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার/কতিপয় আদেশ ও নির্দেশ দানে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার বিষয়ে কিছু প্রস্তাব প্রতিস্থাপনের কমিটির সুপারিশ করা হয়।৩৬. আপিল বিভাগের এখতিয়ার বিষয়ে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের সংশোধন এনে ‘খ দফায় কোন মৃত্যুদণ্ড বহাল করিয়াছেন কিংবা কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন; অথবা’ প্রতিস্থাপিত হবে।৩৭. সুপ্রিম কোর্টের বিধিপ্রণয়ণ ক্ষমতা বিষয়ে অনুচ্ছেদ ১০৭-এর সংশোধিত দফা ২ ও ৩ প্রতিস্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।৩৮. অনুচ্ছেদ ১১৬-এ অধস্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ে প্রতিস্থাপিত হবে, বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে তা প্রযুক্ত হবে। ৩৯. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে—সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর দফা ১ এ তা প্রতিস্থাপিত হবে।৪০. ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতা সংক্রান্ত ১২২ অনুচ্ছেদের দফা ২-এ সংশোধনী এনে (গ), (ঘ) ও (ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত না হইয়া থাকেন’ প্রতিস্থাপন করা হবে।৪১. নির্বাচনের মেয়াদ অনুষ্ঠানের সময় সংক্রান্ত সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে দফা ৩-এর পরিবর্তে ‘(৩) সংসদ সদস্যের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে—(ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপদফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ উক্ত উপদফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না’ প্রতিস্থাপিত হবে। ৪২. জরুরি অবস্থার মেয়াদ নির্ধারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১৪১ক এর দফা (১)-এর ‘তাহা হইলে তিনি’ শব্দগুলোর পর ‘অনধিক একশত কুড়ি দিনের জন্য’ শব্দগুলো সন্নিবেশিত হবে।৪৩. সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে সংবিধানের বিধান সংশোধনের ক্ষমতা বিষয়ে সুপারিশ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে প্রতিবেদনে।৪৪. আন্তর্জাতিক চুক্তি রাষ্ট্রপতি ও সংসদে পেশ সংক্রান্ত ১৪৫ক অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।৪৫. প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পদ সংক্রান্ত ১৪৭ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে। সেই সঙ্গে এ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ রয়েছে।৪৬. ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী সংক্রান্ত ১৫০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিটি।৪৭. অনুচ্ছেদ ১৫২-এর উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা অভিব্যক্তির সংজ্ঞা বিলুপ্ত হবে। এ অনুচ্ছেদে সংশোধনীর সুপারিশ রয়েছে।৪৮-৫০ সংবিধানের প্রথম তফসিল (অনুচ্ছেদ ৪৭), তৃতীয় তফসিল (অনুচ্ছেদ ১১৮), চতুর্থ তফসিল (অনুচ্ছেদ ১৫০) সংশোধনের প্রস্তাব করেছে কমিটি।৫১. জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (অনুচ্ছেদ ১৫০ (২)—চতুর্থ তফসিলের পর ‘সংবিধানের পঞ্চম তফসিল, ষষ্ঠ তফসিল ও সপ্তম তফসিল’ সংযোজিত হবে।

Monday 13 June 2011

৬টি দৈনিকের জরিপ হরতালের পক্ষে ৮০ শতাংশ ভোট







স্টাফ রিপোর্টার
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও ৩২ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ বিভিন্ন দাবিতে বিরোধী দল আয়োজিত হরতালের যৌক্তিকতা নিয়ে পাঠক জরিপ করে ৬টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা। পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত পাঠক জরিপের গড় ফলাফলে শতকরা প্রায় ৮০ জনই বিরোধী দলের এ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন। গতকালের দৈনিক যুগান্তরে জরিপের প্রশ্ন ছিল ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিরোধী দল। আপনি কি এটা সমর্থন করেন?’ এ প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশ নেয়া মোট ভোটারের মধ্যে হ্যাঁ বলেছেন ৮৭. ৪৬ শতাংশ এবং না বলেছেন১২.০৫ শতাংশ। গতকালের কালের কণ্ঠের প্রশ্ন ছিল ‘সংবিধান সংশোধন কমিটির প্রস্তাবেরপ্রতিবাদে বিএনপি- জামায়াতের হরতাল কর্মসূচি সমর্থন করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশ নেয়া ভোটারদের ৭১.৩৯ শতাংশ হ্যাঁ এবং ২৮.৬১ শতাংশ না বলেছেন। দৈনিক সমকালের গত ৬ জুন প্রকাশিত সংখ্যার প্রশ্ন ছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আহূত হরতাল সমর্থন করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৮১.৮২ শতাংশ, না বলেছেন ১৭.৯০ শতাংশ পাঠক। গতকালের দৈনিক যায়যায়দিনের প্রশ্ন ছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে নির্বাচন সম্ভব- মার্কিন বিদায়ী রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির এ বক্তব্যকে আপনি সমর্থন করেন কিনা?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ২২ শতাংশ এবং না বলেছেন ৭২ শতাংশ ভোটার। গতকালের বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল ‘হরতাল প্রত্যাহারে এফবিসিসিআইর আহ্বান সমর্থন করেন কি?’ এই প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৩৮.৯৩ শতাংশ এবং না বলেছেন ৬১.০৭ শতাংশ। দৈনিক প্রথম আলোর গত ৭ জুন সংখ্যা জরিপের প্রশ্ন ছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই- খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে কি আপনি একমত?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৬৩.৪১ শতাংশ এবং না বলেছেন ৩৫.৩৭ শতাংশ ভোটার। একই পত্রিকার ৬ জুনের জরিপের প্রশ্ন ছিল ‘সংসদে আসুন, নইলে রায় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত- তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে বিরোধী দলের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য যৌক্তিক বলে মনে করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ২৭.৮২ শতাংশ এবং না বলেছেন ৭০.৭৪ শতাংশ ভোটার। দৈনিক প্রথম আলোর গত ৫ জুন সংখ্যার প্রশ্ন ছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর অবস্থান যৌক্তিক বলে মনে করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ২১.৯২ শতাংশ এবং না বলেছেন ৭৬.৭৩ শতাংশ। গত ৯ জুন একই পত্রিকার প্রশ্ন ছিল ‘শেয়ারবাজারের পরিবেশ স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল- অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে কি আপনি একমত? এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৯.০৭ শতাংশ এবং না বলেছেন ৮৯.৫৫ শতাংশ ভোটার। গত ২ জুন প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল ‘আদালতের রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার সুযোগ নেই- সরকারের এ বক্তব্যের সঙ্গে কি আপনি একমত?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ১৭.৫২ শতাংশ এবং না বলেছেন শতকরা ৮০.৭০ শতাংশ। গত ১০ জুন প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের জরিপের প্রশ্ন ছিল ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবারও ক্ষমতায় বসলে সরাতে পারবেন না। আপনিও কি তাই মনে করেন?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ১২.৪৮ শতাংশ এবং না বলেছেন ৮৫.৮৫ শতাংশ ভোটার। একই পত্রিকার ৯ জুনের সংখ্যায় জরিপের প্রশ্ন ছিল ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির জন্য আলোচনার দরজা খোলা আছে। এতে বিএনপির সাড়া দেয়া উচিত বলে মনে করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ১৩.৮৩ শতাংশ এবং না বলেছেন ৮৩.৯৬ শতাংশ ভোটার। দৈনিক ইত্তেফাকের গত ৬ জুন প্রকাশিত সংখ্যার জরিপের প্রশ্ন ছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগেই বিরোধী দলের হরতাল আহ্বান যৌক্তিক হয়েছে বলে মনে করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৬৪ শতাংশ এবং না বলেছেন ৩৫ শতাংশ ভোটার। গত ১০ জুন প্রকাশিত দৈনিক কালের কণ্ঠের জরিপের প্রশ্ন ছিল ‘সরকার গত বছর বিরোধী দলের পক্ষ থেকে দেয়া বাজেট প্রস্তাব না মানায় দেশের অর্থনীতি আজ ভেঙে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়া। আপনি কি এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৭০.৯৫ শতাংশ এবং না বলেছেন ২৯.০৫ শতাংশ। একই পত্রিকায় গত ৯ জুন প্রকাশিত সংখ্যার প্রশ্ন ছিল ‘আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন- বিরোধী দল না এলেও সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিরোধী দল ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াকে আপনি সমর্থন করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ১৪.৬৫ শতাংশ এবং না বলেছেন ৮৫.৩৫ শতাংশ ভোটার