Sunday 21 August 2011

গণমাধ্যমের জরিপ : প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের বক্তব্যে আস্থা নেই ৯০ ভাগ মানুষের

স্টাফ রিপোর্টার

দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়া বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতির প্রতি দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের আস্থা নেই। মহাসড়কগুলোর বেহালদশা, শেয়ারবাজারের অর্থ লুটপাট ও বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, দ্রব্যম্যূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর কম খাওয়ার পরামর্শ নিয়ে গণমাধ্যমগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এক জরিপ পরিচালনা করে। এতে শতকরা ৯০ ভাগ পাঠকই প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন।
গত ১৮ আগস্ট পাঠকদের উদ্দেশে বার্তা সংস্থা বিডি নিউজ ২৪ ডটকমের প্রশ্ন ছিল—‘প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগে সব সড়ক সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে আপনি কি মনে করেন, সেটা সম্ভব?’ এ প্রশ্নের জবাবে বিডি নিউজের শতকরা ৯০ ভাগ পাঠক ‘না’ বলেছেন। মাত্র দশ ভাগ পাঠক বলেছেন, সম্ভব। গত ১৯ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল, ‘ঈদের আগে সড়ক মেরামতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর হবে বলে মনে করেন কি?’ প্রথম আলোর এ প্রশ্নের জবাবে শতকরা ৭.৮৩ জন পাঠক ‘হ্যাঁ’ বলেছেন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯১.১৭ জন। গত ১৬ আগস্ট প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল, ‘অতিউত্সাহী আওয়ামী লীগার হবেন না—আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্য পুলিশ সদস্যরা আমলে নেবেন বলে মনে করেন কি?’ জবাবে শতকরা ১০.৭৮ জন ‘হ্যাঁ’ বলেছেন, ‘না’ বলেছেন ৮৬.৭২ জন ভোটার। গত ১০ আগস্ট প্রথম আলোর জরিপের প্রশ্ন ছিল, ‘শেয়ারবাজারের আসল বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় আন্দোলন করেন না—অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত?’ জবাবে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন শতকরা ১৩.২ জন এবং তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন শতকরা ৮৫. ৮৫ জন। গত ২ আগস্ট একই পত্রিকায় পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘আক্রান্ত না হলে গুলি ছুড়বে না বিএসএফ—ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ কথায় আপনার আস্থা আছে কি?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৭.৪৩ জন, ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯১.৬৮ জন।
গত ১৭ আগস্ট পাঠকদের উদ্দেশে দৈনিক যুগান্তরের প্রশ্ন ছিল, ‘যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, কোনো রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী নয়। মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে আপনি একমত কি না?’ জবাবে মন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন শতকরা ৯.২২ জন আর দ্বিমত পোষণ করেছেন ৯০.৪৫ জন। একই পত্রিকার ১৬ আগস্টের প্রশ্ন ছিল, ‘নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন—সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এবং হত্যা এক কথা নয়।’ মন্ত্রীর এ বক্তব্যে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ২৭.৪৫ জন এবং ‘না’ বলেছেন ৭০.৪৫ জন। একই পত্রিকার গত ১২ আগস্টের সংখ্যায় পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন—আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আপনি মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত কি না?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ৪.৭৯ জন এবং ‘না’ বলেছেন ৯২.৮২ জন। গত ১০ আগস্টের যুগান্তরের প্রশ্ন ছিল ‘শেয়ারবাজারে বিক্ষোভকারীদের ফাটকাবাজ বলেছেন অর্থমন্ত্রী। আপনি কি তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ১৬.৬৬ জন এবং ‘না’ বলেছেন ৮৩.০৫ জন।
গত ১৮ আগস্টের প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল ‘রাস্তাঘাট সংস্কার না হলে গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে—আপনি কি সৈয়দ আবুল মকসুদের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত?’ এ প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৮৮.৬৮ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ১০.৫৩ জন। গত ১৫ আগস্টের একই পত্রিকার পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘ঈদের আগে বেহাল মহাসড়কের অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করেন কি?’ জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৩.১৯ জন এবং ‘না’ বলেছেন ৯৫.৮৬ জন। গত ৮ আগস্ট দৈনিক সমকালে পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘বাণিজ্যমন্ত্রীর কম খাওয়ার পরামর্শ সঠিক বলে মনে করেন কি?’ বাণিজ্যমন্ত্রীর এ পরামর্শ সঠিক বলে মনে করেন শতকরা ১২.৬৯ জন এবং মন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন শতকরা ৮৬.৫৪ জন।
দৈনিক ইত্তেফাকে গত ১৮ আগস্টের সংখ্যায় পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নই হচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তির একমাত্র পথ—অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত?’ শতকরা ১৮ জন ‘হ্যাঁ’ বলেছেন আর ‘না’ বলেছেন ৮১ জন। একই পত্রিকার গত ৭ আগস্ট সংখ্যায় প্রশ্ন ছিল, ‘সাধারণ মানুষকে কম খেতে বাণিজ্যমন্ত্রীর দেয়া পরামর্শ আপনি সমর্থন করেন কি?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ১৬ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ৮৩ জন। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১৮ আগস্ট সংখ্যায় প্রশ্ন ছিল, ‘ঈদের আগেই সব রাস্তা সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন কি?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৪.২২ জন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯৪.৮৯ জন। একই দিনের দৈনিক আমাদের সময়ে পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘মন্ত্রীদের চেহারা উজ্জ্বল হলেও রাস্তাঘাটের চেহারা বেহাল—আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এই মন্তব্য আপনি সমর্থন করেন?’ সুরঞ্জিত সেনের এ মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৯৫.৮৩ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ২.৬৯ জন। গত ১৬ আগস্টের বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৬.৯১ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯১.২ জন। একই পত্রিকার ১৫ আগস্ট সংখ্যায় প্রশ্ন ছিল, ‘মনমোহনের সফরে ঢাকা-দিল্লি যেসব চুক্তি হবে তার খসড়া প্রকাশে বিএনপির দাবি যৌক্তিক বলে মনে করেন কি?’ উত্তরে বিএনপির দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন শতকরা ৯৯.৪১ জন আর ‘না’ বলেছেন মাত্র ০.৪৩ জন। গত ১১ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল, ‘আগামী বছরের মধ্যে বিদ্যুত্ সমস্যা দূর হবে—জ্বালানি উপদেষ্টার এ কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন কি?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৩১.৩৯ জন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৬৮.৩৯ জন। গত ৯ আগস্ট দৈনিক মানবজমিনের প্রশ্ন ছিল, ‘বাজারে কম গিয়ে ও কম খেয়ে কি পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৬ জন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯৩.৬ জন। একই দিনের বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শেয়ারবাজারে বিক্ষোভকারীরা ফাটকাবাজ—আপনি কি একমত?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৫.৪৩ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯৩.৩৬ জন। গত ৭ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল, ‘বিএনপি বলেছে, আইনজীবীদের গ্রেফতার সরকারের ষড়যন্ত্রেরই অংশ। আপনি কি একমত?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৯৫.১৬ জন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৪.০৯ জন। দৈনিক কালের কণ্ঠের ৩ আগস্ট সংখ্যায় প্রশ্ন ছিল, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন জনগণের আশা পূরণ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর সঙ্গে আপনি কি একমত?’ এ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ২২.৭৯ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ৭৭.২১ জন।

Tuesday 16 August 2011

হাসিনা বিরোধী দলকে নির্বাচন বয়কটের প্ররোচনা দিচ্ছেন










জিয়াউদ্দিন সাইমুম
লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার চলতি সংখ্যায়ও বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন ও ভাষ্য ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে নির্বাচন বয়কটের প্ররোচনা দিচ্ছেন। ড. ইউনূসকে শেখ হাসিনা আক্রমণ চালিয়ে তার হাতে গড়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেতার পর থেকে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেছে বলেও পত্রিকাটি মন্তব্য করেছে। এ সময়ে বাংলাদেশে একটি পত্রিকা সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নির্যাতিত হয়েছেন।
‘পিতার নামে : বাংলাদেশের অতীত নিয়ে বদ্ধ-সংস্কারের মাধ্যমে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে’ শীর্ষক ইকোনমিস্টের মন্তব্য কলামে বেশক’টি ইস্যু আলোচিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুধু বিরোধী দলকে দমনই করতে চাইছেন না, বিরোধী দল যাতে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে, সেই লক্ষ্যে তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ কায়দায় বিরক্তিকর মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন।
কলামটিতে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি সরকারে দায়িত্ব পালনকারী একটি পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে ‘নির্যাতন’, ‘হাতকড়া লাগানো’, ‘চোখ বাঁধা’, ‘উলঙ্গ করা’ ও ‘অনাহারে রাখা’ হয়েছে। অন্যদিকে ‘দ্য পয়জনাস পলিটিক্স অব বাংলাদেশ : রিভারসন টু টাইপ’ শীর্ষক আরেকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ঠিক উল্টোপথে চলছে’।
‘পিতার নামে’ ইকোনমিস্ট-এর কলামটিতে বলা হয়, পাকিস্তান থেকে চল্লিশ বছর আগে বাংলাদেশ পৃথক হয়ে যায়। বাংলাদেশীদের জীবনযাত্রার মান এখন পাকিস্তানিদের চেয়ে কিছুটা উন্নত মনে হয়। দুই বছর আগে সেনাশাসকরাও ব্যারাকে ফিরে গেছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি শেখ হাসিনার পক্ষেই যাওয়ার কথা, সরকারি কর্মকর্তারা যাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনে জেতে; কিন্তু নির্বাচনে জেতার পর থেকে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কমেছে।
এতে বলা হয়, কয়েক বছর পরই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ নির্বাচন। শেখ হাসিনা এটা প্রত্যাশা করতেই পারেন, জনগণ তাকে প্রথমবারের মতো আবারও নির্বাচিত করবে। কিন্তু তার সাম্প্রতিক আচরণ পর্যালোচনা করে দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তিনি শুধু বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্নই করতে চাইছেন না, বিরোধী দল যাতে নির্বাচন বয়কট করে বসে, তার জন্য তিনি স্বভাবসিদ্ধ কায়দায় অস্বস্তিকর মন্তব্যও ছুড়ে দিচ্ছেন।
কলামটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার পারস্পরিক শত্রুতা কিংবদন্তিতুল্য। স্বীকার করতেই হয়, অসহিষ্ণু পন্থায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনি হামলা পূর্ণগতিতে চলছে। চলতি মাসের ৮ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যেমন এনেছে, একই দিনে তার নির্বাসিত বড় ছেলের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। আবার গত জুনে তার ছোট ছেলের অনুপস্থিতিতেই আদালত ছয় বছরের জেল দিয়েছে। অন্যদিকে গত বছরের নভেম্বরে খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। এসব পদক্ষেপ বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে আইনি বলে মনে হতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় আনলে এতে প্রতিহিংসার চিত্রই ফুটে উঠেছে।
কলামটিতে বলা হয়, ‘আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, শেখ হাসিনা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপরও আক্রমণ চালিয়েছেন। পরিণামে এই নোবেলজয়ীকে তারই গড়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরে যেতে হয়। তিনি সম্ভবত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে রাজনৈতিক দল গড়ার ঘোষণা দিয়ে বড় ভুলটি করেছিলেন। ঢাকায় গুজব রয়েছে, ড. ইউনূসের অন্য পাপ হচ্ছে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন — অথচ শেখ হাসিনা একমাত্র নিজেকেই এই পুরস্কারের যোগ্য মনে করেন।
কলামটির মতে, সংক্ষেপে এটাই বলতে হয়, ড. ইউনূস শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তর্জাতিক খ্যাতি ছাপিয়ে আলোকিত হয়ে উঠছিলেন। শেখ হাসিনা বাবার সম্মানে তাকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাবার প্রতিকৃতি ঝোলানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
কলামটিতে বলা হয়, বংশ ঘিরে এতকিছু চর্চার একটা ফল হচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতার সমান বিশ্বাস করার শামিল হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি একটি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শেখ হাসিনাও দুর্নীতি চাঁদাবাজি ও হত্যার ষড়যন্ত্রসহ ১৩টি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন। অথচ আদালত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পূর্ণগতিতে এগিয়ে চলেছে। বিরোধী দলের নেতারাও তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অবিচারের অভিযোগ এনেছেন। আবার বাংলাদেশের একটি পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও এই সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাকে গ্রেফতার করে ‘নির্যাতন’, ‘হাতকড়া পরানো’, চোখ বেঁধে নেয়া’, বিবস্ত্র করা’ ও ‘অনাহারে রাখা’ হয়েছে।
কলামটিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার লোকজন এসব অভিযোগকে অপবাদ হিসেবে উড়িয়ে দেন। মানবাধিকারকর্মীরা ঝুঁকি নিয়েও এসব বেআইনি তত্পরতার কথা তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি ভয়াবহ। ‘অধিকার’-এর মতো স্পষ্টবাদী মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, সরকার যেভাবে টাকা খরচের পন্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে, তাতে দেশ স্থবির হয়ে যেতে পারে। সরকার কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু ব্যক্তি এটাও দাবি করছেন, সরকার যেভাবে এগুতে চাইছে তাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পণ্ড হয়ে যেতে পারে। এটাকে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে বিরোধী দলের নেতাদের বিচার বলছেন।
এতে বলা হয়, সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হচ্ছে, গত ৩০ জুন কেয়ারটেকার সরকারের বিধান বাতিল করে সংবিধানে সংশোধনী আনা হয়। বিরোধী দলে থাকতে শেখ হাসিনা কেয়ারটেকার সরকারের পক্ষে বলেছেন। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি কারও পরামর্শ না শুনে এই ব্যবস্থাকে ছুড়ে ফেলেছেন। এখানেই শেষ নয়, সংবিধানের বিরুদ্ধে কিছু বলা হলেই নেমে আসে আইনের খড়্গ। খালেদা জিয়াকেও সম্প্রতি এই ইস্যুতে আদালত তিরস্কার করেছে।
কলামটির উপসংহারে বলা হয়, শেখ হাসিনা তার দেশকে ইন্দোনেশিয়া অথবা ভারতের মতো দেখতে চান না। তিনি তার দেশকে পিতার আমলের দিকে টেনে নিচ্ছেন।
এদিকে ইকোনমিস্টের এই সংখ্যায় ‘দ্য পয়জনাস পলিটিক্স অব বাংলাদেশ : রিভারসন টু টাইপ’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়, ‘২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। ওই বিজয়ের পেছনে ছিল জাতির এক বুক আশা। প্রত্যাশা ছিল শেখ হাসিনা তার দলের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবেন, জাতীয় ঐক্য গড়বেন, আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির মধ্যকার ‘উইনার টেকস অল’ (বিজয়ীরাই সব পাবে) চক্রাকার রাজনীতির অবসান ঘটাবেন।’
সাময়িকীটি লিখেছে, ‘তবে আশঙ্কাও ছিল যে, তিনি ওই বিপুল ম্যান্ডেটকে দলীয় সুবিধার কাজে লাগাবেন।’ ইকোনমিস্ট লিখেছে, ‘নির্বাচনের আড়াই বছরের শেষে আশাবাদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুরমার হলো। মোটামুটি প্রতিফলন ঘটল আশঙ্কারই।’
ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণে ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা সংবিধান সংশোধন। গত বছর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজপাকসে যেমনটা করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনাও তেমনটাই করেছেন।’
পত্রিকাটি লিখেছে, ‘অন্যসব পরিবর্তনের মধ্যে এ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে, যে সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন তত্ত্বাবধান করত। বিএনপি নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাবে কি-না সেটা বলা মুশকিল।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শেখ মুজিবকে ঘিরে শেখ হাসিনা যে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করছেন, সে ব্যাপারে পাবলিক ডিবেট বা বিতর্কও সীমিত। এ সপ্তাহে ইস্যু করা ব্যাংক নোটসহ তার (শেখ মুজিবের) ছবি সর্বব্যাপী।
ইকোনমিস্টের এ বিষয়ে মন্তব্য, ‘কোনো এক দলের নিজেকে জাতির এত ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করা সুস্থ স্বাভাবিক লক্ষণ নয়।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে ওই সফরে স্বাক্ষর হতে পারে কয়েকটি চুক্তি। এ সফর সম্পর্কে ইকোনমিস্টের বক্তব্য, ‘তিনি (মনমোহন সিং) এবং বাংলাদেশের অন্য বিদেশি বন্ধুরা যদি তাদের বন্ধুত্বকে শুধু একটি দলের সঙ্গে নয়, দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব হিসেবে দেখেন তবেই ভালো।’
উল্লেখ্য, ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ : ইমবেসেবল ইউ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ ছেপেছে দি ইকোনমিস্ট। তবে বাংলাদেশের পাঠানো প্রতিবাদ ছাপা হয়েছে পত্রিকাটির চিঠিপত্র কলামে

Friday 5 August 2011

আওয়ামী লীগ ভারতের কাছ থেকে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে’ : ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন সত্য বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা








জাকির হোসেন
আওয়ামী লীগ ভারতের কাছ থেকে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে— যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্ট-এর চলতি সংখ্যায় প্রকাশিত এ প্রতিবেদনকে সত্য বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এছাড়াও পত্রিকাটি ভারতকে কোরিডোর দেয়া হলে বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, তার সঙ্গেও একমত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, বিগত সাধারণ নির্বাচনের আগে শোনা যাচ্ছিল আ’লীগ ভারতের কাছ থেকে প্রচুর টাকা পেয়েছে। এ নিয়ে ওই সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে নানা রকম আলোচনা এবং সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় বিষয়টি এখন সত্য বলে প্রমাণিত হলো। তারা বলেন, ইকোনমিস্ট একটি প্রভাবশালী পত্রিকা। বিশ্বজুড়ে ম্যাগাজিনটি সোজাসাপ্টা কথা বলার জন্য পরিচিত। পত্রিকাটি অনেক অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এর আগে পত্রিকাটি বাংলাদেশ বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু সেসব ব্যাপারে সরকারকে তেমন বিব্রতহতে দেখা যায়নি। কিন্তু এবার সরকার বিব্রত বোধ করেছে এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা আরও বলেন, ভারতকে কোরিডোর দেয়া হলে বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন বিচ্ছন্নতাবাদী গোষ্ঠীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। কারণ, ভারত তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছন্নতাবাদীদের দমন করতে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ওই সব অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ করবে। এতে করে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকা রক্ষিত হয়ে যাবে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে এটাকে রক্ষা করা যাবে না। ফলে ওই এলাকার বিচ্ছন্নতাবাদীরা বাংলাদেশের মধ্যে প্রবেশ করবে। যা বাংলাদেশের জাতীয় নিরপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। গতকাল দৈনিক আমার দেশকে দেয়া পৃথক প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন। দ্য ইকোনমিস্ট-এর ৩০ জুলাই সংখ্যার এক প্রতিবেদনে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে কিছু নেতিবাচক বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিচক্ষণতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করার সময় ‘ব্যাগভর্তি ভারতীয় টাকা’ এবং উপদেশ পেয়েছে। একই সঙ্গে পত্রিকাটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা পেলে তা সামরিক কাজে ব্যবহার করতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ ভারতের বিদ্রোহীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। সাময়িকীটির মতে, শেখ হাসিনা ক্রমশ স্বৈরাচারী হয়ে উঠছেন এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় চলেও আসতে পারেন। দ্য ইকোনমিস্টের-এ প্রতিবেদন বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, বিগত সাধারণ নির্বাচনের সময় এ কথাটি শোনা যাচ্ছিল এবং বিভিন্ন মহলে এনিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। ইকোনমিস্টের রিপোর্টের ভিত্তিতে বিষয়টি এখন সত্য বলে প্রমাণিত হলো। তিনি বলেন, এই সরকার ভরতের সঙ্গে যে সব চুক্তি করছে এগুলো যে জাতীয় স্বার্থবিরোধী তা আমরা বরাবরই বলে আসছি। বিশেষ করে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার বিষয়টি আমাদের স্বাধীনতা এবং সর্বভৌমত্বের ওপর একটি বড় আঘাত। তিনি আরও বলেন, যদি ভারতকে ট্রানজিট বা কোরিডোর দেয়া হয়, তাহলে ভারত এর মাধ্যমে তাদের অভ্যন্তরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে অস্ত্র পরিবহন করবে। ফলে বাংলাদেশ ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ ভারতের কাছ থেকে প্রচুর টাকা পেয়েছে, এটা নির্বাচনের পর শোনা যাচ্ছিল। দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত হওয়ার পর এটাকে এখন সত্যি বলেই মনে হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রখ্যাত রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তক, বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার বলেন, গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ভারতের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে কানাঘুষা ও আলোচনা শুনতাম। এখন তথ্য আকারে দ্য ইকোনমিস্ট এটা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটি নতুন উপাদান। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবান জানানো হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো প্রতিবাদে কোনো যুক্তি তুলে ধরা হয়নি এবং এর বিপরীতে সরকারের কাছে কোনো প্রমাণ আছে কিনা তাও জানানো হয়নি। তিনি আরও বলেন, ভারতকে করিডোর দেয়া হলে তারা তাদের অভ্যন্তরে স্বাধীনতাকামীদের দমনে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে অস্ত্র পরিবহন করবে, এটা আমরা বরাবরই বলে আসছি। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমাদের চিন্তার একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলল বলে আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, ইকোনমিস্ট এর আগে এ অঞ্চল বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এখন তাদের ভারতবিরোধী অবস্থানের একটি কারণ এটা হতে পরে যে, তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনায় নানাভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এখানে একটি গণবিক্ষোভের সৃষ্টি হতে পরে। এ কারণে তারা এখন এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমার কাছে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খোলা চোখে দেখছি যে, বিগত সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বর্তমান মহাজোট সরকার ভারতের সহায়ক একের পর এক চুক্তি করছে। এসব চুক্তি সম্পর্কে জনগণকে বিস্তারিত কিছু জানানো হচ্ছে না। এ প্রেক্ষিতে দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব বিষয়ে আমরা চিন্তিত। ভারতকে করিডোর দেয়া বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বরাবরই বলে আসছি এটা ট্রানজিট নয়— কোরিডোর। এটা দেয়া হলে ভারত শুধু এর মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রই পরিবহন করবে না, এটাকে তারা সামরিক কোরিডোর বা স্ট্র্যাটেজিক কোরিডোর হিসেবে ব্যবহার করবে। ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ দমনে তারা এই কোরিডোরকে ব্যবহার করবে। ফলে বাংলাদেশ এর মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহফুজ উল্লাহ বলেন, ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। ঘটনাপরম্পরা বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি সত্যি বলে প্রতিভাত হবে। তিনি বলেন, ইকোনমিস্ট অনেক অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিবেদন করে থাকে। এর আগেও পত্রিকাটি বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু তখন সরকারকে এতো বিব্রত বোধ করতে দেখা যায়নি। এ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার বিব্রতবোধ করেছে এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন না করে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়। এ ধরনের সম্পর্ক স্থায়ী এবং কার্যকরী হয় না। কারণ, কোনো দলের সরকারই চিরস্থায়ী নয়। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় সরকারের পরিবর্তন হয়। তিনি বলেন, ভারতকে আমরা ট্রানজিট নাকি কোরিডোর দিচ্ছি এ বিষয়টি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। মূলত ভারতকে আমরা কোরিডোর দিচ্ছি। এর মাধ্যমে ভারত তাদের উত্তর-পূর্ব এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে অস্ত্র সরবরাহ করবে। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকার সীমান্ত রক্ষিত হয়ে যাবে। কাঁটাতারের বেড়ার মাধ্যমে এটাকে আর রক্ষা করা যাবে না। এতে করে ভারতের ওই অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশের মধ্যে ঢুকে যাবে