Sunday 27 March 2011

আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী : জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক : জাতিকে বিভক্ত করতেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ












স্টাফ রিপোর্টার
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তিনি দেশ ও স্বাধীনতার জনক। সামরিক বাহিনী থেকে তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেদিন জিয়ার কণ্ঠই মানুষের মন ছুঁয়েছিল। তার ঘোষণার পরপরই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বর্তমান সরকারের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ সম্পর্কে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তার সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানের নয়। এখানকার আইনজীবীদের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিলে আজ এ অবস্থা হতো না; বরং এখন জাতিকে বিভক্ত করতেই এ বিচার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যেই সরকার আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এটা দেরি করবে, যাতে এ বিষয়টি ব্যবহার করে আবারও নির্বাচনে জেতা যায়। এটা হলে জাতি কখনও মেনে নেবে না। তিনি গতকাল ‘স্বাধীনতার ৪০ বছর ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক বলেন, ’৭১ সালে আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা ও বর্তমানের অনেক এমপি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ছিলেন। এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের জাহির করছেন। কেউ কেউ বলছেন, বর্তমানে মন্ত্রিসভায় এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। নিজেদের দলের লোকদের বাঁচানোর স্বার্থে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে কয়েকজনের বিচার করা হলে তা জাতি গ্রহণ করবে না। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধী বিচারের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানের নয়। .এ ট্রাইব্যুনালের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। মনে হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চাচ্ছে সরকার। এর মাধ্যমে তারা পরবর্তী নির্বাচনে সুবিধা নিতে চায়। এটা হলে জাতি মেনে নেবে না। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠন ‘মুক্তচিন্তা’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী আমিরুল মোমেনীন মানিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন। গ্রেফতার হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি মুক্তিসংগ্রামের প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দিয়েছেন। গ্রেফতারের পর তার পরোক্ষ নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তিনি দেশ ও স্বাধীনতার জনক, এটা ঐতিহাসিক সত্য; কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষক নন। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। সামরিক বাহিনী থেকে তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। রেডিওতে তার ঘোষণাই প্রচারিত হয়েছিল। জিয়ার কণ্ঠ মানুষের মন ছুঁয়েছিল। তার কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জিয়া নিজেও ২৭শ’ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের বিশেষ সমর্থন পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি হওয়া হেলাল মোর্শেদ ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় ডিজিএফআইর মহাপরিচালক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করায় তিনি অনেক লোকের ওপর নির্যাতন করেছিলেন। পিঠের চামড়া তুলে নিয়েছিলেন।
ড. ইউনূসের বিষয়ে সরকারের ভূমিকার নিন্দা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশে সম্মানী লোককে সম্মান দেয়া হচ্ছে না। নোবেল বিজয় করে ড. ইউনূস দেশের জন্য যে সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছেন তা আগামী হাজার বছরে সম্ভব নাও হতে পারে। সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাকে আজ অপমান করছে। একসময় আমি যে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তাও হয়তো কেউ অস্বীকার করতে পারে। কারণ আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই আমি কতজনকে হত্যা করেছি। তিনি দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রশংসা করে বলেন, প্রথমে নবাগত হিসেবে আমি তাকে গ্রহণ করতে পারতাম না; কিন্তু তার সাহসী লেখা পড়তে পড়তে আমার ভালো লেগে যায়। জেলখাটার আগে তাকে যদি একশ’জনে চিনতো, এখন তাকে হাজার জনে চেনে। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার পর সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ মর্যাদা পেলে তিনিই পাবেন। তার অবস্থানে থাকতে পারলে তিনি সাংবাদিকতাকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন। দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক কোনো হিসাব নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক আরও বলেন, সরকারের ঘরে যেসব স্বাধীনতাবিরোধী রয়েছে, আগে তাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর ঘরে যেসব যুদ্ধাপরাধী রয়েছে, তাদের কথা বলা হচ্ছে না। সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তাদের নিজেদের ঘরের স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার করবে না। কিন্তু এর বিচার একদিন হবেই। ক্ষমতার পালাবদল হলে জনতার আদালতে তাদের বিচার হবে

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতি : বাকশাল আমলের মতো বিচার বিভাগ ফের পরাধীন করা হচ্ছে : দেশে কার্যত কোনো সংবিধান নেই












স্টাফ রিপোর্টার

বাকশাল আমলের মতো বিচার বিভাগকে পুনরায় সরকারের আজ্ঞাবহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকার বিচার বিভাগকে তার অধীন করে নিতে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করছে। বিচার বিভাগ নিয়ে এ খেলা বন্ধ করা নাহলে আইনজীবীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে আজ সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সংবিধান জগাখিচুড়ির মধ্যে রয়েছে। পুনর্মুদ্রণে আদালতের নির্দেশও কার্যকর করা হয়নি। গতকাল দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সহ-সম্পাদক মোরশেদ আল মামুন লিটনসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বার প্রেসিডেন্ট বলেন, মূল সংবিধানে বিচার বিভাগ স্বাধীনই ছিল। কিন্তু বাকশাল কায়েমের সময় বিচার বিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবহ করা হয়। পরে পঞ্চম সংবিধানের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে আবার স্বাধীন করা হয়। বর্তমানে সংবিধান থেকে ১১৬ অনুচ্ছেদ উঠিয়ে দিয়ে বিচার বিভাগকে আবার নির্বাহী বিভাগের অধীন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ ও স্বাধীন করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে আবারও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আইনজীবীদের নিয়ে সরকারের এ হীন চেষ্টা রুখে দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সরকারের এ চেষ্টা সফল হলে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। বিচারকরা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করতে বাধ্য হবেন। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলেও সাংবিধানিক অস্পষ্টতার কারণে সুপ্রিমকোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেই তিনি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবি জানান।
প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে সাংবিধানিক শূন্যতা চলছে। কোন সংবিধান কার্যকর এটি কারও জানা নেই। একেক মন্ত্রী একেক ধরনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন, ছাপানো সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে। আবার কেউ বলছেন, আগের সংবিধান অনুযায়ীই দেশ চলছে। আসলে কোন মন্ত্রীর কথা সঠিক সেটা সরকারও জানে না। সরকারের মন্ত্রীদের কথাবার্তায় দেশের মানুষ চরম হতাশ। সরকারকে দ্রুত বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনী রায়ের আলোকে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করার কথা বলা হচ্ছে। অথচ আদালতের রায় পাশ কাটিয়ে তারা নিজেদের মতো করেই সংবিধান সংশোধন করেছেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশকে সরকার আবারও একদলীয় বাকশালী অপশাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করে দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। বাকশালের উত্তরসূরি বর্তমান সরকারও সংবিধানকে কেটেছিঁড়ে বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাকশালী শাসনের কবল থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদ মাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। একইসঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও তিনি ওই সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চিত করেন। বর্তমানে আবারও সেই বাকশালের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বাকশাল কায়েমের স্বপ্ন পূরণ হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে চতুর্থ সংশোধনীর দিকে সরকারকে না হাঁটার জন্য হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, এদেশটি আপনাদের একার নয়। ১৬ কোটি মানুষের এদেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হবে না। আইনজীবীরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বাকশাল কায়েমের চেষ্টা প্রতিহত করবে। বাকশাল কী জিনিস, দেশের মানুষ তা হাড়ে হাড়ে বোঝে।
পঞ্চম সংশোধনী রায় রিভিউর জন্য সরকার পক্ষের আবেদন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, একদলীয় বাকশাল কায়েমের জন্য সরকার শেষ পদক্ষেপ নিয়েছে

শেয়ারবাজার আওয়ামী লীগ আমলে তলাবিহীন ঝুড়ি : আবারও একদিনে ৪৬০ পয়েন্ট পতন হয়েছে সূচকের










জাহেদ চৌধুরী
আওয়ামী লীগ সরকারে এলেই শেয়ারবাজার হয়ে পড়ে তলাবিহীন ঝুড়ি। সাধারণ মানুষের পকেট কাটার হাতিয়ারে পরিণত হয় এই পুঁজিবাজার। নানা প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করে একপর্যায়ে সাধারণ মানুষের পুঁজি হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে বিশেষ সিন্ডিকেট। এরপর চলে সরকারি কোষাগারে রাখা জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ। আইসিবি ও বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বাজার সাপোর্টের নামে সরকারি টাকা ঢালা হয় বাজারে। একসময় দেখা যায় সে টাকাও কোনো কাজে আসে না। জনগণেরই করের টাকা চলে যায় ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ গহ্বরে। এর মাধ্যমে জুয়াড়ি সিন্ডিকেট বরং দফায় দফায় এভাবে শেয়ার মার্কেট থেকে জনগণের টাকা লুটে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হয়ে পড়েন দেউলিয়া। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে প্রায় জনগণের সরাসরি পকেট কাটা শেষ হয়েছে। এখন দফায় দফায় সরকারি টাকা ঢালা হচ্ছে। সময়মত সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ায় জনগণের ট্যাক্সের টাকাও কোনো কাজে আসছে না। গতকাল একদিনেই প্রায় ৪৬০ পয়েন্ট সূচকের পতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। ২৫৫টি কোম্পানির ট্রেডিং হয়েছে। এর মধ্যে দাম কমেছে ২৪৫টির। এর অধিকাংশই নিচের সার্কিটব্রেকারে গিয়ে ঠেকেছে। গতকাল একদিনে ডিএসইতে গড় দরপতন প্রায় ৭ শতাংশ। তবে এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১০ শতাংশ করে।
শেয়ারবাজারে অতিমূল্যায়িত শেয়ারের ব্যাপারে যখন সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ছিল, তখন এ নিয়ে কেউ কিছু বলেনি। সরকার বরং অর্থনীতির ইতিবাচক দিক বলে বাহাবা নেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সাধারণ জনগণকে অতিমূল্যায়িত বাজারে বিনিয়োগে উস্কে দিয়েছে।
কেউ এ নিয়ে কথা বললে ভিন্ন চোখে সেটাকে দেখা হয়েছে। গত মে মাসে বাজার যখন তুঙ্গে, তখন আমার দেশ-এর প্রথম পাতায় ৩ কলাম শিরোনামে পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এ নিয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলেন। দেশের অর্থনীতি নিয়ে লেখা ওই মন্তব্য প্রতিবেদনের একটি বড় অংশ ছিল শেয়ারবাজার নিয়ে। ৩০ মে আমার দেশ-এ প্রকাশিত মাহমুদুর রহমানের ওই মন্তব্য প্রতিবেদনে তিনি শেয়ারবাজার নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু পরদিনই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। তখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ৩৬শ’ পয়েন্ট থেকে কমে একপর্যায়ে মাত্র ৬শ’ পয়েন্টে ঠেকেছিল। ৭ দিনে সূচকের পতন ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। এবারও গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে সূচক কমেছে ৩ হাজার ৭১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শতকরা হিসাবে ৪০ ভাগের বেশি। ৫ ডিসেম্বর যেখানে সূচক ছিল ৮ হাজার ৯১৮ দশমিক ৫১, সেখানে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় কমে গিয়ে সূচক দাঁড়ায় ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ৪৩ ভাগ। এরপর সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবি এবং সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী ব্যাংক, সাধারণ বীমা করপোরেশন, জীবন বীমা করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনের ঘোষণা দিলে গত সপ্তাহে শেয়ারবাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সূচকও ৬ কার্যদিবসে ১৪শ’ পয়েন্ট বেড়ে গত বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছিল ৬ হাজার ৬৩৯ দশমিক ১৮ পয়েন্ট। কিন্তু গতকাল একদিনেই ডিএসইতে সূচকের পতন হয়েছে ৪৫৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। কমেছে প্রায় সব শেয়ারের দাম। ৫ ডিসেম্বর যেখানে বাজার মূলধন পৌঁছেছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭১ কোটি টাকা; সেখানে এই মূলধন ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৪ কোটি ১২ লাখ টাকা কমে গিয়ে গত মাসের শেষদিনে পৌঁছেছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ৩০৭ কোটি ২৯ লাখ টাকায়। গত ক’দিনে কিছুটা বেড়ে গতকাল দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। শেয়ারবাজার থেকে কম-বেশি ১ লাখ কোটি টাকার মূলধন উধাও হয়ে গেছে। তার বড় একটি অংশই একটি সিন্ডিকেট লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
’৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত কমিটি হয়েছিল। সে কমিটির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও জনসমক্ষে আসেনি। তখন এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছিল। সে মামলাও ঝুলে আছে। তখন সরকারি দলের লোকজন জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছিল তদন্ত কমিটি। তখনকার অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন না। আর এবার শেয়ারবাজারে ধস নামার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, শেয়ারবাজার ধসের পেছনে তার ও সিএসই’র সিদ্ধান্তে বেশকিছু ভুল ছিল, সেগুলো তিনি শোধরানোর চেষ্টা করছেন। কিছুদিন আগে সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন শেয়ারবাজার তিনি বোঝেন না। প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী স্বীকারোক্তি দিলেও জনগণের পকেট কেটে যে টাকা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত বা দুর্বলতার কারণে লুট হয়েছে, তার দায় তারা কীভাবে এড়াবেন—এ প্রশ্ন উঠেছে। জনগণের পকেট কাটার পর দফায় দফায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের ট্যাক্সের টাকা আইসিবিসহ শেয়ারবাজারে ঢালার পর কিছুই বাস্কেটে থাকছে না। এজন্য শেয়ারবাজার এখন তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
অথচ শেয়ারবাজারের সূচক যখন ধাই ধাই করে ওপরের দিকে উঠছিল, তখন বার বার সরকারকে সতর্ক করে দেয়ার পরও এ নিয়ে তারা কোনো গরজ দেখায়নি। বরং বার বারই বলা হয়েছে—এটা দেশের অর্থনীতিতে ভালো লক্ষণ।
শেয়ারবাজার নিয়ে মাহমুদুর রহমান আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন : গত ১ জুন রাতে আমার দেশ কার্যালয় থেকে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। মাত্র একদিন আগে ৩০ মে ‘টাকার পাহাড় যাচ্ছে কোথায়’ শিরোনামে মাহমুদুর রহমান আমার দেশ-এ প্রকাশিত তার মন্তব্য প্রতিবেদনের একটি প্যারায় উল্লেখ করেছিলেন—‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও একটি বৈপরীত্য এখন ক্রিয়াশীল রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকেই শিল্পখাতে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে শেয়ারবাজারে দর ও মূলধন বৃদ্ধির এক অবিশ্বাস্য প্রতিযোগিতা চলছে। ১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির সময় মূল্যসূচক সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্ট স্পর্শ করেছিল। আর এখন সেটি ৬ হাজার অতিক্রম করেছে। প্রতিদিনের লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। বছরে ২২৫ দিন শেয়ার মার্কেট খোলা থাকলে কেবল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেই বার্ষিক লেনদেন এখন ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। শেয়ার কেনাবেচায় বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে হয়তো এবছরের মধ্যেই টাকার অংকে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ আমাদের মোট জাতীয় আয়কে অতিক্রম করবে, যা বর্তমানে ৬ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। আমার বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে এখন যা চলছে, তাকে স্রেফ জুয়া ছাড়া আর কোনো নামে ডাকার উপায় নেই। ফটকাবাজ গোষ্ঠীর কারসাজিতে সৃষ্ট এই বিশালকায় বেলুন ফুটো হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ মাহমুদুর রহমান আরও মন্তব্য করেছিলেন—‘এই বেলুন যখন ফুটো হবে, তখন অসংখ্য দেউলিয়া মনুষের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেউলিয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানও দেখা যাবে।’
তবে প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে মাহমুদুর রহমান যে মন্তব্যটি করেছিলেন, সেটি ছিল—‘চোখের সামনে অর্থনীতির মৌলিক তত্ত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক একটি অগ্রহণযোগ্য কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে, অথচ আমাদের সব ধীমান অর্থনীতিবিদরা নীরব।’
মাহমুদুর রহমানের আগাম সতর্কবার্তা এরই মধ্যে সত্যে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তার এ সতর্ক বার্তাকে সময়মত আমলে নিলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির দায় থেকে সরকার রক্ষা পেত। দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীও তাদের সর্বস্ব হারানো থেকে রক্ষা পেতেন।
লাখো-কোটি টাকার মূলধন উধাও : মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসই থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকার মূলধন উধাও হওয়ার পর সরকারি ব্যাংক ও আইসিবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের ট্যাক্সের টাকা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের কয়েকটি চেষ্টাও সফল হয়নি। টাকা ঢালার পর সূচক কিছুটা বাড়ছে; আবার সপ্তাহ না ঘুরতেই সূচক পড়ে যাচ্ছে। গত ৩ মাসে অন্তত ৭ বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রতিবারই আইসিবির মাধ্যমে কিছু শেয়ার কিনেছে সরকার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সর্বশেষ সরকারি পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সঙ্কট কাটাতে বাংলাদেশ ফান্ড নামে একটি ওপেন অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। ফান্ডের প্রাথমিক আকার ধরা হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে পরিবর্তিত এ ফান্ডের আকার বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। সম্প্রতি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) কার্যালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৩ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান। আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন জনতা, সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ব্যাংক, সাধারণ বীমা করপোরেশন, জীবন বীমা করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই এই ফান্ড গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে। ফান্ডের মোট আকারের ৫০ শতাংশ মানি মার্কেটে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। যেহেতু এটি একটি আপদকালীন ফান্ড, তাই সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে ফান্ড পরিচালনায় আলাদা সুযোগ দিতে হবে।
একদিনেই ডিএসই সূচক কমেছে ৪৬০ পয়েন্ট : অর্থনৈতিক রিপোর্টার জানান, বড় ধরনের দরপতন দিয়েই শুরু হয়েছে এ সপ্তাহের শেয়ারবাজারের লেনদেন। গতকাল একদিনেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪৫৯ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। দিনশেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে। লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সব কয়টি কোম্পানির শেয়ারের বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। লেনদেনকৃত ২৫৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১০টির। বাকি ২৪৫টি কোম্পানিরই শেয়ারের বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এর আগে টানা ৬ দিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরবৃদ্ধির ঘটনা ঘটে।
বাজার বিশ্লেষকরা জানান, টানা দরবৃদ্ধির পর বাজারে মূল্য সংশোধন হওয়াই স্বাভাবিক। তবে যেভাবে বাজারে দরবৃদ্ধি এবং দরপতন হচ্ছে তা স্বাভাবিক নয়। তারা বলেন, যখন দর বাড়ে তখন প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ে আবার যখন পতন হয় তখন প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির মৌলভিত্তি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গতকাল সূচকের পতন দিয়ে শুরু হয় দিনের লেনদেন। কিন্তু পরবর্তী ১০ মিনিট সূচকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হলেও তা খুব একটা স্থাযী হয়নি। ফের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। শেয়ারের দর কমতে থাকায় আরও পতন হবে, এমন আশঙ্কায় শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। এছাড়া ৬ দিন টানা দরবৃদ্ধির কারণে গতকাল মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতাও ছিল বেশি। ফলে দুইবাবেই শেয়ার বিক্রির চাপ তৈরি হওয়ায় অধিকাংশ কোম্পানিই দর হারায়। তবে একদিনে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর হারানো কিংবা দরপতনের ঘটনা বাজারের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা নয় বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এ ধরনের প্রবণতা বাজারকে আবারও অস্থির করে তুলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস ফার্স্ট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, যখন দাম বাড়ছে তখন দেখা যাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। আবার যখন দর কমছে তখন ভালো মৌলভিত্তির এবং ক্রয়ানুকূলে রয়েছে এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারেরও দর কমছে। বিনিয়োগকারীরা হুজুগে শেয়ার কিনছেন বা বিক্রি করছেন কিন্তু কোম্পানির মৌলভিত্তি বিবেচনা করছেন না। এ ধরনের ঘটনা বাজারের জন্য ইতিবাচক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে গতকাল দরপতনের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার।
মার্চেন্ট ব্যাংকার বৃদ্ধির চিন্তা করছে সরকার : অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সংসদে বলেছেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা এবং পুঁজি তারল্য বাড়ানোর জন্য সরকার মার্চেন্ট ব্যাংকার আরও বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছে। কার্যদিবস শুরুর পর টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা জানান। মন্ত্রী জানান, পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সরাসরি বিনিয়োগের ব্যাপারে সরকার কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করেনি। তিনি জানান, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে মূল্য নিরূপিত হয়। সমপ্রতি শেয়ারের চাহিদা যোগানের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই বাজারের মূল্য সংশোধনের অংশ হিসাবে শেয়ারের দরপতন হয়। তবে সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে শিগগিরই বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায়। অর্থমন্ত্রী জানান, বাজার উত্থান-পতনের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে যদি সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর আরও শেয়ার দ্রুত পুঁজিবাজারে ছাড়ার ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। আশা করা যায়- সরকারি কোম্পানির শেয়ার অচিরেই বাজারে আসবে।
‘বাংলাদেশ ফান্ড’ গঠনে কোনো অনিশ্চয়তা নেই : আইসিবি : এদিকে গতকালের দরপতনের পেছনে একটি বার্তা সংস্থা পরিবেশিত প্রতিবেদনকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ফান্ড গঠনের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলা হয়। তবে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ গঠনের বিষয়ে কোনো রকম সংশয় নেই। তিনি বলেন, মেয়াদহীন (ওপেন এন্ড) মিউচুয়াল ফান্ডের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী উদ্যোক্তা অংশের অর্থ নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই তহবিলের কার্যক্রম শুরু হবে। এরই মধ্যে আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ এই ফান্ড গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে ফান্ডের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পরে আইসিবির পক্ষ থেকে সহযোগী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রতিষ্ঠানকে তাদের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। ফলে পুরো বিষয়টিই খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডিএসইর ওয়েবসাইট বিভ্রাট : এদিকে গতকাল লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা পর ডিএসইর ওয়েবসাইটে বড় ধরনের বিভ্রাট তৈরি হয়। বেলা ১২টার পর থেকে সোয়া একটা পর্যন্ত ডিএসইর ওয়েবসাইটটি কাজ করছিল না। এতে অনেক বিনিয়োগকারী নানা ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা খায়রুজ্জামান বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসইর ওয়েবসাইট বন্ধ থাকে। লেনদেনের সঙ্গে ওয়েবসাইটের কোনো সম্পর্ক নেই। লেনদেনের জন্য ডিএসইর নিজস্ব ট্রেড সার্ভার রয়েছে। ওয়েবসাইট কাজ না করলেও লেনদেন নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। তিনি আরও জানান, ডিএসইর ওয়েবসাইটটিতে কিছুটা ধীর গতি দেখা দেয়ায় তা আপগ্রেড করতে বন্ধ রাখতে হয়েছে। ১টা ৭ মিনিটে ফের ওয়েবসাইটটি চালু হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে এসইসির সার্ভিলেন্স বিভাগের প্রধান সাইফুর রহমান বলেন, ডিএসইর ওয়েবসাইট বন্ধ থাকলেও বাজারে যথারীতি লেনদেন হয়েছে। ট্রেড সার্ভারের মাধ্যমে ডিএসইর লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে। ওয়েবসাইট বন্ধ হলেও তাতে লেনদেন কার্যক্রমে কোনো ধরনের সমস্যা নেই

আ’লীগ ক্ষমতায় থাকলে খুনের রাজনীতি বন্ধ হবে না : আজহার

স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। তারা সন্ত্রাস, খুন ও টেন্ডারের লাইসেন্স দেয়। তারা রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আদালত কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ফাঁসি ও খুনের আসামিদের ছেড়ে দেয়। আসলে আওয়ামী লীগ খুনিদের দল। যতদিন এই দল ক্ষমতায় থাকবে ততদিন খুনের রাজনীতি বন্ধ হবে না, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা আসবে না। আর দেশের সব খুনের দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। এদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। কিসের ভিত্তিতে তাদের পাঠানো হলো তার জন্য একদিন আওয়ামী লীগকেই জবাবদিহি করতে হবে।
গতকাল সকালে মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত ‘শহীদ দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিবির সভাপতি ডা. ফখরুদ্দিন মানিকের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল দেলোয়ার হোসেনের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলম, শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. রেজাউল করিম, দফতর সম্পাদক আতাউর রহমান সরকারসহ মহানগর নেতারা।
এটিএম আজহার বলেন, আমাদের কথায় সায় দিয়ে আইনমন্ত্রী বিদেশ থেকে এসে যুদ্ধাপরাধীর পরিবর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা বলা শুরু করেন। যুদ্ধাপরাধ হয় যুদ্ধের সময় আর মানবতাবিরোধী অপরাধ সব সময় হয়। তাই ’৭১ সালের যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ আর বর্তমানে সংঘটিত অপরাধগুলো একই ধরনের। সরকারের সাহস থাকলে ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করুক। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য কবরের হাড়-হাড্ডি আর সাক্ষী তালাশ করতে হলেও ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে সংঘটিত লগি-বৈঠার তাণ্ডবের বিচার করতে ভিডিও ফুটেজই যথেষ্ট। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করলেই বুঝব সরকার বিচার চায়।
তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদ সরকারের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির নেতাদের হত্যা করা হয়। সেই এরশাদ এখন আওয়ামী সরকারের অংশীদার। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো সময়ই গণতন্ত্র ও ইসলামকে বরদাশত করে না। তারা ক্ষমতায় এলেই গণতন্ত্র বিপন্ন, ফতোয়া নিষিদ্ধ, কোরআনবিরোধী নারীনীতি, নাস্তিক্য শিক্ষানীতি হয়। জেহাদি বইয়ের নামে মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বর্তমান স্বৈরাশাসকের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আন্দোলন করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক তাসনীম আলম বলেন, ’৮২ সালে রাবিতে শিবির নেতাদের যেভাবে হত্যা করা হয়, এরকম বর্বর ঘটনা কোনো মানুষ ঘটাতে পারে না। সেই বর্বরতার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও শিবিরের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। কিন্ত এসব জুলুম মোকাবিলা করেই সংগঠনটি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ড. রেজাউল করিম বলেন, শিবিরের ওপর জুলুমকারীদের অবশ্যই একদিন বিচার হবে। কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে লাখ লাখ শিবির কর্মী জীবন দিতে প্রস্তুত আছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফখরুদ্দিন মানিক বলেন, ’৮২ সালে রাবিতে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যেভাবে শিবিরের অগ্রযাত্রা ঠেকানো যায়নি আগামীতেও ঠেকানো যাবে না। সব বাধা অতিক্রম করে শিবির তার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

শেয়ারবাজারে সূচক পতনের রেকর্ড

জাহেদ চৌধুরী ও কাওসার আলম

শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সূচক পতনের ধস ও মহাধসের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হয়েছে গতকাল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসসি) সাধারণ সূচক গতকাল নেমে এসেছে ৫ হাজার ৪শ’ ৬৩ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সূচক সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৫শ’ ৭৯ দশমিক ৫০ পয়েন্টে নেমে এসেছিল। তারও আগে গত ২০ জানুয়ারি যখন সূচক ৬ হাজার ৩শ’ ২৬ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে নেমে আসে তখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আন্দোলনের মুখে অর্থমন্ত্রী বাজার ধসের কথা স্বীকার করে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রেডিং বন্ধ রেখে বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সরকারি সব পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসসি) বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭১ কোটি টাকা, সেখানে গতকাল পর্যন্ত মূলধন ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৪ কোটি কমে গেছে। গতকাল ডিএসসি’র মূলধন দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। ৫ ডিসেম্বরে একদিনে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ২৪৯ কোটি টাকার শেয়ার। সেখানে গতকাল লেনদেন হয়েছে মাত্র ৫০১ কোটি টাকার শেয়ার। দেখা যাচ্ছে ৫ ডিসেম্বরের তুলনায় লেনদেন হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ।
চরম আস্থাহীনতা ও তারল্য সঙ্কটের কারণে শেয়ারবাজারে এই ধস অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। গত ৫ ডিসেম্বর যেদিন সূচক ৮ হাজার ৯১৮ দশমিক ৫১ পয়েন্টে পৌঁছেছিল সেদিনের তুলনায় গতকাল পর্যন্ত সূচকের পতন হয়েছে ৩৯ শতাংশ। মাত্র ৫৫ ট্রেডিং বা কর্যদিবসে সূচকের এই পতন বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কিছু ব্যাংকসহ বেশ ক’টি কোম্পানির শেয়ারের দাম অর্ধেক কিংবা তারও বেশি নিচে নেমে এসেছে। অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে যারা ৬ মাস আগে অতিমূল্যায়িত শেয়ারবাজারে প্রবেশ করেছেন তারা ভালো কোম্পানির ও ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার কিনেও ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মূলধন হারিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে বেশি মূল্যায়িত শেয়ার কিনে গতকাল পর্যন্ত ৭০ শতাংশ পুঁজি হারানোর নজিরও আছে।
৫৫ শতাংশ পর্যন্ত স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর ইস্টার্ন ব্যাংক কিংবা ওয়ান ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামও ভয়াবহভাবে পড়ে গেছে। একইভাবে ৯৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা ও রেকর্ড ডেট পার হওয়ার পর ন্যাশন্যাল ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৫ ডিসেম্বরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে এসে দাঁড়িয়েছে। সিএমসি কামালের শেয়ারের দাম প্রায় ৮৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
তারল্য সঙ্কট এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে বাজারে বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ অবস্থায় তারল্য সঙ্কট এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে বাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে—অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এমন বক্তব্যের কোনো প্রতিফলন নেই বাজারে। বরং অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর বাজারে একের পর এক দরপতনের ঘটনা ঘটছে। অর্থমন্ত্রীর কোনো ঘোষণাতেই বিনিয়োগকারীরা আর আস্থা রাখতে পারছেন না। বরং অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল শেয়ারবাজার সূচক সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার পয়েন্টে নেমে এলে বাজার স্থিতিশীল হবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন—বিনিয়োগকারীরা সেটিই আশঙ্কা করছেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের আর্থিক ক্ষতি কমাতে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়লেও ক্রেতা না থাকাতে বড় ধরনের দরপতন হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ লোকসান সত্ত্বেও সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনেকেই। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো মার্জিন লোন না বাড়িয়ে বরং ফোর্স সেলের পথ বেছে নিয়েছে।
তবে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা বাজারের ওপর কোনোভাবেই আস্থা রাখতে পারছেন না। বাজারের সূচক আরও কমে যাবে—এ ধরনের আশঙ্কা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। অপরদিকে শেয়ারের দর কমতে কমতে ক্রয়ানুকূল অবস্থায় চলে এলেও বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকা না থাকায় তারা শেয়ার কিনতে পারছেন না। আবার শেয়ারের দর আরও কমে যাবে—এ কারণেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয় করছেন না।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী রবীন্দ্র চন্দ্র রায় পূবালী ব্যাংকের ব্রোকারেজ হাউসে ট্রেড করেন। গত জুলাইতে তিনি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে পেনশনের টাকাসহ বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে ব্যবসা শুরু করেন। মাস তিনেক অবস্থা ভালো থাকলেও এখন তার অর্ধেকেরও বেশি পুঁজি নেই। নিজের কেনা শেয়ারের তালিকা ও মূল্য চার্ট (পোর্টফোলিও) দেখিয়ে বললেন, তালিকা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবেন আমাদের অর্ধেকেরও বেশি পুঁজি কিভাবে চলে গেছে। শাহ আলম সোহাগ মর্ডান সিকিউরিটিজে শেয়ার কেনাবেনা করেন। শেয়ারের দরপতনের তালিকা দেখিয়ে বললেন, গত ৫ ডিসেম্বর সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থানের দিনে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক শেয়ারের দাম ছিল ৮১৯ টাকা। ২০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরও রেকর্ড ডেট শেষে গতকাল দাম কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩২৯ টাকা ৭৫ পয়সা। ৩৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা সত্ত্বেও ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৮১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে ৫৬ টাকা ৯০ পয়সায়, ২০ শতাংশ স্টক ও ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার ১ হাজার ৮ টাকা থেকে কমে ৫১০ টাকায় গতকাল বিক্রি হয়েছে। ৩০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ২ হাজার ৫শ’ ৫ টাকা দামের শেয়ার গতকাল বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১শ’ ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা দামে। ৬৬৯ টাকা দামের সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার ২০ শতাংশ স্টক ও ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৬৪ টাকা ২৫ পয়সা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৬৭৫ টাকা দামের শেয়ার ২২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার পরও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৪২ টাকা ৫০ পয়সায়। প্রাইম ব্যাংকের ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা দামের শেয়ার ৩৫ শতাংশ স্টক ও ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ার পরও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা ৫০ পয়সায়।
পূবালী ব্যাংকে ট্রেড করেন গৃহিনী আয়েশা সিদ্দিকী। মৃত স্বামীর পেনশনের টাকা আর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ ছিল। গড়ে এই বিনিয়োগের বছরের আয় থেকে সংসার চলে যেত। প্রায় তিন বছর থেকে ভালই দিন কাটছিল তার। কিন্তু সাম্প্রতিক দরপতনে এখন লাভের টাকা তো গেছেই উপরন্তু মূলধন নিয়ে তিনি এখন শঙ্কায়।
২ বছর আগে মুজিবুর চৌধুরীর বিনিয়োগ ছিল ৩ লাখ টাকা। বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছিল। সব টাকাই মার্কেটে বিনিয়োগ করেছিলেন। তিনি বললেন, শেয়ারবাজারের এ ধস কল্পনা করা যায় না। ৫ ডিসেম্বরের তুলনায় গতকাল পর্যন্ত আল আরাফাহ ব্যাংক ৭১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৪০ টাকা ৭০ পয়সায়, উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১৮৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭ টাকায়।
ছাইফুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, বাজারে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সরকার শেয়ার কিনবে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু আদৌ সরকার শেয়ার কিনবে বলে মনে হচ্ছে না। এদিকে বাজারে দরপতনে আমাদের অবস্থা খুবই করুণ। আমাদের হাতে কোনো পুঁজি নেই। সূচক সাড়ে ৪ হাজারে নেমে যাবে বলে বাজারে গুজব রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজারে অব্যাহত দরপতন হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য নেই। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। আমরা পুঁজি হারিয়ে ফেলছি। আমাদের বলার মতো কোনো ভাষা নেই। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী তাদের সবর্স্ব হারিয়ে ফেলছেন কিন্তু এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।
এদিকে শেয়ার ক্রয়ে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে এরই মধ্যে তিন দফায় ৬০০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু এ টাকা শেয়ারবাজারের তারল্য সঙ্কট কাটাতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। অবশ্য শেয়ারবাজারের পতনরোধে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংককে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করছে না। শেয়ারবাজারের বর্তমান তারল্য সঙ্কট কাটাতে বড় ধরনের ফান্ড প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকরা জানান। তারা বলেন, ছোট ফান্ড দিয়ে বাজারের তারল্য সঙ্কট মেটানো যাবে না। বরং এ টাকার অপচয় ঘটবে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারমূল্য; ৫ ডিসেম্বরের সঙ্গে গতকালের তুলনামূলক চিত্র : ৫ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের ১০ টাকার শেয়ারের দাম ছিল ১৭৬ টাকা। মাঝখানে এটা প্রায় ২শ’ টাকায় উঠেছিল। ৯৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা এবং রেকর্ড ডেট শেষে গতকালের বাজারে এই শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ৬৬ টাকা ৩০ পয়সা। ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৫ ডিসেম্বর ছিল ১ হাজার ১শ’ ৯৬ টাকা। সম্প্রতি প্রতি ১০০ শেয়ারধারীকে ৫৫টি শেয়ার বোনাস অর্থাত্ ৫৫ ভাগ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরও গতকাল শেয়ারের দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪৬ টাকা ৫০ পয়সা। ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ারের দাম ছিল ১৩৮ টাকা। বাজারের সঙ্গে এর দামও ওঠানামা করে। সম্প্রতি ব্যাংকটি ৫৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। গতকাল এর দাম দাঁড়িয়েছে ৮৬ টাকা ৩০ পয়সা। আগামীকাল ব্যাংকটির ডিভিডেন্ড রেকর্ডের ডেট। প্রথম বিএসআরএস মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারের দাম ছিল ১৮৯০ টাকা। গতকাল এই শেয়ার বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২শ’ ৩৫ টাকায়। বেক্সিমকোর শেয়ার ছিল ৩২৭ টাকা, গতকাল দাঁড়ায় ২৪২ টাকা ৮০ পয়সায়। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দাম ছিল ১৮১০ টাকা। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬৪৮ টাকা ৫০ পয়সায়। গ্রামীণফোন (জিপি) শেয়ারপ্রতি নগদ সাড়ে ৮ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। জিপির শেয়ারের দাম ২৩৪ টাকা থেকে কমে ১৪৯ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। বেক্সটেক্সের শেয়ার ৮৪ টাকা থেকে ৫৩ টাকা ৪০ পয়সায়, আরএকে সিরামিকসের দাম ১৯৫ টাকা থেকে ৯২ টাকা ৭০ পয়সা, শাইনপুকুর সিরামিকস ১১৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৭২ টাকা ৬০ পয়সা, এএমসি (প্রাণ) ২ হাজার থেকে ১ হাজার ১শ’ ৫২ টাকা, তিতাস গ্যাসের শেয়ার ১ হাজার ৪০ থেকে কমে ৬৭৮ টাকা ৭৫ পয়সায় গতকাল বিক্রি হয়েছে।
সরকারদলীয় এমপি লোটাস কামালের মালিকানাধীন বস্ত্রখাতের প্রতিষ্ঠান সিএমসি কামালের শেয়ারের দাম ৫ ডিসেম্বর ছিল ২৯৭ টাকা ৮০ পয়সা। কমতে কমতে সেই শেয়ারের দাম গতকাল এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫ টাকা ৯০ পয়সায়। অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পিতভাবে অতিমূল্যায়ন করে কোম্পানিটি এরই মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৯১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মন্ত্রী ফারুক খানের পারিবারিক মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ায় ও খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল)। সামিট পাওয়ারের শেয়ারের দাম ১৪৯ টাকা থেকে কমে গতকাল ৯৭ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ডিরেক্ট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে অতি মূল্যায়িত হয়ে বাজারে আসা কেপিসিএলের দাম ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে নেমে ৭৮ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না : পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারের দিক থেকে একের পর এক পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া হলেও এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও বাজারে চাহিদা বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও শেয়ারবাজার থেকে অর্জিত মুনাফা পুনরায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্যোগ নিতে পারছে না। অন্যদিকে এক মাস পার হলেও মার্জিন ঋণের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ করতে পারেনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। একইভাবে ফোর্স সেল বন্ধে অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট ঘোষণা দিলেও লিখিত আদেশ না থাকায় কোনো কোনো মার্চেন্ট ব্যাংক আগের মতোই এ ধরনের প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ধারাবাহিক দরপতন সামাল দিতে বাজারে শেয়ারের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করতে বলা হয়। অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে পুঁজিবাজার থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিমাণ মুনাফা করেছে তার একাংশ পুনরায় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বলা হয়। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোও তাদের মুনাফার অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে নমনীয় নীতি অনুসরণ করতে বলা হয়। প্রজ্ঞাপনে মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রে এসইসির পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ঘোষণার কথা বলা হয়।
সরকারের এসব ঘোষণায় তাত্ক্ষণিকভাবে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু বাজারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে সক্ষম কোনো পদক্ষেপই বাস্তবায়ন না হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই বড় দরপতনের ধারায় ফিরে যায় পুঁজিবাজার।
রাষ্ট্রীয় পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ফের বিনিয়োগের নির্দেশ : শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গতকাল ফের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আইসিবি এবং সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে শেয়ারবাজারে যত বেশি সম্ভব বিনিয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশ পাওয়ার পর গতকাল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বমোট প্রায় ৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। এর আগে ১৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ার কেনার নির্দেশ দিয়েছিল অর্থমন্ত্রণালয়।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের বক্তব্য : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সঙ্কটের কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে কার্যকরভাবে বিনিয়োগ করতে পারছে না। বিভিন্ন বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক সরকারি ব্যাংক থেকে নামমাত্র সুদে রেপোর মাধ্যমে কলমানি নিয়ে শেয়ার মার্কেটে খাটিয়েছে বেশি লাভের আশায়। কিন্তু এভাবে ব্যাংকগুলোর সম্পদের চেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে ফেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমন্বয় নির্দেশ জারির পরই তারল্য সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। প্রায় একই সময়ে সরকারি ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে টাকা সরবরাহে কড়াকড়ি আরোপ করে, যার প্রভাব পড়ে শেয়ার মার্কেটে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসএলআর ও সিআরআর বৃদ্ধি করায় অনেক ব্যাংকই তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সিআরআর ও এসএলআর আগের হারে নিয়ে যাওয়া দরকার। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাত্ক্ষণিকভাবে বিনিয়োগের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে বড় আকারের বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। চলতি বছর চার ব্যাংক মিলে পুঁজিবাজারে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। তবে মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা এবং তারল্য প্রবাহের ওপর এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নির্ভর করছে। জানা গেছে, শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সবগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যাংকই নিজেদের মতো করে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারবে ২ হাজার কোটি এবং রূপালী ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলো মুনাফার অংশ বিনিয়োগ করতে পারছে না : ২০১০ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে মুনাফার এই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মুনাফার টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ঘোষণা কার্যকর করতে পারছে না বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত মুনাফার অর্থ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও ওই টাকা পুঁজিবাজারে পুনঃবিনিয়োগের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী আমানতের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ নেই। ফলে পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত মুনাফা কোন প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ করা হবে—সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে নমনীয় নীতি অনুসরণ করতে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
ফোর্স সেলে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা : মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস থেকে মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনে বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন প্রায় ১২ লাখ বিনিয়োগকারী। ধারাবাহিক পতনের কারণে অধিকাংশ শেয়ারের মূল্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এ মুহূর্তে শেয়ার বিক্রি করলে বিনিয়োগকারীদের নিজস্ব মূলধনের প্রায় পুরোটা মার্জিন ঋণ পরিশোধ করতেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু শেয়ারের দর ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান বাধ্যতামূলক বিক্রির (ফোর্স সেল) মাধ্যমে ঋণ আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এরই মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অনেক গ্রাহকের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
তবে মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা ফোর্স সেলের বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তারা কোনো ফোর্স সেল করছেন না বলে জানান। একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা কোনো ধরনের ফোর্স সেল করছি না। এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউ করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের মূলধনের বড় অংশই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের কারণে তারা এখন বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তারপরও বাজারের স্বার্থে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করছে। তিনি আরও জানান, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের মূলধনের মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নিজস্ব পোর্ট ফলিওতে বিনিয়োগ করে থাকে। বাকি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে থাকে। ফলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ানোর খুব একটা সুযোগ নেই। বাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়াতে হলে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাংকগুলো যদি বিনিয়োগে এগিয়ে আসে, তাহলে বাজারের তারল্য সঙ্কট কাটবে। তিনি আরও বলেন, বাজারে তারল্য সঙ্কটের চেয়ে বড় হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্কট। প্রতিদিনই শেয়ারের দর কমতে থাকলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট না হওয়ার কোনো কারণও থাকে না। সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আস্থা সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত : বাজারে দরপতনের বিষয়ে এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ভালো-মন্দ সব শেয়ারই ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে তারা অপরিপকস্ফতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাদের উচিত যেগুলো ভালো শেয়ার, মৌলভিত্তির দিক থেকে ভালো—সেসব শেয়ার ধরে রাখা। বাজারে এখন অনেক কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ানুকূল অবস্থায় রয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বাজারে যেভাবে দরপতন হচ্ছে, এটি অব্যাহত থাকলে অনেক বিনিয়োগকারী বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে বাজার থেকে শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে যাবেন। আর যদি এ অবস্থা থেকে বাজারকে উত্তরণে পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা না হয়, তাহলে সরকারকে বড় ধরনের ফান্ড নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সামান্য কয়েকশ’ কোটি টাকা দিয়ে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বরং যে টাকা দেয়া হবে—তা কোনো কাজে লাগবে না। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল জোগান দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এ ফান্ড দিয়ে মৌলভিত্তিসম্পন্ন এবং ১৫-এর নিচে ‘মূল্য—আয় অনুপাতের’ (পিই রেশিও) কোম্পানির শেয়ার কিনলে বাজারে চাহিদা তৈরি হবে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে। পরে এ ফান্ডটিকে মিউচুয়াল ফান্ডে রূপান্তরিত করলে সরকারও লাভবান হবে এবং বাজারের স্থিতিশীলতাও ফিরে আসবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ফখর উদ্দিন আলী আহমদ বলেন, বাজার এখন খুবই দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা খুব সামান্য পরিমাণে শেয়ার কিনছে। বাজারে বিক্রেতা বেশি কিন্তু ক্রেতা কম। বিক্রেতা বেশি থাকার কারণে শেয়ারের দর কমছে। তিনি বাজারে তীব্র তারল্য সঙ্কট রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, তারল্য সঙ্কটের কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে। তারল্য সঙ্কট কাটাতে পারলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা স্বাভাবিকভাবেই ফিরে আসবে

১/১১’র সময় ডিজিএফআইর নির্যাতনের তদন্ত চাই : জলিল

স্টাফ রিপোর্টার

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের এবারের মন্ত্রিসভায় হ্যাভিওয়েট রাজনীতিক নেই মন্তব্য করে দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবদুল জলিল বলেছেন, বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যকেই জনগণ ভালোভাবে চেনে না। জনগণের সঙ্গে তাদের তেমন কোনো সংশ্রব নেই। মন্ত্রিসভায় রদবদল হওয়া দরকার বলেও সাবেক এই মন্ত্রী মনে করেন।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য প্রেসে আবদুল জলিল দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে সঙ্কট দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দখল করে নিয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাবে তারা সংসদকে রাজনীতি বিবর্জিত করে তুলেছে। গ্যাস-বিদ্যুত্সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আবদুল জলিল বলেন, ব্যবসায়ীদের ধমক দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
জরুরি অবস্থার সরকার প্রসঙ্গে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ডিজিএফআই ক্ষমতার বাইরে থেকেও রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ীদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে এর জন্য সংসদীয় কমিটি গঠন করে তদন্ত হওয়া উচিত। ভবিষ্যত্ গণতন্ত্র এগিয়ে নেয়ার জন্য এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। এ নিয়ে আগে একবার কথা বলে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছি। আবার বলতে গেলে দল থেকে বের হতে হবে।
এর আগে আবদুল জলিল বিব্রতকর কোনো প্রশ্ন না করতে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, লন্ডনে আমার একটি বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করে দলের ভেতরে এবং বাইরে আমার রাজনৈতিক ইমেজ ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। সে কারণে অভিমান, ক্ষোভ বা দুঃখ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলি না। তবে আমি স্পষ্টবাদী। মনের ভেতরে যখন যা আসে তা বলে দেই।
রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব আসছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, কী করে নেতৃত্ব তৈরি হবে। ২০ বছর ধরে ডাকসুর নির্বাচন নেই। আগে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। এতে করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব উঠে আসত। আজকে নেতা কারা হচ্ছে? এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অসত্ উপায়ে অর্জিত টাকার মালিকরা সাবেক ‘সংসদ সদস্য’ লেখার জন্য রাজনীতিতে আসছেন। তারা সমাজে রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য নির্বাচনে বিপুল অর্থ খরচ করে জয়লাভ করেন। পরে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এ কারণে সর্বত্রই রাজনীতিতে দুরবস্থা চলছে, নেতৃত্বে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রাজনীতিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের কিছু ব্যর্থতার কারণে ‘লিডারশিপ’ তৈরি হচ্ছে না। এ দীনতা কাটিয়ে উঠতে সমাজের সর্বস্তরে নাড়া দেয়া দরকার। সংসদ এবং সংসদের বাইরে থেকে এ আওয়াজ তুলতে হবে।
আবদুল জলিল আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আজও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। সরকার দুই বছরে অনেকটা পথ এগিয়েছে। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে পারেনি।
সংসদে প্রাণ নেই দাবি করে তিনি বলেন, বিরোধী দল সংসদে না গেলেও সংসদ প্রাণবন্ত হতে পারে। সংসদে প্রাণ সঞ্চার করতে হলে সংসদ সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে হবে। তাদের কথা বলার অধিকার দিতে হবে। আমরা আশা করি, বিরোধী দল সংসদে যাবে। তারা সংসদে গেলে মানুষের অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
১৪ দল তথা মহাজোটের সমন্বয়হীনতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে জোটের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল জলিল বলেন, যথাযথ উদ্যোগের অভাবে ১৪ দলে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মহাজোটের নির্বাচনী মহাবিজয়ের পেছনে তাদের অবদান অনেক বেশি। ১৪ দল হঠাত্ করে হয়নি। একটি আস্থা-বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এ আদর্শিক জোট গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আমরা যখন মহাজোট করি, তখন ছোট-বড় বলে কোনো রাজনৈতিক দলকে গণ্য করিনি। আমরা মনে করেছিলাম গণতন্ত্রের জন্য সবার ভূমিকা সমান। আজকে ১৪ দলে শরিকদের মূল্যায়নের অভাব রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সরকারে মহাজোটের অংশীদারিত্ব আছে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। শরিক দলের অনেক নেতাই বলছেন, তাদের মূল্যায়ন করা হয় না, খোঁজ-খবরও নেয়া হয় না। তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও দুঃখবোধ রয়েছে। এটা ঘুচাতে হবে। ১৪ দলকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে, সম্মান দিতে হবে। তবেই আবার এই আদর্শিক জোট উজ্জীবিত হবে।
দুই বছরে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নোত্তরে আবদুল জলিল বলেন, আওয়ামী লীগ অবশ্যই নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে দলীয় কর্মকাণ্ড অনেক কম স্বীকার করে তিনি বলেন, দল এবং সরকার একসঙ্গে তত্পর হলে, সমন্বয় করা হলে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।
সরকারের ব্যর্থতা-সফলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার দুই বছরে ব্যর্থ হয়েছে তা বলব না। তবে পুরোপুরি সফলতার অভাব রয়েছে। কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সচল পদচারণা রয়েছে। বিদ্যুত্-গ্যাসের সমস্যা এখনও সমাধান করতে পারেনি। তবে এ সঙ্কট কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে সরকার। চেষ্টা সত্ত্বেও সামাজিক-রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার কারণে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়নি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তরে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আমি কোনো সমালোচনা করব না। তবে তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। মন্ত্রণালয় এককভাবে কাজ করছে। এসব বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করা উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। একত্রিতভাবে আলোচনা করলে এসব ক্ষেত্রে সুফল আসত। বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে আবদুল জলিল বলেন, এ মন্ত্রণালয় যিনি পরিচালনা করছেন, তার দলগত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রচেষ্টা নেই।
বাণিজ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আবদুল জলিল নিয়মিতই ব্যবসায়ীদের পরামর্শ নিতেন উল্লেখ করে বলেন, শুধু এফবিসিআইর সঙ্গে নয়, ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীর সঙ্গেও আলোচনায় বসতে হবে। আমি ও তোফায়েল আহমেদ যখন বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম, তখন ছোট ছোট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ চাইতাম। সাংবাদিকদেরও পরামর্শ নিতাম। এখন তা না করে ধমক দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, একজনের সিদ্ধান্ত সবসময় সঠিক হয় না। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সবার পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান মহাজোট সরকারের মধ্যে গুণগত পার্থক্য কী—সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে আবদুল জলিল বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর যখন একটা সরকার গঠন করা হয়, তখন দলীয়প্রধান মন্ত্রিসভা নির্বাচন করেন। কোথাও কোথাও দলের পরামর্শ নেয়া হয়। আমাদের দেশে দলের পরামর্শ নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয় না। তিনি বলেন, আমাদের দলে অনেক অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ রয়েছেন। এটা ভেবে এবার প্রধানমন্ত্রী দলের নতুন মুখ ও প্রজন্মকে মন্ত্রিসভায় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন। কারণ আমরা তো আর চিরদিন থাকব না।
মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন প্রয়োজন মনে করেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে একটা নড়াচড়া হওয়া দরকার।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে আবদুল জলিল বলেন, এখন কাগজ খুললে ঢাকায় ৩/৪টা খুনের খবর দেখতে পাই। অন্য সময়ে যে এটা হয়নি তা নয়। আগেও এর থেকে বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে, অষ্টম শ্রেণীর কনস্টেবল নিয়োগ দিলে চলবে না। দেশে অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের এ পদে নিতে হবে।
ডিআরইউর সভপতি মোস্তাক হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন