Wednesday 23 February 2011

ঘরেবাইরে সঙ্কটে সরকার



জাহেদ চৌধুরী

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তাদের শাসনকালের মধ্যমেয়াদে এসে ঘরেবাইরে প্রচণ্ড সঙ্কটে রয়েছে। দ্রব্যমূল্য ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের দুঃশাসনকালকেও ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি এখন এমনই নাজুক যে সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারিভাবেই প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হবে। আর পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন, প্রয়োজনে দেশের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে খাদ্যশস্য আমদানি করে হলেও দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেছেন, দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে গেছে, যা হওয়ার কথা নয়। শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে একটি মহলের খেলাধুলা রয়েছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ’৯৬ সালের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। খুন ছিনতাই ডাকাতিসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা এখন সরকারিভাবেই স্বীকার করা হচ্ছে। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং সামনে অপেক্ষা করছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, সেচের জন্য গতবারের চেয়ে এবার শহরাঞ্চলে আসন্ন গ্রীষ্মে বেশি লোডশেডিং হবে। রাজধানীতে গ্যাস ও খাবার পানির সঙ্কটকে সরকারি দলের এমপিরাই গত ৫০ বছরের মধ্যে ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন।
মাত্র সোয়া দুই বছর আগে যে মহাজোট
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৮৫ ভাগ আসন পেয়েছিল, তারাই মাত্র ক’দিন আগে দেশব্যাপী পৌরসভা নির্বাচনে অর্ধেক পৌরসভায়ও জিততে পারেনি। দলীয় দুই এমপির মৃত্যুতে সংসদের দুটি আসনের উপনির্বাচনে চ্যালেঞ্জে হেরে গিয়ে একটি আসন খুইয়েছে আওয়ামী লীগ।
কিছুদিন আগে রাজধানী সংলগ্ন রূপগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত সেনা আবাসন প্রকল্পে জনগণের জমি ন্যায্য দাম না দিয়ে জোর করে কেনার চেষ্টার প্রতিবাদে গণবিক্ষোভের মুখে ৭টি হেলিকপ্টারে করে সেনাসদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়ে আসতে হয়েছে সরকারকে। অতিসম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প থেকে গণবিক্ষোভের মুখে সরকারকে পিছু হটতে হয়েছে। ক্রসফায়ার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, মিডিয়া
দলনের সরকারি নীতির বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে প্রতিবাদ এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তীব্রতর হয়েছে। সম্প্রতি লন্ডন সফরে গিয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ব্রিটেনের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ডস সভার মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির প্রধান লর্ড এরিক এল অ্যাভিবুরি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অব্বাস ফয়েজ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের প্রধান ব্রাড অ্যাডামস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাবলি তুলে ধরে এগুলো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মিথ্যাচার এক ভয়ানক রোগে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে একাধিকবার বলেছেন, তিনি নবম সংসদ নির্বাচনের আগে কোথাও বলেননি ক্ষমতায় গেলে চালের কেজি ১০ টাকা করবেন। কিন্তু এ নিয়ে মিডিয়ায় সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ করে পত্রিকার ক্লিপিংস ও টিভি ফুটেজের পরও এ বক্তব্য অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে, তখন নাকি মোটা চালের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি বলছে, ২০০৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মোটা চালের কেজি ২৭ টাকা ছিল। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরে দেখা গেছে, সেদিন দেশের কোনো কোনো এলাকায় মোটা চালের কেজি মাত্র ২৪ টাকা ছিল। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ইতোমধ্যেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার হয়েছে। তাদের কাছে প্রমাণ আছে বলে প্রকাশ্য জনসভায় তারা ঘোষণা দিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহবান জানিয়েছে। বিএনপি নেতারা আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ’৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে মোটা চালের কেজি ১০ টাকা ছিল। তাদের ওই শাসনকালে মোটা চাল ২৪ টাকা কেজিতেও দীর্ঘদিন বিকিয়েছে। ’৯৮ সালে ২৪ টাকা কেজিতে মোটা চাল বিক্রির সরকারি রেকর্ডও তাদের হাতে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির জন্য বিএনপিকে দায়ী করে মন্ত্রিসভায় কথা বলেন। ব্রিফিংয়েও একথা বলা হয়। একদিন পর অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আ হ ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য রাজনৈতিক। বাস্তবের সঙ্গে এর মিল নেই। তিনি শেয়ারবাজার নিয়ে নানা মন্তব্য করেন। গতকাল এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, লোটাস কামাল এসব নিয়ে বলার কে?
মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বুধবার দলের বনানী কার্যালয়ে দলীয় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানির সঙ্কট, শেয়ারবাজারে অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়—একথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে অবিলম্বে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। জোটের আরেক শরিক জাসদের হাসানুল হক ইনু গতকাল মন্তব্য করেছেন, আওয়ামী লীগ ফায়দা লোটায় ব্যস্ত। গণতন্ত্র এখনও হুমকির মুখে। এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি আওয়ামী লীগকে সতর্ক করে দেয়া চিঠিতে বলেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, বিদ্যুত্ সঙ্কট ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিসহ নানাবিধ সঙ্কটে জনমনে হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মহাজোটের শরিক ১৪ দলের বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, বক্তৃতাবাজি ছাড়া সরকারের কোনো সাফল্য নেই। নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে তারা ক্ষোভ ও হত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ সম্প্রতি সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বলেছেন, গত ২ বছরে দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। এ নিয়ে যোগাযোগমন্ত্রীও স্বীকার করে বলেছেন তার ফান্ড নেই। অর্থমন্ত্রীর কাছে ফান্ড চেয়ে তিনি ফান্ড পাননি। আওয়ামী লীগের সুহৃদ বলে পরিচিত সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সম্প্রতি মন্তব্য করা হয়েছে, ‘কুশাসন চালিয়ে দিনবদলের স্লোগান বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান দেশব্যাপী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের টেন্ডারবাজি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দখলসহ দেশের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘বাজিকরদের হাতে দেশ চলে গেছে।’
সম্প্রতি ব্রিটেন সফরকালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের তিনটি মানবাধিকার সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের সরকারি সংবাদ সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে যে খবর প্রচার করেছে, সেটা সত্য নয় বলে সংশ্লিষ্ট দু’জন মানবাধিকার নেতা বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের বিবৃতির বরাত দিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মানবাধিকার নেতারা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে যে খবর বাসসের বরাত দিয়ে প্রচার করা হয়েছে তা সত্য নয়, মানবাধিকার নেতারা এমন কোনো কথা বলেননি। বরং ওই বৈঠকে তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড তিনি বন্ধ করবেন। কিন্তু এখনও তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
কিছুদিন আগেও প্রধানমন্ত্রীকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের টেলিফোনের ভাষ্য নিয়ে সরকারি ব্রিফিংয়ে দেয়া বক্তব্য মার্কিন প্রশাসন থেকে নাকচ করে দেয়া হয়। সরকারি ব্রিফিংয়ের সূত্র ধরে বাংলাদেশের মিডিয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমসহ কয়েকটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, এগুলো নিয়ে হিলারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু পরে মার্কিন অ্যাসিসট্যান্ট ও ডেপুটি সেক্রেটারি দুজনের ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায়, হিলারি ওই টেলিফোনে মূলত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের আইনসম্মত নিষ্পত্তির কথা বলেছেন। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে হঠাত্ করেই সরকারের যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রথমে সরকার কিছু না বললেও মিডিয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ১০ দিনের মাথায় সরকার ভারতীয় দূতকে ডেকে নিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সরকারকে এ মুহূর্তে বেশ কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। গত বছর জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে পর ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ট্রানজিট, বন্দর সুবিধা ভারতকে প্রদান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের ভারতের হাতে তুলে দেয়াসহ নানা দাবি বর্তমান সরকার পূরণ করলেও বাংলাদেশের এক নম্বর দাবি অভিন্ন নদী, বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যাকাণ্ড বন্ধ, ভারতে বাংলাদেশী ৬১ পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এখনও পায়নি বাংলাদেশ।

সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল : পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় আহত ৮ শতাধিক, গ্রেফতার ৫শ’র বেশি


স্টাফ রিপোর্টার

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেফতারসহ নানা সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে গতকাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল স্বতঃস্ফূর্ত ও সর্বাত্মকভাবে পালিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি আহূত চতুর্থ হরতালে গতকাল সারাদেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনে হামলা, ভাংচুর ও কয়েকটিতে আগুন দেয়া হয়। নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের পাশে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
হরতালের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশে বাধা দেয় মারমুখী পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে হামলায় অংশ নেয় সাদা পোশাকধারী ক্যাডাররা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে আশ্রয় নেয়া নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে তারা। রাস্তায় পা রাখতেই বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে বেপরোয়া পুলিশ। বিনা উস্কানিতে হরতাল সমর্থকদের নির্যাতন ও গ্রেফতার করা হয়। সংসদ সদস্যদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান দিয়ে রঙিন গরম পানি ছিটানো হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল মান্নানের ধানমন্ডির বাসভবনে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হামলা চালায়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীর নামে দেয়া হয় মামলা। আহতদের দলীয় অফিসে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বিএনপি দাবি করেছে, পুলিশ সারাদেশে ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আহত হয়েছে ৮ শতাধিক।
স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালনকালে পুলিশি নির্যাতন এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দু’দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধসহ কয়েকটি দাবিতে এ হরতাল আহ্বান করে বিএনপি। এ হরতালকে সমর্থন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলো। তবে হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দেয় সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তারা রাজধানীর অনেক স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। সাদা পোশাকধারী পুলিশের ছদ্মাবরণে এ আক্রমণ চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ছিল বেপরোয়া। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতি ছিল।
ঢাকায় গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি, বাইরে থেকেও বাস ঢাকায় আসেনি। কমলাপুর রেলস্টেশনে স্বাভাবিক শিডিউলে ট্রেন আসা-যাওয়া করে। এয়ারপোর্টে বিমান চলাচলও স্বাভাবিক ছিল। রিকশা চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বিআরটিসির কয়েকটি বাস ছাড়া অন্য বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার চলাচল করতে দেখা যায়নি। রাজধানীর স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হয়নি। দোকানপাট বন্ধ ছিল।
হরতালকে কেন্দ্র করে গতকাল জেলা শহরগুলোয় মিছিলে বাধা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাংচুর ও ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের লাটিচার্জে দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন দেড়শ’। এর মধ্যে খুলনায় মহিলা কাউন্সিলরসহ ১২ জন, রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু ও গোলাম মোস্তফা নাদিমসহ প্রায় ৫০ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ জন, নরসিংদীতে ৩৩ জন, জয়পুরহাটে ১৫ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে বিএনপির মিছিলে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
অবরুদ্ধ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় : সকাল সোয়া ৬টার দিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রথম মিছিল বের করে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আটক করে দুই কর্মীকে। মিছিলে অংশ নেন— কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাঁতিদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ছাত্রদল নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতাসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
সকাল পৌনে ৮টায় বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। এতে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে কর্মীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বের করার চেষ্টা করে কর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের কয়েক দফায় ধ্বস্তাধস্তি হয়। মিছিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুস সালাম, হাবিব-উন-নবী সোহেল, সাইফুল ইসলাম নিরব, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম প্রমুখ অংশ নেন। তবে পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করে নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে আবারও মিছিল বের করার চেষ্টা করে নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশি বাধায় তারা পারেনি।
হঠাত্ হামলায় পুলিশ : সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল গেটে অবস্থান নিয়ে শতাধিক নেতাকর্মী স্লোগানে মুখরিত করে রাখে এলাকা। দুপুর পৌনে ১টায় তাদের ওপর হঠাত্ পুলিশি হামলা শুরু হয়। কার্যালয়ের মূল গেট দিয়ে পুলিশ ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভরত নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। এতে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকম মোজাম্মেল হক, আবু হেনা, সাগর, মোহাম্মদ হোসেন, হারুন মোল্লা, আল আমিন ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, যুবদল নেতা শরীফ, মিজান, মাহমুদ, কামাল, মনিরুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী, ইসমাইল হোসেন, বেলাল, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ আহত হন। আহতদের কয়েকজনকে দ্রুত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই হাসপাতাল : দুপুরে হঠাত্ পুলিশি হামলার পর পুরো কার্যালয় হাসপাতালে রূপ নেয়। কার্যালয়ের ব্রিফিং রুমের টেবিলগুলোকে বিছানা বানিয়ে অন্তত ৩০ আহত নেতাকর্মীকে চিকিত্সা দেয়া হয়। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর চিকিত্সকরা তাদের চিকিত্সা দেন। এর মধ্যে কারও মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে, কারও হাত-পা জখম হয়েছে। আহতদের চিত্কারে পুরো বিএনপি কার্যালয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
রাস্তায় শুয়ে পড়েন এমপিরা : কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় বসে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপি দলীয় কয়েকজন এমপি বিক্ষোভ করছিলেন। ১২টা ৫০ মিনিটে হঠাত্ জলকামান ধেয়ে আসে তাদের দিকে। এমপিরা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যান। পিষ্ট করলেও রাস্তা না ছাড়ার ঘোষণা দেন তারা। জলকামানের গাড়ি কোনো বাধা মানেনি। দ্রুতগতিতে ছুটে এসে লাল রঙের পানি ছোড়ে এমপিদের গায়ে। এতে বিরোধীদলীয় এমপি জয়নুল আবদিন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, নাজিমউদ্দিন আহমেদ, মোজাহার হোসেন প্রধান, হারুনুর রশীদ, রেহেনা আক্তার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, নিলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আক্তারের জামা কাপড় ভিজে রঙিন হয়ে যায়। এরপর জলকামানটি কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এলে এমপিরা প্রতিবাদে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এ সময় জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, এই যদি হয় সরকারের আচরণ তাহলে এদেশকে বিশ্ববাসী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে না। জলকামান দিয়ে এমপিদের নয়, গণতন্ত্রকেই রক্তাক্ত করা হয়েছে।
মহিলা এমপিদের মিছিল : সকাল সাড়ে ১১টায় বিএনপিদলীয় মহিলা এমপিরা হরতালের পক্ষে মিছিল বের করেন। মহিলা এমপি রেহেনা আক্তার রানু, শাম্মী আক্তার, নিলুফার চৌধুরী মনি, আসিফা আশরাফি পাপিয়া ও সাবেক এমপি সাইমুন বেগমের নেতৃত্বে মিছিলে মহিলা দলের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। তারা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। তবে মিছিলটি কিছুদূর অগ্রসর হতেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং বাবুল ও সাইফুল নামে দুজনকে আটক করে।
নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ : দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পরিস্থিতি ছিল শান্ত। আড়াইটার দিকে নয়াপল্টন মসজিদের কাছে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। মুহূর্তের মধ্যে আবারও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে কিছুক্ষণ পর আবারও পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
মিছিলে লাঠিচার্জ, আটক ৩ : সকাল সোয়া ৯টার দিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তার শান্তিনগর বাসা থেকে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলে অংশ নেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এম. ইলিয়াস আলী, কাজী আসাদ, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। মিছিলটি শান্তিনগর মোড়ের কাছাকাছি ইস্টার্ন পয়েন্টে গেলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে। আটক করা হয় ৩ জনকে। এরপর বিক্ষুব্ধ কর্মীরা এ সময় একটি গাড়ি ভাংচুর করে।
মোহাম্মদপুরে লাঠিচার্জ : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লালমাটিয়া থেকে যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ খান ডাবলুর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি টাউন হল রোডের দিকে যাওয়ার সময় র্যাব-পুলিশ বাধা দেয়।
আবদুল্লাহপুরে আটক ১২ : সকাল ১০টায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের নেতৃত্বে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় মিছিল বের হয়। মিছিলটি উত্তরা মহাসড়কে ওঠার আগেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। লাঠিচার্জে আহত হয় বেশ কয়েকজন। মিছিল থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন জাসাস যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজউল্লাহ ফয়েজ, যুবদল নেতা শফিউল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হযরত আলী, সুজন প্রমুখ।
গ্রেফতার যারা : কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও লাঠিচার্জের সময় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মো. ফরিদ, বিএনপি নেতা কামাল আহমেদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু হানিফ, হৃদয়, সানু বিশ্বাস, লিটন, আতিক মাস্টার, জামাল হোসেন, শাহিদুজ্জামান মাসুদ, শামীম, শফিকুল ইসলাম, আবু হেনা, মোস্তফা কামালসহ ৩৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
আহত যারা : বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিনভর বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও লাঠিচার্জে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা হলেন—বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, যুবদল নেতা আকম মোজাম্মেল হক, মহিলা দল ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, যুবদল নেতা মাহবুবুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন তুহিন, মনিরুল ইসলাম, মাহমুদ খান, হারুন মোল্লা, খোকন, হাফেজ সরকার, হারুন রশিদ, রেজ্জাক উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, কামাল, বেল্লাল, তুহিন, মিজানুর রহমান, একেএম গোলাম রব্বানী, জুয়েল, ফজলু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আমিনুল ইসলাম, শরীফ, আনিসুর রহমান বাদল, মো. জুয়েল, আমানউল্লাহ, কল্পন, সাইদুর রহমানসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য : ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেছেন, রোববার রাতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। যারা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে তারা ফৌজদারি আইনে অপরাধী। রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক তারা সন্ত্রাসী। হরতাল পরিস্থিতি পরিদর্শনকালে গতকাল সকাল ১১টায় মিরপুর-১০ নং চত্বরে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, পিকেটারদের প্রস্তুতি ব্যাপক থাকায় সব রকমের সতর্কতা সত্ত্বেও তারা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। অগ্নিসংযোগকারীদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি বলে দাবি করেন ডিএমপি কমিশনার।
পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ : মহাখালী ওয়্যারলেস গেটে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আশরাফুল আজিমের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় দুই ছাত্রসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। আহত হয়েছেন সাবেক এমপি কামরুন নাহার পুতুলসহ বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা। আটককৃতরা হচ্ছেন— যুবদল কর্মী ফরিদ, গাড়িচালক সুমন, মো. সেলিম, মো. খায়ের হোসেন, সঞ্জু, রিকশাচালক দীন ইসলাম, আক্তার। এদের মধ্যে সঞ্জু নিজেকে রিকশাচালক, দীন ইসলাম স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং আক্তার চাকরিজীবী বলে দাবি করেছেন।
হরতালের সমর্থনে সকাল থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতা ওসমান ফারুক, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান এবং জেবা রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ওয়্যারলেস গেটের কাছে রাস্তার পাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি নেতারা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে রাস্তার পাশে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন। বেলা পৌনে ১২টায় হঠাত্ গুলশান জোনের এসি আশরাফুল আজিম সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে উপস্থিত হয়ে বিএনপি নেতাদের সরে যেতে বলেন। বিএনপি নেতারা সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা অশালীন ভাষায় সিনিয়র নেতাদের গালাগাল করে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নেতাকর্মীরা সেখান থেকে সরে যাওয়ার আগেই দাঙ্গা পুলিশ নিয়ে মাস্তানি স্টাইলে নিজেই লাঠি দিয়ে হামলা চালান।
দূরপাল্লার কোনো বাস চলেনি : গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে গতকাল কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। হরতালের কারণে বাসটার্মিনালেও কোনো যাত্রীকে দেখা যায়নি। গাবতলী টার্মিনালের সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মইনুদ্দিন জানান, গাবতলী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গে প্রতিদিন দুই সহস্রাধিক গাড়ি চলে। গতকাল একটি গাড়িও ছাড়েনি। তিনি বলেন, একটি গাড়ির মূল্য এক থেকে দেড় কোটি টাকা। গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে সরকার তো ক্ষপূিরণ দেবে না। মালিকেরই বহন করতে হবে। এজন্য কোনো মালিকই চায় না তার বড় ধরনের ক্ষতি হোক। একে ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজার বলেন, মহাখালী টার্মিনালের এসআই এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারম্যান চান মিয়া বলেন, এ টার্মিনাল থেকেও কোনো গাড়ি ছাড়েনি। তিনি বলেন, মহাখালী থেকে রংপুর, সৈয়দপুর, নওগাঁ, বগুড়া, ধনবাড়ী, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, রাজশাহীতে ৫ শতাধিক গাড়ি চলাচল করলেও গতকাল কোনো গাড়ি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি এবং ঢাকায় কোনো গাড়ি আসেনি।
মিরপুর : বেলা সোয়া ১১টার দিকে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হানিফের নেতৃত্বে হরতালবিরোধী মিছিল বের হয়। ৬০/৭০ জনের এ মিছিল থেকে হরতালবিরোধী স্লোগান দেয়া হয়। পুলিশ পাহারায় মিছিলটি টেকনিক্যাল মোড় থেকে আবার একনম্বরে গিয়ে পথসভা করে। মিরপুর ১০ নম্বরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে হরতালবিরোধী মিছিল করে। বেলা ১২টার দিকে কয়েকটি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে মিরপুর একনম্বর থেকে ১০ নম্বর গোল চত্বর এবং পল্লবী এলাকায় কয়েকটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার মহড়া দেয়। এসময় পুলিশের গাড়িও তাদের পেছনে পেছনে ছুটে যেতে দেখা গেছে। মিরপুরে কিছু যানবাহন চললেও তাতে যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। কয়েকটি বাস শ্রমিক লীগের লোকজন নিয়ে এলাকায় ঘোরাফেরা করেছে।
পুরান ঢাকা : গতকাল সকাল থেকে হরতাল চলাকালে পুরান ঢাকায় দুই একটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন হয়েছে। লালবাগ, আজিমপুর, চকবাজার, মিটফোর্ড রোড, বাবু বাজার, নয়াবাজার, বংশাল, সদরঘাট, কাপ্তানবাজার এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান পাটগুলো বন্ধ ছিল। তবে কয়েকটি জায়গায় হকাররা রাস্তার ওপর দোকান নিয়ে বসেছিল। রাস্তায় দুই একটি সিএনজি স্কুটার ছাড়া ইঞ্জিনচালিত গাড়ি দেখা যায়নি। তবে রিকশা চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সকাল থেকে চকবাজার টু গুলিস্তানের লেগুনা টেম্পো চলাচল করলেও দুপুরের দিকে বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একটি মিছিল বের হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে। এতে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমানসহ কয়েকজন। ছত্রভঙ্গের সময় পুলিশ ফারুক ও আসিফ নামে দুই যুবককে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
সকাল ১০টার দিকে পুরান ঢাকা জজকোর্ট এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানায় স্থানীয় পান দোকানি জামাল উদ্দিন। তবে পুলিশ ককটেল বিস্ফোরণের কথা অস্বীকার করেছে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে লালবাগ সাতরাওজা এলাকার মাজারের সামনে থেকে যুবদলের সভাপতি কাসাদ্দেক হোসেন বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিমের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। তখন পুলিশ বাধা দিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
সকাল ১১টার দিকে সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির উদ্যোগে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন সূত্রাপুর থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদের সদস্য সচিব মো. তারেক জামাল। মিছিলটি দয়াগঞ্জ, স্বামীবাগ হয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে এসে শেষ হয়।
দুপুরের দিকে বংশাল সুরিটোলা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বংশাল থানার সুরিটোলা মডেল হাইস্কুলের সামনের ওভারব্রিজের নিচে দুপুর ২টার দিকে সদরঘাটগামী তানজিল পরিবহনের বাসটিতে আগুন দেয়া হয়। ওই বাসের আগুন নেভাতে প্রায় ১৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে। তবে তার আগেই বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। বংশাল থানার ওসি জমিরউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আগুনে কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশ ধারণা করছে, হরতাল সমর্থকরাই বাসটিতে আগুন দিয়েছে।
অপরদিকে যাত্রাবাড়ী এলাকা সকাল থেকেই ছিল থমথমে। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ছিল সক্রিয়। তারা চেষ্টা করেও দূরপাল্লা গাড়ি চালাতে পারেনি। তবে স্থানীয়ভাবে কয়েকটি গাড়ি চলতে দেখা গেছে। সকাল ৯টার দিকে ধোলাইপাড় এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের নেতৃত্বে হরতাল সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিল প্রধান সড়কের সামনে আসা মাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। তবে কোনো হতাহত হয়নি। সকাল সোয়া ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সরণিতে সাবেক কমিশনার নবী উল্লাহ নবীর নেতৃত্বে দুই থেকে আড়াশ’ কর্মী নিয়ে একটি মিছিল বের হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ঢাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরিবহন চলাচল করেনি। বহিরাগত যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেনি। পুরো ক্যাম্পাস ছিল প্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী শূন্য।
এদিকে হরতালের সমর্থনে ক্যাম্পাসে বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন প্রবেশ করতে পারেনি। তবে ক্যাম্পাসে ও এর আশপাশ এলাকায় হরতালবিরোধী বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ।
ক্যাম্পাসে হরতালের পক্ষে যে কোনো কর্মসূচি ঠেকাতে ভোর ৬টা থেকে সব প্রবেশপথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র অবস্থান নেয়। এছাড়া পুলিশও যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে।
হরতালের বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌথভাবে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সকাল ও দুপুরে দফায় দফায় তারা ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। চারুকলা অনুষদের সামনে সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতারা হরতালের কড়া সমালোচনা করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মীরা হরতালের সমর্থনে পুরনো ঢাকায় মিছিল বের করে। দুপুর ২টার দিকে হরতাল সমর্থকরা রায়সাহেব বাজার এলাকায় মিরপুরগামী তানজিল পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো জ ১১-৩১৯৫) আগুন লাগিয়ে দেয়। তবে সদরঘাটে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
সকাল ১০টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রদল কর্মীরা জজকোর্ট, রায়সাহেব বাজার এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করে। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৫ জন আহত হয়। পুলিশ গ্রেফতার করে মাসুদ ও মৃণাল নামের দুই ছাত্রদল কর্মীকে।
চট্টগ্রামে দফায় দফায় লাঠিচার্জ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সকাল থেকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা নাসিমন ভবনের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এসে জমায়েত হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির মিছিলকে ঘিরে পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখে।
সকাল ৭টায় বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একটি মিছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই সার্জেন্ট সিদ্দিকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মিছিলে বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করে।
খুলনায় গ্রেফতার ৩ : খুলনা অফিস জানায়, হরতাল চলাকালে রূপসা ট্রাফিক মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করলে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মহিলা কাউন্সিলরসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। মিছিল থেকে ৩ কর্মীকে গ্রেফতার করে। দৌলতপুর ও খালিশপুরে হরতালের সমর্থনে বিএনপি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। দুপুরে হরতালের প্রতিবাদে যুবলীগ নগরীতে মিছিল বের করে। এছাড়া খুলনায় হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমার প্রধান দরজা বন্ধ ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান, দোকানপাট বন্ধ ছিল। সীমিত আকারে রিকশা-ভ্যান চললেও কোনো ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল করেনি।
রাজশাহীতে গ্রেফতার ৪০ : রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহীতে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ও বিশেষ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফাসহ বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল সকালে হরতালের সমর্থনে মহানগর ও জেলা বিএনপি মিছিল বের করলে তারা আহত ও গ্রেফতার হন।
মানিকগঞ্জে গ্রেফতার ৪ : মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জে সকাল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে পুলিশ রোববার রাতে বিএনপির শ্রমিক নেতাসহ চার জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন শ্রমিক নেতা মাসুদু রানা, গোলাম কিবরিযা টিপু, নুর মোহাম্মদ ও আলীনুর হোসেন।
রাবিতে আটক ১২ : রাবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে হরতাল সমর্থকদের রাস্তায় দাঁড়াতেই দেয়নি পুলিশ। হরতালের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় সাংবাদিকসহ ছাত্রদলের কমপক্ষে ২০ নেতাকর্মী আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়কসহ কমপক্ষে ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
ময়মনসিংহে দুই মহিলা নেত্রীসহ গ্রেফতার ৪ : ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, জেলার সর্বত্র হরতাল পালিত হয়েছে। পুলিশের তীব্র বাধার মুখে হরতালের সমর্থনে বিএনপি মিছিল করলেও দলীয় কার্যালয় এলাকা থেকে বের হতে পারেনি। তবে বিক্ষিপ্তভাবে অলিগলিতে মিছিল ও পিকেটিং করেছে। সকালে বাউন্ডারিরোডে পিকেটারদের হামলায় একটি টেম্পোর দুই যাত্রী আহত হয়। নতুনবাজার এলাকায় পিকেটিং করায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারজানা রহমান হোসনা, কোতোয়ালি মহিলা দলের সভাপতি খালেদা আতিক, গাঙ্গিনারপাড় থেকে বিএনপি কর্মী বোরহান উদ্দিন ও ভাটিকাশর থেকে ফরহাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নরসিংদীতে সাংবাদিকসহ ৩৩ জন আহত : নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের অতর্কিত হামলায় বিএনপির ২৫ নেতাকর্মী, এক সাংবাদিক ও ৭ পুলিশসহ ৩৩ জন আহত হয়েছে। সকাল ১০ টায় খোকনের বাসভবন থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল ঢাকা সিলেট মহাসড়কের দিকে যাওয়ার সময় জেলখানা মোড়ে পুলিশ বেধড়ক লাঠি চার্জ করে।
টাঙ্গাইলে আটক ৪ : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে পুলিশ ও র্যাবের ব্যাপক তত্পরতা ও নেতাকর্মী আটকের মধ্য দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালে দোকানপাট খোলেনি। বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। সকালে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এদিকে হরতাল চলাকালে ছাত্রদল ও শিবিরের চার নেতা কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের হামলা : ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, হরতালের পক্ষে পিকেটিং করার সময় ছাত্রলীগের হামলায় ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ মজিদ গুরুতর আহত হয়েছেন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি নেতা মজিদ ঝিনাইদহ শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের একদল কর্মী তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে মামলা : মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর রোববার সন্ধ্যায় আ’লীগ ক্যাডারদের হামলা এবং অফিস ভাংচুরের পর উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এজাহারে নাম দিয়ে এবং অজ্ঞাত আরও ৩ থেকে ৪শ’ নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক এবং পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদানসহ আহত করার ঘটনায় মামলা করেছে।
কিশোরগঞ্জে গ্রেফতার ৭ : কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকেই বন্ধ ছিল দোকান পাটসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রিকশা ছাড়া সড়কপথে বন্ধ ছিল দূরপাল্লার সব যান চলাচল। তবে ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। হরতালের সমর্থনে সকালে শোলাকিয়ায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে শহরের সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ছাত্রদলের একটি মিছিল পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পিকেটিংয়ের অভিযোগে পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে আটক করে।
জয়পুরহাটে গ্রেফতার ১৬ : জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, হরতালের সমর্থনে শহর প্রদক্ষিণরত বিএনপির মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোসত্মফা পুলিশের লাঠি চার্জে আহত হলে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সমর্থকদের দফায় দফায় ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া। শহরে বর্তমানে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে হরতালে নাশকতা এড়াতে জেলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ ও বিএনপি দলীয় সুত্রে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার ২ : স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ জানান, সকাল সোয়া ৮টার দিকে বিএনপি নেতা সুরুজ্জামান, হাজী শাহীন, সাজেদা খাতুন মিতা, নুরুল হক চৌধুরী দিপু, ফারুক, আবু তাহেরের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি মিছিল শহরের বোস কেবিনের সামনে থেকে বের হয়ে একশ’ গজ দূরে দুই নাম্বার রেলগেট এলাকায় পৌঁছলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সকালে সোয়া ১০টা ও সোয়া ১১টার দিকে শহরের ডায়মন্ড সিনেমা হল এবং মর্গ্যান স্কুলের সামনে থেকে বিএনপি নেতা জান্নাতুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে মিছিল বের করার চেষ্টা করা হলে পুলিশের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় ওই মিছিল থেকে কাশেম ও জসিম নামের দুই বিএনপি কর্মীকে আটক করা হয়।
হবিগঞ্জে আহত ১০ : হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হরতালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে জেলা বিএনপির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিমকে আটক করেছে। সকাল ১০টায় হবিগঞ্জ শহরের কিবরিয়া ব্রিজ এলাকায় পিকেটিং করার সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদ করায় বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিমকে আটক করে পুলিশ।
চাটমোহরে বিএনপির ৪০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা : পাবনা অফিস জানায়, পাবনার চাটমোহরে হরতাল সমর্থনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের হামলা, ব্যাপক লাঠিচার্জ করেও পুলিশ বিএনপির ৪০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার মামলা করেছে। এছাড়া পুলিশ এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে ।
যশোরে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত : যশোর অফিস জানায়, যশোরে শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও পুলিশি বাধার কারণে শহরে মিছিল করতে পারেনি। বিকেলে অবশ্য দলটি সমাবেশ করতে সক্ষম হয়।
মুন্সীগঞ্জে আড়িয়ল বিল এলাকায় গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড : মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জে হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। রিকশা, সাইকেল ছাড়া দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। হরতালের সমর্থনে আড়িয়ল বিল এলাকার লোকজন গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে ব্যারিকেড দেয়। সকালে হরতালের সমর্থনে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি।
দিনাজপুরে মহিলাদের মিছিল থেকে আটক ৪ : দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলা মহিলা দল মিছিল করার সময় দিনাজপুর শহরের ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে বিএনপি নেত্রী সরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য বেগম রেজিনা ইসলাম, নবনির্বাচিত দিনাজপুর পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর শাহিন সুলতানা বিউটিসহ ২ জন মহিলা কর্মীকে পুলিশ আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়।
নোয়াখালীতে গ্রেফতার ৪ : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় মহিলাসহ অন্তত ৬ নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ এর আগে রাতে ছাত্রদল ও যুবদলের মো. ফয়সল, বেলায়েত হোসেন, বাহার ও আবদুল কাদেরসহ ৪ নেতাকর্মীকে আটক করে

সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে অভিমত : কুশাসনের প্রতিযোগিতা দিয়ে দিনবদল সম্ভব নয়










স্টাফ রিপোর্টার
টিআইবি চেয়ারম্যান ও সুজন সহ-সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। দুঃখজনকভাবে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে দিনবদলের স্লোগান কখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘দিনবদলের সনদ’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। জাতীয় সংসদ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সেখানে জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় আলোচিত হয় না। সরকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বন্ধের কথা বললেও নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, প্রশাসনে চরম দলীয়করণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সরকারকে বিতর্কিত করে তুলেছে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে দিনবদলের অঙ্গীকার ও বাস্তবতা শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ড. রওনক জাহান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাসদ (জেএসডি) সভাপতি আ.স.ম. আবদুর রব, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না, সুভাষ সিংহ রায়, ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, ড. মাসুম, অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বিচার ব্যবস্থা বিশেষত বিচার বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে বলেন, দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ, যোগ্য বিচারপতিদের নিয়োগ দেয়া উচিত। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পরিবর্তনের আশা আমরা তখনই করতে পারি যখন রাজনীতির স্রোতে গুণগত পরিবর্তন যুক্ত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিল, তা দেখে মনে হয়নি দিনবদলের মতো কঠিন কাজ তারা সাফল্যের সঙ্গে করতে পারবেন। দিনবদল করতে চাইলে এমন মানুষদের নেতৃত্ব প্রয়োজন যাদের মন বড় এবং যারা চিন্তাশীল।
আ.স.ম. আবদুর রব বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে ধরনের কল্যাণকামী ও দক্ষ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন, তা আমাদের দেশে এখনও গড়ে ওঠেনি। নির্বাচিত হলে প্রতি ঘরে একজনকে চাকরি দেয়া হবে, দিনবদলের সনদের এরকম অদূরদর্শী প্রতিশ্রুতির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দিনবদলের স্লোগান কেবলই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সরকার শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, দুদক সম্পর্কিত মন্ত্রিপরিষদের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত দেশের বিচার ব্যবস্থাকে নাজুক করে ফেলবে। পুলিশ বাহিনীকে সরকারের আজ্ঞাবহ বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০১১ সালের মধ্যে জনগণকে সরকার সুপেয় পানি খাওয়াবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কুশাসনের প্রতিযোগিতা দিয়ে দিনবদল সম্ভব নয় বলেও অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন সরকারের ‘রাডার’ থেকে সরে গেছে। সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে সরকার অপ্রাসঙ্গিক কিছু কূটতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেশে লাল বাতি-সবুজ বাতির যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। শেয়ারবাজারে যারা হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি করেছে, তারা সমাজে বীরদর্পে হেঁটে বেড়াচ্ছে। এসবের অবসান এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে দিনবদল সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ডকুমেন্ট বলছে ভিন্নকথা : ১০ টাকা কেজি চালের কথা ’৯৬ সালে বলেছি, এবার নয় - সংসদে শেখ হাসিনা


সংসদ রিপোর্টার

বিরোধী দল মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে পারদর্শী অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী জনসভার বক্তৃতাকে তারা (বিএনপি) ২০০৮ সালের বলে চালিয়ে দিয়েছে। ’৯৬ সালের নির্বাচনী বক্তৃতার সঙ্গে তারা ২০০৮ সালের ক্যাপশন লিখে ইউ-টিউবে ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রচার করছে নির্বাচনের আগে আমি নাকি বক্তৃতা দিয়েছিলাম ক্ষমতায় আসতে পারলে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা দশ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে তা রক্ষা করেছি। এবার আমরা জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার কথা বলেছি এবং ক্ষমতায় এসে ৪৫ টাকার চাল ১৮/২০ টাকায় নামিয়ে আনি। পরে কৃষকদের ন্যায্যমূল্যের কথা চিন্তা করে কিছুটা বাড়িয়েছি। তিনি বিরোধী দলের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা ১০ টাকায় যে চাল রেখে এলাম সেটা কেন ৪৫ টাকা হলো? কেন ৫ টাকা কেজি করতে পারলেন না তার জবাব দিন।
গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাসদ দলীয় সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদলের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেটের সভাপতিত্বে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের প্রথম আধঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরপর্ব চলে।
এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ’৯৬ সালে নয়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশে ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির প্রথম দফা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতির কথা বহুবার বলেছেন। জরুরি সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে নির্বাচন ২ বছর পেছালেও ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানো নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত ছিল। যদিও নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সরাসরি ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করেনি। ১৮ টাকা কেজির কথাও বলা হয়নি। তবে বিভিন্ন জনসভা, লিফলেট ও মিছিলের স্লোগানে ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানো নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সোচ্চার ছিলেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল বলে প্রধানন্ত্রীর বক্তব্যের সত্যতাও মেলেনি।
সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির দেয়া তথ্য মতে, ’৯৬ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি প্রথম দফায় ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার বছরে মোটা চালের সর্বনিম্ন দর ১০ টাকা আর সর্বোচ্চ ১৫ টাকা ছিল। ’৯৭-তে সর্বনিম্ন দর ঠিক থাকলেও সর্বোচ্চ দর ২৪ টাকায় পৌঁছেছিল। টিসিবি বলছে, ২০০১ সালেও মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ১৪ টাকা কেজিতে। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার সময় ২০০৬ সালে সর্বনিম্ন দর ছিল ১৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৯ টাকা। ২০০৮ সালে জরুরি সরকারের সময় মোটা চালের সর্বনিম্ন দর ছিল ২৮ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা।
১০ টাকা কেজির চাল নিয়ে গতকাল সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী : গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরপর্বে ‘সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কীভাবে বিরোধীদলীয় নেতার হৃদয়ঙ্গম হয় সে বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ রয়েছে কিনা’ মঈনুদ্দিন খান বাদলের এ সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হৃদয়ঙ্গম করার বিষয়ে আমি এত পারদর্শী নই। মাননীয় সংসদ সদস্যই (বাদল) এ বিষয়ে পারদর্শী। তাই হৃদয়ঙ্গম করার দায়িত্বটা তাকেই দিলাম। তিনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এ সময়ে বিরোধী দলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য তারা ক্ষমতায় আসেনি। তারা নিজেদের ভোগবিলাসে ব্যস্ত ছিল। তারা জনগণের সমস্যাগুলো আমলে নেয়নি। তাদের দুঃখ হলো—আমরা মেগাপ্রজেক্ট করছি। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করছি। মানুষের উপকারের জন্য কাজ করছি। তা তাদের পছন্দ হচ্ছে না।
বিরোধী দল ইন্টারনেটে তার বক্তৃতার ফুটেজ বিকৃত করে অপপ্রচার চালাচ্ছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে পারদর্শী। নির্বাচনের আগে আমি নাকি বক্তৃতা দিয়েছিলাম ক্ষমতায় আসতে পারলে ১০টাকা কেজি চাল খাওয়াবো। এটা ওয়েবসাইটের ইউটিউবে ছেড়ে দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। এটা ঠিক, আমরা ১৯৯৬ সালে ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এবং তা রেখেছিও। আমরা ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার আগ পর্যন্ত তা ছিল। সেই চাল বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বৃদ্ধি পেতে পেতে মানুষকে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকায় কিনতে হয়েছে।
ইউটিউবের ফুটেজ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি ওই বক্তৃতা বার বার দেখেছি। আমি কোথায় কী বক্তৃতা দিয়েছি, ওই সময় কে কে ছিলো, আমার দলের প্রার্থী কে ছিলো সেটা দেখেছি। ইউটিউবের ফুটেজটা কয়েকবার খুব ভালোভাবে দেখলাম। এটা হচ্ছে আমার ’৯৬ সালের নির্বাচনী বক্তৃতা। ১৯৯৬ সালে আমি তেজগাঁওয়ের একটি জনসভায় ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর কথা বলেছিলাম। ওই বক্তৃতার সঙ্গে তারা ২০০৮ সালের ক্যাপশন লিখে চালিয়ে দিয়েছে। আমরা তো দশ টাকায় চাল রেখে এলাম, সেটা কেন ৪৫ টাকা হলো? কেন ৫ টাকা কেজি করতে পারলেন না তার জবাব দিন। একবার বাড়লে তো কোন জিনিসের দাম কমে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দেখেছিলাম। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে ৪৫টাকার চাল ১৮/২০ টাকায় নামিয়ে আনি। তারপর কৃষকের কথা ভেবে আবার কিছুটা বাড়িয়েছি। আমরা মানুষের আয়ও বৃদ্ধি করেছি।
’৯৬ সালে নয়, গত সংসদ নির্বাচনের আগেই ১০ টাকা কেজির চালের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী : অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণার পর টাঙ্গাইল ও জামালপুরের জনসভায় শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজিতে চাল খেতে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। ২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ‘টাঙ্গাইল ও জামালপুরে শেখ হাসিনা...’ শিরোনামে ডাবল কলামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী হাইস্কুলের জনসভায় তিনি ড. আবদুর রাজ্জাককে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, জোট সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন থেকে মুক্তি এবং অর্থনৈতিক সফলতা অর্জনে নৌকায় ভোট দিন। তিনি স্লোগান দেন, নৌকা মার্কায় ভোট দেব, ১০ টাকা সের চাল খাব। ধানের শীষে ভোট দেব না ২০ টাকা সের চাল খাব না।’ একই দিনে জামালপুরের মাদারগঞ্জ বালিজুড়ী এফএম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মির্জা আজমের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে নৌকা ছাড়া উপায় নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশে ১০০ ভাগ লোককে শিক্ষিত করা হবে। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। চালের সের ১০ টাকা হবে, দেশ আবার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।’
১৭ সেপ্টেম্বরের আমার দেশ পত্রিকার প্রথম পাতায় শিরোনাম ছিল ‘টাঙ্গাইল ও জামালপুরে শেখ হাসিনা : ২০ টাকার চাল ১০ টাকায় খেতে হলে নৌকায় ভোট দিন’। সেদিনের সবকটি জাতীয় দৈনিকে শেখ হাসিনার এ প্রতিশ্রুতির কথা প্রকাশিত হয়। টিভি চ্যানেলগুলোতেও একই খবর প্রচারিত হয়। এরপর অসংখ্য সমাবেশে শেখ হাসিনা এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ‘নৌকা মার্কায় ভোট দেব, ১০ টাকা সের চাল খাব’—শেখ হাসিনার এ স্লোগান ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে সারাদেশের অলিতে-গলিতে উচ্চারিত হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মুখে। শুধু তাই নয়, গত বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন মোটা চালের কেজি ৩৫/৪০ টাকায় গিয়ে পৌঁছায় তখন শেখ হাসিনা কারাগারে ছিলেন। ৩ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনাকে আদালতে নেয়া হয়। পরদিন আমার দেশ পত্রিকার লিড স্টোরির হাইলাইটসে শেখ হাসিনার বরাতে ছাপা হয়েছিল, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দ্রব্যমূল্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা হবে। চালের দাম কমিয়ে ১২ থেকে ১৫ টাকায় আনা হবে।’
তবে শেখ হাসিনা মুক্ত হওয়ার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ২৪ ডিসেম্বর বগুড়ার শেরপুর বাসস্ট্যান্ডের সমাবেশে ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর কথা বলেন। তিনি নৌকা মার্কাকে ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ার মার্কা বলে উল্লেখ করেন। তিনি সেখানকার প্রার্থী হাবিবুর রহমানকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, ১০ টাকায় চাল খেতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে হলে নৌকায় ভোট দিতে হবে। ২৫ ডিসেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক সংগ্রামসহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হয়েছে।
শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর কমিউনিটি সেন্টারে ২ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে প্রতি কেজি চালের দাম কমিয়ে ১০ টাকা ও কাঁচামরিচের কেজি ৫ টাকা করা হবে। ৩ ডিসেম্বর দৈনিক নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য নেতাকর্মীও একইভাবে ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর প্রচারণা চালিয়েছেন।
এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়, জরুরি সরকারের হস্তক্ষেপে নির্বাচন প্রায় ২ বছর পিছিয়ে গেলেও শেখ হাসিনা এ সময় ধরে ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখেন। জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে তিনি যখন এ প্রচারণা শুরু করেন তখন চালের কেজি ছিল তার বক্তব্য অনুযায়ীই ২০ টাকা। যদিও বাস্তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাব অনুযায়ী ২০০৬ সালে মোটা চালের কেজি ছিল সর্বনিম্ন সাড়ে ১৬ টাকা। অথচ প্রধানমন্ত্রী এটাকে ৪৫ টাকা বলেছেন। জরুরি সরকারের সময়ে মোটা চালের কেজি ৩৫ টাকা পর্যন্ত পৌঁছলেও জরুরি সরকার ক্ষমতা ছাড়ার সময় চালের কেজি ২২ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু মাঝখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চালের দাম বেশি বেড়ে যাওয়ায় তিনি অর্ধেক দামে চালসহ দ্রব্যমূল্য খাওয়ানোর কথা বলেন। এ কারণে জেলে থাকতে তিনি ১২ থেকে ১৫ টাকায় চাল খাওয়ানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু আবার চালের দাম কমতে শুরু করায় তিনি ও তার দলের নেতারা নির্বাচনের আগে ১০ টাকায় চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনী প্রচার ও লিফলেটেও এটা স্থান পায়।
এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যখন দায়িত্ব নেয় তখন সবচেয়ে মোটা চাল ২২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলে খবর প্রচারিত হয়। সেক্ষেত্রে তার দুই বছর আগের ঘোষণা অনুযায়ী ২০ টাকার চাল ১০ টাকা হলে, ২২ টাকার চাল ১১ টাকা হতেই পারে। যদিও নির্বাচনী প্রচারে ১০ টাকার কথাই বলা হয়েছে।
১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি নিয়ে নির্বাচনের আগে যখন আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছিল তখন প্রশ্ন ওঠে কৃষক কীভাবে পোষাবে। এত কম দামে চাল বিক্রি করতে হলে কৃষকের খরচ উঠবে না। তখনই প্রথমে শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনসভায় ন্যায্যমূল্যে সার দেয়ার কথা বললেও একপর্যায়ে তিনি জনসভাগুলোতে বিনামূল্যে কৃষককে সার দেয়ার কথা বলতে শুরু করেন। এর প্রমাণ বিভিন্ন পত্রিকায় রয়েছে। প্রথম আলোর ১৮ ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘কোটালীপাড়ার সেই মাঠে ভোট চাইলেন হাসিনা’ শিরোনামে প্রথম পৃষ্ঠার ডাবল কলাম খবরের ভেতরে দেখা যায়, ১৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার নিজ নির্বাচনী এলাকার জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ‘...বয়স্কভাতা দ্বিগুণ করা হবে, তাদের চলাফেরা ফ্রি করে দেবে। কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে সার বিতরণ করা হবে।’
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আসলেই ১০ টাকা কেজিতে চাল ও বিনামূল্যে কৃষকদের সার দেবে, নাকি এটা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে লিখিতভাবে নেই, তাদের নেত্রী নির্বাচনী সমাবেশে বলেছেন—এসব তাদের প্রতিশ্রুতি নয় বলে এড়িয়ে যাবে?
আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা অতীতে ‘বিরোধী দলে গেলেও হরতাল করব না’ বলে সংসদ ও রাজপথে বারবার ঘোষণা দিয়েও ২০০১ সালের পর সে ঘোষণা বাস্তবায়ন না করে আওয়ামী লীগ একের পর এক হরতাল করেছে। এবারও মনে হচ্ছে ১০ টাকায় চাল ও বিনামূল্যে সার দেয়ার প্রতিশ্রুতিকে ‘বাত কা বাত’ হয়েই থাকবে।
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরপর্বে অন্যান্য প্রসঙ্গ : সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো দীর্ঘসূত্রতা নেই। তবে, কিছুটা জটিলতা থাকতে পারে। কারণ বিগত চারদলীয় জোট সরকার সর্বক্ষেত্রে এমনভাবে দলীয়করণ করেছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে, আমরা জনগণের কাছে দেয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
বুধবার বর্তমান সরকারের মন্ত্রিপরিষদের শততম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে এ সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত কতটুকু বাস্তবায়ন হলো কতগুলো বাস্তবায়নাধীন প্রতি তিন মাস অন্তর তা পর্যালোচনা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, আমাদের সিদ্ধান্তের ৮৪ ভাগই বাস্তবায়ন হয়েছে। কোন কোন মন্ত্রণালয়ে হয়েছে শতভাগ। তাই পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, সরকারের কর্মকাণ্ডে কোন দীর্ঘসূত্রতা নেই।
প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধ করার বিষয়ে সরকার দলীয় সিনিয়র সদস্য আবদূর রাজ্জাকের সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুনেছিলাম গ্যাসের ওপর বাংলাদেশ ভাসছে। এই গ্যাস বেচতেই হবে। আমরা ক্ষমতায় থাকতে ১৯৯৬-২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির চাপ ছিলো। গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি বলে অনেক ষড়যন্ত্র করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। আর এখন দেখছি তীব্র গ্যাস সঙ্কট। আমরা গ্যাস সঙ্কট মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। বাপেক্সকে শক্তিশালী করে নিজেরাই গ্যাস উত্তোলনের চেষ্টা করছি। গ্যাসের অপচয় রোধে বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার চালুর ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিজেরাই সিলিন্ডার তৈরি ও এর দাম কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।
এদিকে এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বিদ্যুত্ খাতে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ‘জোট সরকারের আমলে বিদ্যুত্ খাতের দুর্নীতি অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে কিনা’ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য চয়ন ইসলামের এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে সংঘটিত আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম উদঘাটনের লক্ষ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি গঠিত ৪ সদস্যের সাব কমিটি কাজ করছে। এই সাবকমিটি শিগগিরই এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দাখিল করবে বলে আশা করা যায়। ওই রিপোর্ট যাচাই-বাছাই শেষে চিহ্নিত অনিয়মগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশ থেকে ২৫ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান, জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১০ পর্যন্ত দুই বছরে ভারত, জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটিশ ভার্জিন আইসল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ৩১৪টি প্রতিষ্ঠান উপরোক্ত অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর অর্থাত্ ২০০৭ ও ২০০৮ সালে মোট ২২ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

আড়িয়ল বিলে স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হয়েছে : এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, কোনো উস্কানি নয়—আড়িয়ল বিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তাই ওখানে বিমানবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে এখন কি করা উচিত সে বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গতকাল বনানীর কার্যালয়ে দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মহাজোটের নামে পৌর নির্বাচন করতে গিয়ে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামীতে ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য মহাজোটের মধ্যে সমন্বয় দরকার এবং মহাজোটের সাংগঠনিক অবস্থা আরও দৃঢ় করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি এখনও ভারসাম্য অবস্থায় রয়েছে। হবিগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপ-নির্বাচনে জনগণ সে বার্তাই দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকা দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী, গোলাম হাবিব দুলাল, ফকির আশরাফ, আহসান হাবিব লিংকন, এইচএম গোলাম রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌর ও উপনির্বাচনের প্রেক্ষিতে এরশাদ বলেন, প্রত্যেক আসনেই জাতীয় পার্টির গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার ভোটার রয়েছে। এটাই ভারসাম্যের ভোট। হবিগঞ্জের নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়েছে। তিনি বলেন, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উপ-নির্বাচনের দুটি আসনেই জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছিল। মহাজোটের স্বার্থে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী প্রত্যাহার করে। কিন্তু হবিগঞ্জের প্রার্থীর বিষয়ে আওয়ামী লীগ থেকে কিছু বলা হয়নি।

খালেদা জিয়া প্রধান আসামি : আড়িয়লের ঘটনায় ৪ মামলা, আসামি ২১ হাজার, ঘরে ঘরে নির্বিচারে তল্লাশি, ২০ গ্রাম পুরুষশূন্য


মুন্সীগঞ্জ ও শ্রীনগর প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সোমবার আড়িয়ল বিলবাসী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং এতে পুলিশ নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে মামলা করেছে সরকার। এছাড়া সোমবারের ঘটনায় চার মামলায় মোট ২১ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতারের জন্য শ্রীনগরে সর্বাত্মক অভিযান চলছে। নির্বিচারে দরজা-জানালা ভেঙে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অভিযানের সংবাদ ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা নিগৃহীত হয়েছেন। গত রাত পর্যন্ত মোট ১৮ জনকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার সহিংসতায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার লাশ গতকাল নওগাঁয় দাফন করা হয়েছে।
সোমবারের সহিংস ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে চতুর্থ মামলাটি মুন্সীগঞ্জ বিচার বিভাগীয় হাকিমের আদালতে গতকাল দুপুরে রুজু করেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল মতিন। হাকিম আবু হাসনাত অভিযোগ আমলে নিয়ে তা এজাহার হিসাবে গ্রহণ করতে শ্রীনগর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন ছাড়াও ২৯ জানুয়ারি বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে আইনজীবী ফোরামের সঙ্গে সভায় উপস্থিত নেতাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরও তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, খালেদা জিয়ার গোপন নির্দেশে সোমবার শ্রীনগরে বিএনপি নেতাকর্মী ও গুণ্ডারা মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন এবং পুলিশ, সাংবাদিকসহ অনেককে পিটিয়ে আহত করে। এতে এসআই মতিউর রহমানের মৃত্যু হয়।
এদিকে গতকাল রাত থেকেই আড়িয়ল বিল ও সংলগ্ন ২০টি গ্রামে পুলিশ, র্যাব ও সরকারের অন্যান্য বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। ঘরে ঘরে বেপরোয়া পুলিশি তল্লাশিতে গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে ২০ গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। নির্বিচারে তল্লাশি ও ধরপাকড়ে ভীতিকর পরিবেশের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে কয়েক লাখ এলাকাবাসী। সোমবারের সহিংস ঘটনায় ওইদিন রাতে শ্রীনগর থানায় পৃথক ৩টি মামলা হয়। প্রতিটিতে ৬-৭ হাজার জনকে আসামি করেছে পুলিশ। ওইসব মামলায় গত রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি সোমবার আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করে স্থানীয় বাসিন্দা ও ভূমি মালিকরা ঢাকা-মাওয়া সড়ক অবরোধের সময় সংঘর্ষে মতিউর রহমান নামে এক পুলিশ উপপরিদর্শক নিহত হন। ব্যাপক সংঘর্ষে আহত হন সাংবাদিক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ শতাধিক।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা : মুন্সীগঞ্জে শ্রীনগরে আড়িয়ল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করে গত সোমবার বিল রক্ষা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ইন্ধন দেয়া, গাড়ি ভাংচুর, পথ রোধ ও পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসানাত মামলাটি আমলে নিয়ে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের জন্য শ্রীনগর থানায় প্রেরণ করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিগত ২৯ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে বলেন, বিএনপি এখানে বিমানবন্দর করা মানবে না এবং গোপনে নেতাকর্মীদের ওই স্থানে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। গত ৩১ জানুয়ারি মামলার প্রধান আসামি বেগম খালেদা জিয়ার হুকুমে আন্দোলনকারীরা গাড়ি ভাংচুর, পথরোধ, দোকানপাট ভাংচুর ও সাধারণ নিরীহ পথচারীদের ওপর হামলা চালায় এবং একটি পুলিশের গাড়ি ও পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেয়। পুলিশের কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে খুন করে। সন্ত্রাসী আক্রমণে মুন্সীগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম আলোর সাংবাদিক সাজেদুল ইসলাম, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শফিউদ্দিন বিটু, এএসপি দেওয়ান লালন আহম্মেদ, সিরাজদিখান থানার এসআই কামাল পাশা, এসআই মুনির, কনস্টেবল আজিজুল ইসলাম, হাবিলদার মুনির, মনিরুজ্জামান, রিজার্ভ কনস্টেবল আনোয়ার, মফিজুল ইসলাম, আর্মড পুলিশ সদস্য রফিকুল, মো. আজান ও শাকিল আহত হন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার দাবিতে মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি শহরে বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল হাই মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি সুপার মার্কেট চত্বর থেকে শুরু হয়ে কৃষি ব্যাংক মোড় হয়ে বিএনপি কার্যালয় এসে শেষ হয়। এর আগে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত তাত্ক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি সভাপতি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাকে মিথ্যা, বানোয়াট, ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। সম্মেলনে তিনি বলেন, আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির আন্দোলন নিজ জমি অধিকার রক্ষার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাহজাহান বাদল শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ও বাড়ৈখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন মাস্টার জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য। তারা এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তবুও এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করা দুরভিসন্ধিমূলক ও নোংরা রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান সরকার হাজার হাজার নিরীহ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
জেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল হাই অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অসত্ উদ্দেশ্যে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান, অন্যথায় পওে জেলায় সব স্তরের মানুষকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তোতা মিয়া, জেলা বিএনপি নেতা আতোয়ার হোসেন বাবুল, আবদুল আজিম স্বপন, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদ কমিশনার, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মাসুম, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম জসিম, যুবদল নেতা শাহীন, বকুল প্রমুখ।
অভিযান-গ্রেফতার : শ্রীনগরে পুলিশ হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক চারটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ২১ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে আড়িয়ল বিল সংলগ্ন ২০টি গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। রাতদিন পুলিশি অভিযানে ১৮ জনকে অটক করা হয়েছে। বিল এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ নারী ও শিশুদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের বিভিম্ন পয়েন্টে পুলিশ ও র্যাব টহল দিচ্ছে। গতকাল সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
হাসাড়া স্কুলগেটে টহলরত পুলিশের ছবি তুলতে গেলে পুলিশ বৈশাখী টেলিভিশনের ক্যামেরা ভাংচুর করে এবং ক্যামেরাম্যান রাহুলকে মারধর করে।
আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাজাহান বাদল, ড. ফখরুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, বাড়ৈখালি ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন মাস্টার, হাসাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, শ্রীনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান আ. বারেক, মোকসেদ মাস্টার, সেন্টু মেম্ব্বার, হাসান মেম্বার, মোয়াজ্জেম মেম্ব্বার, জলিল মেম্ব্বার, আজিজ মেম্বার, জলিল মাস্টার, খলিল মাস্টারসহ ১৫৪ জনকে এজাহারভুক্ত কওে অজ্ঞাত ১৮ হাজার লোকের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে শ্রীনগর থানায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ।
শ্রীনগর থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন জানান, পুলিশ নিহতের ঘটনায় মামলার বাদী হয়েছেন শ্রীনগর থানার এসআই ফরিদ হোসেন, ছনবাড়ী এলাকায় পুলিশের ওপর হামলার মামলায় বাদী হয়েছেন থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কুদ্দুস এবং হাসাড়া ফাঁড়িতে আগুন দেয়ার মামলায় বাদী হয়েছেন এএসআই আতাউর রহমান। পৃথক তিনটি মামলায় অজ্ঞাত ৫-৬ হাজার করে প্রায় ১৮ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। সোমবার রাতে মামলার পরপরই আসামিদের গ্রেফতারে নামে পুলিশ। পুলিশের খোয়া যাওয়া তিনটি শটগানের মধ্যে একটি শটগান শ্রীনগর উপজেলার আলমপুর গ্রামের রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে চারদিকে। সোমবার রাতভর হাসাড়া, লস্করপুর ও আলমপুরে পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় পুলিশ ২০-২৫টি ঘরের দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে বলে এলাকাবাসী দাবি করে। হামলার আশঙ্কায় বৈশাখী পরিবহনের সব বাসের ঢাকা-রাড়ৈখালি রুটে চলাচল বন্ধ রয়েছে।
১০-১২টি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পুলিশ ভাংচুর চালায় এবং বাড়ি থেকে নারীদের টেনেহিঁচড়ে বের করে আনে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। এ হামলার পর গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের নারী ও পুরুষ সবাই অতিরিক্ত কাপড় এবং শুকনো খাবার নিয়ে দূর-দূরান্তের গ্রামে পালিয়ে যাচ্ছেন।
লস্করপুর মসজিদের ইমাম রফিক উদ্দীন বলেন, গতরাত ২টার দিকে পুলিশ আমার বাড়ির দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করে। আমাকে চড়থাপ্পড় মারে। একই গ্রামের বিধবা কমিন বেওয়া হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তিনি বলছেন, আমার কোনো ছেলে নেই। আমার স্বামী মারা গেছে বহুদিন আগে। তারপরও পুলিশ আমার বাড়িতে ভাংচুর করেছে। ঘরের ভাঙা দরজা, জানালা দেখিয়ে তিনি বলেন, আমি এখন কার কাছে যাব। কার কাছে ক্ষতিপূরণ চাইব। ওদিকে বিপুলসংখ্যক থানা ও দাঙ্গা পুলিশ গ্রামগুলোর প্রবেশ ও বের হওয়ার মুখে টহল দিচ্ছে। তারা সন্দেহজনক মনে হলেই লোকজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যার পর গ্রামে ঢুকে দেখা গেছে গ্রামের আশপাশের বিভিন্ন ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে রয়েছেন অনেকে। তবে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্তরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। একদিকে গ্রামবাসী সাংবাদিকদের সন্দেহ করছেন অন্যদিকে পুলিশ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মারমুখী ভূমিকায় নেমেছে।
মাওয়া মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের হাতে নিহত সহকর্মীর মৃত্যুর পর কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কয়েকজন পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি গুলি চালানোর অনুমতি দিত তবে এভাবে আমাদের মরতে হতো না।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আসাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, যারা পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। বিভিন্ন টেলিভিশন ক্যামেরার ভিডিও চিত্র দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, কয়েক হাজার গ্রামবাসীর সবাই আইন অমান্য করেনি। তবে আইন অমান্য করেছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ২০০। তাদের খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত আছে। তবে পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে পুলিশি তাণ্ডব থেকে বাঁচতে স্থানীয় গ্রামবাসী গাজিঘাট, বাড়ৈখালি লঞ্চঘাট, আলিমপুর, মুন্সীরহাটিসহ বিভিন্ন পয়েন্টে গাছের গুঁড়ি ফেলে পুলিশের গাড়ি বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
উপজেলার লস্করপুর, টেকের হাট গ্রামের গৃহবধূ পারুল বেগম, অনু, শিল্পী রিকশাচালক দুলালের স্ত্রী লিপি আমার দেশকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ আসামি ধরার নামে দরজার খিল ভেঙে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছে, ‘এতদিন ভালোভুলা খাইছোস এখন আর খাওন জুটব না।’
আটকের ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, ৬-৭ জনকে আটক করা হয়েছে

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন : ড. ইউনূসকে রাজনৈতিক হুমকি মনে করেন শেখ হাসিনা


এনা, নিউইয়র্ক

নিউইয়র্ক টাইমসে আবারও ড. ইউনূসকে নিয়ে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত এ রিপোর্টে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির জনক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিদ্বেষের বিষয় স্থান পেয়েছে। আবার কোনো সেনাসমর্থিত সরকার অথবা সামরিক সরকার এসে ড. ইউনূসকে তাদের গুরু হিসেবে বিবেচনা করুক—এ ভয়েই শেখ হাসিনা ড. ইউনূসের ইমেজ ধূলিসাত্ করতে চান। নিউইয়র্ক টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ হলে তাকেও শেখ হাসিনার রোষানলে পড়তে হবে আশঙ্কায় তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে অনুরোধ জানিয়েছেন তা গোপন রাখতে। ওই কর্মকর্তা টাইমসকে আরও বলেছেন, ১৯৯৬ সালের গোড়ার দিকেই শেখ হাসিনার মনে হয় যে ড. ইউনূসের জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে এক সময় তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতে পরিণত হবেন। এ আশঙ্কা থেকেই গ্রামীণ ব্যাংক এবং তার প্রতিষ্ঠাতার স্বাধীনতা সঙ্কুচিত করতে চান। তিনি ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিবর্তন দেখতে চান। অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা আরও উল্লেখ করেন, ২০০৬ সালে ড. মুহম্মদ ইউনূস নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তার প্রতি শেখ হাসিনার হিংসা আরও চরম আকার ধারণ করে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বিভক্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ায় শেখ হাসিনা ড. ইউনূসকে তার বড় একজন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। তাকে পলিটিক্যাল থ্রেট হিসেবে বিবেচনা করতে থাকেন তিনি।
টাইমসের সংবাদে আরও বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের ডেভসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের সম্মেলনে উপস্থিত হতে পারেননি ড. ইউনূস। কারণ, তাকে সে সময় কোর্টে হাজিরা দিতে হয়েছে। গ্রামীণ ড্যানোনের শক্তি দইয়ে ভেজাল করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন জনৈক রাজনীতিক। ওই মামলায় তাকে কোর্টে হাজিরা দিতে হয়।
টাইমসে বলা হয়েছে, ৩৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপর ব্যাপক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। নরওয়ে টিভিতে একটি প্রামাণ্যচিত্রে গ্রামীণ ব্যাংককে দেয়া নরওয়ে সরকারের তহবিল অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পর ড. ইউনূসের ব্যাপারে অনেকে নানা মন্তব্য করেন। যদিও নরওয়ে সরকার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ সরানো হলেও তার অপচয় ঘটেনি। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্রঋণের ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মন্তব্য করেন, দারিদ্র্য বিমোচনের নামে গরিবদের রক্ত চোষা হচ্ছে।
টাইমস লিখেছে, ড. ইউনূসের বয়স ৭০ ছুঁয়েছে। এখন তার অবসরে যাওয়ার সময়। তবে এমন কাউকে তিনি সে দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করতে চান যার মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকতে পারে। বাস্তবে তেমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
টাইমসের এ সংবাদদাতা লিডিয়া পলগ্রিন ঢাকায় ড. ইউনূসের অফিসে যান তার সাক্ষাত্কার নিতে। কিন্তু ড. ইউনূস তাতে সম্মত হননি। ড. ইউনূস তাকে বলেছেন, কিছু ভুল তথ্য রয়েছে বিভিন্নজনের মধ্যে। আমি কিছু বলতে চাই না। বললেই তা আমার বিরুদ্ধে যাবে।
টাইমস লিখেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের ৮৩ লাখ সদস্য রয়েছে, যারা প্রতি বছর ১০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিচ্ছেন। এত বিরাটসংখ্যক মানুষের একটি প্রতিষ্ঠান ক্রমেই বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
টাইমস লিখেছে, ক্ষুদ্রঋণের বিশেষজ্ঞরা শঙ্কায় রয়েছেন যে, গ্রামীণ ব্যাংকের দায়িত্ব যদি সরকারের হাতে চলে যায় তাহলে সেটি রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে এবং একপর্যায়ে তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মি. ইউনূস বলেছেন, তিনিও দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। তবে তিনি আশা করছেন, দায়িত্ব হস্তান্তরের বিষয়টি খুবই যত্নের সঙ্গে সম্পাদন হতে হবে, যেন ঋণ গ্রহণকারী সদস্য এবং ব্যাংকের কর্মচারীদের মাঝে কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়। এমন কাউকে দায়িত্ব দেয়া সমীচীন হবে না যার মধ্যে গ্রামীণের ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই অথবা আন্তরিকতার সঙ্গে সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নন। আমি খুব সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।
উল্লেখ্য, নরওয়ে টিভির ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি সংবাদ এবং ড. ইউনূসের লেখা একটি উপ-সম্পাদকীয় ছাপা হয়। ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালেও ড. ইউনূসের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন টেলিফোন করেছেন শেখ হাসিনাকে। সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. ব্ল্যাক টেক্সাসের একটি ইউনিভার্নিটিতে বক্তৃতার সময় স্টেট ডিপার্টমেন্টের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এরপরও ড. ইউনূস সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় টাইমসের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দৈনিকে আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হলো বলে বাংলাদেশী-আমেরিকানরা মনে করছেন। ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে ড. মুহম্মদ ইউনূসের সম্পর্ক এবং ক্লিনটন পরিবারের সঙ্গে ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠতার সূত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা দেখার বলে পেশাজীবী বাংলাদেশীরা মনে করছেন।
উল্লেখ্য, আমেরিকান মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভিন্ন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো মতামত অথবা বাংলাদেশ সরকারের কোনো বক্তব্য এসব মিডিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়নি