Wednesday 20 July 2011

পিএসসিকে অকেজো করে দেয়া হচ্ছে










কাদের গনি চৌধুরী
পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অকার্যকর করে দেয়া হচ্ছে। সরকার দলীয় লোকজনকে চাকরি দেয়ার ব্যাপারে পিএসসিকে বশে আনতে না পেরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কমিশনের দায়িত্ব খর্ব করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। শুধু তাই নয়, পিএসসিকে ভেঙে তিন ভাগ করতে যাচ্ছে সরকার। এ তিন পিএসসি হলো পাবলিক সার্ভিস কমিশন (টেকনিক্যাল), পাবলিক সার্ভিস কমিশন (জেনারেল) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (এডুকেশন)। এছাড়া ১৯৮১ সালের সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস) নতুন একটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করে অস্থায়ী (এডহক) নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিসিএস পরীক্ষায় চালু করা হয়েছে ২০০ নম্বরের ভাইভা (মৌখিক) পরীক্ষা। আর দলবাজ কর্মকর্তাদের দিয়ে নেয়া হচ্ছে ভাইভা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, পিএসসিকে ক্ষমতাহীন করতে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নিয়ে নেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ বিধি-১ শাখা থেকে একটি পরিপত্র জারি করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পিএসসি’র ভূমিকা আরও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও নানা পরিপত্র করা হচ্ছে। স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ চেয়ে পিএসসি’র পাঠানো প্রস্তাবেও সায় দিচ্ছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বরং এ নিয়ে নানা ঝামেলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সর্বশেষ জারি করা পরিপত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে এডহকভিত্তিক সরাসরি নিয়োগকে উত্সাহিত করা হয়েছে। পরিপত্রে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের (অধীনস্থ দফতর/অধিদফতর/পরিদফতরসহ) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে এডহকভিত্তিক সরাসরি নিয়োগ এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগের বিষয় বিবেচনার জন্য দুই ধরনের কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এতে প্রথম শ্রেণীর পদে এডহকভিত্তিক সরাসরি নিয়োগ এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত প্রথম শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব/অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এবং অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন করে প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর বা পরিদফতরের প্রধান, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরিচালক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিকে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সদস্য করার কথা বলা হয়েছে। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির শর্ত পূরণসাপেক্ষে সব মন্ত্রণালয়/ বিভাগ ও এর অধীনের অধিদফতর/পরিদফতর/দফতরের প্রথম শ্রেণীর পদে এডহক ভিত্তিতে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম ও সুপারিশ দেবে কমিটি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির শর্ত পূরণসাপেক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত প্রথম শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম ও সুপারিশ দেবে তারা। এদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে এডহকভিত্তিক সরাসরি নিয়োগ এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিবকে সভাপতি এবং একই মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব বা সমপর্যায়ের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য সচিব করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পর্যায়ের এবং অর্থ বিভাগের উপ-সচিব পর্যায়ের একজন করে প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর বা পরিদফতরের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের উপ-পরিচালক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিকে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) সদস্য করার কথা বলা হয়েছে। এ কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির শর্ত পূরণসাপেক্ষে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর অধীনের অধিদফতর/পরিদফতর/দফতরের দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে এডহক ভিত্তিতে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম ও সুপারিশ দেবে তারা। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধির শর্ত পূরণসাপেক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের আওতাবহির্ভূত দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম ও সুপারিশ দেবে কমিটি। পরিপত্রের শেষ লাইনে বলা হয়েছে, সরকারের এসব সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে অনুসরণ এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরকারি কর্ম কমিশনকে উপেক্ষা করেই দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে অর্ধলক্ষাধিক লোক নিয়োগ শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর প্রশাসনে গতি আনার লক্ষ্যে দ্রুত লোক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দফতর ও অধিদফতরে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এডহকভিত্তিক নিয়োগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিধিমালা সংশোধনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পরে একই বছরের ১৫ জুলাই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব শূন্যপদে এডহকভিত্তিক জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে ১৯৯৪ সালের নিয়োগবিধির ৮ ধারা বিলুপ্ত করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অর্ধলক্ষাধিক শূন্যপদের তালিকা প্রস্তুত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর অ্যাডহকভিত্তিক সাড়ে তিন হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে এসব ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকার সমর্থিত ডাক্তারদের সংগঠনের দেয়া তালিকার ভিত্তিতে এসব ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে তদবিরের অভাবে মেধাবীরা উপেক্ষিত হন। নিয়োগ দেয়া এসব ডাক্তারের চাকরি নিয়মিত করার জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক পত্রের মাধ্যমে সুপারিশ করে। সচিব কমিটিতে নিয়োগবিধির (সংশোধনী) প্রস্তাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন এডহকভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এসব ডাক্তারের চাকরি নিয়মিত ও ক্যাডারভুক্তকরণেরও সুপারিশ করা হয়।
সূত্র জানায়, কিছুদিন পর অস্থায়ী (অ্যাডহক) নিয়োগ পাওয়া ৪১৩৩ চিকিত্সককে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্যাডারভুক্ত হতে তাদের পিএসসির অধীনে কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। একই সঙ্গে তাদের চাকরিতে যোগদানের দিন থেকেই জ্যেষ্ঠতা দেয়া হবে। এর জন্য ১৯৮১ সালের সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস) নতুন একটি অনুচ্ছেদ সংযোজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপরন্তু এজন্য ‘দি রেগুলারাইজেশন অব অ্যাডহক অ্যাপয়নমেন্ট রিক্রুটমেন্ট রুলস, ১৯৮৩; অ্যাডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা, ১৯৯৪ এবং দি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (কনসালটেশন) রেগুলেশন, ১৯৭৯’- এ তিনটি আইন ও বিধিতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধনী আনা সংক্রান্ত সব বিষয়ে প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি অ্যাডহকভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়মিত ও ক্যাডারভুক্ত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে ‘অ্যাডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা, ১৯৯৪ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্রমবর্ধমান চিকিত্সা সেবার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য এরই মধ্যে অ্যাডহকভিত্তিতে ৩৫৫১ জন ডাক্তার নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ৫৮২ জন ডাক্তারের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অ্যাডহক (অস্থায়ী) চিকিত্সকদের নিয়মিত ও ক্যাডারভুক্ত করতে আইন সংশোধন করা হলে দলীয় চিকিত্সকরাই সুবিধা পাবেন। এর ফলে অনেক অদক্ষ ও অযোগ্য চিকিত্সক নিয়মিত হবেন। একই সঙ্গে ক্যাডারভুক্তও হয়ে যাবেন। তবে নিয়মিত করার সঙ্গে একমত পোষণ করলেও বিসিএস পরীক্ষা ছাড়া ক্যাডারভুক্ত করার প্রশ্নে দ্বিমতপোষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা দ্বিমতপোষণ করার পরও গত ২০ মার্চ প্রশাসনসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালায় নতুন এ অনুচ্ছেদ সংযোজনের বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগে সরকার আলাদা সার্ভিস কমিশন করতে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জন্যই মূলত সরকার আলাদা সার্ভিস কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব পদে আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দেয়া হতো। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৭৭ সংশোধন করে শুধু শিক্ষা ক্যাডারের জন্য শিক্ষা কর্মকমিশন নামে একটি পৃথক কমিশন গঠনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যেই এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাড়পত্র দিয়েছে। শিক্ষা কমিশন গঠনের আগেই ২৯৩টি সরকারি কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আড়াই হাজার শিক্ষকসহ কয়েক হাজার শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগের একটি তালিকাও করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে বাদ দিয়ে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ হলে দলীয়করণের একটি খারাপ নজির স্থাপিত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলেন, পিএসসি যদি প্রশাসন ক্যাডারসহ ২৯টি ক্যাডারের লোকবল নিয়োগ দিতে পারে, তাহলে শিক্ষা ক্যাডারের জন্য আলাদা কর্মকমিশন গঠনের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এটা হলে অন্য ক্যাডারের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। দলীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ হলে দেশ, জাতি এবং আগামী প্রজন্ম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ‘শিক্ষা সেক্টরে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পৃথক শিক্ষা কর্মকমিশন গঠন’ শিরোনামের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের জন্য ক্যাডার ও ক্যাডারবহির্ভূত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য পরীক্ষা গ্রহণ করে সুপারিশ প্রদান করা হবে সরকারি কর্মকমিশনের অন্যতম দায়িত্ব। বর্তমানে ২৯টি ক্যাডার সার্ভিস রয়েছে। সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে একটি বিসিএস পরীক্ষা গ্রহণ করে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্তভাবে প্রার্থী মনোনয়ন করতে কমপক্ষে দু’বছর সময় লেগে যায়। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে সংশ্লিষ্ট সেক্টরে শূন্য পদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে এবং সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দেশের বার্ষিক বাজেটের বিরাট অংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু শিক্ষা সেক্টরে বিভিন্ন পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকার কারণে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষা সেক্টরে নিয়োগের লক্ষ্যে পৃথক শিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (এডুকেশন) কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুলস-১৯৮০ অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুমোদিত ১৪ হাজার ৪৪৭টি পদের মধ্যে আড়াই হাজার পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই পদোন্নতি এবং অবসর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারের বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য হচ্ছে। এছাড়াও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার, মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি স্কুলগুলোয় সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগসহ সরকারি কলেজগুলোয় ১০ শতাংশ কোটায় সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক নিয়োগ এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারের ৪ হাজার ৭৯৪টি ভিত্তি পদে নিয়োগসহ ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক এবং কনসালটেম্লট নিয়োগ করবে এ শিক্ষা কর্মকমিশন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইকবাল মাহমুদ স্বাক্ষরিত এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের শিক্ষা সেক্টরে জনবল সমস্যা দূর করে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা সেক্টরের জন্য একটি পৃৃথক কর্মকমিশন গঠন করার বিষয়ে এর আগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যমান সরকারি কর্মকমিশনের স্থলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (সাধারণ) ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (শিক্ষা) নামে দুটি পৃথক কর্মকমিশন গঠন করার লক্ষ্যে তৈরি করা খসড়ায় এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।
পিএসসির মাধ্যমে দলীয় লোকদের চাকরি দিতে সরকার ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে বিসিএসে আবারও ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, প্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদের ভাইভা বোর্ডের সদস্য করা হচ্ছে। এতে জনপ্রশাসনে রাজনৈতিক ক্যাডারদের নিয়োগের পথ উন্মুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কারণ এতে লিখিত পরীক্ষায় কোনো প্রার্থী অত্যন্ত ভালো ফল করলেও মৌখিক পরীক্ষায় তাকে কাঙ্ক্ষিত ও প্রাপ্য নম্বর না দিয়ে বাদ দেয়ার সুযোগ থাকে। এদিকে মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার জন্য পিএসসির ১১ কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট পৃথক ১১টি ভাইভা বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এবং বাইরের একজন বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে। যুগ্ম সচিব হিসেবে ভাইভা বোর্ডে রাখা হয়েছে সরকারের সাবেক ডিসি ও দলবাজ হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের। তাই সামনের নিয়োগগুলো রাজনৈতিক প্রভাবাধীন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
এদিকে পিএসসির কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে চলেছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা চেয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে। এর পাশাপাশি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠাতে চায় তারা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন পিএসসির সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান। গত ১৪ মার্চ পাঠানো ৩ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে পিএসসি কোন কোন প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা (স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা) পেতে পারে, তা সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। এর পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্বাহী আদেশ উল্লেখ করে ওই চিঠির প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৩ জানুয়ারি পিএসসি তার আইনগত অবস্থানের বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দেয়। ওই চিঠির ভিত্তিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অভিমত ব্যক্ত করে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়কে একটি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা দেয়া প্রশাসনিক কারণে বাঞ্ছনীয়। বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বরাবর প্রস্তাব পাঠানো যেতে পারে। স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা দেয়ার জন্য চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এবং কর্মকমিশনের সচিবালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনের কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে যে ১২টি অধিদফতরের নাম এলোকেশন অব বিজনেসে রয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তাতে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের নাম নেই। জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়কে বিভাগের মর্যাদায় একটি আলাদা ইউনিট হিসেবে গণ্য করে বাজেট বরাদ্দ করা হচ্ছে। সরকারের সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা কমিশনের সচিব বা প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার হিসেবে কাজ করে থাকেন। একমাত্র সরকারের স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার থাকেন। ১৯৮৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পিএসসির সাংগঠনিক কাঠামো সংক্রান্ত মঞ্জুরি আদেশে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়কে একটি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদা দেয়ার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এরপর ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর পিএসসিকে প্রধান উপদেষ্টার অধীন একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের পাঠানো চিঠিপত্রেও সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়কে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। সংসদের কার্যধারায় কমিশন সচিবালয় সরকারের একটি স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে স্বীকৃত। পিএসসির চিঠিতে বলা হয়েছে, কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান সদস্যরা সাংবিধানিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। তাই সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা নিতান্তই অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় গত ২১ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ের অনুমোদনের জন্য সরাসরি সারসংক্ষেপ পাঠিয়ে অনুমোদন নিচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি কালোত্তীর্ণ প্রথা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে কমিশনের কাজে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। কারণ, কমিশন সচিবালয় জনপ্রশাসন সচিবের মাধ্যমে তাদের কোনো প্রশাসনিক চিঠিপত্র বা সারসংক্ষেপ গত ২১ বছরেও পাঠায়নি। গতবছরের ১ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পিএসসিকে এক চিঠিতে জানায়, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় একটি স্বতন্ত্র বিভাগ নয়। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি আরও একটি চিঠিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় স্বতন্ত্র বিভাগ নয় এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের প্রশাসনিক কোনো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের স্বাক্ষরে পাঠাতে হবে। এ চিঠির প্রেক্ষিতে পিএসসি তাদের চিঠিতে বলেছে, একটি নির্বাহী স্মারক বলে পিএসসির সাংবিধানিক মর্যাদা ও অবস্থান অবনমিত করা হলে তা হবে নিতান্তই অনভিপ্রেত ও দুর্ভাগ্যজনক। যা কর্মকমিশনকে অকার্যকর করার পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে পিএসসির স্বতন্ত্র অবস্থান নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে অর্থাত্ গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অনুরোধ করা হলো। গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর ক্ষেত্রে আগের যে ধারা ছিল, তা অব্যাহত থাকবে
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/07/20/93930

No comments:

Post a Comment