Sunday 27 March 2011

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতি : বাকশাল আমলের মতো বিচার বিভাগ ফের পরাধীন করা হচ্ছে : দেশে কার্যত কোনো সংবিধান নেই












স্টাফ রিপোর্টার

বাকশাল আমলের মতো বিচার বিভাগকে পুনরায় সরকারের আজ্ঞাবহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সরকার বিচার বিভাগকে তার অধীন করে নিতে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করছে। বিচার বিভাগ নিয়ে এ খেলা বন্ধ করা নাহলে আইনজীবীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে আজ সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সংবিধান জগাখিচুড়ির মধ্যে রয়েছে। পুনর্মুদ্রণে আদালতের নির্দেশও কার্যকর করা হয়নি। গতকাল দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, সহ-সম্পাদক মোরশেদ আল মামুন লিটনসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বার প্রেসিডেন্ট বলেন, মূল সংবিধানে বিচার বিভাগ স্বাধীনই ছিল। কিন্তু বাকশাল কায়েমের সময় বিচার বিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবহ করা হয়। পরে পঞ্চম সংবিধানের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে আবার স্বাধীন করা হয়। বর্তমানে সংবিধান থেকে ১১৬ অনুচ্ছেদ উঠিয়ে দিয়ে বিচার বিভাগকে আবার নির্বাহী বিভাগের অধীন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ ও স্বাধীন করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে আবারও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আইনজীবীদের নিয়ে সরকারের এ হীন চেষ্টা রুখে দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সরকারের এ চেষ্টা সফল হলে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। বিচারকরা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করতে বাধ্য হবেন। নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি-পদোন্নতির বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলেও সাংবিধানিক অস্পষ্টতার কারণে সুপ্রিমকোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতেই তিনি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবি জানান।
প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশে বর্তমানে সাংবিধানিক শূন্যতা চলছে। কোন সংবিধান কার্যকর এটি কারও জানা নেই। একেক মন্ত্রী একেক ধরনের কথা বলছেন। কেউ বলছেন, ছাপানো সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে। আবার কেউ বলছেন, আগের সংবিধান অনুযায়ীই দেশ চলছে। আসলে কোন মন্ত্রীর কথা সঠিক সেটা সরকারও জানে না। সরকারের মন্ত্রীদের কথাবার্তায় দেশের মানুষ চরম হতাশ। সরকারকে দ্রুত বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনী রায়ের আলোকে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করার কথা বলা হচ্ছে। অথচ আদালতের রায় পাশ কাটিয়ে তারা নিজেদের মতো করেই সংবিধান সংশোধন করেছেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশকে সরকার আবারও একদলীয় বাকশালী অপশাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করে দেশে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। বাকশালের উত্তরসূরি বর্তমান সরকারও সংবিধানকে কেটেছিঁড়ে বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাকশালী শাসনের কবল থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদ মাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। একইসঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও তিনি ওই সংশোধনীর মাধ্যমে নিশ্চিত করেন। বর্তমানে আবারও সেই বাকশালের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বাকশাল কায়েমের স্বপ্ন পূরণ হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে চতুর্থ সংশোধনীর দিকে সরকারকে না হাঁটার জন্য হুশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেন, এদেশটি আপনাদের একার নয়। ১৬ কোটি মানুষের এদেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হবে না। আইনজীবীরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বাকশাল কায়েমের চেষ্টা প্রতিহত করবে। বাকশাল কী জিনিস, দেশের মানুষ তা হাড়ে হাড়ে বোঝে।
পঞ্চম সংশোধনী রায় রিভিউর জন্য সরকার পক্ষের আবেদন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, একদলীয় বাকশাল কায়েমের জন্য সরকার শেষ পদক্ষেপ নিয়েছে

No comments:

Post a Comment