Friday 31 December 2010

গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ। এলপিজির দাম বাড়ছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই জ্বালানিসংকট সারা দেশে













সিলিন্ডারে এলপি গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছেই। কিন্তু এই গ্যাসের বাজারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই

ছবি: প্রথম আলো

অরুণ কর্মকার | তারিখ: ০১-০১-২০১১

দেশজুড়ে ঘনীভূত জ্বালানিসংকট ক্রমান্বয়ে তীব্রতর হচ্ছে। গ্যাসের স্বল্পতায় বিদ্যুৎ-সার-শিল্প উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। লাইনে চাপ কম থাকায় অনেক এলাকার বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলে না। পাইপলাইনে গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া সরকার বন্ধ রেখেছে। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসও (এলপিজি) দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য। সিএনজি স্টেশনেও রেশনিং করা হচ্ছে চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের স্বল্পতার কারণে। এই পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনই দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে, ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা শহর পর্যন্ত দেশের সিংহভাগ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির নিশ্চিত সংস্থান নেই। মানুষের হাতের কাছে কোনো কার্যকর বিকল্প জ্বালানিও নেই। সরকারি-বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের সর্বমোট গ্রাহকসংখ্যা ২০ লাখের কম। আর জ্বালানির স্বল্পতার কারণে যে পরিমাণ উৎপাদন ব্যাহত হয়, তার আর্থিক মূল্য মোট দেশজ প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) প্রায় দুই শতাংশের সমান। এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অবহেলা, অদক্ষতা ও অপরিণামদর্শিতা জ্বালানি খাতকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে। গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের জন্য এলপিজির ব্যবহার বাড়ানো এবং তা সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকার আলোচনা করছে। পেট্রোবাংলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের (এলপিজিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুদরত-ই-এলাহী বিষয়টি সম্পর্কে প্রথম আলোকে বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি সম্প্রসারণ করে দেশে এলপিজির উৎপাদন বর্তমানের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। বেসরকারি খাতের অন্যতম প্রধান কোম্পানি ক্লিনহিটের মহাব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম বলেন, সরকার এলপিজি, সিলিন্ডারসহ খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর থেকে শুল্ক ও কর কমালে সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব। পাইপলাইনের গ্যাস: চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহারকারী সব শ্রেণীর গ্রাহক সংকটে আছে। প্রয়োজনীয় গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে ৫০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। বছরের অধিকাংশ সময়ে সার কারখানাগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদনে থাকে না। এ কারণে আমদানি করে সারের ঘাটতি পূরণ করতে হয়। গ্যাসের অভাবে শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তা ছাড়া, সরকারি-বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, গ্যাসের সংযোগ না পাওয়ায় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন শুরু হতে পারছে না। গ্যাসের অভাবে সিএনজি স্টেশনগুলোতে রেশনিং করা হচ্ছে। এর পরও ঢাকা মহানগরসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ কম থাকায় চুলা জ্বলে না। বর্তমানে পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের ১২ শতাংশেরও কম (২৩ কোটি বা ২৩০ কোটি ঘনফুট) ব্যবহূত হয় গৃহস্থালী পর্যায়ে। এই শ্রেণীর অনেক গ্রাহক গ্যাসের নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করে অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ রাখা এবং প্রত্যন্ত এলাকায় গ্যাসের চাপ না থাকায় পুরোনো গ্রাহকদেরও অনেকে এলপিজি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তা ছাড়া, দেশের যেসব শহরে পাইপলাইনের গ্যাস সরবরাহ নেই, সেখানেও জ্বালানি হিসেবে এলপিজিই জনপ্রিয়। কিন্তু এলপিজির উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ, বাজার সম্পূর্ণ অস্থিতিশীল। কার্যকর বিকল্প এলপিজি: পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও জ্বালানিসংকটের কার্যকর বিকল্প হতে পারে এলপিজি। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, এমনকি সৌদি আরবেও রান্নাসহ গৃহস্থালী কাজে এলপিজির ব্যবহার প্রায় শতভাগ। এ ছাড়া যানবাহন চালানোর কাজেও এই গ্যাস ব্যবহার করা যায় এবং বাংলাদেশেও সীমিত আকারে করা হচ্ছে। পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের পরই জ্বালানি হিসেবে এলপিজি মূল্যসাশ্রয়ী। কিন্তু এখানে এলপিজির উৎপাদন খুব কম। মূলত এই গ্যাসের সরবরাহ আমদানিনির্ভর। চাহিদা ও সরবরাহ: বাংলাদেশে এলপিজির চাহিদা সম্পর্কে সরকারি বা বেসরকারি খাতের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তবে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বছরে অন্তত এক লাখ টন (সাড়ে ১২ কেজির ৮০ লাখ বোতল বা কনটেইনার) এলপিজির চাহিদা দেশে রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ এর অর্ধেকেরও কম। সরকারি খাতের ইস্টার্ন রিফাইনারি এলপিজি উৎপাদন করে আমদানি করা তেল থেকে এবং এলপিজিএল উৎপাদন করে সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানির গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া এনজিএল থেকে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত এলপিজির পরিমাণ বছরে ১২ লাখ বোতলের বেশি নয়। চাহিদার বাকি অংশ বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বেসরকারি খাতের পাঁচটি কোম্পানি বছরে মাত্র ৪০ হাজার মেট্রিক টনের মতো (সাড়ে ১২ কেজির ৩২ লাখ বোতলের সমান) এলপিজি আমদানি করে। তাই চাহিদার তুলনায় দেশে এলপিজির ঘাটতি থাকে সারা বছর। ফলে অপরিহার্য এই পণ্য সাধারণ মানুষের কাছে বছরজুড়েই দুষ্প্রাপ্য হয়ে থাকে। খাঁড়ার ঘা: এমনিতেই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকের কম, তার ওপর কৈলাশটিলার এলপিজি প্ল্যান্টে উৎপাদন হচ্ছে কম। কয়েক দিনের মধ্যে সেখানকার উৎপাদন অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে। (এলপিজিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, কৈলাশটিলা প্ল্যান্টের কাঁচামাল (এনজিএল) আসে সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানির ক্ষেত্র থেকে। এই কোম্পানি বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। এই কাজ শেষ হতে আরও প্রায় তিন সপ্তাহ লাগবে। এখন পর্যন্ত মজুদ করা এনজিএল দিয়ে প্ল্যান্টটি সীমিত আকারে চলছে। আরও কয়েক দিন চলবে। বাজারে সরকারি এলপিজির সরবরাহ কম হলেই বেসরকারি এলপিজির দাম বেড়ে যায় হু হু করে। দেশে উৎপাদন কমার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও গত নভেম্বর থেকে এলপিজির দাম বাড়তে বাড়তে বর্তমানে সর্বকালের সর্বোচ্চ হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশের বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সূত্রে এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখা গেছে, ডিসম্বের মাসে এলপিজির উপাদান প্রোপেনের দাম উঠেছে প্রতি মেট্রিক টন ৯০৫ মার্কিন ডলার। বুটেনের দাম উঠেছে ৯৪৫ ডলার। বাংলাদেশে এলপিজির জন্য বুটেন ব্যবহার করা হয়। বড় অভিযোগ দামে: সরবরাহরে স্বল্পতার পাশাপাশি ঢাকাসহ সারা দেশে এলপিজি ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, দামের অস্থিতিশীলতা। এ ক্ষেত্রে দেখার কেউ নেই। সরকারি খাতের এলপিজির দাম খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে নির্ধারণ করা আছে সাড়ে ১২ কেজির বোতল ৭০০ টাকা। কিন্তু গ্রাহক কখনোই এই দামে পান না। কিনতে হয় এক হাজার ২০০ টাকায়। বেসরকারি খাতের এলপিজিরও দাম নির্ধারিত আছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু তাও এই দামে পাওয়া যায় না। কখনো কখনো তা কিনতে হয় দেড় হাজার টাকা দিয়ে। সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর এলপিজি বিক্রি করার জন্য সারা দেশে নির্ধারিত ডিলার আছে। দেশের নানা স্থান থেকে পাওয়া গ্রাহকদের অভিযোগ হচ্ছে, এই ডিলার এবং তাঁদের নিয়োজিত খুচরা বিক্রেতারা কারসাজি করে দাম বাড়ান। অপরদিকে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বলেন, দাম বাড়ানো-কমানো সবই কোম্পানির হাতে। কোম্পানির নির্দেশে তা হয়ে থাকে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সরকারি এলপিজির দাম বাড়ার কথা নয়। কারণ ওই দাম সরকারের নির্ধারিত। কেউই এককভাবে নির্দেশ দিয়ে ওই দাম বাড়াতে পারে না। তার পরও সেটাই যখন ঘটে, তখন কারসাজি করা হয় বলে গ্রাহকেরা যে অভিযোগ করেন, তাই সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়। ঢাকার বাজার: মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকায় পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ থাকলেও প্রায় সারা দিনই গ্যাসের চাপ থাকে না। তাই রান্নার জন্য ওই এলাকার অনেকেই এখন এলপিজি ব্যবহার শুরু করেছেন। এ রকম একজন মাহমুদ আলী বলেন, নভেম্বরে যে সিলিন্ডার এক হাজার ২০০ টাকায় কিনেছিলেন, ডিসেম্বরে তা এক হাজার ৪৫০ টাকা। ঢাকা মহানগরের চারপাশে নতুন করে বাড়িঘর ওঠা এলাকাগুলোতে গৃহস্থালীর প্রয়োজনে এলপিজির ব্যবহার ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কিন্তু এই গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় এবং দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকায় এলপিজির দাম বেশি হওয়ায় গ্রাহকেরা বিপদে আছেন। সারা দেশের অবস্থা: দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর এবং গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সর্বত্রই এলপিজির সরবরাহ কম এবং দাম বেশি। রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত চার মাসে সেখানে প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকারও বেশি। একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক অমলেন্দু পাল জানান, গত রমজানের আগে যে সিলিন্ডারের দাম ছিল ৯৮৫ টাকা, তা নভেম্বরে হয় এক হাজার ২৫ টাকা। ডিসেম্বরের শুরুতে হয় এক হাজার ৮৫ টাকা। এখন এক হাজার ২০০ টাকা। রংপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সেখানে সরকারি কোম্পানির এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না। বেসরকারি কোম্পানির সিলিন্ডার পাওয়া গেলেও দাম বেশি। কয়েক দিন আগেও যে সিলিন্ডারের দাম ছিল এক হাজার ২২০ টাকা, এখন তা এক হাজার ২৮০ টাকা। খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, খুলনা অঞ্চলে প্রায় তিন লাখ সিলিন্ডারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি খাতের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয় নয় হাজার। এখন বাজারে সরবরাহ যেমন কম, তেমনই ঘন ঘন দাম বাড়ার কারণে অনেকেই রান্নার কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার শুরু করেছেন। বরিশাল অফিস জানায়, সাত দিন আগে যে সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭০ টাকায়, এখন তার দাম এক হাজার ২২০ টাকা। সরকারি কোম্পানির সিলিন্ডারের সরবরাহ গত কয়েক দিনে এক হাজার ৬০০ থেকে কমে ৪০০তে নেমেছে। ফরিদপুর অফিস জানায়, জেলার প্রায় ১০ হাজার এলপিজি গ্রাহক চরম বিপাকে পড়েছেন। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম উঠেছে এক হাজার ২০০ টাকার ওপরে। শহরের স্টেশন রোডের বাসিন্দা দুই গৃহবধূ খাদিজা বেগম ও রাবেয়া ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে খড়ির দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের আর রান্না করে খাওয়ার উপায় থাকবে না। সরকার কি আমাদের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্তদের এই সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাবে না?’ যশোর অফিস জানায়, গ্যাস সিলিন্ডারের দাম উঠেছে এক হাজার ২৩০ টাকায়। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বাজার তদারকি সেল থাকলেও দাম নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কের খুচরা গ্যাস বিক্রেতা সাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি ক্লিনহিটের প্রতিটি সিলিন্ডার এক হাজার ১৮০ টাকায় কিনে এক হাজার ২৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। বগুড়া, কুমিল্লা, ফেনী ও সিরাজগঞ্জ থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক এবং দিনাজপুর ও পাবনা অফিস থেকেও এলপিজি সম্পর্কে একই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতকে উজাড় করে দেয়ার বছর : ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী ৫১ দিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৪৬ দিন বিদেশে কাটিয়েছেন



বশীর আহমেদ

২০১০ সাল ছিল ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দেয়ার বছর। ট্রানজিট, করিডোর, বিদ্রোহ দমনে বাংলাদেশকে সঙ্গী করা, বন্দর ব্যবহারসহ দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ভারত যা চেয়ে আসছিল তার সবকিছুই পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং দিল্লি গিয়ে ভারতের এসব প্রত্যাশা পূরণ করে এসেছেন। গত এক বছরে প্রধানমন্ত্রী ভারতসহ ৯টি দেশ সফর করেন। বিদেশের মাটিতে তিনি কাটিয়েছেন ৫১ দিন। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি রেকর্ডসংখ্যক ৩৪ বার বিদেশ সফর করেন। আর এসব সফরে বিভিন্ন দেশে তিনি কাটিয়েছেন ১৪৬ দিন।
গত এক বছরে পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে দৃশ্যত বাংলাদেশের কোনো প্রাপ্তি নেই। সরকারের নানা অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড এবং বিদেশের মাটিতে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কলুষিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের মাধ্যমেই শুরু করেন তার ২০১০ সালের বিদেশ সফর। ১০ থেকে ১৩ জানুয়ারি ১১৯ সদস্যের বিশাল এক বহর নিয়ে তিনি দিল্লি সফর করেন। বছরজুড়েই আলোচনার মূল বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর। ভারতের প্রত্যাশা পূরণে আর কিছু কি বাকি আছে? কী পেল বাংলাদেশ? আলোচনায় এসব প্রশ্ন এসেছে ঘুরেফিরে। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে দিল্লি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রচার করা হচ্ছিল দিল্লি আস্থা ফিরে পেয়েছে ঢাকার ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটল তার উল্টোটা। হাসিনা-মনমোহন বৈঠকে একতরফাভাবে দিল্লিকে সব উজাড় করে দিল ঢাকা। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ভারত বাংলাদেশের কাছে যা যা চেয়ে আসছিল তার সবকিছুই দিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী সন্ত্রাস দমন চুক্তি সই হয়েছে। এই চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে সেভেন সিস্টারের বিদ্রোহ দমনে বাংলাদেশকে সহযোগী শক্তি হিসেবে পেয়েছে ভারত। দু’দেশের গোয়েন্দাদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি এক্ষেত্রে কাজ করছে এখন। গত এক বছরে প্রায় অর্ধশত উলফা নেতাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে ট্রানজিটের জন্য মরিয়া ছিল ভারত। ভারতের সেই দাবিটিও পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, আশুগঞ্জ বন্দরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ব্যবহারসহ যা যা চেয়েছিল ভারত তার সবকিছুই দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। ট্রানজিট কার্যকর এবং বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য এক বিলিয়ন ডলারের ঋণও ধরিয়ে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের হাতে। অন্যদিকে সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার সমাধান, সীমান্ত চিহ্নিতকরণ, ছিটমহল হস্তান্তর, সমুদ্রসীমা নির্ধারণসহ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে মৌখিক আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পায়নি বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।
অতীতে প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুত্ খাতের কোনো কাজ পায়নি ভারত। এ বছর বিনা টেন্ডারে ২৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের কাজ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে আমাদের বিদ্যুত্ খাতের ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।
আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ত্রিপুরায় ভারতের ওডিসি পরিবহনের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি সই হয়েছে। ভারতের তৈরি করা খসড়াটিই সই করেছে বাংলাদেশ। নৌ-ট্রানজিট ফি আদায়ের জন্য বিধিমালা তৈরি করে সার্কুলার জারি করে সরকার। ফিও আদায় শুরু হয়। হঠাত্ ভারত নৌ-ট্রানজিট ফি দিতে অস্বীকার করে। নৌ-ট্রানজিট ফি না দেয়ার ভারতের দাবিটি অপূর্ণ রাখেনি বাংলাদেশ। ওই সার্কুলার স্থগিত করেছে সরকার।
নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। ভারত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য অনুমতি চায় বাংলাদেশের কাছে। সেই অনুমতিও দিয়েছে বাংলাদেশ। সবকিছু মিলিয়ে ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতীয়রাও ভাবতে পারেনি তারা এতকিছু পেয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময়ে যৌথ ইশতেহার ঘোষণার পর ভারতের বিখ্যাত দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’র সম্পাদকীতে বলা হয়, সুযোগ পেয়ে ঢাকার কাছ থেকে সবকিছু দু’হাতে লুফে নিয়েছে দিল্লি।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমি আনন্দিত যে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পেরছি। যা কিছু হয়েছে তাতে বাংলাদেশের বেশি লাভ হবে। কীভাবে দেশের স্বার্থরক্ষা হয়েছে বা কীভাবে বাংলাদেশের বেশি লাভ হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি আজও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ জানুয়ারি আবার ভারত যান বর্ষীয়ান রাজনীতিক জ্যোতি বসুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে। এরপর প্রধানমন্ত্রী একে একে আরও ৮ দেশ সফর করেন। এসব সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি খুব একটা না থাকলেও দেশের স্বার্থ বিকিয়ে কোনোকিছু অন্তত দিয়ে আসতে হয়নি।
৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরে যান কুয়েত। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়ন এবং কুয়েতে বাংলদেশের জনশক্তি রফতানির নতুন সুযোগ সৃষ্টি। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে কোনো আশ্বাস মেলেনি কুয়েতের আমিরের সঙ্গে বৈঠকে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নেয়ার আগ্রহ দেখালেও এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৭ থেকে ২০ মার্চ তিনি চীন সফর করেন। এই সফরে ভারত কিছুটা নাখোশ হলেও কূটনৈতিক দিক থেকে সফরটি ছিল বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। ওই সফরে বাংলাদেশের কিছু প্রাপ্তিও হয়েছে। মঞ্জুরিসহ অর্থনৈতিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে সহায়তা, সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ এবং শাহজালাল সার কারখানা স্থাপন ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সই হয় ওই সফরে।
২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ভুটান সফর করেন ১৬তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে।
ডি-৮ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী ৪ থেকে ১০ জুলাই নাইজেরিয়া সফর করেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ১৮ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তার এই সফর ছিল বিশেষভাবে আলোচিত। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে পৌঁছার পর বিমানবন্দরে প্রবাসীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সফরেই প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস মাহবুবুল হক শাকিল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরের পরিচালক শাহনাজ গাজীর কেলেঙ্কারির ঘটনা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে রীতিমত কলুষিত করেছে। পরে এই ঘটনার জন্য শাকিলকে চাকরি হারাতে হয়েছে। জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশকে এমডিজি পুরস্কার দেয়া হয়। এই পুরস্কারকে জাতিসংঘের পুরস্কার বলে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটা জাতিসংঘের কোনো পুরস্কার নয়।
২১ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া, বেলজিয়াম এবং জাপান সফর করেন। বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি রাশিয়া যান। তবে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে তিনি রুশ প্রধানমন্ত্রী ভদ্মাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বেলজিয়াম সফরে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরটিও ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর জন্য অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা চান। এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে জাপান পদ্মা সেতুর জন্য অতিরিক্ত একশ’ মিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিষয়ে একাধিক চুক্তিও সই হয়েছে ওই সফরে।
প্রধানমন্ত্রীর এসব সফরে সফরসঙ্গীদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সবসময়ই ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনেকটা কাকতালীয়ভাবে ২০০৯ সালের মতো ২০১০ সালেও ৩৪ বার বিদেশ সফর করেন। এই ৩৪ বার সফরের মধ্যে রাশিয়া, ফ্রান্স, স্পেন এবং কম্বোডিয়া সফর ছিল দ্বিপক্ষীয়। বাকি সফর তিনি করেছেন বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে অংশ নেয়ার জন্য। বিরামহীন নিষম্ফল সফরে তিনি ব্যস্ত ছিলেন সারা বছর। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রাশিয়া সফর ছিল মোটামুটি ফলপ্রসূ। এই সফরে পরমাণু বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনে প্রাথমিক চুক্তি সই হয়। এটা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক খবর।
২০১০ সালে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়ালেও অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানরা বাংলাদেশে আসেননি বললেই চলে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২০১০ সালে আর কোনো ভিভিআইপির ভিজিট হয়নি বাংলাদেশে

সালতামামি-২০১০ : বছরজুড়ে আলোচিত সমালোচিত বিচার বিভাগ

অলিউল্লাহ নোমান

বছরজুড়ে বিচারাঙ্গন ছিল আলোচিত ও সমালোচিত। বছর শেষ হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে। ডিসেম্বরের শেষ পক্ষে সুপ্রিমকোর্ট ছুটিতে থাকলেও নভেম্বর মাসের ঘটনাবলী ছিল দ্বন্দ্ব ও ঘাত-প্রতিঘাতের। ৪ নভেম্বর বিতর্কিত দুই বিচারপতিকে শপথ দেয়া নিয়ে তুমুল প্রতিবাদ করেন আইনজীবীরা। আপিল বিভাগ ২৯ নভেম্বর বাড়ি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার দায়ের করা দুটি আবেদন রীতির প্রশ্ন তুলে বিনা শুনানিতে খারিজ করে দিলে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠে বিচারের দৃষ্টিভঙ্গী ও দর্শন নিয়ে। আদালত অবমাননার এক মামলায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ৬ মাসের দণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা, আমার দেশ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমানকে এক মাসের দণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, একই অভিযোগে অপর একটি আদালত অবমাননার মামলায় মাহমুদুর রহমানকে একশ’ টাকা জরিমানা অনাদায়ে একদিনের কারাদণ্ড প্রদান সম্পর্কে ও এই বিষয়ে বাংলাদেশের আইনের দুর্বলতা নিয়ে দেশে-বিদেশে লেখালেখি হয়েছে অনেক। হাইকোর্ট কর্তৃক পঞ্চম সংশোধনী ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল প্রসঙ্গ রাজনৈতিক অঙ্গনে তর্কের তুমুল ঝড় তুলেছে। এ বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার কতখানি তা দিয়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ।
গেল এক বছরে ২১ জন নতুন অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে হাইকার্ট বিভাগে। তাদের অধিকাংশের আইন শিক্ষায় এলএলবিতে তৃতীয় শ্রেণী থাকায় ও সরকার দলের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বিচার বিভাগ দলীয়করণের অভিযোগ ওঠে। বিতর্কিত দুই আইনজীবীকে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগ ও তাদের শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে হয়েছে নানা জটিলতা।
বিদায়ী বছরেই অবসরে গেছেন দু’জন প্রধান বিচারপতি। একজনের বিরুদ্ধে বিদায়ী অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করেন। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের সামনেই অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগটি আনেন। আপিল বিভাগের দুই বিচারপতি তাদের ডিঙিয়ে বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়ায় দীর্ঘ ছুটি নেন। এদের মধ্যে একজন
বিচারপতি আবদুল মতিন, অবসরে গেছেন ৩০ নভেম্বর তার ছুটির মধ্যেই। অপরজন বিচারপতি শাহ আবু নঈমের ছুটি এখনও চলছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে নিয়োগ দেয়ার দিন থেকেই ছুটি নেন জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘিত হওয়া এই দুই বিচারপতি। তারা ছুটিতে যাওয়ায় গত ১ অক্টোবর থেকে মাত্র ৩ জন নিয়ে বসে আপিল বিভাগ। ১১ বিচারপতির আপিল বিভাগে গত ৩ মাস ধরে বিচার কার্যক্রম চালাচ্ছেন মাত্র ৩ বিচারপতি।
লন্ডনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমাবেশে যোগ দিয়ে হাইকোর্টের এক বিচারপতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। গত মার্চে ঘটে এ ঘটনা। খুনের মামলায় চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি (নিয়োগ দেয়ার সময় সরকার মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নেয়) ও সুপ্রিমকোর্টে ভাংচুরকারী একজনকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া নিয়েও আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল বছরজুড়ে। গত এপ্রিলে তাদের নিয়োগ দেয়া হলেও শপথ অনুষ্ঠান হয়েছে ৪ নভেম্বরে। তত্কালীন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম তাদের শপথ দেয়া থেকে বিরত থাকেন। তার অবসরের পর বর্তমান প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক দায়িত্ব নিয়ে স্বল্পকালের মধ্যেই তাদের শপথ দেন। বিচারপতি হক বলেছেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে সাংবিধানিকভাবে এ শপথদানে তিনি বাধ্য।
বছরজুড়ে আলোচিত ছিল আদালত অবমাননার অভিযোগে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ থেকে থানার ওসি এবং জেলা প্রশাসককে তলব করে এনে দিনভর দাঁড় করিয়ে রাখা। সাবেক সচিব আসাফ উদ দৌলাকে এক সেমিনারে কিছু বক্তব্য দেয়ার কারণে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে তলব করা হয় এবং তাকে উদ্দেশ করে আদালতের কঠোর মন্তব্যও ছিল আলোচনার শীর্ষে।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক মামলায় ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করতে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭টির বেশি মামলা হাইকোর্ট বিভাগে বাতিল ঘোষণা, হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ ছাড়া তদন্ত কমিটি গঠনে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা, এক মামলার শুনানিতে আপত্তি করায় আইনজীবীদের গ্রেফতার করতে হাইকোর্ট বিভাগের এক বিচারপতির হুমকি, আগাম জামিনের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের কড়াকড়ি, হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের আদেশ দেয়ার পরও অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে কারাগারে ফোন করে জামিনে মুক্তি আটকে দেয়ার অভিযোগে আইনজীবীদের ক্ষোভ ছিল ব্যাপক।
বিদেশি পাসপোর্টধারী ভিনদেশি নাগরিক হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন, মামলার বাদীর সঙ্গে বিয়ে অনুষ্ঠানে এক টেবিলে বসে এক বিচারপতির অন্তরঙ্গ পরিবেশে আলাপচারিতার সংবাদটিও আদালতপাড়া ও তার বাইরে মুখে মুখে আলোচিত বিষয় ছিল। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে কোনো জবাব বা বক্তব্য দেননি কেউ।
বছরের শেষদিকে সুপ্রিমকোর্ট ছুটি শুরুর আগে প্রবীণ আইনজীবী টিএইচ খানের সঙ্গে আইনি তর্কের এক পর্যায়ে বিনা শুনানিতে বেগম জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এই আইনজীবীদের প্রস্তাব ছিল যে লিভ টু আপিল শুনানির আগেই বেগম জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে বের করে দেয়ায় আদালত অবমাননা হয়েছে মর্মে তাদের যে আবেদনটি আছে তা আগে শুনানি করা হোক। আদালত এতে রাজি না হলে আবেদনকারিণীর সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ চেয়ে শুনানিতে প্রথমে এক সপ্তাহ, তারপর একদিন তা না হলে এক ঘণ্টা সময় চান বেগম জিয়ার আইনজীবীরা। আদালত কোনো নিবেদন মঞ্জুর করেননি। আপিল বিভাগের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে দায়ের করা অপর একটি পিটিশনও উত্থাপনেরই সুযোগ পাননি কৌঁসুলি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এই অভিযোগ ছিল বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে একটি আদালত অবমাননা মামলায় ২৬ আগস্ট ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করে রায় দেন আপিল বিভাগ। একই রায়ে আমার দেশ প্রতিবেদক অলিউল্লাহ নোমানকে ১ মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে মাহমুদুর রহমানকে আরও এক মাসের সাজা এবং অলিউল্লাহ নোমানকে ৭ দিনের সাজা দেয়া হয়।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায়টি দেয়ায় প্রদত্ত এই সাজার বিরুদ্ধে কোনো আদালতে আপিল করার সুযোগ ছিল না দণ্ডপ্রাপ্তদের। প্রথম বিচারেই চূড়ান্ত সাজা। দেশের প্রচলিত আইনে খুনি, ধর্ষণকারী, এসিড নিক্ষেপকারী, চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী, ভণ্ড, প্রতারক সবাই ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে জজকোর্টে, জজকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে, হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ পায়। এছাড়া আপিল বিভাগের রায়ের পর রিভিউ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেশের ইতিহাসে এই একমাত্র মামলার রায় যার বিরুদ্ধে দণ্ডিত অভিযুক্ত সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ও অলিউল্লাহ নোমান আর কোনো ফোরামে আপিল করার সুযোগ পাননি। আগস্ট মাসে রায় ঘোষণা হলেও পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া যায়নি বিদায়ী বছরে। পূর্ণাঙ্গ রায় ছাড়া রিভিউ পিটিশন কারার কোনো সুযোগ নেই। এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে অলিউল্লাহ নোমান সাজা ভোগ করা শেষ করে এসেছেন। মাহমুদুর রহমান সাজা ভোগ করছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের এই আলোচিত-সমালোচিত রায়টি ছিল বিদায়ী বছরে।
সুপ্রিমকোর্টের ছুটি চলাকালীন ২৪ ডিসেম্বর টিআইবির দেশজুড়ে পরিচালিত একটি জরিপে সেবাখাতে মতামত দানকারীরা আদালত অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হওয়ার তথ্য দেন। জরিপ রিপোর্টে তাই সামগ্রিকভাবে বিচার বিভাগ ও তার অধীনস্থ শাখা-প্রশাখাগুলো দুর্নীতিতে শীর্ষ খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়। এতে ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসে বিচার বিভাগ। জনমনে প্রশ্ন ওঠে, আদালতের কিছু অনিয়ম তুলে ধরায় আমার দেশ-এর সম্পাদক ও প্রতিবেদকের সাজা হয়েছে। কিন্তু টিআইবির খানা জরিপে তো প্রমাণ হয়েছে দেশের বিচার অঙ্গন শীর্ষ দুর্নীতির জায়গা।
বিচার বিভাগ এ বছরটি বছর শুরু করেছিল রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় কারাগারে আটক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির আপিল খারিজ করে রায় দিয়ে। রিভিউ পিটিশন খারিজ করে আদেশ দেয়ার দিনই তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়।
ফেব্রুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অবসর নেয়ার আগে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের সভাপতিত্বে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া একটি রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩টি লিভ টু আপিল খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। সেই লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিলকারীর আইনজীবীরা সময় চেয়েছিলেন। আদালত কোনো সময় দেননি। এক রকম তাড়াহুড়ো করেই প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেয়ার আগে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম লিভ টু আপিল শুনানি করেন। তিনি অবসরে যাওয়ার একদিন আগে রায় ঘোষণা করেন। তবে লিখিত রায় দেয়া হয় তার অবসরে যাওয়ার কয়েক মাস পর। অনুরূপভাবে আমার দেশ সম্পাদক ও প্রতিবেদকের শাস্তি দিয়ে রায় ঘোষণার দেড় মাসের মাথায় অ্যাটর্নি জেনারেলের দ্বারা উত্থাপিত সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদায় নেন বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম। তিনি এখন পর্যন্ত লিখিত রায়টি দেননি।
গেল বছর হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠন এবং বিচারপতিদের এখতিয়ার বণ্টন নিয়েও আইনজীবীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা দেখা গেছে।
এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য তৈরি করা হয় এই ট্রাইব্যুনাল। তবে প্রশ্ন উঠেছিল, স্বাধীনতার পর চিহ্নিত ১৯৯ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে ১৯৭৪ সালে ক্ষমা করে দিয়েছিল তত্কালীন শেখ মুজিবুর রহমান সরকার। তারা ক্ষমা পেয়ে চলে যায় পাকিস্তানে। তখন মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধের জন্য আর কাউকে এখনকার মতো এভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। তবে বাংলাদেশী মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিচার করার পক্ষাবলম্বীদের যুক্তি হলো, এরা এদেশের মানুষ হয়ে এদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে চরম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছে বিদেশি দখলদার বাহিনীকে। তাই এদের বিচার হওয়া বেশি জরুরি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এজন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ দিয়েছে ৩ জন বিচারককে। সরকারি প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়ার পর এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের প্রাথমিক পদক্ষেপ শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। এখানে কয়েক দফা হাজির করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন আসামিকে। গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের নিম্নআদালতে অবাধে রিমান্ড মঞ্জুর এবং ঢালাওভাবে মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানোর বিষয়টি ছিল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নিয়ে আলোচনার শীর্ষে। আসামি জেলে থাকাকালীন সংঘটিত ঘটনায়ও শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মামলার সঙ্গে কোনো রকমের সংশ্লিষ্টতা নেই, এফআইআর, এজাহার কোথায়ও কোনো পর্যায়ে নাম নেই এমন ব্যক্তিদের মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাচ্ছে বেশকিছু ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সরকার আবেদন করলেই কোনো রকমের যাছাই-বাছাই ছাড়া দেখানো হয় শ্যোন অ্যারেস্ট।
সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে আসামিদের ঢালাওভাবে রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টিও নিম্নআদালতে ছিল ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং সমালোচিত। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিমান্ডের বিষয়ে একটি গাইডলাইন দিয়েছিল নিম্নআদালত ও পুলিশকে। আপিল বিভাগে এখন পর্যন্ত তা বহাল আছে। বছরজুড়ে রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে বহাল থাকা হাইকোর্ট বিভাগের গাইডলাইনটি লঙ্ঘিত হচ্ছে বিভিন্ন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

ডিজিটাল কারচুপি দিবসের সমাবেশ : যুদ্ধাপরাধী আতঙ্কে ভুগছে আওয়ামী লীগ -এটিএম আজহার



স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতায় আসার পর পরই বর্তমান মহাজোট সরকার বিদেশিদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ, করিডোর, বন্দর সুবিধা ইত্যাদি চুক্তি করলেও দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলার অবনতির নিয়ন্ত্রণসহ জনদুর্ভোগের সমাধানে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। এতে প্রমাণিত হয়, তারা জনগণের ভোটের পরিবর্তে বিদেশিদের সমর্থনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার ৩৯ বছর আগের যুদ্ধাপরাধ ইস্যু তুলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধী আতঙ্কে ভুগছে। এ ভয় ও অসুখে তারা শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, জামায়াতের আমির মাওলানা নিজামীসহ অন্য শীর্ষ নেতাদের ৬ মাস জেলে আটক রেখেও কোনো অভিযোগ গঠন করতে পারেনি সরকার। এভাবে বিনা অপরাধে আটক রেখে তারা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ সরকারের পতন হলে তাদের সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপির প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলের ঢাকা মহানগরী ভারপ্রাপ্ত আমির হামিদুর রহমান আজাদ এমপির সভাপতিত্বে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুলের পরিচালনায় মহানগরী অফিস চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক মো. তাসনীম আলম, মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম, মহানগরী নেতা ডা. রেদওয়ানুল্লাহ শাহেদি, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, কবির আহমদ ও ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ব্যাপক সংখ্যক আসন নিয়ে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থাকলেও আমাদের এত ভয় পায় কেন? তাহলে কি তারা কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত? তিনি বলেন, জনগণের প্রতি সরকারের আস্থা নেই। দেশে মানুষের কোনো অধিকার নেই। গণতন্ত্র চার দেয়ালে বন্দি। তিনি বলেন, আমরা তো গণতান্ত্রিক দল। এ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই জামায়াতের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। সেই দলকে বর্তমানে রাজনৈতিক বৈধ অধিকার দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার ২০১১ সালে বিরোধী দলের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আচরণ না করলে এ অধিকার ফিরিয়ে আনতে অতীতের মতো রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলবে জামায়াত। ক্ষমতা প্রয়োগ করে এ সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ৩৯ বছর পর্যন্ত দেশের কোনো থানায় জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে একটি জিডিও করা হয়নি। তারা কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যখন তারা বৈঠক ও আন্দোলন করেছে তখন যুদ্ধাপরাধী কোথায় ছিল? এ থেকে বোঝা যায়, যুদ্ধাপরাধী কোনো বিষয় নয়, আসল কথা বিদেশিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করতে না পেরে ভুয়া অভিযোগে মামলা, মিথ্যা সাক্ষী করার পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার আমরাও চাই। ক্ষমতা থাকলে তবে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান যে ১৯৫ জনকে চিহ্নিত করেছিলেন তাদের এনে বিচার করুন। কিন্তু যারা যুদ্ধই করেনি তাদের বিচার করার তামাশা জনগণ দেখবে না। কল্পিত কাহিনী সৃষ্টি করে বিচার করা যাবে না। তিনি বলেন, গত এক বছরে সরকার প্রমাণ করেছে তারা দেশ, জনগণ, ইসলাম ও গণতন্ত্রের দুশমন। এ দুশমন থেকে দেশ, জনগণ, ইসলাম ও গণতন্ত্রকে রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে সরকার পতন আন্দোলন শুরু করার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক তাসনীম আলম বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল ডিজিটাল কারচুপি ও ষড়যন্ত্রের ফসল। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের বক্তব্যে তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মাওলানা নিজামী, সাঈদীর মতো ব্যক্তিদের আটক ও নির্যাতনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, তারা জনগণকে তোয়াক্কা করে না, স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। তিনি দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষায় সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন করার আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে হামিদুর রহমান আজাদ এমপি বলেন, এ সরকার জনমত ও বিরোধী দলকে পরোয়া করে না। তারা বিদেশিদের কথায় চলে। কারণ তারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বর্তমানে পাগলের প্রলাপ ও তামাশার বস্তু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি

ধর্ষণ এবং এর ভিডিও ধারণ: দুই ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার

Fri 31 Dec 2010 11:01 AM BdST

rtnnকুড়িগ্রাম, ৩১ ডিসেম্বর (আরটিএনএন ডটনেট)-- এক কিশোরীকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করার ঘটনায় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা ডিগ্রী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মুকুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ সরকারকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার প্রকাশ্য দিবালোকে বহিষ্কৃত দুই ছাত্রলীগ নেতা এক কিশোরীকে রাজিবপুর বাজার সংলগ্ন একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষণের চিত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও করা হয়।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এলাকাবাসী ওই ছাত্রাবাসটি ঘিরে ফেলে। এসময় জনতার হাতে ছাত্রলীগ নেতা মুকুল হোসেন ধরা পড়ে। এলাকাবাসী তাকে মারধর করে ছেড়ে দেয়।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা ছাত্রলীগ জরুরি বৈঠক ডেকে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।

রাজিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘যে মেয়েটিকে নিয়ে ঘটনা, সেই মেয়েটি একজন পেশাদার পতিতা।’

এ ব্যাপারে রাজিবপুর থানায় যোগাযোগ করা হলে পুলিশ কর্মকর্তা এস আই কোবাদ জানান, এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।


আরটিএনএন ডটনেট/প্রতিনিধি/এসআই_ ১০৫০ ঘ.

Wednesday 29 December 2010

সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদমুখর ছিল সারাবছর

রকিবুল হক

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাত্রা এ বছর ব্যাপক আকার ধারণ করে। সরকারিভাবে ইসলামবিরোধী নানা পদক্ষেপ এবং বক্তব্য-বিবৃতির পাশাপাশি বেশ তত্পর ছিল বেসরকারি বিভিন্ন মহল। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ উঠিয়ে দেয়া, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন, ফতোয়া নিষিদ্ধ, সমঅধিকার আইন করার সরকারি ঘোষণা এবং বোরকাবিরোধী আইন করার পাশাপাশি আল্লাহ ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি, জেহাদি বইয়ের নামে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যবিরোধী অপপ্রচার, বোরকা ও টুপিধারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অশ্লীল নৃত্যসহ বিভিন্ন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের মতে, ২০১০ সাল ছিল দেশকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রের বছর। এ বছর ইসলাম ও দেশের মুসলমানদের ঈমান-আকিদার ওপর মারাত্মক আঘাত আসে। আর এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে দেশের প্রায় সব ইসলামী দলসহ ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে মুখর ছিল পুরো বছর। নির্বাচনের আগে ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না’ বলে ওয়াদা করলেও বর্তমানে তা ভঙ্গ করায় আ’লীগ সরকারকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে ইমান ও ইসলাম রক্ষায় তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনে সরকারের পুলিশবাহিনীও ছিল কঠোর অবস্থানে।
এ বছরের শুরুর দিকেই একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হবে। এ ঘোষণাকে পবিত্র কোরআনের মিরাছি আইনবিরোধীআখ্যায়িত করে তার প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন ইসলামী দল। কোনো অবস্থাতেই মিরাছি আইন পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে ওলামারা জানান। এর কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন, সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে। এই বক্তব্যে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কারণ ফতোয়া ইসলামের বিধান। মুসলমানদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই কোনোভাবেই ফতোয়া বন্ধ করা যাবে না বলে তাদের অভিমত। মার্চের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠান কোরআন তেলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়। এছাড়া বছরের এপ্রিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করলে তীব্র প্রতিবাদ জানান ধর্মপ্রাণ মানুষ।
এদিকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ইডেন কলেজে বোরকাপরা ছাত্রীদের ধরে বোরকা খুলে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও তল্লাশির নামে পর্দানশিন ও নামাজি ছাত্রীদের হয়রানির ঘটনা ঘটে। এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের রুম থেকে ইসলামী বই-পুস্তককে জিহাদি বই বলে তা জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রশাসনের সহায়তায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সারাদেশে বোরকাধারী ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রীদের মাধ্যমে ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার খবরে সব মহলে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। এদিকে এ বছর পয়লা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয় অর্ধশতাধিক ছাত্রী। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানেও তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয় বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক। এছাড়া অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এসব ঘটনার মাধ্যমেই সারাদেশে ইভটিজিং ও অসামাজিক কার্যকলাপ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাজামা-পাঞ্জাবি ও বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেন এক শিক্ষক।
বছরজুড়েই আলোচিত ছিল ’৭২-এর সংবিধান চালু ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করে ’৭২-এর সংবিধান চালুর ঘোষণায় আতঙ্কে ছিল ইসলামী দলগুলো। কারণ এটি চালু হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। এজন্য শুরু থেকেই তারা এর বিরোধিতা করে আসছিল। কিন্তু শত বিরোধিতা সত্ত্বেও এবছর হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করা হয়। এর পরপরই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বলতে থাকেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ শেষ হয়ে গেছে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হবে ইত্যাদি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে না। এরপরও অন্য মন্ত্রী-এমপিরা এই রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও মন্ত্রীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিনিময়ও হয়। মন্ত্রীরা বলেন, ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করবে নির্বাচন কমিশন। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়, এ দায়িত্ব সরকারের, ইসির নয়।
এদিকে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের এ তত্পরতায় সংশ্লিষ্ট দলগুলোতে টনক নড়ে। দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব দল পৃথক বিক্ষোভ-সমাবেশ করে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে সরকারকে হুশিয়ার করে। এ বিষয়ে রাজধানীতে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি পালন করে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ইসলামী আন্দোলন। গত ৫ নভেম্বর মুক্তাঙ্গনে দলটির মহাসমাবেশ থেকে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ইসলামবিরোধী তত্পরতা বন্ধে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়। একইভাবে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ও ইসলামী ঐক্যজোট একাধিক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এছাড়া খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদসহ বিভিন্ন ইসলামী দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে।
ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ইস্যুর পরপরই ছিল ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু। বর্তমান সরকার নাস্তিক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, শুরু থেকেই তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন। পরে ওই কমিটি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির যে রিপোর্ট দেয় তা প্রত্যাখ্যান করে সংশোধন বা বাতিলের জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এসব দাবি ও আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং গত ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা এই শিক্ষানীতিকে ধর্মহীন ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে কোনোভাবেই এই নীতি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়। এরই মধ্যে এই শিক্ষানীতি সংশোধনের দাবিতে ২৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের ডাক দেয়। অবশ্য পরে তা সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে স্থগিত করা হয়। এছাড়া এই শিক্ষানীতি সংশোধন বা বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। কওমী মাদ্রাসার বোর্ড সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে অক্টোবরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের নির্দেশনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারির প্রেক্ষিতে সারাদেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সিদ্ধান্তকে কোরআনের বিধান পরিপন্থী এবং নারীদের বেপর্দা করার ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল জিহাদি বই। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী, বিরোধী মতকে দমন বা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এটি। পুলিশ জিহাদি বই পাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে বিভিন্ন ইসলামী দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে। জিহাদি বই উদ্ধারের নামে পুলিশ নিয়ে যায় মূল্যবান ইসলামী বইপত্র। অথচ এসব বইয়ের কোনোটিই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়। জিহাদি বই রাখার অভিযোগে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা। এসব সংগঠনের কয়েকশ’ নেতাকর্মী এখনও কারাগারে রয়েছেন। পুলিশের এ তত্পরতায় সারাদেশে জিহাদি আতঙ্ক সৃষ্টি হয় ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের মাঝেও। সরকারের পুলিশবাহিনীর এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হলেও তাদের অপতত্পরতা অব্যাহত রয়েছে।
এবছর বৃহত্তর সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নানা অনৈসলামিক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও ছিল বেশ আলোচিত। প্রতিষ্ঠানটির ডিজি হিসেবে বর্তমান সরকার নিযুক্ত সামীম মোহাম্মদ আফজালের নেতৃত্বেই এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড হয়। ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র, অশ্লীল গানবাজনা আয়োজনের ধারাবাহিকতায় গত ২৭ নভেম্বর ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের দিয়ে অশ্লীল উদর-নৃত্য প্রদর্শনের ঘটনায় সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের কারণে ইফা ডিজির অপসারণ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাউদ্দিনকেও অপসারণের দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও ইসলামবিরোধী নানা বক্তব্য-বিবৃতি ছিল আলোচিত বিষয়। এ বছর মার্চ মাসে মানিকগঞ্জে এক বিধর্মী শিক্ষক রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেন। একইভাবে বাগেরহাটের এক হিন্দু কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদকে শিবলিঙ্গের সঙ্গে তুলনা করে। এসব মন্তব্যে সারাদেশে বিক্ষোভ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ধর্মপ্রাণ মানুষ। কিন্তু সরকার এক্ষেত্রে ছিল নীরব। আগস্টে দেব নারায়ণ মহেশ্বর নামে এক ব্যক্তি কোরবানি বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বিশুদ্ধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভের একপর্যায়ে রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তাকে আটক করা হয়নি। সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি স্টেডিয়ামে ‘কিংখান লাইভ শো’র নামে ভারতীয় শিল্পীদের এনে অশ্লীল ও নগ্ন নাচগানের আয়োজনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন মহল। এছাড়া ইসলামবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দেশের স্বার্থবিরোধী ইস্যুতে বছরজুড়েই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন প্রতিবাদমুখর। তবে সরকার পুলিশবাহিনী দিয়ে প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা চালায়। বিভিন্ন ইসলামী দলের বেশকিছু কর্মসূচিতে হামলা চালায় পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা। এতে আহত হন অনেক নেতাকর্মী। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর অধিকাংশ বিক্ষোভ সমাবেশেই হামলা চালায় পুলিশ। ফলে রাজপথে বড় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি।
গত এক বছর দেশে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সাল ছিল দেশকে ধর্মহীন করার বছর। এ বছর ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। অশ্লীল গানবাজনা আর নারীদের নগ্ন প্রদর্শনীসহ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধ্বংসের অপপ্রয়াস চলেছে। তিনি বলেন, এ বছর ফতোয়া নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয় সরকার। জঙ্গিবাদের কথা বলে ইসলামী দল ও নেতাদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে ধর্মপ্রাণ মানুষ কোরআন-হাদিস ও ইসলামী বই পড়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর সরকার জিহাদি বইয়ের ধোয়া তুলে এসব বই পড়ার প্রতি মানুষের অনাগ্রহ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করেছে। অথচ সরকার এসব বইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সাহস করেনি।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। গোড়া থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি বৈরী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। ইসলামের কথা শুনলেই তাদের মাথাব্যথা হয়। তাদের সময় দেব নারায়ণদের মতো ইসলামবিদ্বেষীরা উত্সাহিত হয়। তারা আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বরদাশত করতে পারেনি। তারা ইসলামবিদ্বেষী, ভারতপ্রেমী। এজন্য তারা ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে দেয় না। তারা বাকশালী কায়দায় স্বৈরশাসন চালাতে চাচ্ছে। তাই এ সরকার থেকে রক্ষা পেতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। তাছাড়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা করা যাবে না।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, তুর্কি ও স্পেনের স্টাইলে মুসলমানদের এ বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসলাম নির্মূলের মিশন বাস্তবায়ন করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। তাদের ক্ষমতা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, দেশ, ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তত বেশি বিপদ ঘনিয়ে আসবে। দেশ ও ইসলামের স্বার্থেই এ সরকারের পতন তরান্বিত করতে হবে। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুভার যাদের হাতে ন্যস্ত, তারা যখন অন্যায়-অনাচার, পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে, সাধারণ মানুষের মাঝে যখন গুনাহের কাজ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেদেশ ও জাতির ওপর আল্লাহর গজব অনিবার্য হয়ে পড়ে। সম্প্রতি দেশের নানা ঘটনাপ্রবাহে সে গজবের অশনিসঙ্কেত শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইসলামবিরোধী এমন সব ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা এর আগে এদেশে কল্পনা করাও কঠিন ছিল।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেন, বতর্মান মহাজোট সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন তারা করবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাদের মদতে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বছরজুড়ে সংঘটিত বিভিন্ন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সরকার তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। ইসলামবিরোধী তত্পরতা বন্ধে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় সরকারের ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে না এলে সরকারকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সরকারি ব্যর্থতায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির নেতারা বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধি রোধে সরকারি ব্যর্থতায় অসত্ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে। গতকাল পার্টির ঢাকা মহানগর কমিটির জরুরি সভায় এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা। এ অবস্থা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপসহ সরকারি ভূমিকা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
সভায় বলা হয়, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজার তদারকি ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতাও মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংসংক্রান্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন ও সার্বক্ষণিক নজরদারি বৃদ্ধি, অসত্ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, চাল, ডাল তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর উত্পাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও বিক্রয় কার্যক্রমে সরকারি ভূমিকা বৃদ্ধিরও আহ্বান জানান তারা। এদিকে অবিলম্বে হয়রানিমূলক মামলায় আটক গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশু ও বাহরানে সুলতানের মুক্তি দাবি করেন তারা। সভায় পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মীর মোফাজ্জল হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, হাবিবুল ইসলাম বসুনিয়া, মো. বশির উদ্দিন, ফিরোজ খান, সেলিনা বেগম, শাহাদত হোসেন খোকন, রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আজাদীপাগল জনতা ভারতকে করিডোর দেবে না : প্রধান



স্টাফ রিপোর্টার

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেছেন, ভারতের করিডোর-ট্রানজিট রাষ্ট্র হওয়ার জন্য জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম করেনি। বেরুবাড়ি দিল্লিকে নজরানা দিয়েও গত ৪০ বছরে আমরা তিন বিঘা করিডোরের দখল পাইনি। তিনি বলেন, সাতরাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু রক্তে কেনা বাংলাদেশের টাকা ও শ্রমে আমরা হিন্দুস্তানি হানাদারদের জন্য সড়ক বানিয়ে দিতে পারি না।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে পঙ্গু ও সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিডিআরকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ করিডোর-ট্রানজিট-সমুদ্রবন্দর ও জাতীয় বিদ্যুত্ গ্রিডকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে দেশ বিক্রির দলিলে সই করে এসেছে। বাংলাদেশের আকাশে এখন পরাধীনতার কালো ছায়া। আর দেশপ্রেমিকদের সামনে এখন একটাই এজেন্ডা—রুখো করিডোর বাঁচাও দেশ, আধিপত্যবাদী দিল্লির কালো হাত ভেঙে দাও। আজাদিপাগল জনতা জান দেবে, তবু ভারতকে করিডোর দেবে না ইনশাল্লাহ।
গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘রুখো করিডোর বাঁচাও দেশ, আধিপত্যবাদের কালো থাবা ভেঙে দাও’—স্লোগান নিয়ে নগর যুব জাগপা আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগর যুব জাগপা সভাপতি এসএম মনিরুল ইসলাম মনিরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম আবদুল আজিজের পরিচালনায় এতে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমান। বক্তব্য রাখেন নগর জাগপা সভাপতি আসাদুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ সানু, যুব জাগপার সভাপতি বেলায়েত হোসেন মোড়ল, সাধারণ সম্পাদক ইনছান আলম প্রমুখ

বলির পাঁঠা হয়েছে বেসরকারি ৫ ল্যান্ডফোন কোম্পানি : বিদায়ী বছরে টেলিকম খাতে অনিশ্চয়তার মাত্রা ছিল বেশি

জিয়াউদ্দিন সাইমুম

২০১০ সালে বাংলাদেশের টেলিকম ইতিহাসের তিনটি ঘটনা বছর ধরেই আলোচিত ছিল। এগুলো হচ্ছে দেশীয় বিনিয়োগে গড়ে ওঠা ৫টি পাবলিক সুইচড টেলিকম নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) বা ল্যান্ডফোন কোম্পানিকে বলির পাঁঠা বানানো। কর ফাঁকি দিয়ে এয়ারটেলের ওয়ারিদ টেলিকম কেনা এবং বহুল বিতর্কিত টেলিকম আইন চালু। আর তিনটি ঘটনার যোগফল হিসেবে দেশের টেলিকম খাতে অনিশ্চয়তার মাত্রা ছিল অনেক বেশি।
বিশেষত র্যাংকস টেল, পিপলস টেল, ওয়ানটেল, ওয়ার্ল্ডটেল ও ঢাকা ফোনকে অবৈধ কল টার্মিনেশনের অভিযোগে বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও মেনে নিতে পারেনি। কারণ, লাইসেন্স বাতিল হওয়া এই ৫টি ল্যান্ডফোন কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা দেশের মোট মোবাইল গ্রাহক সংখ্যার মাত্র এক শতাংশ। বাকি ৯৯ শতাংশ গ্রাহক দেশি-বিদেশি ৬টি মোবাইল অপারেটরের। আবার এই ৫টি কোম্পানি বন্ধ হওয়ায় এখন বেসরকারি ল্যান্ডফোন বলতে দেশে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুরো টেলিকম সেক্টর বিদেশিদের হাতে চলে গেছে।
অন্যদিকে পানির দামে ওয়ারিদ টেলিকমকে ভারতী এয়ারটেল কিভাবে কিনেছে তা নিয়ে বছরজুড়ে আলোচনা হলেও সরকার এয়ারটেলের কর ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করে দেখেনি। বরং আপিলের বিধান বাতিল করে কঠোর টেলিকম আইন পাস করেছে। পাশাপাশি এই আইনের আওতায় বিটিআরসি থেকে মূল ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে নেয়া হয়। এতে টেলিকম সেক্টর সম্পর্কে যে কোনো সিদ্ধান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফাঁদে পড়ে যায়। কমে যায় বিদেশি বিনিয়োগ।
বলির পাঁঠা পিএসটিএন : ভিওআইপির অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগে চলতি বছরের মার্চ মাসে ৫টি পিএসটিএন অপারেটরের সুইচরুম বন্ধ এবং গত মে মাসে লাইসেন্স বাতিল করে দেয় বিটিআরসি। কিন্তু এ ৫টি ল্যান্ডফোন কোম্পানি বন্ধ হওয়ার পরও অবৈধ পথে ভিওআইপির ব্যবহার থেমে থাকেনি। বর্তমানে দেশে বৈধপথে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান দৈনিক গড়ে চার কোটি হলেও প্রায় সমপরিমাণ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান হয় অবৈধ পথে। কিন্তু অবৈধ কল আদান-প্রদানের অভিযোগে একমাত্র বলির পাঁঠা বানানো হয় ৫টি পিএসটিএন কোম্পানিকে। এতে অনিশ্চতায় পড়ে যায় এ খাতের আড়াই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। এর মধ্যে ব্যাংক ও সিন্ডিকেট ঋণদাতাদের কাছ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়। অন্যদিকে বন্ধ হওয়ার কারণে চাকরি হারান প্রায় ৫ হাজার পিএসটিএন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
উল্লেখ্য, বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপির অভিযোগে ১৫ মার্চ ঢাকাফোন ১৭ মার্চ ওয়ার্ল্ড টেল, ১৯ মার্চ র্যাংকস টেল, ২১ মার্চ পিপলস টেল এবং ২৩ মার্চ ন্যাশনাল ফোনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। এতে কয়েক লাখ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েন। বিটিআরসির হিসাবে র্যাংকস টেলের গ্রাহক সংখ্যা তিন লাখ ৭৮২, পিপলসটেলের ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৩, ন্যাশনাল ফোনের ১ লাখ ৩৭ হাজার, ঢাকা ফোনের ৭৭ হাজার ৭৬৫ জন এবং ওয়ার্ল্ডটেলের ১৪ হাজার ২৬১ জন।
বিনিয়োগ স্থবির : বিনিয়োগের দিক থেকে ২০১০ সালে দেশের মোবাইল সেক্টর মোটেও বেগবান হতে পারেনি। সংশোধিত আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে গত তিন মাসে মোবাইলের নতুন কোনো প্যাকেজই অনুমোদন পায়নি। এ কারণে এই খাতে বিনিয়োগও তেমন বাড়েনি। ব্যাখ্যাহীন কারণে কালক্ষেপণ করায় থ্রিজি মোবাইল ফোন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সস্তায় ল্যাপটপ আর ডুয়েল সিম মোবাইল সেট ঘোষণা মাফিক পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে পুরনো চার মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হতে চললেও তা নবায়নের বিষয়টি পরিষ্কার হয়নি। এ কারণে এসব মোবাইল অপারেটর বাজারে এয়ারটেল থাকার পরও বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে দোটানায় রয়েছে। অথচ এয়ারটেল আসার কারণে ২০১০ সালেই দেশের টেলিকম খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টির কথা। কিন্তু তা হয়নি। বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে বলা যায়, চারটি মোবাইল অপারেটর এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানতেই পারেনি তাদের লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া কি হচ্ছে।
ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানিগুলো এখনও মাথা উঁচু করতে পারছে না। ঢিমেতালে এবং খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। চলতি বছরই আইপি টেলিফোনের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট অপারেটর মালিকরা বলছেন, তাদের হাত-পা বেঁধে ব্যবসা করতে দেয়া হয়েছে। আইপি টেলিফোন সেটের ওপর ৫০ শতাংশের বেশি করারোপ করায় এ ব্যবসা জমে উঠতে পারছে না। কলসেন্টারগুলোও এগুতে পারছে না। অবৈধ কল টার্মিনেশনও (ভিওআইপি) বন্ধ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে সরকারি দলের ক্ষমতাবান কয়েকজন এখন ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। সহযোগী হিসেবে আছেন বিটিআরসি এবং বিটিসিএলের কিছু লোক। এসব অবৈধ ভিওআইপি কল শনাক্ত করার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি হাতে থাকার পরও সরকারি আশীর্বাদপুষ্ট এসব রুই-কাতলাকে মোটেও ধরা যাচ্ছে না।
২০১০ সালে এয়ারটেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজে ঠিক কত পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে তার সঠিক চিত্র পাওয়া যায় না। কোম্পানিটির প্রতি সরকারের আনুকূল্যের কারণে টেলিকম খাতের বিষেশজ্ঞরা এয়ারটেল নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন না। তবে অন্য অপারেটররা চলতি বছর টেলিখাতে উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ করেনি। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৮ সালের তুলনায় ২০০৯ সালে এই খাতে ৬১ শতাংশ বিনিয়োগ কমেছে। ২০০৮ সালে এই খাতে ৬৪ কোটি ১৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার বিনিয়োগ হলেও গত বছর তা নেমে আসে ২৫ কোটি ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, টেলিকম খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি যেভাবে চলছে তাতে ২০১১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ বা পুনর্বিনিয়োগ খুব একটা বেশি নাও হতে পারে।
টেলিকম আইনে পরিবর্তন : টেলিকম আইনে পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে দেশের আমলারা টেলিকম সেক্টরের ওপর খবরদারির সুযোগ পেয়ে যায়, বিটিআরসির ক্ষমতা কমে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দু’বছরে সরকার যে পৌনে দুইশ’ আইন পাস করেছে তার মধ্যে এই আইনটি সবচেয়ে সমালোচিত। আইনে ৩শ’ কোটি টাকা জরিমানার সঙ্গে ১০ বছরের জেল, যে কোনো সময় এককভাবে যে কোনো অপারেটরের লাইসেন্স বাতিল বা লাইসেন্সের শর্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা পেয়েছে সরকার। ট্যারিফ ও অন্যান্য চার্জও সরকার অনুমোদন দেবে। আবার সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলও করা যাবে না। গত ১৯ জুলাই জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হয়।
আইনের কয়েকটি ধারায় বিভিন্ন অপরাধে অপারেটর কর্মকর্তাদের জেল-জরিমানার বিধানও রয়েছে। ব্যক্তিপর্যায়ে এই জরিমানা ১০০ কোটি টাকা এবং ৫ বছরের জেল। কিন্তু কোন পর্যায়ের কর্মী বা কর্মকর্তা অভিযুক্ত হবেন, সে বিষয়ে বলা নেই। এতে সামান্য অপরাধেও বিদেশি মালিক, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, অফিসারসহ সব কর্মীকেই অপরাধী করার সুযোগ রয়েছে।
ডিজিটাল কনসেপ্ট নিয়ে বেশ মাতামাতি করলেও মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর টেলিকম খাতে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে স্থির থাকতে পারেনি বিটিআরসিও। তাদের পেছন থেকে টেনে রাখা হচ্ছে। এ কারণে তাদের কোনো কাজেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে না। তারা যে ফরমায়েশি কাজে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, তা তাদের কার্যক্রম দেখলে বোঝা যায়। শুরুতে বিটিআরসি আন্তর্জাতিক গেটওয়ের (আইজিডব্লিউ) সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু কাজ শেষ না করে অগ্রাধিকার তালিকা বদলে অবৈধ কল টার্মিনেশনের অভিযোগে পিএসটিএন লাইসেন্স বাতিল করে। অথচ একই অভিযোগে মোবাইল অপারেটররা স্রেফ জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যায়। বিটিআরসি থ্রি-জি লাইসেন্স বিষয়েও বেশ মাতামাতি করেছিল। ওটাতে ভাটা পড়তে বেশি সময় লাগেনি। এখন তারা তাদের অগ্রাধিকার পাল্টিয়ে ভিওআইপির লাইসেন্স উন্মুক্ত করা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে।
গ্রাহক ঠিকই বেড়েছে : তবে মোবাইল গ্রাহকসংখ্যা বাড়ছেই। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ দেশে মোবাইল গ্রাহকসংখ্যা ছয় কোটি ৬৬ লাখ ২১ হাজার বলে মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছেন। তারা এটাও দাবি করেছেন, সিম ট্যাক্স না থাকলে গ্রাহক আরও বাড়ত। তবে বিটিআরসি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখানো হয়েছে, গত অক্টোবর মাসে দেশে মোবাইল গ্রাহক ছিল ছয় কোটি ৫৫ লাখ ৬৩ হাজার।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত নভেম্বরে গ্রামীণফোনের গ্রাহক বেড়েছে তিন লাখ ৫৬ হাজার। সব মিলিয়ে তাদের গ্রাহক দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার। অন্যদিকে দ্বিতীয় সেরা অপারেটর বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা এক কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার, রবির এক কোটি ২০ লাখ ৫৯ হাজার, এয়ারটেলের ৩৭ লাখ ৯৭ হাজার ও সিটিসেলের ১৮ লাখ ৭৩ হাজার। তবে এই সময়ে টেলিটকের গ্রাহক কমেছে ২০ হাজার। তাদের মোট গ্রাহক ১২ লাখের সামান্য বেশি।
উল্লেখ্য, গত বছর নভেম্বরে মোবাইল ফোন গ্রাহক ছিল সাড়ে পাঁচ কোটি। আর ২০০৮ সালের নভেম্বরে সংখ্যাটি ছিল চার কোটি ৩৯ লাখ এবং ২০০৭ সালের নভেম্বরে সংখ্যাটি ছিল তিন কোটি ৩১ লাখ।
সস্তায় ল্যাপটপ ও মোবাইল সেট : ২০০৯ সালের এপ্রিল-মে থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছিল, ‘ছয় মাসের মধ্যে নিজস্ব ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ও মোবাইল সেট উত্পাদন শুরু হবে।’ অথচ সব কারিগরি সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য গত ৬ মে মালয়েশিয়ার টিএফটি টেকনোলজি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)। কিন্তু তারপর নানা আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচে আটকে যায় এ চুক্তি।
টেলিটক-বিটিসিএল এগুতে পারছে না : আমলাতান্ত্রিকতার বাধা ডিঙাতে পারেনি দেশের একমাত্র সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক। অন্যদিকে সরকারি টেলি সেবা কোম্পানি বিটিসিএলও আশার আলো দেখাতে পারেনি। সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি ল্যান্ডফোন কোম্পানি বিটিসিএলকে শেয়ারবাজারে যেতে বলেছে। কিন্তু তারা বলছে, যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বিটিসিএল চলছে তাতে এটি অসম্ভব। আড়াই বছর আগে সরকারের এই সংস্থাটিকে কোম্পানি করা হয়েছে। এখনও তার অর্গানোগ্রামই ঠিক হয়নি। সরকারের ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ থাকবে কি থাকবে না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছে। বিটিসিএলের অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে এফডিআর ভেঙে কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। টেলিটকের সেবার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
আলোচনায় এয়ারটেলের কর ফাঁকি : বাংলাদেশের টেলিকম বাজার দখল করার ভারতীয় নীলনকশার অংশ হিসেবে গত ২০ ডিসেম্বর এয়ারটেলের যাত্রা শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কর ফাঁকির মাধ্যমে এবং ভারতীয় আকাঙ্ক্ষার অংশ হিসেবে গত ৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়ারিদের ৭০ শতাংশ শেয়ার মাত্র এক লাখ ডলারে কিনে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল ভারতী এয়ারটেল। তবে একটি শক্তিশালী মোবাইল অপারেটর বাংলাদেশের টেলিকম বাজারে আসার কারণে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে টেলিকম খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ার কথা থাকলেও এয়ারটেল বাদে বাকি অপারেটররা পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে চাইছে না।
বাজারে আসার পর থেকে এয়ারটেল এদেশের টেলিকম বাজার দখলের পাশাপাশি ভারতকে টেলিট্রানজিট পাইয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারত ট্রানজিটের মতোই কৌশলে এই টেলি-ট্রানজিট আদায় করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট ইত্যাদি সস্তা হবে ও বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছু চার্জ বা ভাড়া পাবে মাত্র।
মোবাইল অপারেটর একটেলে (বর্তমানের রবি) একে খান গ্রুপের ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিল। সেই শেয়ার ৩৫০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয় জাপানের এনটিটি ডকুমো। ওই শেয়ার বিক্রি থেকে তখন সরকার প্রায় ১৩২ কোটি টাকা ফি পেয়েছিল। এর আগে সিটিসেলে প্যাসিফিক টেলিকমের শেয়ার সিং টেলের কাছে হস্তান্তর থেকে সরকার শত কোটি টাকা পেয়েছিল। এসব কারণে বাংলাদেশের টেলিকম বাজারে ভারতী এয়ারটেলের অন্তর্ভুক্তি সুস্থ প্রতিযোগিতার জন্ম নাও দিতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন টেলিকম বিশেষজ্ঞরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টেলিকম বিশেষজ্ঞ বলেন, অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করতে পারলে এয়ারটেল ভালো ব্যবসা করতে পারবে এদেশে। কিন্তু তারা যদি ভারত থেকে কল সেন্টারগুলো অপারেট করে, তাহলে বাংলাদেশের টেলিকম বাজারে অস্থিরতা বাড়বে।

দুই হাজার পয়েন্ট দিয়ে হাজার কোটি টাকার মাদক ঢুকছে দেশে : ঝুলে আছে ৩২ হাজার মামলা

মুস্তফা নঈম ও সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম

ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তের প্রায় ২ হাজার পয়েন্ট দিয়ে বছরে হাজার কোটি টাকার মাদক ঢুকছে বাংলাদেশে। বিজিবির বরাত দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ৫১২টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক প্রবেশ করার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া ভারতে সীমান্তের কাছাকাছি শতাধিক ফেনসিডিল কারখানা বন্ধের বিজিবির (সাবেক বিডিআর) অনুরোধে নয় মাসেও সাড়া দেয়নি বিএসএফ। এদিকে সারাদেশে র্যাব, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন দফতরে ৩২ হাজারেরও বেশি মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে, যার কোনো কূলকিনারা হয়নি।
ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংস্থার এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, প্রতিবছর শুধু ভারত থেকে চোরাইপথে ৩৪৭ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের মাদক দেশে আসছে। জাতিসংঘের একটি জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৯ লাখ নারীসহ ৬৫ লাখ মানুষ মাদকাসক্ত। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ১ লাখেরও বেশি মানুষ। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাবে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৬ লাখ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীরা বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার মাদক বাংলাদেশে আমদানি করছে। প্রতিবছর শুধু ভারত থেকে চোরাইপথে আসা বিপুল পরিমাণ মাদক দেশে আসছে। যার মাত্র ১০ শতাংশ পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে।
গত মার্চ মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বৃহত্তর যশোর সীমান্তের ৫২টি ও উত্তরাঞ্চলের ৬টি জেলার ৭২ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৭০টি ফেনসিডিল ও ১০টি হেরোইন প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার তালিকা করে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এবং বিডিআরের পক্ষ থেকে কারখানাগুলো বন্ধ করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু এর ৯ মাস অতিবাহিত হলেও বিএসএফের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দফতর সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য এলাকার ভারত-মিয়ানমারসংলগ্ন ৭১০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৩৬৫ কিলোমিটারই অরক্ষিত। রাঙামাটির সাজেক থেকে খাগড়াছড়ির নারাইছড়ি পর্যন্ত ১১৩ কিলোমিটার, রাঙামাটির আন্ধারমানিক থেকে বান্দরবানের মদক পর্যন্ত ১৩১ কিলোমিটার, মদক থেকে লেম্বুছড়ি ১২১ কিলোমিটার সীমান্তে কোনো বিজিবি বা অন্য কোনো বাহিনীর ক্যাম্প নেই।
কুমিল্লা জেলার ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রক্ষায় বিজিবির মাত্র ১৫টি বিওপি রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা, আখাউড়া ও সদর উপজেলার ৮০ কিলোমিটার সীমান্তের অর্ধশতাধিক স্পট দিয়ে ভারতীয় মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকায় বিডিআরের চিহ্নিত ৯৯টি রুটসহ প্রায় ৩ শতাধিক রুট দিয়ে মাদক আসছে। বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৪টি জেলায়ও প্রায় ২শ’ পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। অভ্যন্তরের রুটগুলো হলো সাতক্ষীরা জেলায় ২৬টি, যশোর জেলায় ২১টি, ঝিনাইদহে ২২টি, চুয়াডাঙ্গায় ৬টি, মেহেরপুরে ২২টি এবং কুষ্টিয়া জেলায় ২টি রুট রয়েছে। এসব রুটে প্রতিনিয়ত ভারতীয় মাদক দেশে ঢুকছে। ভারত থেকে সব থেকে বেশি মাদক আসে যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে। কারণ বেনাপোল থেকে ভারতের কলকাতার সীমান্ত মাত্র ৮০ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। এছাড়া প্রতিদিন ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ৫শ’ ট্রাক বেনাপোলে আসে। এসব গাড়ির বিভিন্ন মালামালের সঙ্গে অবাধে মাদকও আসছে। যে কোনো জিনিসের উপরে কার্বন পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দিলে স্কানিং মেশিনে ধরা পড়ে না। যার কারণে ট্রাকভর্তি বিভিন্ন ধরনের মালের সঙ্গে মাদকের চালান আসছে অবাধে।
নাটোরের লালপুর থেকে নওগাঁর ধামুইরহাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ’ কি.মি. সীমান্ত এলাকায় ২৭টি রুটে এ ফেনসিডিল ও হেরোইন পাচার হয়ে আসছে। সাতক্ষীরার ১৩৮ কিলোমিটার সীমান্ত এখন মাদক ব্যবসায়ীদের দখলে। জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার ভোমরা স্থলবন্দরসহ অন্তত ১৭৫টি পয়েন্ট দিয়ে অবাধে মাদকদ্রব্য ঢুকছে দেশে। শেরপুরের অন্তত ১৮টি পয়েন্টসহ ভোগাই, মহারশি, চেল্লাখালী সোমেশ্বরী সীমান্ত নদী দিয়ে ভারতীয় মাদক আসছে।
উত্তরাঞ্চলের মাদক পাচারের বিস্ময়কর তথ্য মিলেছে। ৭২ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্তের জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার চেঁচড়া, দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হাড়িপুকুর, ঘাসুরিয়া, বিরামপুর উপজেলার কাটলাসহ প্রায় ২২০টি পয়েন্ট দিয়ে অবাধে মাদকের চালান দেশে ঢুকছে। বিপরীতে কাঁসা, পিতল, তামা, দস্তা, মূল্যবান ধাতব মুদ্রা, সোনা, শার্ট-প্যান্ট পিস, টাঙ্গাইল শাড়ি, জামদানি শাড়ি প্রভৃতি মূল্যবান দেশীয় সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া স্বাধীনতার পরবর্তীকালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের চালু মিলকারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি খুলে উত্তরাঞ্চলের সীমান্তপথে পাচার হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া আদমজি জুটমিলের যন্ত্রাংশও উরাঞ্চলের এসব সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
দেশের আকাশ ও সমুদ্রপথও মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরে বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি চালন ধরা পরার পর আকাশপথে মাদক পাচারের বিষয়টি সামনে চলে আসে। বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ২০ কেজি কিটামিন পাউডারসহ (নেশার উপকরণ) তামিলনাড়ুর এক ব্যক্তিকে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গ্রেফতার করে। গত ১৩ মার্চ বিমানবন্দরে সাড়ে তিন কেজি হেরোইনসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরপরই বিমানবন্দরের দোতলায় বহির্গমনে নাইজেরিয়ান নাগরিক আফোলয়েনের লাগেজ তল্লাশি করে কাস্টমস কর্মকর্তারা ৫ কেজি ৮০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করে।
১৮৫৭ সালে প্রণীত হয় মাদকদ্রব্য আইন। তখন এই আইন আফিম আইন নামে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে এই আইনে বেশকিছু ধারা সংযোজিত হয়। এসব আইন একত্র করে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন নামে পূর্ণাঙ্গ আইন পাস হয়। এই আইনের আওতায় বিভিন্ন সংস্থার হাতে সারাদেশে অন্তত ৩২ হাজার মামলা ঝুলে আছে। যার কোনো কূলকিনারা হয়নি।

সরকারের দুর্নীতি ও দলবাজি রুখতে কঠোর আন্দোলন : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দু’টি ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অপরটি দলবাজি। এই দুইয়ের গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে জনগণের মৌলিক অধিকার। মুখ খুলে কেউ সত্য কথাও বলতে পারছেন না। সরকারের দুর্নীতি ও দলবাজি রুখতে নতুন বছরে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, সরকারি দলের লোকজনের অবাধ দুর্নীতির কারণে টিআইবির রিপোর্টে বিচার বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। সর্বত্র দুর্নীতি ও দলীয়করণে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। আর এমন চেতনা থেকেই বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে নিয়ে বিবেকবিবর্জিত বক্তব্য দেয়া হয়েছে। তিনি শাহরিয়ার কবিরের শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নিজ বিবেক থেকেই প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
গতকাল সোমবার সকালে পৃথক দু’টি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় মুক্তাঙ্গনে ছাত্রদল দক্ষিণ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন তিনি। ছাত্রদল দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইসহাক সরকারের মুক্তি দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছাত্রদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিবের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এম ইলিয়াস আলী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির অর্থনৈতিক সম্পাদক আবদুস সালাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরি এ্যানি এমপি, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে দুর্নীতির মহোত্সব চলছে। সর্বত্রই দলীয়করণ চলছে। সরকার জুলুমের রাজনীতি করছে। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বাড়িতে থেকে উচ্ছেদ করেছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে। এমপি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করে শারীরিক নির্যাতন করছে। সানাউল্লাহ বাবুর হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি, চৌধুরী আলমের খোঁজ মেলেনি, কমিশনার আরিফকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলনকে কারাবন্দি, লুত্ফর রহমান বাবর ও নাসির উদ্দিন পিন্টুকে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জনপ্রতিনিধিদেরও রেহাই দিচ্ছে না। এ সরকারের কাছে কেউই নিরাপদ নয়। সরকার দেশে ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই হয় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না হয় মানহানি মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে বিরাজমান অবস্থা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ।
জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। ১/১১-এর সময় তার সংগ্রামী ভূমিকা জাতি কখনোই ভুলবে না। শাহরিয়ার কবির তার সম্পর্কে যা বলেছেন তা বিবেক থেকেই প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত।
শ্রদ্ধা নিবেদনে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বাবুল আহমেদ, জাসাস-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক মনির খান, যুগ্ম সম্পাদক এসএম বিপাশ আনোয়ার, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদারসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে ‘নব্য রাজাকার’ আখ্যায়িত করে শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, শাহরিয়ার কবির নিজের চিন্তা-চেতনা থেকে অনেক কথাই বলতে পারেন। কিন্তু খোন্দকার দোলোয়ার সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে তার সম্পর্কে আরও জানা উচিত ছিল। দেলোয়ার একজন প্রবীণ, অভিজ্ঞ ও প্রগতিশীল রাজনীতিক।
তিনি বলেন, দেলোয়ার সাহেব অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং শোষণের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবন থেকেই নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন। তার সম্পর্কে এমন বক্তব্য শাহরিয়ার কবির প্রত্যাহার করবেন বলে আশা করছি।

আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরের পরিকল্পনা বাতিলের দাবি : ঢাকা-মাওয়া সড়ক ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ : বিক্ষোভ ভাংচুর



শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

আড়িয়াল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধু সিটি নির্মাণ পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শ্রীনগর, দোহার এবং নবাবগঞ্জ উপজেলাবাসী। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাজার হাজার নারী-পুরুষ ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কে জমায়েত হয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা লাঠিসোঁটা, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে ও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে শ্রীনগর উপজেলার উমপাড়া থেকে সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। উত্তেজিত জনতা একপর্যায়ে তিনটি গাড়ি ভাংচুরসহ স্থানীয় এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের ব্যানার, সাইনবোর্ড, তোরণে অগ্নিসংযোগ করে। অবরোধের ফলে রাস্তার দু’পাশে আটকে পড়ে সহস্রাধিক যানবাহন। রাজধানী ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলগামী হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন।
আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর ও বঙ্গবন্ধু সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণার পর থেকে শ্রীনগর, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার আড়িয়াল বিলের অধিবাসীরা তাদের ফসলি জমি, মাছের খামার এবং বসতবাড়ি রক্ষার জন্য নিজ নিজ উপজেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পেশ এবং মিছিল-মিটিং করে আসছিল। গত ২২ ডিসেম্বর নবাবগঞ্জের মরিচপট্টি ও শ্রীনগরের বাড়ৈখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে সভা থেকে গতকাল ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কে মানববন্ধনের ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকেই তিন উপজেলার সর্বস্তরের লোকজন ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কে জড়ো হতে থাকে। অপরদিকে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় র্যাব-পুলিশও মোতায়েন করা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধন কর্মসূচি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক। যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা ‘জান দেব তবু মাটি দেব না, রক্ত দেব তো জমি দেব না, কৃষক ও জেলের পেটে লাথি মারা চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগানে মুখর করে তোলে কয়েক কিলোমিটার এলাকা।
দুপুর ২টার দিকে আড়িয়াল বিল রক্ষা কমিটি বিমানবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা প্রত্যাহারের জন্য সাতদিনের আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেয়। আড়িয়াল বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাহজাহান বাদল জানান, পরিকল্পনা প্রত্যাহার করা না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে। এদিকে বিমানবন্দর নির্মাণের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে সচেতন নাগরিক কমিটির ব্যানারে কয়েকশ’ জনতা ঝুমুর হল চত্বর থেকে মিছিল বের করে ছনবাড়ী চৌরাস্তায় এসে সমাবেশ করে