Sunday 27 March 2011

আলোচনা সভায় কাদের সিদ্দিকী : জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক : জাতিকে বিভক্ত করতেই যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ












স্টাফ রিপোর্টার
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তিনি দেশ ও স্বাধীনতার জনক। সামরিক বাহিনী থেকে তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেদিন জিয়ার কণ্ঠই মানুষের মন ছুঁয়েছিল। তার ঘোষণার পরপরই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বর্তমান সরকারের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ সম্পর্কে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তার সততা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। এ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানের নয়। এখানকার আইনজীবীদের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিলে আজ এ অবস্থা হতো না; বরং এখন জাতিকে বিভক্ত করতেই এ বিচার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যেই সরকার আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এটা দেরি করবে, যাতে এ বিষয়টি ব্যবহার করে আবারও নির্বাচনে জেতা যায়। এটা হলে জাতি কখনও মেনে নেবে না। তিনি গতকাল ‘স্বাধীনতার ৪০ বছর ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক বলেন, ’৭১ সালে আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা ও বর্তমানের অনেক এমপি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ছিলেন। এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের জাহির করছেন। কেউ কেউ বলছেন, বর্তমানে মন্ত্রিসভায় এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। নিজেদের দলের লোকদের বাঁচানোর স্বার্থে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে কয়েকজনের বিচার করা হলে তা জাতি গ্রহণ করবে না। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধী বিচারের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মানের নয়। .এ ট্রাইব্যুনালের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। মনে হচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চাচ্ছে সরকার। এর মাধ্যমে তারা পরবর্তী নির্বাচনে সুবিধা নিতে চায়। এটা হলে জাতি মেনে নেবে না। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠন ‘মুক্তচিন্তা’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী আমিরুল মোমেনীন মানিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নন। গ্রেফতার হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি মুক্তিসংগ্রামের প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দিয়েছেন। গ্রেফতারের পর তার পরোক্ষ নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তিনি দেশ ও স্বাধীনতার জনক, এটা ঐতিহাসিক সত্য; কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষক নন। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। সামরিক বাহিনী থেকে তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। রেডিওতে তার ঘোষণাই প্রচারিত হয়েছিল। জিয়ার কণ্ঠ মানুষের মন ছুঁয়েছিল। তার কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেই মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জিয়া নিজেও ২৭শ’ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, বর্তমান সরকারের বিশেষ সমর্থন পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি হওয়া হেলাল মোর্শেদ ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় ডিজিএফআইর মহাপরিচালক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করায় তিনি অনেক লোকের ওপর নির্যাতন করেছিলেন। পিঠের চামড়া তুলে নিয়েছিলেন।
ড. ইউনূসের বিষয়ে সরকারের ভূমিকার নিন্দা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশে সম্মানী লোককে সম্মান দেয়া হচ্ছে না। নোবেল বিজয় করে ড. ইউনূস দেশের জন্য যে সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছেন তা আগামী হাজার বছরে সম্ভব নাও হতে পারে। সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাকে আজ অপমান করছে। একসময় আমি যে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তাও হয়তো কেউ অস্বীকার করতে পারে। কারণ আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই আমি কতজনকে হত্যা করেছি। তিনি দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের প্রশংসা করে বলেন, প্রথমে নবাগত হিসেবে আমি তাকে গ্রহণ করতে পারতাম না; কিন্তু তার সাহসী লেখা পড়তে পড়তে আমার ভালো লেগে যায়। জেলখাটার আগে তাকে যদি একশ’জনে চিনতো, এখন তাকে হাজার জনে চেনে। ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার পর সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ মর্যাদা পেলে তিনিই পাবেন। তার অবস্থানে থাকতে পারলে তিনি সাংবাদিকতাকে অনেক দূর নিয়ে যাবেন। দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক কোনো হিসাব নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীরপ্রতীক আরও বলেন, সরকারের ঘরে যেসব স্বাধীনতাবিরোধী রয়েছে, আগে তাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর ঘরে যেসব যুদ্ধাপরাধী রয়েছে, তাদের কথা বলা হচ্ছে না। সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তাদের নিজেদের ঘরের স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার করবে না। কিন্তু এর বিচার একদিন হবেই। ক্ষমতার পালাবদল হলে জনতার আদালতে তাদের বিচার হবে

No comments:

Post a Comment