Wednesday 29 June 2011

সংবিধান সংশোধন কমিটির রিপোর্ট সংসদে উত্থাপিত : তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন










সংসদ রিপোর্টার
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অনুপস্থিতিতে গতকাল জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট উত্থাপিত হয়েছে। সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির চেয়ারপার্সন ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সংসদীয় কার্যপ্রণালী বিধির ২১১ বিধির (১) উপবিধি অনুযায়ী রিপোর্ট উত্থাপন করেন। বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠনের সাড়ে ১০ মাস পর তাদের রিপোর্ট উত্থাপন করা হয়েছে। এসময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। সংসদে সভাপতিত্ব করছিলেন স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ।কমিটি তাদের রিপোর্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে গণতন্ত্রের পরিপন্থী উল্লেখ করে এ ব্যবস্থা বিলুপ্তের সুপারিশের পাশাপাশি মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে সংসদ ভাঙার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের বিধান সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহর নিচে অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য পরিভাষা সংযোজন এবং শর্তসাপেক্ষে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ রাখা, আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের মূলনীতি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ ’৭২-এর সংবিধানের ৪ মূলনীতি পুনঃপ্রবর্তন, সরকারি-আধাসরকারি অফিসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা, জাতীয় পরিচয় ‘বাঙালি’, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে চিহিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি, নারী আসন ৫টি বৃদ্ধি করে ৫০টি করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়া নির্বাচন কমিশনার চারজন করা, রাষ্ট্রপতির জারিকৃত জরুরি অবস্থার মেয়াদ ১২০ দিন নির্দিষ্টকরণ, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ও ভোটার হতে না পারা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা, বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর রাখা, ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে ’৭২-এর অনুরূপ করা, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সংহতি রক্ষা সংবলিত ধারার বিলুপ্তি, সংবিধানে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল নামে নতুন তিনটি তফসিল সংযোজন করে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত, বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত শেষে অর্থাত্ ২৬ মার্চের রাতের প্রথম দিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্তসহ ৫১ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত সার্চ কমিটির প্রস্তাব বাদ দিয়ে বিশেষ কমিটি করে ৫ জন কমিশনার রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। পরে স্পিকার রিপোর্টটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। এদিকে কমিটির সদস্য রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু ১, ৩ ও ১৭ নং সুপারিশে আপত্তি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রতিবেদনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার সুপারিশ থাকার প্রতিবাদে এরই মধ্যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও শরিক দল জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপী হরতাল করেছে।চল্লিশ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ৫১টি সুপারিশ ছাড়াও কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বৈঠকে আলোকচিত্র রয়েছে। প্রতিবেদনটির প্রথম অংশে কমিটির চেয়ারপার্সনের ৮ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যের শেষ লাইনে ‘এ রিপোর্ট গ্রহণের জন্য কমিটি সর্বসম্মতক্রমে সুপারিশ করছে’ বাক্যটির ‘সর্বসম্মতক্রমে’ শব্দটি কেটে দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট উত্থাপন করার সময় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিফলন ঘটিয়ে ১৯৭২ সালে তারই নেতৃত্বে জাতি যে সংবিধান পেয়েছিল, সেটি ছিল পৃথিবীর অন্যতম লিখিত একটি শ্রেষ্ঠ সংবিধান। ১৯৭৫ সালে জাতি শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারেই হারায়নি, সে সঙ্গে স্বাধীনতার মূল চেতনার পথও হারিয়েছিল। এরপর অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় দখল শুরু হয়। এ কারণে ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি যেন এভাবে ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেজন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি অসহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংবিধানে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান ছিল। দলীয় সরকারের অধীনে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচনের বিরুদ্ধে এদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিধানটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শুরুতে এ ব্যবস্থাটি বিশ্বে অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে এ ব্যবস্থায় বেশকিছু সাংবিধানিক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া ১/১১ খ্যাত পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় এদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ না করে নিজেরাই সরকার বনে দেশ শাসন শুরু করে এবং তা দু’বছর পর্যন্ত প্রলম্বিত করে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এই জাতি দীর্ঘ দু’বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে অগণতান্ত্রিক সরকারের শাসনের কবলে পড়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সাংবিধানিক দুর্বলতার সুযোগে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের দুজন প্রধান শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক রাখে। গণতন্ত্রের অব্যাহত যাত্রা ব্যাহত হয়, শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের চরিত্র হনন করা হয় এবং একইসঙ্গে সুকৌশলে আইনের অপব্যাখ্যা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ দু’বছর প্রলম্বিত করা হয়।তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি গণতন্ত্রের পরিপন্থী। অতিসম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন। কমিটির সদস্য আদালতের এ রায় মেনে নিয়ে এ ব্যবস্থার পরিবর্তনে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার ধারা অব্যাহত রাখা শ্রেয় বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তবে অসহিষ্ণু রাজনৈতিক সংঘাত এড়াতে বিরোধী দল সংসদে এসে সাংবিধানিক পন্থায় যে প্রস্তাব রাখবে—তা নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু করে সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে বলে কমিটি মনে করে। জাতি এখনও আশা করছে বিরোধীদলীয় নেতা ও তার দলের সদস্যরা সংসদে উপস্থিত হয়ে সংবিধান সংশোধন আলোচনায় অংশগ্রহণ করে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারার বিকাশে মূল্যবান অবদান রাখবেন।সাজেদা চৌধুরী বলেন, বিগত (বিএনপি ও জামায়াত জোট) সরকারের সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির ছত্রছায়ায় এদেশে জঙ্গিবাদের মতো অপশক্তির জন্ম ও প্রসার লাভ করে। অথচ ইসলামসহ কোনো ধর্মই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। এমনকি ইসলামে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িও নিষিদ্ধ আছে। দেশের উন্নতি নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক মদতে জঙ্গিবাদের উত্থান বন্ধ করতে হবে। কমিটির সদস্যরা মনে করেন, ধর্মের অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা যে কোনো মূল্যে রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী আজ চলছে পরিবর্তনের পালাবদল। অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি—সব ক্ষেত্রেই প্রথাগত ধ্যান-ধারণার অচলায়তন ভেঙে দিচ্ছে। এসব বিবেচনায় পৃথিবীর বহু রাষ্ট্র তাদের সংবিধান আধুনিক ও যুগোপযোগী করে নিচ্ছে। তবে বিশেষ কমিটি সংবিধানের কোনো মৌলিক পরিবর্তনের সুপারিশ করেনি। কেবল ’৭২ সালের যে সংবিধান জাতিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী দিকনির্দেশনা দিয়েছিল, সেটাই পালন করেছে কমিটি। এই বিশেষ কমিটির সুপারিশের আলোকে গণতন্ত্র ফিরে পাবে তার আপন চলার গতি, ধর্ম হবে যার যার, রাষ্ট্র হবে সব ধর্মের, ভবিষ্যত্ প্রজন্ম পাবে আগামী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এ রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার অনিঃশেষ অনুপ্রেরণা।কার্যপ্রণালী বিধির ২৬৬ বিধি অনুযায়ী গত বছরের ২১ জুলাই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে বিশেষ কমিটির সদস্যদের নাম প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতভাবে তা পাস হয়। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে চেয়ারপার্সন এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে কো-চেয়ারম্যান করে ১৫ সদস্যের ‘সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এসময় প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কাছে তাদের প্রতিনিধির নাম চাওয়া হলে তারা নাম পাঠায়নি। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন—আওয়ামী লীগের আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, রহমত আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু, নারী ও শিশু প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, ফজলে রাব্বী মিয়া, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বর্তমান প্রেক্ষাপট, আন্তর্জাতিক সামগ্রিকতা, সংবিধানের বেশ ক’টি সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিমকোর্টের রায় এবং কমিটিতে প্রাপ্ত মতামত ও প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বিশেষ কমিটি ২৭টি বৈঠক করে। এর মধ্যে সংবিধান সংশোধন বিষয়ে মতামত নিতে দেশের সাবেক ৫ জন প্রধান বিচারপতি, মূল সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গণপরিষদের ১৮ জন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ, দেশের প্রথিতযশা ২৬ জন সম্পাদক, বিশিষ্টজন ২৬ এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ও পুরনো রাজনৈতিক দল এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম নেতারা মতামত দেন। সুপারিশ তৈরি করার আগে এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সঙ্গেও ক’বার বৈঠক করে কমিটি। কিন্তু বিশেষ কমিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও তাদের অধিকাংশ সুপারিশ মেনে নেয়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য প্রস্তাবনাও ওই সুপারিশে স্থান পায়নি।

সংবিধান সংশোধনে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন সুপারিশগুলো হচ্ছে :১. সংবিধানের প্রস্তাবনার ওপর সন্নিবেশিত হবে—‘বিছমিল্লাহির রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহের নামে/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’।২. সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে ক) ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের’ শব্দের পরিবর্তে ‘জাতীয় মুক্তির ঐতিহাসিক সংগ্রামের’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। খ) প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হবে—‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোত্সর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এ সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’৩. সংবিধানের অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হবে—২ ক) রাষ্ট্রধর্ম- প্রজাতন্ত্রেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।৪. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪-এ নতুন দফা (৫) সংযোজিত হবে—‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধাসরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।’৫. রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমমন্ত্রীর প্রতিকৃতি বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৪ ক) বিলুপ্ত হবে।৬. অনুচ্ছেদ ৬-এর পরিবর্তে ‘৬ (১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। (২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন’ প্রতিস্থাপিত হবে।৭. অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের শাস্তির বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৭-এর পর নতুন অনুচ্ছেদ ৭ক) সন্নিবেশিত হবে। এতে এটিকে অপরাধ বিবেচনায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে বলে উল্লেখ করা হয়। অপরাধে দোষী ব্যক্তি সংসদেও আইন দ্বারা অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।৮. সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য করার জন্য নতুন অনুচ্ছেদ ৭(খ) সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘এ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম ক-ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০-সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।’৯. অনুচ্ছেদ-৮-এর রাষ্ট্রীয় মূলনীতির দফা ১ ও ১(ক)-এর পরিবর্তে ‘(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা এ নীতিসমূহ এবং তত্সহ এ নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে,’ প্রতিস্থাপিত হবে।১০. বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯-এ প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’১১. অনুচ্ছেদ ১০-এ প্রতিস্থাপিত হবে, ‘সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি—মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।’১২. ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার ও (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন-বিলোপ করা হইবে,’ প্রতিস্থাপিত হবে।১৩. অনুচ্ছেদ ১৮-এর পর নতুন অনুচ্ছেদ ১৮(ক) পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সন্নিবেশিত হবে। এতে বলা হয়, ‘পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন-রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত্ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’১৪. ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন,’ অনুচ্ছেদ ১৯-এর দফা (৩) সংযোজিত হবে।১৫. উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ নামে ২৩ (ক) নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হবে। সুপারিশে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’১৬. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫-এর দফা (২) বিলুপ্ত হবে।১৭. অনুচ্ছেদ ৩৮-এর পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হবে, ‘সংগঠনের স্বাধীনতা—(১) জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে : তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এ সংবিধানের পরিপন্থী হয়।’১৮. সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২-এর দফা ২ ও ৩-এর পরিবর্তে ‘২ এ অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত আইনে ক্ষতিপূরণসহ বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্তকরণ বা দখলের বিধান করা হইবে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ কিংবা ক্ষতিপূরণ নির্ণয় ও প্রদানের নীতি-পদ্ধতি নির্দিষ্ট করা হইবে; তবে অনুরূপ কোনো আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান অপর্যাপ্ত হইয়াছে বলিয়া সেই আইন সম্পর্কে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না,’ প্রতিস্থাপিত হবে।১৯. অনুচ্ছেদ ৪৪-এর পরিবর্তে মৌলিক অধিকার বলবত্করণ ‘(১) এ ভাগে প্রদত্ত অধিকারসমূহ বলবত্ করিবার জন্য এ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজু করিবার অধিকারের নিশ্চয়তা দান করা হইল। (২) এ সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটাইয়া সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোনো আদালতকে তাহার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে সকল বা উহার যে কোনো ক্ষমতা দান করিতে পারিবেন,’ প্রতিস্থাপিত হবে।২০. মূল সংবিধানের কতিপয় আইনের হেফাজত-সংক্রান্ত বিধান এবং যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে ৪৭ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ রয়েছে। ২১. নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদকালে কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা (অনুচ্ছেদ ৫৮ ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে। ২২. নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২ক পরিচ্ছেদ (অনুচ্ছেদ ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ, ৫৮ঙ)। এতে বলা হয়, সংবিধানের ২ক পরিচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে।২৩. অনুচ্ছেদ ৬১-এ সংশোধনের সুপারিশে বলা হয়, ‘নিয়ন্ত্রিত হইবে এবং যে মেয়াদে ৫৮খ অনুচ্ছেদের অধীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকিবে সেই মেয়াদে উক্ত আইন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পরিচালিত হইবে,’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘নিয়ন্ত্রিত হইবে’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।২৪. সংসদে নারী আসন বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৬৫-এর ক দফার (৩)-এর ‘পয়তাল্লিশটি আসন’ শব্দগুলোর পরিবের্তে ‘পঞ্চাশটি আসন’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।২৫. সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা ৬৬ অনুচ্ছেদের ক দফায় ‘ঙ তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইবুন্যাল) আদেশের অধীন যে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া থাকেন;’ খ দফায় ‘(ক) দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করিলে; কিংবা (খ) অন্যক্ষেত্রে পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করিলে,’ প্রতিস্থাপিত হবে।২৬. অনুচ্ছেদ ৭০-এ ‘রাজনৈতিক দল হইতে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া—(১) কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি—(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না,’ প্রতিস্থাপিত হবে।২৭. রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিলে সম্মতিদান বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৮০-এর ক দফা (৩)-এর ‘সম্মতি দান করিবেন’ শব্দগুলির পরে ‘কিংবা তাহাতে সম্মতি দানে বিরত রহিলেন ঘোষণা করিবেন’ শব্দ সন্নিবেশিত হবে। খ দফা (৪)-এর ‘মোট সংসদ সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের দ্বারা’ শব্দগুলো বিলুপ্ত হবে।২৮. আর্থিক ব্যবস্থাবলী সম্পর্কিত বিলে রাষ্ট্রপতির সুপারিশ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৮২-এর শর্তাংশে ‘তবে শর্ত থাকে যে’ শব্দগুলো ও কমার পরিবর্তে ‘কোন অর্থ বিলে’ শব্দগুলো সন্নিবেশিত হবে।২৯. সংসদ ভঙ্গ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতার সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের দফা (১)-এর ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।৩০. সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯৫-এর পরিবর্তে ‘৯৫(১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন’ প্রতিস্থাপিত হবে। বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকে এ অনুচ্ছেদে ২ ও ৩ দফাও প্রতিস্থাপিত হবে।৩১. সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও বিচারকের ন্যায় অপসারণযোগ্য পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের অপসারণ পদ্ধতি বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯৬-এ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রেখে কিছু সুপারিশ রাখা হয়েছে।৩২. অনুচ্ছেদ ৯৮-এর সুপ্রিম কোর্টেও অতিরিক্ত বিচারকগণ বিষয়ে ‘যে কোনো অস্থায়ী মেয়াদের জন্য আপিল বিভাগে আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।৩৩. অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের বিচার বিভাগীয়/আধা বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগের বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯৯-এ বলা হয়, তারা প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। তবে আপিল বিভাগে ওকালতি বা কার্য করতে পারবেন।৩৪. সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ ‘সুপ্রিম কোর্টের আসন—রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকিবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে কোনো স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে’ প্রতিস্থাপন হবে।৩৫. সংবিধানের ১০১ ও ১০২ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার/কতিপয় আদেশ ও নির্দেশ দানে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার বিষয়ে কিছু প্রস্তাব প্রতিস্থাপনের কমিটির সুপারিশ করা হয়।৩৬. আপিল বিভাগের এখতিয়ার বিষয়ে সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের সংশোধন এনে ‘খ দফায় কোন মৃত্যুদণ্ড বহাল করিয়াছেন কিংবা কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছেন; অথবা’ প্রতিস্থাপিত হবে।৩৭. সুপ্রিম কোর্টের বিধিপ্রণয়ণ ক্ষমতা বিষয়ে অনুচ্ছেদ ১০৭-এর সংশোধিত দফা ২ ও ৩ প্রতিস্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।৩৮. অনুচ্ছেদ ১১৬-এ অধস্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ে প্রতিস্থাপিত হবে, বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে তা প্রযুক্ত হবে। ৩৯. প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে—সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর দফা ১ এ তা প্রতিস্থাপিত হবে।৪০. ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতা সংক্রান্ত ১২২ অনুচ্ছেদের দফা ২-এ সংশোধনী এনে (গ), (ঘ) ও (ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত না হইয়া থাকেন’ প্রতিস্থাপন করা হবে।৪১. নির্বাচনের মেয়াদ অনুষ্ঠানের সময় সংক্রান্ত সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে দফা ৩-এর পরিবর্তে ‘(৩) সংসদ সদস্যের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে—(ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপদফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ উক্ত উপদফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না’ প্রতিস্থাপিত হবে। ৪২. জরুরি অবস্থার মেয়াদ নির্ধারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১৪১ক এর দফা (১)-এর ‘তাহা হইলে তিনি’ শব্দগুলোর পর ‘অনধিক একশত কুড়ি দিনের জন্য’ শব্দগুলো সন্নিবেশিত হবে।৪৩. সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে সংবিধানের বিধান সংশোধনের ক্ষমতা বিষয়ে সুপারিশ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে প্রতিবেদনে।৪৪. আন্তর্জাতিক চুক্তি রাষ্ট্রপতি ও সংসদে পেশ সংক্রান্ত ১৪৫ক অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের সুপারিশ রয়েছে।৪৫. প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পদ সংক্রান্ত ১৪৭ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে। সেই সঙ্গে এ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ রয়েছে।৪৬. ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী সংক্রান্ত ১৫০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিটি।৪৭. অনুচ্ছেদ ১৫২-এর উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা অভিব্যক্তির সংজ্ঞা বিলুপ্ত হবে। এ অনুচ্ছেদে সংশোধনীর সুপারিশ রয়েছে।৪৮-৫০ সংবিধানের প্রথম তফসিল (অনুচ্ছেদ ৪৭), তৃতীয় তফসিল (অনুচ্ছেদ ১১৮), চতুর্থ তফসিল (অনুচ্ছেদ ১৫০) সংশোধনের প্রস্তাব করেছে কমিটি।৫১. জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (অনুচ্ছেদ ১৫০ (২)—চতুর্থ তফসিলের পর ‘সংবিধানের পঞ্চম তফসিল, ষষ্ঠ তফসিল ও সপ্তম তফসিল’ সংযোজিত হবে।

No comments:

Post a Comment