Sunday 21 August 2011

গণমাধ্যমের জরিপ : প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের বক্তব্যে আস্থা নেই ৯০ ভাগ মানুষের

স্টাফ রিপোর্টার

দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়া বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতির প্রতি দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের আস্থা নেই। মহাসড়কগুলোর বেহালদশা, শেয়ারবাজারের অর্থ লুটপাট ও বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, দ্রব্যম্যূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর কম খাওয়ার পরামর্শ নিয়ে গণমাধ্যমগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এক জরিপ পরিচালনা করে। এতে শতকরা ৯০ ভাগ পাঠকই প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন।
গত ১৮ আগস্ট পাঠকদের উদ্দেশে বার্তা সংস্থা বিডি নিউজ ২৪ ডটকমের প্রশ্ন ছিল—‘প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগে সব সড়ক সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন। মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে আপনি কি মনে করেন, সেটা সম্ভব?’ এ প্রশ্নের জবাবে বিডি নিউজের শতকরা ৯০ ভাগ পাঠক ‘না’ বলেছেন। মাত্র দশ ভাগ পাঠক বলেছেন, সম্ভব। গত ১৯ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল, ‘ঈদের আগে সড়ক মেরামতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর হবে বলে মনে করেন কি?’ প্রথম আলোর এ প্রশ্নের জবাবে শতকরা ৭.৮৩ জন পাঠক ‘হ্যাঁ’ বলেছেন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯১.১৭ জন। গত ১৬ আগস্ট প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল, ‘অতিউত্সাহী আওয়ামী লীগার হবেন না—আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্য পুলিশ সদস্যরা আমলে নেবেন বলে মনে করেন কি?’ জবাবে শতকরা ১০.৭৮ জন ‘হ্যাঁ’ বলেছেন, ‘না’ বলেছেন ৮৬.৭২ জন ভোটার। গত ১০ আগস্ট প্রথম আলোর জরিপের প্রশ্ন ছিল, ‘শেয়ারবাজারের আসল বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় আন্দোলন করেন না—অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত?’ জবাবে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন শতকরা ১৩.২ জন এবং তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন শতকরা ৮৫. ৮৫ জন। গত ২ আগস্ট একই পত্রিকায় পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘আক্রান্ত না হলে গুলি ছুড়বে না বিএসএফ—ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ কথায় আপনার আস্থা আছে কি?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৭.৪৩ জন, ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯১.৬৮ জন।
গত ১৭ আগস্ট পাঠকদের উদ্দেশে দৈনিক যুগান্তরের প্রশ্ন ছিল, ‘যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, কোনো রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী নয়। মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে আপনি একমত কি না?’ জবাবে মন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন শতকরা ৯.২২ জন আর দ্বিমত পোষণ করেছেন ৯০.৪৫ জন। একই পত্রিকার ১৬ আগস্টের প্রশ্ন ছিল, ‘নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন—সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এবং হত্যা এক কথা নয়।’ মন্ত্রীর এ বক্তব্যে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ২৭.৪৫ জন এবং ‘না’ বলেছেন ৭০.৪৫ জন। একই পত্রিকার গত ১২ আগস্টের সংখ্যায় পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন—আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আপনি মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত কি না?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ৪.৭৯ জন এবং ‘না’ বলেছেন ৯২.৮২ জন। গত ১০ আগস্টের যুগান্তরের প্রশ্ন ছিল ‘শেয়ারবাজারে বিক্ষোভকারীদের ফাটকাবাজ বলেছেন অর্থমন্ত্রী। আপনি কি তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ১৬.৬৬ জন এবং ‘না’ বলেছেন ৮৩.০৫ জন।
গত ১৮ আগস্টের প্রথম আলোর প্রশ্ন ছিল ‘রাস্তাঘাট সংস্কার না হলে গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে—আপনি কি সৈয়দ আবুল মকসুদের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত?’ এ প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৮৮.৬৮ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ১০.৫৩ জন। গত ১৫ আগস্টের একই পত্রিকার পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘ঈদের আগে বেহাল মহাসড়কের অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করেন কি?’ জবাবে হ্যাঁ বলেছেন ৩.১৯ জন এবং ‘না’ বলেছেন ৯৫.৮৬ জন। গত ৮ আগস্ট দৈনিক সমকালে পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘বাণিজ্যমন্ত্রীর কম খাওয়ার পরামর্শ সঠিক বলে মনে করেন কি?’ বাণিজ্যমন্ত্রীর এ পরামর্শ সঠিক বলে মনে করেন শতকরা ১২.৬৯ জন এবং মন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন শতকরা ৮৬.৫৪ জন।
দৈনিক ইত্তেফাকে গত ১৮ আগস্টের সংখ্যায় পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নই হচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তির একমাত্র পথ—অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত?’ শতকরা ১৮ জন ‘হ্যাঁ’ বলেছেন আর ‘না’ বলেছেন ৮১ জন। একই পত্রিকার গত ৭ আগস্ট সংখ্যায় প্রশ্ন ছিল, ‘সাধারণ মানুষকে কম খেতে বাণিজ্যমন্ত্রীর দেয়া পরামর্শ আপনি সমর্থন করেন কি?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ১৬ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ৮৩ জন। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১৮ আগস্ট সংখ্যায় প্রশ্ন ছিল, ‘ঈদের আগেই সব রাস্তা সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন কি?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৪.২২ জন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯৪.৮৯ জন। একই দিনের দৈনিক আমাদের সময়ে পাঠকদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, ‘মন্ত্রীদের চেহারা উজ্জ্বল হলেও রাস্তাঘাটের চেহারা বেহাল—আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এই মন্তব্য আপনি সমর্থন করেন?’ সুরঞ্জিত সেনের এ মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৯৫.৮৩ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ২.৬৯ জন। গত ১৬ আগস্টের বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৬.৯১ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯১.২ জন। একই পত্রিকার ১৫ আগস্ট সংখ্যায় প্রশ্ন ছিল, ‘মনমোহনের সফরে ঢাকা-দিল্লি যেসব চুক্তি হবে তার খসড়া প্রকাশে বিএনপির দাবি যৌক্তিক বলে মনে করেন কি?’ উত্তরে বিএনপির দাবির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন শতকরা ৯৯.৪১ জন আর ‘না’ বলেছেন মাত্র ০.৪৩ জন। গত ১১ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল, ‘আগামী বছরের মধ্যে বিদ্যুত্ সমস্যা দূর হবে—জ্বালানি উপদেষ্টার এ কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন কি?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৩১.৩৯ জন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৬৮.৩৯ জন। গত ৯ আগস্ট দৈনিক মানবজমিনের প্রশ্ন ছিল, ‘বাজারে কম গিয়ে ও কম খেয়ে কি পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৬ জন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯৩.৬ জন। একই দিনের বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শেয়ারবাজারে বিক্ষোভকারীরা ফাটকাবাজ—আপনি কি একমত?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৫.৪৩ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ৯৩.৩৬ জন। গত ৭ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্ন ছিল, ‘বিএনপি বলেছে, আইনজীবীদের গ্রেফতার সরকারের ষড়যন্ত্রেরই অংশ। আপনি কি একমত?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন শতকরা ৯৫.১৬ জন আর ‘না’ বলেছেন শতকরা ৪.০৯ জন। দৈনিক কালের কণ্ঠের ৩ আগস্ট সংখ্যায় প্রশ্ন ছিল, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন জনগণের আশা পূরণ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর সঙ্গে আপনি কি একমত?’ এ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন ২২.৭৯ জন এবং ‘না’ বলেছেন শতকরা ৭৭.২১ জন।

No comments:

Post a Comment