Wednesday 20 July 2011

পিএসসিকে অকেজো করে দেয়া হচ্ছে










কাদের গনি চৌধুরী
পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অকার্যকর করে দেয়া হচ্ছে। সরকার দলীয় লোকজনকে চাকরি দেয়ার ব্যাপারে পিএসসিকে বশে আনতে না পেরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কমিশনের দায়িত্ব খর্ব করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। শুধু তাই নয়, পিএসসিকে ভেঙে তিন ভাগ করতে যাচ্ছে সরকার। এ তিন পিএসসি হলো পাবলিক সার্ভিস কমিশন (টেকনিক্যাল), পাবলিক সার্ভিস কমিশন (জেনারেল) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (এডুকেশন)। এছাড়া ১৯৮১ সালের সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস) নতুন একটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করে অস্থায়ী (এডহক) নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিসিএস পরীক্ষায় চালু করা হয়েছে ২০০ নম্বরের ভাইভা (মৌখিক) পরীক্ষা। আর দলবাজ কর্মকর্তাদের দিয়ে নেয়া হচ্ছে ভাইভা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পিএসসিকে ক্ষমতাহীন করতে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নিয়ে নেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ বিধি-১ শাখা থেকে একটি পরিপত্র জারি করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পিএসসি’র ভূমিকা আরও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও নানা পরিপত্র করা হচ্ছে। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ চেয়ে পিএসসি’র পাঠানো প্রস্তাবেও সায় দিচ্ছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বরং এ নিয়ে নানা ঝামেলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সর্বশেষ জারি করা পরিপত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে এডহকভিত্তিক সরাসরি নিয়োগকে উত্সাহিত করা হয়েছে। পরিপত্রে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের (অধীনস্থ দফতর/অধিদফতর/পরিদফতরসহ) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে এডহকভিত্তিক সরাসরি নিয়োগ এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগের বিষয় বিবেচনার জন্য দুই ধরনের কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এতে প্রথম শ্রেণীর পদে এডহকভিত্তিক সরাসরি নিয়োগ এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত প্রথম শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব/অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এবং অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন করে প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর বা পরিদফতরের প্রধান, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরিচালক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিকে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সদস্য করার কথা বলা হয়েছে। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির শর্ত পূরণসাপেক্ষে সব মন্ত্রণালয়/ বিভাগ ও এর অধীনের অধিদফতর/পরিদফতর/দফতরের প্রথম শ্রেণীর পদে এডহক ভিত্তিতে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম ও সুপারিশ দেবে কমিটি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির শর্ত পূরণসাপেক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত প্রথম শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম ও সুপারিশ দেবে তারা। এদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে এডহকভিত্তিক সরাসরি নিয়োগ এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিবকে সভাপতি এবং একই মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব বা সমপর্যায়ের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য সচিব করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পর্যায়ের এবং অর্থ বিভাগের উপ-সচিব পর্যায়ের একজন করে প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর বা পরিদফতরের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের উপ-পরিচালক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিকে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সদস্য করার কথা বলা হয়েছে। এ কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির শর্ত পূরণসাপেক্ষে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীনের অধিদফতর/পরিদফতর/দফতরের দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে এডহক ভিত্তিতে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম ও সুপারিশ দেবে তারা। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির শর্ত পূরণসাপেক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম ও সুপারিশ দেবে কমিটি। পরিপত্রের শেষ লাইনে বলা হয়েছে, সরকারের এসব সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে অনুসরণ এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরকারি কর্ম কমিশনকে উপেক্ষা করেই দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে অর্ধলক্ষাধিক লোক নিয়োগ শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর প্রশাসনে গতি আনার লক্ষ্যে দ্রুত লোক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দফতর ও অধিদফতরে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এডহকভিত্তিক নিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিধিমালা সংশোধনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পরে একই বছরের ১৫ জুলাই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব শূন্যপদে এডহকভিত্তিক জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে ১৯৯৪ সালের নিয়োগবিধির ৮ ধারা বিলুপ্ত করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অর্ধলক্ষাধিক শূন্যপদের তালিকা প্রস্তুত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর অ্যাডহকভিত্তিক সাড়ে তিন হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে এসব ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকার সমর্থিত ডাক্তারদের সংগঠনের দেয়া তালিকার ভিত্তিতে এসব ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে তদবিরের অভাবে মেধাবীরা উপেক্ষিত হন। নিয়োগ দেয়া এসব ডাক্তারের চাকরি নিয়মিত করার জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক পত্রের মাধ্যমে সুপারিশ করে। সচিব কমিটিতে নিয়োগবিধির (সংশোধনী) প্রস্তাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন এডহকভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এসব ডাক্তারের চাকরি নিয়মিত ও ক্যাডারভুক্তকরণেরও সুপারিশ করা হয়।
সূত্র জানায়, কিছুদিন পর অস্থায়ী (অ্যাডহক) নিয়োগ পাওয়া ৪১৩৩ চিকিত্সককে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্যাডারভুক্ত হতে তাদের পিএসসির অধীনে কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। একই সঙ্গে তাদের চাকরিতে যোগদানের দিন থেকেই জ্যেষ্ঠতা দেয়া হবে। এর জন্য ১৯৮১ সালের সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস) নতুন একটি অনুচ্ছেদ সংযোজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপরন্তু এজন্য ‘দি রেগুলারাইজেশন অব অ্যাডহক অ্যাপয়নমেন্ট রিক্রুটমেন্ট রুলস, ১৯৮৩; অ্যাডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা, ১৯৯৪ এবং দি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (কনসালটেশন) রেগুলেশন, ১৯৭৯’- এ তিনটি আইন ও বিধিতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধনী আনা সংক্রান্ত সব বিষয়ে প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি অ্যাডহকভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়মিত ও ক্যাডারভুক্ত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে ‘অ্যাডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা, ১৯৯৪ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্রমবর্ধমান চিকিত্সা সেবার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য এরই মধ্যে অ্যাডহকভিত্তিতে ৩৫৫১ জন ডাক্তার নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ৫৮২ জন ডাক্তারের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অ্যাডহক (অস্থায়ী) চিকিত্সকদের নিয়মিত ও ক্যাডারভুক্ত করতে আইন সংশোধন করা হলে দলীয় চিকিত্সকরাই সুবিধা পাবেন। এর ফলে অনেক অদক্ষ ও অযোগ্য চিকিত্সক নিয়মিত হবেন। একই সঙ্গে ক্যাডারভুক্তও হয়ে যাবেন। তবে নিয়মিত করার সঙ্গে একমত পোষণ করলেও বিসিএস পরীক্ষা ছাড়া ক্যাডারভুক্ত করার প্রশ্নে দ্বিমতপোষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা দ্বিমতপোষণ করার পরও গত ২০ মার্চ প্রশাসনসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় নতুন এ অনুচ্ছেদ সংযোজনের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগে সরকার আলাদা সার্ভিস কমিশন করতে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জন্যই মূলত সরকার আলাদা সার্ভিস কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব পদে আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দেয়া হতো। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৭৭ সংশোধন করে শুধু শিক্ষা ক্যাডারের জন্য শিক্ষা কর্মকমিশন নামে একটি পৃথক কমিশন গঠনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যেই এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র দিয়েছে। শিক্ষা কমিশন গঠনের আগেই ২৯৩টি সরকারি কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আড়াই হাজার শিক্ষকসহ কয়েক হাজার শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগের একটি তালিকাও করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে বাদ দিয়ে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ হলে দলীয়করণের একটি খারাপ নজির স্থাপিত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলেন, পিএসসি যদি প্রশাসন ক্যাডারসহ ২৯টি ক্যাডারের লোকবল নিয়োগ দিতে পারে, তাহলে শিক্ষা ক্যাডারের জন্য আলাদা কর্মকমিশন গঠনের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এটা হলে অন্য ক্যাডারের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। দলীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ হলে দেশ, জাতি এবং আগামী প্রজন্ম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ‘শিক্ষা সেক্টরে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পৃথক শিক্ষা কর্মকমিশন গঠন’ শিরোনামের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের জন্য ক্যাডার ও ক্যাডারবহির্ভূত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য পরীক্ষা গ্রহণ করে সুপারিশ প্রদান করা হবে সরকারি কর্মকমিশনের অন্যতম দায়িত্ব। বর্তমানে ২৯টি ক্যাডার সার্ভিস রয়েছে। সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে একটি বিসিএস পরীক্ষা গ্রহণ করে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করতে কমপক্ষে দু’বছর সময় লেগে যায়। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে সংশ্লিষ্ট সেক্টরে শূন্য পদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে এবং সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দেশের বার্ষিক বাজেটের বিরাট অংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা সেক্টরে বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকার কারণে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষা সেক্টরে নিয়োগের লক্ষ্যে পৃথক শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (এডুকেশন) কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুলস-১৯৮০ অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুমোদিত ১৪ হাজার ৪৪৭টি পদের মধ্যে আড়াই হাজার পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই পদোন্নতি এবং অবসর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারের বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য হচ্ছে। এছাড়াও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি স্কুলগুলোয় সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগসহ সরকারি কলেজগুলোয় ১০ শতাংশ কোটায় সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক নিয়োগ এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের ৪ হাজার ৭৯৪টি ভিত্তি পদে নিয়োগসহ ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক এবং কনসালটেম্লট নিয়োগ করবে এ শিক্ষা কর্মকমিশন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইকবাল মাহমুদ স্বাক্ষরিত এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের শিক্ষা সেক্টরে জনবল সমস্যা দূর করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা সেক্টরের জন্য একটি পৃৃথক কর্মকমিশন গঠন করার বিষয়ে এর আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান সরকারি কর্মকমিশনের স্থলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (সাধারণ) ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (শিক্ষা) নামে দুটি পৃথক কর্মকমিশন গঠন করার লক্ষ্যে তৈরি করা খসড়ায় এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।
পিএসসির মাধ্যমে দলীয় লোকদের চাকরি দিতে সরকার ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে বিসিএসে আবারও ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদের ভাইভা বোর্ডের সদস্য করা হচ্ছে। এতে জনপ্রশাসনে রাজনৈতিক ক্যাডারদের নিয়োগের পথ উন্মুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কারণ এতে লিখিত পরীক্ষায় কোনো প্রার্থী অত্যন্ত ভালো ফল করলেও মৌখিক পরীক্ষায় তাকে কাঙ্ক্ষিত ও প্রাপ্য নম্বর না দিয়ে বাদ দেয়ার সুযোগ থাকে। এদিকে মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার জন্য পিএসসির ১১ কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট পৃথক ১১টি ভাইভা বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এবং বাইরের একজন বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে। যুগ্ম সচিব হিসেবে ভাইভা বোর্ডে রাখা হয়েছে সরকারের সাবেক ডিসি ও দলবাজ হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের। তাই সামনের নিয়োগগুলো রাজনৈতিক প্রভাবাধীন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
এদিকে পিএসসির কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে চলেছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা চেয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে। এর পাশাপাশি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠাতে চায় তারা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন পিএসসির সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান। গত ১৪ মার্চ পাঠানো ৩ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে পিএসসি কোন কোন প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা (স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা) পেতে পারে, তা সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। এর পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্বাহী আদেশ উল্লেখ করে ওই চিঠির প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৩ জানুয়ারি পিএসসি তার আইনগত অবস্থানের বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দেয়। ওই চিঠির ভিত্তিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অভিমত ব্যক্ত করে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়কে একটি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা দেয়া প্রশাসনিক কারণে বাঞ্ছনীয়। বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বরাবর প্রস্তাব পাঠানো যেতে পারে। স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা দেয়ার জন্য চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এবং কর্মকমিশনের সচিবালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনের কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে যে ১২টি অধিদফতরের নাম এলোকেশন অব বিজনেসে রয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তাতে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের নাম নেই। জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়কে বিভাগের মর্যাদায় একটি আলাদা ইউনিট হিসেবে গণ্য করে বাজেট বরাদ্দ করা হচ্ছে। সরকারের সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা কমিশনের সচিব বা প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার হিসেবে কাজ করে থাকেন। একমাত্র সরকারের স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার থাকেন। ১৯৮৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পিএসসির সাংগঠনিক কাঠামো সংক্রান্ত মঞ্জুরি আদেশে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়কে একটি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা দেয়ার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এরপর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর পিএসসিকে প্রধান উপদেষ্টার অধীন একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের পাঠানো চিঠিপত্রেও সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়কে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। সংসদের কার্যধারায় কমিশন সচিবালয় সরকারের একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে স্বীকৃত। পিএসসির চিঠিতে বলা হয়েছে, কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান সদস্যরা সাংবিধানিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। তাই সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা নিতান্তই অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় গত ২১ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ের অনুমোদনের জন্য সরাসরি সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে অনুমোদন নিচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি কালোত্তীর্ণ প্রথা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে কমিশনের কাজে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। কারণ, কমিশন সচিবালয় জনপ্রশাসন সচিবের মাধ্যমে তাদের কোনো প্রশাসনিক চিঠিপত্র বা সারসংক্ষেপ গত ২১ বছরেও পাঠায়নি। গতবছরের ১ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পিএসসিকে এক চিঠিতে জানায়, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় একটি স্বতন্ত্র বিভাগ নয়। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি আরও একটি চিঠিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় স্বতন্ত্র বিভাগ নয় এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের প্রশাসনিক কোনো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের স্বাক্ষরে পাঠাতে হবে। এ চিঠির প্রেক্ষিতে পিএসসি তাদের চিঠিতে বলেছে, একটি নির্বাহী স্মারক বলে পিএসসির সাংবিধানিক মর্যাদা ও অবস্থান অবনমিত করা হলে তা হবে নিতান্তই অনভিপ্রেত ও দুর্ভাগ্যজনক। যা কর্মকমিশনকে অকার্যকর করার পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে পিএসসির স্বতন্ত্র অবস্থান নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে অর্থাত্ গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অনুরোধ করা হলো। গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর ক্ষেত্রে আগের যে ধারা ছিল, তা অব্যাহত থাকবে
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/07/20/93930

Saturday 16 July 2011

মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে লজ্জাজনক ব্যবসা






কাদের গনি চৌধুরী
মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিয়ে চলছে লজ্জাজনক ব্যবসা। গত আড়াই বছর ধরে এ ঘটনা অবাধে ঘটে চললেও তেমন একটা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে ভুয়া সনদ দিয়ে কেউ চাকরি বাগিয়ে নিচ্ছেন, কেউ বা অতিরিক্ত দুই বছর চাকরি করছেন। আর জাল সনদের তোড়ে মেধাবীরা হচ্ছেন চাকরিবঞ্চিত। জাল মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার জন্য গত বছরের ১ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের একটি প্রভাবশালী মহল এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকায় এ নিয়ে বেশি কঠোরতা অবলম্বন করা হয় না।অভিযোগ রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই অনেককেই দেয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সনদ। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কোনো তালিকা, চারটি গেজেট, এমনকি মুক্তিবার্তায়ও নেই—এমন অনেকের নামেই সার্টিফিকেট ইস্যু হচ্ছে। এছাড়া ভুয়া তথ্যও দিয়েছেন অনেকে। তারপরও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা সরাসরি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বাধ্য করছেন এসব সনদপত্র ইস্যুতে। সেই সুযোগে সনদপত্র বাগিয়ে নিয়েছেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা। অবশ্য এজন্য মোটা অংকের অর্থের লেনদেনও হয়েছে।সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স বাড়ানোর আদেশ জারির পর এই সুবিধা গ্রহণ করতেই মূলত ভুয়া সার্টিফিকেটের এই বাণিজ্য শুরু হয়। জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির বয়স বাড়ানোর অভিয়োগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী শাহাবউদ্দিন, পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আব্দুস সোবহান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোস-এর মতো শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এলপিআর-এ (বর্তমানে পিআরএল) যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে হঠাত্ করে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট জমা দেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আবেদনের সঙ্গে। এ নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর এক পর্যায়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিবের বিপক্ষে পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে তার কাগজপত্রও চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো এক অদৃশ্য কারণে সে প্রক্রিয়াও থেমে যায়। মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেড় হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছেন। পুলিশ বাহিনীতে অনেকে চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। এরই মধ্যে দু’দফায় ৩১ জনের চাকরি গেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োগেও একই অবস্থা হয়েছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করা এক হাজার ৩৩৮ জনের মধ্যে ১৫২ জনের সনদই ছিল ভুয়া। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগেও ঘটেছে একই ঘটনা। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তার অবসরের বয়স দুই বছর বাড়ানোর পর অনেকেই নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আবেদন করেন। এ রকম আবেদনকারী ২৫ জন পদস্থ কর্মকর্তার সনদ সন্দেহজনক চিহ্নিত করে তদন্ত করা হচ্ছে।ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রযোজ্য রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেওয়া সাত হাজার জনের সনদও সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর জাল করেও কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর তদন্ত এবং যাচাই-বাছাইয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।গত ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযোদ্ধা চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স বাড়ানো-সম্পর্কিত সার-সংক্ষেপ অনুমোদনকালে সনদ যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন। সার-সংক্ষেপের একাংশে তিনি উল্লেখ করেন, মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেড় হাজার লোক নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োগেও একই অবস্থা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদফতর (এনএসআই) এ নিয়ে তদন্ত এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই শুরু করে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে। মুক্তিবার্তা এবং বিভিন্ন সময়ে গেজেটে (এ পর্যন্ত চারটি) প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা অনুসরণ করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার কোনো তালিকায় নাম না থাকলেও সনদ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের সনদও পরীক্ষা করা হচ্ছে।মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন এক লাখ ৩০ হাজার প্রার্থী। এদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করেন এক হাজার ৩৩৮ জন। এদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাও হয়ে গেছে। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের কারণে এখনও ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে না।গোয়েন্দা সংস্থা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং উপজেলা, জেলা ও মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ও জাতীয় মুুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তদন্ত, যাচাই-বাছাই শেষে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৫২ জনের সনদ সঠিক নয়।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ১৫২ জনের মধ্যে ২৯ জনের সনদ ভুয়া, ১৩ জনের উপযুক্ত সনদ নেই, ১৮ জনের সনদ যাচাইয়ের উপযুক্ত নয়, ৪১ জনের সনদ গ্রহণযোগ্য নয় এবং ৫১ জনের সনদ নিবন্ধন তালিকাভুক্ত নয়। তবে অপরিচ্ছন্ন থাকায় যে ১৮ জনের সনদ যাচাই সম্ভব হয়নি, তারা আবার কাগজপত্র দাখিল করতে পারবেন। আইন মন্ত্রণালয সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে ভুয়া সনদ দিয়ে ১৯০ জন সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি বাগিয়ে দেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পরপরই এদের সাব-রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ করা হয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শারীরিক প্রতিবন্ধী সাবিনা ইয়াছমীনের বয়স ছিল ছয় বছরের কম। তিনি নার্স হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। ওই সময় তিনি ছিলেন মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী। এই তথ্য দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি পেয়েছেন সাবিনা। মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দিয়ে সাবিনার মতো অন্য সবাই এ পদে চাকরি পেয়েছেন। এ নিয়ে দৈনিক আমার দেশে রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে সাব-রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রতিবেদনেও ভুয়া তথ্য দিয়ে নিয়োগ পাওয়ার ঘটনা ধরা পড়ে।কমিটি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়েছে। জানা গেছে, গত বছর ১৯ জুন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে তদন্ত করে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার সুপারিশ করা করা। সে অনুযায়ী আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) মজনুল আহসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ওই বছরের ২২ জুন তদন্ত শুরু করে। কমিটি নিয়োগ-সংক্রান্ত মূল নথি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে। এরপর ৩০ জুন ঢাকা বিভাগের ৪৭ জনের, ১ জুলাই চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ৩২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও সাক্ষ্য নেয়া হয়। প্রায় এক বছর পর গত মাসে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মতামত) সহিদুল করিম ও উপসচিব আবু আহমেদ জমাদ্দার।কমিটি সূত্র জানায়, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে নিয়োগ পাওয়া ১৯০ সাব-রেজিস্ট্রারের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ১৮৯ জনের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে তাদের বয়স ছিল তিন বছর থেকে ১৯ বছর। এর মধ্যে চারজনের বয়স ছিল তিন বছর, ১৩ জনের বয়স ছিল তিন থেকে পাঁচ বছর, পাঁচ থেকে সাত বছর বয়স ছিল ৩৯ জনের, সাত থেকে আট বছর বয়স ছিল ২১ জনের, আট থেকে ৯ বছর বয়স ছিল ১৮ জনের, ৯ থেকে ১০ বছর বয়স ছিল ১২ জনের, ১০ থেকে ১১ বছর বয়স ছিল ২০ জনের, ১১ থেকে ১২ বছর বয়স ছিল ১১ জনের, ১২ থেকে ১৩ বছর বয়স ছিল ১২ জনের, ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়স ছিল ১৩ জনের, ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়স ছিল ১১ জনের এবং ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়স ছিল ১৬ জনের।এদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে তথ্য প্রদানকারী (ইনফরমার) হিসেবে ১৩৪ জন, ক্যাম্প সহকারী হিসেবে ১৫ জন, নার্স সহকারী হিসেবে ১৫ জন, পলিটিক্যাল মোটিভেটর (রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টিকারী) ১০ জন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাতজন, গোয়েন্দা হিসেবে দু’জন এবং ভাণ্ডাররক্ষক হিসেবে কাজ করেছিলেন এমন তথ্য দিয়ে একজনের চাকরি হয়। বাকি তিনজন তাদের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করতে পারেননি।তারা ভারতের ১৯টি ক্যাম্প বা শিবিরের অধীন কাজ করেন বলে জানান। সেগুলো হলো বশিরহাট ক্যাম্প, সাহেবগঞ্জ যুবশিবির, টালীখোলা যুবক্যাম্প, খোচাবাড়ী, কাকড়ীপাড়া, নাজিরহাট, চোতাখোলা, চৌধুরীহাট, কল্যাণী মধ্যমগ্রাম, মাঝিরহাট, মানকারচর, কাচিহাটা, আগরতলা, বনগাঁও, দিনহাটা, থোবা, বামনহাট, কুচবিহার, শীলকুচি ও কৃষ্ণনগর।২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে পুলিশে লোক নিয়োগের সময় মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অনেকে চাকরি পান বলে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। এরপর তদন্ত করে ২৪ জনের জাল সার্টিফিকেট ধরা পড়ে। তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে চারজনকে শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে এনেছে পুলিশ। বাকি ১৯ জনকে আদালত জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া কনস্টেবলদের বাড়ি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। মামলার এজাহার মোতাবেক সনদ জালিয়াতির সঙ্গে ২৪ জন জড়িত। এদের মধ্যে একজন মহিলা পুলিশ রয়েছেন। তিনি এখনও গ্রেফতার হননি। জালিয়াতির আশ্রয়গ্রহণকারীদের কেউই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান নয়।গ্রেফতারকৃত ২৩ জনকে শুক্রবার দুপুরে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে তাদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। মহানগর হাকিম মিজানুর রহমান শুনানি শেষে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চারজনের প্রত্যেকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া পুলিশ সদস্য শরিফুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ফিরোজ কবির ও রনি মিয়াকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।এর আগে গাইবান্ধার পুলিশলাইনে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১০ জন পুলিশে চাকরি নিতে গিয়ে ধরা পড়েন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, আইন, বিমান ও পর্যটন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পরিবেশ, খাদ্যসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদনকারী ২১ হাজার জনের সনদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নিবন্ধন বইয়ে লিপিবদ্ধ নেই, এমন কিছু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করা মুক্তিযোদ্ধার সনদ চাকরির ক্ষেত্রে সংযুক্ত করেছেন। সারসংক্ষেপে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, কিছু ব্যক্তি প্রযুক্তি অপপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর জাল করে অবৈধ সুযোগ নিচ্ছেন।সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য কমপক্ষে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। তবে আইনগতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা বা প্রশাসনের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা-সম্পর্কিত তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করতে পারে।সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ পর্যন্ত দু’দফা তাগিদ দিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি।সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রযোজ্য রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেয়া সাত হাজার ব্যক্তি তাদের সনদ নবায়নের আবেদন করেছেন। মুক্তিবার্তা বা চারটি গেজেটের কোনোটিতে তাদের নাম নেই। তাই এগুলো সরকার যাচাই-বাছাই করছে।যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটটিও ভুয়া। এ ব্যাপারে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ার পর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল শাহাবুদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা-সম্পর্কিত তথ্যাদি তদন্ত করতে এনএসআইয়ের কাছে পাঠিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অবসরের বয়স বাড়ানোর জন্য আবেদন করা কর্মকর্তাদের মধ্যে যে ২৫ জনের সনদ সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, তিনি তাদের একজন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল সওজের প্রধান প্রকৌশলীর মোবাইলে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।অপর যে ২৩ জনের সনদ সন্দেহজনক বলে যাচাইবাছাই চলছে তারা হলেন—পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী; অর্থ মন্ত্রণালয়ের দু’জন ঊর্ধ্বতন মুখ্য কর্মকর্তা, অ্যাপ্রেইজার, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এক্সাইজ ও ভ্যাট টঙ্গী সার্কেল, একজন ফোরম্যান; ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (সমন্বয়); প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চিফ ইনস্ট্রাক্টর; দু’জন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক; বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী; একজন উপজেলা প্রকৌশলী; একজন সহযোগী অধ্যাপক; একজন প্রধান শিক্ষক; খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের একজন উপপরিচালক; একজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের হিসাব সহকারী, পরিবহনচালক; যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পার্সেল সহকারী, বুকিং সহকারী, একজন ওয়েম্যান ও উচ্চমান সহকারী; স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও কেবিনেট সেক্রেটারি ড. আকবর আলি খান আমার দেশকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট জালিয়াতির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। তিনি বলেন, এটি নতুন সমস্যা নয়। এর আগেও এটি হয়েছে। কোনো সরকারই কার্যকর কিছু করেনি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে গত বৃহস্পতিবার একজন সচিব আমার দেশকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করবে, দেশের মানুষ সেটা কোনোভাবেই প্রত্যাশা করে না। অথচ এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলোই ঘটছে। মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে যা হচ্ছে, তাতে সরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কিনা, সেটাই অনেককে নতুন করে ভাবার অবকাশ দিয়েছে। কারণ, শুধু অমুক্তিযোদ্ধাই নয়, এমনকি রাজাকারকেও মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেয়া হয়েছে এই সরকারের আমলে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত জাতীয় তালিকায় প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ৫৫৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমান্ড কাউন্সিল নির্বাচন, ২০১০-এর ভোটার তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৬২ হাজার ৩৫৫ জন, গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৯৯ হাজার ৭৪৫ জন, মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার, ইবিআরসি তালিকায় প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৮ হাজার ৯৩ জন, কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকায় প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৯ হাজার ৮৩৩ জন।

Tuesday 12 July 2011

ঠুনকো অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তারা চাকরি হারাচ্ছেন








কাদের গনি চৌধুরী
কথায় কথায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করা এবং ভিন্নমত পোষণের কারণে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি হারাতে হচ্ছে। ভিন্নমতের যারা চাকরিতে টিকে আছেন তাদেরও প্রতিনিয়ত সইতে হচ্ছে নানা গঞ্জনা। পূর্বশত্রুতার জের ধরে শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার সমালোচনা করা হয়েছে, এমন মিথ্যা তথ্যের ওপর ভর করেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের কোনো কোনো কর্মকর্তাকে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের সময় ৩২ ক্যাডার কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন সচিব রয়েছেন। চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে হয়েছে সাবেক কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়াসহ আরও কয়েকজনকে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শতাধিক কর্মচারীর চাকরি গেছে এসময়।সরকারের সর্বশেষ রোষানলের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব মো. সালেউদ্দিন সেলিম। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কার্যালয় দখলের বিরুদ্ধে কথা বলায় গত ৩ জুলাই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এর আগে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় শরীয়তপুর সরকারি কলেজে। সেখানে যোগদানও করেন তিনি। এরপর কিছুদিন ছুটি কাটিয়ে আবার কাজে যোগদান করতে গেলে তাকে আর যোগদান করতে দেয়া হয়নি। বলা হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তাকে যোগদানের অনুমতি প্রদানে নিষেধ রয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে তিনি প্রিন্সিপালের কাছে ছুটির আবেদন করেন। একটানা ৩৭ বছর সরকারি চাকরি করেছেন এ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা। এক মাস পরই তার পিআরএলে যাওয়ার কথা। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত চাকরিজীবনের একেবারে শেষ মুহূর্তে তাকে চাকরিচ্যুত করা হলো। এর ফলে পেনশন ভাতা থেকেও বঞ্চিত হলেন তিনি। জানা যায়, ২০০৩ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষে বন মিনিস্ট্রিয়াল কর্মচারী সমিতির একটি সংকলনে তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে সম্বোধন করে একটি বাণী দিয়েছিলেন। এটাকে ইস্যু করে শিক্ষা অফিসার মু. আবুল কাসেম ডিজির পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মহলে চিঠি দেন। তখন প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সালেউদ্দিন সেলিমকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেয়া হয় বলে সংগঠনটি দাবি করেছে। তবে তার চাকরিচ্যুতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাকে বিধি মোতাবেক চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু সালেউদ্দিন সেলিম ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল থেকে কর্তব্য কাজে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত থেকে অত্যন্ত সুকৌশলে বাংলাদেশ সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থেকে সরকারি কাজে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যেহেতু তার বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট স্যুয়োমোটো রুল ১১/২০১০ ইস্যু হয় এবং রুলের শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট সালেউদ্দিন সেলিমের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান/তদন্ত করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রায় প্রদান করেন এবং মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী তদন্ত করে কর্মকর্তা মো. সালেউদ্দিন সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। যেহেতু তিনি ১৫ মাস কর্মস্থলে অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন এবং তার কর্মকাণ্ড সরকারি চাকরিবিধির পরিপন্থী, যা সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯-এর ৩ (এ), (বি) এবং (সি) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যেহেতু মো. সালেউদ্দিন সেলিমকে সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯-এর ৪ (এ) ধারা অনুযায়ী তার কর্তব্য-কাজে অননুমোদিত অনুপস্থিতিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করে শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনাসহ মহামান্য হাইকোর্টের স্যুয়োমোটো রুলের রায় অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে ৪ এপ্রিল, ২০১০ থেকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো।জানা যায়, ২০০৩ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষে বন মিনিস্ট্রিয়াল কর্মচারী সমিতির একটি সংকলনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে সম্বোধন করে একটি বাণী দেয়ায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার স্যুয়োমোটো রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ। এর আগে শেখ মুজিব ও তার পরিবারকে হেয় করে কবিতা লেখার অভিযোগে তথ্য সচিব আ ত ম ফজলুল করিমকে (আবু করিম) বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আ ত ম ফজলুল করিমই (আবু করিম) প্রথম শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা যাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়।আদেশে বলা হয়, ‘চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাকে অবসরে পাঠানো হলো।’২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব পদ থেকে আ ত ম ফজলুল করিমকে তথ্য সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়।শেখ মুজিবকে ‘আলু বোখরা’ উপাধি দিয়ে কবিতা লেখার অভিযোগ এনে তথ্য সচিবের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা মো. ইলিয়াস হোসেন বিন হেলালী। আলু বোখারা একটি সুস্বাদু আফগান ফলের নাম। এ ঘটনার পরপরই তার বিসিএস অফিসার (সহকারী সচিব) মেয়েকেও চাকরি ছাড়তে হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের ওপর ভর করে আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহাব উদ্দিন খানকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অভিযোগ করেন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোকদিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিতব্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি বাধা প্রদান করেছেন। এ অভিযোগ পাওয়ার পর আর দেরি না করে তাকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। ১২.১১.২০০৯ তারিখে তিনি ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি এ ধরনের কোনো কাজই করেননি। কিন্তু তার বক্তব্য মন্ত্রণালয় গ্রহণ না করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫-এর ৭(২)(সি) উপবিধি অনুসারে ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব আবদুল ওয়াহাব খানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেন, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহাব উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতরের নতুন পরিচালকও জানান যে, শাহাব উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সত্য নয়। অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে এক বছর পর আবার তার চাকরি ফিরিয়ে দেয়া হয়। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক তার পদটি আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য এ কৌশল নিয়েছিল। উপ-পরিচালক মো. শাহাব উদ্দিন খান তাকে সরিয়ে পরিচালক হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে তিনি এ ধরনের হীনমন্যতার পরিচয় দেন বলে জানা যায়। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে ৩০ জন বিসিএস অফিসারকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পিএস শামসুল আলম (আইডি-৪১৩২), মোহাম্মদ মহসিন (আইডি-১৩৫১), মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (আইডি-১১১৩),আহসান উল করিম (আইডি-৭১৯৯), আবুল মোসাদ্দেক আজাদ (আইডি-১৮৭৯), মো. আজিজুল ফারুক (আইডি-১৬০৯), আলাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী (আইডি-৫৩০৮), নন্দিতা দত্ত (আইডি-৬৩৬৮), মোহাম্মদ বাহারূল ইসলাম (আইডি-৩৩৭৪), কামরুন নাহান বেগম (আইডি-৪৬১১), একেএম আবদুুল্লাহ আল রেজা (আইডি-১৬২৩২), ইশরাত শবনম (আইডি-১৬২১৭), নিশাত সুলতানা (আইডি-১৬১২৪), জান্নাত ফাতেমা (আইডি-১৬২০৫), মোহাম্মদ মিল্লাত হোসাইন (আইডি-১৬৪৫৬), মো. শাহাদাত হোসেন (আইডি-১৬১৪৩), নাসরিন সুলতানা রোজি (আইডি-১৫৮৯৯), ইফফাত ইয়াসমিন মান্নান (আইডি-১৬২৫০) সোহায়েল আহমেদ মোতাহির চৌধুরী (আইডি-৪১৬৫), অঞ্জন কুমার চাকমা (আইডি-৪০৭৫), আঞ্জুমুন আরা বেগম (আইডি-৩৬৯০), আজিজুল আলম শাহ (আইডি-৬৬৪১), ইফতেখারুল আমিন (আইডি-১৬০৭২), আবদুল্লাহ আল ইমরান খান (আইডি-১৫৭৭৫), রিয়াদ মাহমুদ (আইডি-১৫২৪৫), রোজারিনা ওমর (আইডি-১৫৬২০) ও নূশেরা তাজরিন (আইডি-১৫০৩৮)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭ কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়

Monday 11 July 2011

হরতালে ব্যাপক সহিংসতা : ইসলামী দলগুলোর আড়াই হাজার কর্মী আহত : গ্রেফতার দেড় হাজার










স্টাফ রিপোর্টার
ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর ৩০ ঘণ্টা হরতালের প্রথমদিনে গতকাল ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। মারমুখী পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে সরকারি দলের ক্যাডাররাও হরতাল সমর্থকদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে। পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কাঁচপুর, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে হরতাল সমর্থকরা। কাঁচপুর ব্রিজ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, গুলি ও লাঠিচার্জে আড়াই হাজারেরও অধিক হরতাল সমর্থক আহত হন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা নেজাম উদ্দিন, সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীরসহ সারাদেশ থেকে পুলিশ দেড় হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। ফতুল্লায় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজিসহ ১২ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। রাজপথে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে অর্ধশতাধিক হরতাল সমর্থককে দণ্ড দেয়া হয়।
এদিকে হরতাল ঠেকাতে ইসলামী দলগুলোর কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশ তাণ্ডব চালায়। অবরুদ্ধ করে রাখে দলগুলোর সারাদেশের কার্যালয়। ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের মুখে অবস্থান নিয়ে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ জিকির করেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে। হাজার হাজার পুলিশের ব্যাপক রণপ্রস্তুতির মুখে রাজধানীতে দাঁড়াতেই পারেনি ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীরা। কয়েক দফা মিছিল বের করলে তা পুলিশি হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। হরতালে রাজধানীসহ পুরো দেশ অচল হয়ে পড়ে। ঢাকায় কিছু লোকাল বাস ও রিকশা চলাচল করলেও দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। সরকারি অফিস খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল কম। দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। চট্টগ্রামে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় হরতাল সমর্থকরা। বরিশালে রাস্তায় গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়। সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ এবং ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি, কোরআনবিরোধী নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী ও সমমনা ১২টি দল গতকাল সকাল ৬টা থেকে লাগাতার ৩০ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা হরতাল কর্মসূচি পালন করবে। একই দাবিতে পৃথকভাবে গতকাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৩০ ঘণ্টার এ হরতালে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোট। হরতাল আহ্বানকারী ১২টি দল হলো—বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ, জাগপা, ইসলামিক পার্টি, মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও এনডিপি। পরে এতে আরও সমর্থন দিয়ে সক্রিয় অংশ নেয় আরও ৯টি ধর্মীয় সংগঠন। সেগুলো হচ্ছে—আইম্মা পরিষদ, ইসলাহুল মুসলিমিন, জাতীয় ফতোয়া বোর্ড, নাস্তিক মুরতাদ প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি, সচেতন যুবসমাজ, আহকামে শরিয়াহ হেফাজত কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় ওলামা পরিষদ, জাতীয় তাফসির পরিষদ ও জমিয়তুল মুফাসসিরিন।গতকালের হরতালে ঢাকায় বড় ধরনের পিকেটিং না হলেও নারায়ণগঞ্জে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ক্যাডার ও পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। হরতালের প্রথম দিনে গতকাল ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। সংঘর্ষে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পুলিশের আরও ১০ সদস্যসহ শতাধিক হরতাল সমর্থক আহত হয়। সিদ্ধিরগঞ্জে সংঘর্ষের সময় পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডাররা গুলি চালালে তোফায়েল নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। হরতাল সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশের প্রকাশ্য ছত্রছায়ায় এলাকার সরকারদলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে। পুলিশ ফতুলা থেকে ৮ জন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। সকালে ফতুলায় পুলিশের দুটি অস্ত্র লুট করা হলেও দুপুরে তা উদ্ধার করা হয়। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে সংঘর্ষের সময় পিকেটাররা বেশ কিছু যানবাহন ভাংচুর ও সড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়।গতকাল সকাল ৬টা থেকে হরতাল সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে চরমোনাই পীর সমর্থিত ইসলামী আন্দোলন এবং হরতাল আহ্বানকারী ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটিসহ ১২টি দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। তারা কাঁচপুর সেতুর পূর্বদিকে অবস্থান নিয়ে সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও অবরোধ সৃষ্টি করে। সমাবেশ শেষে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হরতাল সমর্থকরা চিটাগাং রোডের দিকে অগ্রসর হয়। এদিকে চিটাগাং রোড এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। পৌনে ৯টার দিকে ইসলামিক দলগুলোর মিছিল চিটাগাং রোডে পৌঁছলে হরতালবিরোধী মিছিলের মুখোমুখি হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। হরতাল সমর্থনকারীদের ধাওয়ায় যুবলীগ, ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় সরকারদলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী নূর হোসেন বাহিনীর শতাধিক ক্যাডার মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। সামনে লাঠি, ধারালো অস্ত্রসহ সরকারদলীয় ক্যাডার আর পেছন থেকে কয়েকশ’ পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে হরতাল সমর্থকরা পিছু হটে। হামলার তোপে টিকতে না পেরে তারা সড়ক ছেড়ে আশপাশ এলাকায় আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়েও তাদের ওপর হামলা চালাতে থাকে ক্যাডাররা।শ্রমিক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালায়। টিনশেড ঘরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠির আঘাতের শব্দে শিশু-নারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পুরুষ সদস্যরা বাইরে বের হলে দাড়ি-টুপিধারীদের ওপর হামলা চালায় সশস্ত্র ক্যাডাররা। ঝোপঝাড়, ঘর, অলিগলি থেকে দাড়ি-টুপিধারীদের ধরে এনে গণপিটুনি দেয় তারা। ২৮ অক্টোবরের মতো একজনের ওপর ১০-১২ জন মিলে হামলা চালানো হয়। রক্তাক্ত মাদরাসা ছাত্র ও শিক্ষকদের পুলিশ ও র্যাবের হাতে তুলে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালালে তোফায়েল (২২) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল আলম মোল্লা জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। সংঘর্ষের সময়ে পুলিশ ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পিকেটারদের অবস্থানের কারণে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে।ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবরোধ : গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায় সহস্রাধিক হরতাল সমর্থক নারায়াণগঞ্জের পঞ্চবটি মোড়ে অবস্থান নেয়। তাদের বেশিরভাগের হাতে ছিল লাঠি এবং সবাই ছিল পাঞ্জাবি-পায়জামা টুপি ও পাগড়ি পরিহিত। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পাগলা সড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে। সকাল সাড়ে ৬টায় পঞ্চবটিতে হরতাল সমর্থকরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমানসহ ১২ পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং তাদের মারধর করে। এতে সাইদুরসহ ১৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে। কয়েক দফা লাঠিচার্জ করে। হরতাল সমর্থকরা ৮-১০টি গাড়ি ভাংচুর করে। সংঘর্ষ চলাকালে এএসআই আনোয়ারের পিস্তল এবং ফতুল্লা থানার ওসির বডিগার্ড কনস্টেবল কবিরের শর্টগান লুট হয়।ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আইনুল হক জানান, অস্ত্র লুটের পর দুপুর ১২টায় পঞ্চবটি মোড়ে একটি চায়ের দোকানের টিনের চালার ওপর পরিত্যক্ত অবস্থায় শর্টগানটি উদ্ধার করা হয়। দুপুর পৌনে ১টায় ফতুল্লা মডেল থানার অদূরে লালপুর এলাকায় আবুল হোসেন সরকারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাগরকে গ্রেফতার ও পিস্তলটি উদ্ধার করে পুলিশ। সে আবুল হোসেন সরকারের বাড়ির ভাড়াটিয়া আনসার আলীর ছেলে। সংঘর্ষ চলাকালে পিকেটারদের হামলায় পুলিশের ১৩ সদস্য আহত হয়। আহতরা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান, এসআই মিজান ও মনির হোসেন, সহকারী এএসআই আনোয়ার হোসেন, হাবিলদার শফিকুর রহমান, কনস্টেবল তরিকুল, ডালিম, রাজিব, কবির হোসেন, ওয়াজেদ, শামীমুল হক, সেলিম, আজম। আহতদের মধ্যে সাইদুর রহমান, কবির হোসেন ও আনোয়ারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিত্সা দেয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমানসহ ১৩ পুলিশ আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ১২ পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করবে। পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম জানান, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি ঘটনার সময় কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কর্তব্য পালনে অবহেলা ছিল কি-না তাও খতিয়ে দেখবে। এদিকে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে ঘটনার সময় ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আইনুল হক প্রাণ বাঁচাতে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। ওই সময়ে তার সিনিয়র পুলিশ অফিসারসহ অন্যদের পিকেটাররা প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করলেও ওসি ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ রেখে ও তাদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে পিকেটাররা। বিষয়টি আইনুল হক অস্বীকার করে বলেন, তিনিও পিকেটারদের হামলায় আহত হয়েছেন। ১২ দলের মিছিলে হামলা ১০ নেতা আটক : সকাল সোয়া ৬টায় পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কার্যালয়ের সামনে থেকে ১২ দলের নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় ১২ দলের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা নেজামউদ্দিন, মহাসচিব হুমায়ুন কবির, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ড. খলিলুর রহমান মাদানী, জাতীয় উলামা পরিষদের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ কাসেমী, ১২ দল নেতা হাফেজ শামসুল আলম, শামীম, দেলোয়ার হোসেন, আবু সাঈদ, নজরুল ইসলাম, ওয়ালী উল্লাহসহ ১০ জনকে আটক করে। আটকের সময় পুলিশ ড. খলিলুর রহমান মাদানীকে লাঠিচার্জ ও তার পাঞ্জাবি খুলে নেয় এবং টুপি ফেলে দেয়। খেলাফত মজলিসের অফিসে ঢুকেও নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। সকাল ৭টায় অফিসে আসার পথে পল্টন মোড়ে খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফকে টানা-হেঁচড়া করে পুলিশ। এছাড়া সকালে লালবাগে ১২ দলের নেতারা মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে হামলা চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় দুই জনকে আটক করে তারা। মত্স্য ভবনের কাছে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। যাত্রাবাড়ীতে মিছিলে হামলা ও অনেককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাদ ফজর শাহবাগ এলাকায় মিছিল করে ১২ দলের কর্মীরা। সারাদেশে হরতালের সমর্থনে মিছিলে পুলিশ হামলা চালায় এবং বিভিন্ন স্থান থেকে ৫ শতাধিক নেতকর্মীকে আটক করে বলে দলটি অভিযোগ করেছে। দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের মিছিলে লাঠিচার্জ : সকালে সাড়ে ৬টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় দলের মহানগর সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিনসহ অনেক নেতা রাস্তায় পড়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দলের দক্ষিণখান থানা সভাপতি ফরিদ উদ্দিনসহ ৪ জনকে আটক করে। পরে দলের নেতাকর্মীরা দলীয় অফিসের গেটে অবস্থান নিয়ে হরতালের সমর্থনে স্লোগান দিতে থাকে। সকাল সাড়ে ৯টায় অফিসের সামনের গলিতে বেশকিছু কর্মী জড়ো হলে র্যাব ও পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুকসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ ও র্যাব দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে পুরানা পল্টন এলাকা থেকে ইসলামী আন্দোলের অন্তত ১০ কর্মীকে আটক করে। ব্যাপক পুলিশি বেষ্টনীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের গেটে অবস্থান নিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করতে থাকে। বেশ কয়েকবার তাদের সরিয়ে দিয়ে গেট আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় দলের মহানগর সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বেলায়েত হোসেনসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।এদিকে ভোর পৌনে ৬টায় যাত্রাবাড়ী থানার কুতুবখালি মাদরাসার সামনে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় হরতাল সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেখান থেকে পুলিশ ৪ জনকে আটক করে। যাত্রাবাড়ীর সানারপাড় মোড় থেকে সকাল ৭টায় হরতাল সমর্থনকারী সন্দেহে ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ইসলামী আন্দোলনের ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ সময় পুলিশের হামলায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয় বলে দলটি দাবি করেছে।ইসলামী আন্দোলন ও ১২ দলের অফিস অবরুদ্ধ : হরতালকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত থেকেই পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন ও ১২ দল তথা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কার্যালয়ের আশপাশে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব মোতায়েত করা হয়। গতকাল ভোর থেকে এ সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। সারাদিনই র্যাব-পুলিশ কর্তৃক অবরুদ্ধ ছিল দলীয় কার্যালয়। এ সময় বাইরে থেকে কোনো নেতাকর্মীকে অফিসে ঢুকতে এমনকি অফিসের রাস্তায় বের হতে দেয়া হচ্ছিল না। বেলা ৪টায় ১২ দলের নেতা ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ, মহাসচিব জাফরুল্লাহ খানসহ কয়েক নেতাকে মজলিস অফিসে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় বেশ কিছুক্ষণ তারা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন। পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ : ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের হরতালে পূর্ণ সমর্থন দেয়ায় গতকাল সকাল থেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। পুলিশি বেষ্টনি ও কিছু সাংবাদিক ছাড়া কার্যালয়ের সামনে কাউকে দেখা যায়নি। সকাল সোয়া ৯টায় অফিস সহকারীরা মেইন গেট খুললেও পরে পুলিশের নির্দেশে তা বন্ধ করে রাখে। তবে ৩০ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করছে বলে গতকাল দুপুরের দিকে ফোনে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রাত সাড়ে ৮টায় চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরতালে পুলিশি হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ভোর ৫টা থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। মেইন গেটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। দুপাশে পুলিশের রায়টকার ও জলকামান এনে রাখা হয়েছে। আল্লাহর ওপর আস্থা না থাকলে ঈমান থাকে না- চরমোনাই পীর: হরতাল পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, সরকার দেশের বিরাজমান নানা সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে ইসলাম ধ্বংসের কাজ করছে। আল্লাহর ওপর আস্থা না থাকলে ঈমান থাকে না। কিন্তু সরকার সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা স্থাপন করেছে। এর প্রতিবাদ না করলে মুসলমানিত্ব থাকে না বিধায় ঈমানি দাবিতে আমরা বাধ্য হয়ে হরতাল ডেকেছি। এটা কোনো সরকার পতন বা কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। কিন্তু শান্তিপূর্ণ হরতালে সরকার তার ক্যাডার ও নিরাপত্তারক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নিরীহ লোকদের ওপর যে বর্বর হামলা এবং মামলা করেছে তা অসভ্য যুগকেও ছাড়িয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে ঈমানি চেতনার প্রকাশ করেছে। এ হরতালে প্রমাণিত হয়েছে যে, জনগণ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করেছে।তিনি গতকালের হরতালে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা-নির্যাতন ও গ্রেফতারের পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, ঢাকা মহানগরীতে দুই শতাধিকসহ সারাদেশে ১ হাজার ২৫৩ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। আর সারাদেশে ৩৭২ জন গুরুতরসহ আহত হয়েছে ২ হাজার ৫৭১ জন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে খুলনায় ১৫১ জন, বরিশালে ৪৭, চট্টগ্রামে ৩০০, নরসিংদীতে ৭০, নোয়াখালীতে ৫৫, চাঁদপুরে ২৫ জন রয়েছে। চরমোনাই পীর অবিলম্বে আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা পুনর্বহাল করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, অত্যাচার নির্যাতন করে অতীতে কেউ টিকে থাকতে পারেনি, বর্তমান সরকারও টিকতে পারবে না। তিনি দাবি আদায়ে ৪ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে- ১২ জুলাই চট্টগ্রামে, ১৩ জুলাই ঢাকায়, ১৪ জুলাই দেশব্যাপী সমাবেশ ও মিছিল এবং ১৫ জুলাই ঢাকার মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ ও গণমিছিল। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে কুনুতে নাজেলা পড়ার আহ্বান জানান তিনি। নির্যাতন সয়ে মাঠেই থাকব- ১২ দল : ৩০ ঘণ্টার হরতালের প্রথমদিনের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ১২ দল। এতে ১২ দলের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুুর রব ইউসুফি বলেন, আমরা ঈমানি দাবিতে শান্তিপূর্ণ হরতাল আহ্বান করছি। কিন্তু সরকার এতে নানাভাবে বাধা দিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। হরতালে আমাদের নিরস্ত্র নিরীহ জনশক্তি রাস্তায় বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। সকালে দলীয় অফিস থেকে নেতাকর্মীরা বের হলেই পুলিশি ব্যারিকেডে পড়ে। গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে মিছিল করতে চাইলেই পুলিশ আমাদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ ও নেতাদের লাঞ্ছিত করে। এ সময় ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। নির্যাতন সহ্য করে রাজপথে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া পঞ্চবটি ও কাঁচপুরে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপে এবং দলীয় ক্যাাডারদের হামলায় অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মিছিলে পুলিশের হামলায় ৫ শতাধিক গ্রেফতার ও ২ শতাধিক আহত হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের এ আচরণে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর হতে বাধ্য হব। তিনি অবিলম্বে আটক নেতাদের মুক্তি দাবি করেন। এছাড়া তিনি আজ ১২টা পর্যন্ত হরতাল চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। হরতাল শেষে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। ২৩ শিবির কর্মী গ্রেফতার : শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ২৩ শিবির নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। সংগঠনের শাখা কার্যালয়ে ‘ফলচক্র’ বিষয়ক প্রোগ্রাম চলাকালে পুলিশ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে বলে জানা গেছে। এদিকে এ গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে শিবির সভাপতি ডা. মো. ফখরুদ্দিন মানিক, সেক্রেটারি জেনারেল মো. দেলাওয়ার হোসেন ও ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ফলচক্র অনুষ্ঠান চলা অবস্থায় শিবির নেতাকর্মীদের ন্যক্কারজনকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা অবিলম্বে আটককৃতদের মুক্তি দাবি করেন।নারায়ণগঞ্জ শহর : ইসলামী দলগুলোর হরতালে নারায়ণগঞ্জ শহরে কোনো পিকেটিং হয়নি। সকাল থেকেই শহরের ডিআইটি জামে মসজিদে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ। শহরের দেওভোগ এলাকা থেকে পিকেটাররা কয়েক দফা মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। হরতালে বিএনপি সমর্থন দিলেও নারায়ণগঞ্জের কোথাও বিএনপি কিংবা এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। জেলা বিএনপি অফিস ছিল বন্ধ। শহরের মার্কেট, বিপণী বিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সকাল থেকে বন্ধ ছিল। যান চলাচল ছিল খুবই কম। শহরের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আর্মড পুলিশ মোতায়েন ছিল ।ফতুল্লার ওসিকে ডিআইজির ভর্ত্সনা : ফতুল্লার পঞ্চবটিতে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষের ঘটনার পর দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আসাদুজ্জামান। তিনি সকালের ঘটনার জন্য ফতুল্লা থানার ওসি আইনুল হককে ভর্ত্সনা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র। ডিআইজি ফতল্লায় গত কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক খুনাখুনি, চুরি, ডাকাতি, মানুষ গুমের ঘটনায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে ওসিকে কঠোর ভাষায় ভর্ত্সনা করেন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য তত্পর হওয়ার নির্দেশ দেন



http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/07/11/92303

Saturday 9 July 2011

বুধবার খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণঅনশন : জামায়াতের নফল রোজা : ৩০ ঘণ্টার হরতালে চারদলের সমর্থন












স্টাফ রিপোর্টার
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্তসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রত্যাহার এবং হরতালে নির্যাতক পুলিশের গ্রেফতার দাবিতে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ এবং ১৩ জুলাই গণঅনশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এই অনশনে নেতৃত্ব দেবেন। গতকাল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিকে ইসলামী ও সমমনা ১২ দল আহূত কাল রোববার এবং পরশু সোমবারের লাগাতার ৩০ ঘণ্টার হরতালে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোট। দাবি একই হওয়ায় এ সমর্থন দেয়া হয়। সমমনা দলগুলোও এ হরতালে সমর্থন দিয়েছে।বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশের বর্বর হামলা, দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেয়ার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সামনে গণঅনশন এবং রোববার ও সোমবারের লাগাতার ৩০ ঘণ্টার হরতালে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকাল ৩টায় নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ৪৮ ঘণ্টার হরতাল চলাকালে সরকারের নির্দেশে পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ, গ্রেফতারকৃত জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ সব রাজবন্দি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের দাবিতে শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৩ জুলাই জুলুম-নির্যাতন ও দুঃশাসনের হাত থেকে মুক্তির জন্য নফল রোজা কর্মসূচি পালন করবে জামায়াতে ইসলামী। দেশবাসীকে এ নফল রোজা রাখার আহ্বান জানান তিনি। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর সভাপতিত্বে লালবাগের কার্যালয়ে এক যৌথসভায় এবং বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ও মহাসচিব শামীম আল মামুন ও খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক পৃথক বিবৃতির মাধ্যমে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রোববার ও সোমবার ৩০ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল আহ্বানকারী ১২ দলে রয়েছে— বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ-ভাসানী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামিক পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ উলামা পরিষদ ও ইসলামী ঐক্য আন্দোলন। সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা মুছে ফেলা, ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন, ধর্মবিরোধী শিক্ষানীতি ও নারীনীতির প্রতিবাদে তারা এ হরতাল কর্মসূচি আহ্বান করেছে। একই দাবি নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রোববার একদিনের হরতাল পালন করবে। বিএনপির কর্মসূচি : গতকাল বিকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। ওইদিনটি জাতির ইতিহাসে কালো দিবস হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবে। টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল পালন করে জনগণ পঞ্চদশ সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করেছে। হরতালে অসংখ্য নেতাকর্মী আহত ও গ্রেফতার হয়েছে। অনেকের বাড়ি-ঘর, কারখানা ভাংচুর হয়েছে। তাদের প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সরকারের গণবিরোধী নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রশাসনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। পুঁজিবাজারে লুণ্ঠন হয়েছে। আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে।সাংবাদিকদের সংগ্রামী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারাও দেশ রক্ষায় সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। পুলিশি হামলায় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। কারও কারও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। সেজন্য আপনাদের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বুধবার আওয়ামী গণতন্ত্রের এক অদ্ভুত নমুনা দেখলাম। যেখানে পুলিশ কর্মকর্তা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাবান। এখানে পুলিশ কর্মকর্তা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে লাথি-ঘুষি, লাঠি দিয়ে পেটাতে পারেন। এই বর্বর হামলা যখন করা হয়েছে তখন সংসদ অধিবেশন চলছিল এবং ঘটনাটি ঘটেছে সংসদ এলাকায়। সেই পুলিশ কর্মকর্তারা এখনও বহালতবিয়তে আছেন। তারা হাসপাতালে বসে টিভিতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা বলছেন, আমাদের হাতে লাঠি দেয়া হয়েছে চুমো দেয়ার জন্য নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দেখতেও গেছেন। তিনি বলেন, যিনি পুলিশি হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তার নামে উল্টো মামলা দেয়া হয়েছে। এটা এক নাটক। দুঃখজনক হলেও সত্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টিকে অনুমোদন দিয়েছেন। তার বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রূপগঞ্জে নায়ারণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের কারখানায় হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। তারাব বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিনের ওপর হামলা হয়েছে। সেখানে পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। তিনি বলেন, দুই দিনের হরতালে ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, ৭শ’ আহত ও মোবাইল কোর্টে ১শ’ নেতাকর্মীকে সাজা দেয়া হয়েছে। এ সময় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফাকে রিকশায় যাওয়ার সময় গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর কোর্ট থেকে তাকে গাড়ি পোড়ানোর মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে আবার তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। যুবদল মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মজনুকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জুলুম-নির্যাতনের একটি ভয়াবহ কারাগারে আমরা অবস্থান করছি। ‘গণতন্ত্রের প্যান্ট খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে’ মর্মে আ স ম আবদুর রবের বক্তব্য উদ্ধৃত করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটেনি। এটা জাতির জন্য কলঙ্ক হয়ে থাকবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ অতীতেও বাকশাল কায়েম করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। এবার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ আগেও এধরনের ষড়যন্ত্র বরদাশত করেনি। এখনও করবে না।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার, অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, আসাদুল করিম শাহীন, শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুল, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমুখ। জামায়াতের কর্মসূচি : সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপনের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে ১২টি ইসলামী ও সমমনা দলের ডাকা ৩০ ঘণ্টা হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া ৪৮ ঘণ্টার হরতাল চলাকালে সরকারের নির্দেশে পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ, গ্রেফতারকৃত জামায়াতের শীর্ষ নেতা, সব রাজবন্দি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের দাবিতে আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৩ জুলাই জুলুম- নির্যাতন দুঃশাসনের হাত থেকে মুক্তির জন্য নফল রোজা রাখার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। গতকাল মগবাজারের জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে চারদলীয় জোট যুগপত্ভাবে ৬ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ৮ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল আহ্বান করেছিল। সরকার পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগকে মাঠে নামিয়ে এ হরতাল বানচালের জন্য যারপরনাই চেষ্টা চালিয়েছে। পুলিশ মিছিল-সমাবেশ, পিকেটিং করতে দেয়নি, এরপর যেখানে যেখানে মিছিল বের হয়েছে সেখানে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। সারা দেশে জামায়াতের দু’শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে, তার শরীর থেকে শার্ট খুলে নিয়ে লাথি মেরেছে, যা অতীতে কোনো সময় ঘটেছে বলে জানা যায়নি। তিনি বলেন, পুলিশ শুধু জয়নুল আবদিন ফারুককে পেটায়নি তারা সংসদীয় গণতন্ত্রের পিঠে ছুরিকাঘাত করেছে। বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলা হতো। কিন্তু পুলিশের এ বর্বর নির্যাতনে সেই গণতন্ত্র ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হলো। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কিছু এমপি প্রকাশ্যে নির্যাতনকারী পুলিশ অফিসারের পক্ষাবলম্বন করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করল। তিনি বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসী অবলোকন করেছে পুলিশ কীভাবে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের ওপর হামলা করেছে। ভিডিও ফুটেজে অত্যন্ত পরিষ্কার, পুলিশই হামলাকারী। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে প্রদত্ত বিবৃতিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন ফারুকই পুলিশের ওপর হামলাকারী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সত্য লুকানোর এ ভূমিকায় গোটা জাতি হতবাক। একদিকে পুলিশের ওপর হামলাকারী হিসেবে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, অপরদিকে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলা হচ্ছে। এ দ্বিমুখী ভূমিকায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে সরকারের ইঙ্গিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। এক্ষেত্রে স্পিকারের ভূমিকায় জাতি হতাশ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পুলিশ বিরোধী দলকে মাঠে নামতে না দিলেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে প্রমাণ করেছে এ সরকারের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। তিনি হরতালের সময় পুলিশের বিএনপি-জামায়াতের অফিস অবরুদ্ধ করে রাখা, মিছিলে হামলা, গ্রেফতার, ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সরকার স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মূলত এদেশকে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দাবি না মানলে একপর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। এছাড়া প্রয়োজনে রমজান মাসেও হরতাল দেয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ঢাকা মহানগরী আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক মো. তাসনীম আলম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ, ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, সহকারী সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী প্রচার সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, রমনা থানা আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।ইসলামী ঐক্যজোটের কর্মসূচি : গতকাল বিকালে লালবাগ কার্যালয়ে ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এক যৌথ সভায় বসেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী। সভায় রোব ও সোমবারের হরতালে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ৩০ ঘণ্টার হরতালকে ঈমান রক্ষার কর্মসূচি হিসেবে অভিহিত করে মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, সংবিধান থেকে আল্লাহর নাম মুছে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করে সরকার এরই মধ্যে মুসলমানদের ঈমানের ওপর আঘাত হেনেছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা মিথ্যাচার চালাচ্ছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সংবিধানে আল্লাহর নাম ফিরিয়ে আনতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান