Wednesday 23 February 2011

সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল : পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় আহত ৮ শতাধিক, গ্রেফতার ৫শ’র বেশি


স্টাফ রিপোর্টার

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেফতারসহ নানা সহিংস ঘটনার মধ্য দিয়ে গতকাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল স্বতঃস্ফূর্ত ও সর্বাত্মকভাবে পালিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি আহূত চতুর্থ হরতালে গতকাল সারাদেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনে হামলা, ভাংচুর ও কয়েকটিতে আগুন দেয়া হয়। নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের পাশে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
হরতালের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশে বাধা দেয় মারমুখী পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে হামলায় অংশ নেয় সাদা পোশাকধারী ক্যাডাররা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে আশ্রয় নেয়া নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে তারা। রাস্তায় পা রাখতেই বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে বেপরোয়া পুলিশ। বিনা উস্কানিতে হরতাল সমর্থকদের নির্যাতন ও গ্রেফতার করা হয়। সংসদ সদস্যদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান দিয়ে রঙিন গরম পানি ছিটানো হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল মান্নানের ধানমন্ডির বাসভবনে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হামলা চালায়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীর নামে দেয়া হয় মামলা। আহতদের দলীয় অফিসে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বিএনপি দাবি করেছে, পুলিশ সারাদেশে ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আহত হয়েছে ৮ শতাধিক।
স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালনকালে পুলিশি নির্যাতন এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দু’দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধসহ কয়েকটি দাবিতে এ হরতাল আহ্বান করে বিএনপি। এ হরতালকে সমর্থন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলো। তবে হরতাল প্রতিরোধের ঘোষণা দেয় সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তারা রাজধানীর অনেক স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। সাদা পোশাকধারী পুলিশের ছদ্মাবরণে এ আক্রমণ চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ছিল বেপরোয়া। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতি ছিল।
ঢাকায় গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি, বাইরে থেকেও বাস ঢাকায় আসেনি। কমলাপুর রেলস্টেশনে স্বাভাবিক শিডিউলে ট্রেন আসা-যাওয়া করে। এয়ারপোর্টে বিমান চলাচলও স্বাভাবিক ছিল। রিকশা চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বিআরটিসির কয়েকটি বাস ছাড়া অন্য বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও প্রাইভেটকার চলাচল করতে দেখা যায়নি। রাজধানীর স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হয়নি। দোকানপাট বন্ধ ছিল।
হরতালকে কেন্দ্র করে গতকাল জেলা শহরগুলোয় মিছিলে বাধা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাংচুর ও ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের লাটিচার্জে দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেফতার হয়েছেন দেড়শ’। এর মধ্যে খুলনায় মহিলা কাউন্সিলরসহ ১২ জন, রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু ও গোলাম মোস্তফা নাদিমসহ প্রায় ৫০ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ জন, নরসিংদীতে ৩৩ জন, জয়পুরহাটে ১৫ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে বিএনপির মিছিলে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
অবরুদ্ধ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় : সকাল সোয়া ৬টার দিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রথম মিছিল বের করে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আটক করে দুই কর্মীকে। মিছিলে অংশ নেন— কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাঁতিদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ছাত্রদল নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতাসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
সকাল পৌনে ৮টায় বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। এতে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে কর্মীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বের করার চেষ্টা করে কর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের কয়েক দফায় ধ্বস্তাধস্তি হয়। মিছিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আবদুস সালাম, হাবিব-উন-নবী সোহেল, সাইফুল ইসলাম নিরব, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম প্রমুখ অংশ নেন। তবে পুলিশ মিছিল ছত্রভঙ্গ করে নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকিয়ে দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে আবারও মিছিল বের করার চেষ্টা করে নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশি বাধায় তারা পারেনি।
হঠাত্ হামলায় পুলিশ : সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল গেটে অবস্থান নিয়ে শতাধিক নেতাকর্মী স্লোগানে মুখরিত করে রাখে এলাকা। দুপুর পৌনে ১টায় তাদের ওপর হঠাত্ পুলিশি হামলা শুরু হয়। কার্যালয়ের মূল গেট দিয়ে পুলিশ ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভরত নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। এতে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকম মোজাম্মেল হক, আবু হেনা, সাগর, মোহাম্মদ হোসেন, হারুন মোল্লা, আল আমিন ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, যুবদল নেতা শরীফ, মিজান, মাহমুদ, কামাল, মনিরুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী, ইসমাইল হোসেন, বেলাল, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ আহত হন। আহতদের কয়েকজনকে দ্রুত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়েই হাসপাতাল : দুপুরে হঠাত্ পুলিশি হামলার পর পুরো কার্যালয় হাসপাতালে রূপ নেয়। কার্যালয়ের ব্রিফিং রুমের টেবিলগুলোকে বিছানা বানিয়ে অন্তত ৩০ আহত নেতাকর্মীকে চিকিত্সা দেয়া হয়। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর চিকিত্সকরা তাদের চিকিত্সা দেন। এর মধ্যে কারও মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে, কারও হাত-পা জখম হয়েছে। আহতদের চিত্কারে পুরো বিএনপি কার্যালয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
রাস্তায় শুয়ে পড়েন এমপিরা : কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় বসে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপি দলীয় কয়েকজন এমপি বিক্ষোভ করছিলেন। ১২টা ৫০ মিনিটে হঠাত্ জলকামান ধেয়ে আসে তাদের দিকে। এমপিরা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে যান। পিষ্ট করলেও রাস্তা না ছাড়ার ঘোষণা দেন তারা। জলকামানের গাড়ি কোনো বাধা মানেনি। দ্রুতগতিতে ছুটে এসে লাল রঙের পানি ছোড়ে এমপিদের গায়ে। এতে বিরোধীদলীয় এমপি জয়নুল আবদিন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, নাজিমউদ্দিন আহমেদ, মোজাহার হোসেন প্রধান, হারুনুর রশীদ, রেহেনা আক্তার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, নিলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আক্তারের জামা কাপড় ভিজে রঙিন হয়ে যায়। এরপর জলকামানটি কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এলে এমপিরা প্রতিবাদে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এ সময় জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, এই যদি হয় সরকারের আচরণ তাহলে এদেশকে বিশ্ববাসী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে না। জলকামান দিয়ে এমপিদের নয়, গণতন্ত্রকেই রক্তাক্ত করা হয়েছে।
মহিলা এমপিদের মিছিল : সকাল সাড়ে ১১টায় বিএনপিদলীয় মহিলা এমপিরা হরতালের পক্ষে মিছিল বের করেন। মহিলা এমপি রেহেনা আক্তার রানু, শাম্মী আক্তার, নিলুফার চৌধুরী মনি, আসিফা আশরাফি পাপিয়া ও সাবেক এমপি সাইমুন বেগমের নেতৃত্বে মিছিলে মহিলা দলের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। তারা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। তবে মিছিলটি কিছুদূর অগ্রসর হতেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং বাবুল ও সাইফুল নামে দুজনকে আটক করে।
নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ : দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত পরিস্থিতি ছিল শান্ত। আড়াইটার দিকে নয়াপল্টন মসজিদের কাছে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। মুহূর্তের মধ্যে আবারও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে কিছুক্ষণ পর আবারও পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
মিছিলে লাঠিচার্জ, আটক ৩ : সকাল সোয়া ৯টার দিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস তার শান্তিনগর বাসা থেকে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলে অংশ নেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এম. ইলিয়াস আলী, কাজী আসাদ, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। মিছিলটি শান্তিনগর মোড়ের কাছাকাছি ইস্টার্ন পয়েন্টে গেলে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে। আটক করা হয় ৩ জনকে। এরপর বিক্ষুব্ধ কর্মীরা এ সময় একটি গাড়ি ভাংচুর করে।
মোহাম্মদপুরে লাঠিচার্জ : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লালমাটিয়া থেকে যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট খোন্দকার আবদুল হামিদ খান ডাবলুর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি টাউন হল রোডের দিকে যাওয়ার সময় র্যাব-পুলিশ বাধা দেয়।
আবদুল্লাহপুরে আটক ১২ : সকাল ১০টায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের নেতৃত্বে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় মিছিল বের হয়। মিছিলটি উত্তরা মহাসড়কে ওঠার আগেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। লাঠিচার্জে আহত হয় বেশ কয়েকজন। মিছিল থেকে ১২ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন জাসাস যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজউল্লাহ ফয়েজ, যুবদল নেতা শফিউল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হযরত আলী, সুজন প্রমুখ।
গ্রেফতার যারা : কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও লাঠিচার্জের সময় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মো. ফরিদ, বিএনপি নেতা কামাল আহমেদ, জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু হানিফ, হৃদয়, সানু বিশ্বাস, লিটন, আতিক মাস্টার, জামাল হোসেন, শাহিদুজ্জামান মাসুদ, শামীম, শফিকুল ইসলাম, আবু হেনা, মোস্তফা কামালসহ ৩৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
আহত যারা : বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিনভর বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি ও লাঠিচার্জে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা হলেন—বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, যুবদল নেতা আকম মোজাম্মেল হক, মহিলা দল ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, যুবদল নেতা মাহবুবুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন তুহিন, মনিরুল ইসলাম, মাহমুদ খান, হারুন মোল্লা, খোকন, হাফেজ সরকার, হারুন রশিদ, রেজ্জাক উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, কামাল, বেল্লাল, তুহিন, মিজানুর রহমান, একেএম গোলাম রব্বানী, জুয়েল, ফজলু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আমিনুল ইসলাম, শরীফ, আনিসুর রহমান বাদল, মো. জুয়েল, আমানউল্লাহ, কল্পন, সাইদুর রহমানসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য : ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেছেন, রোববার রাতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। যারা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে তারা ফৌজদারি আইনে অপরাধী। রাজনৈতিক পরিচয় যাই থাকুক তারা সন্ত্রাসী। হরতাল পরিস্থিতি পরিদর্শনকালে গতকাল সকাল ১১টায় মিরপুর-১০ নং চত্বরে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, পিকেটারদের প্রস্তুতি ব্যাপক থাকায় সব রকমের সতর্কতা সত্ত্বেও তারা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। অগ্নিসংযোগকারীদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ কোনো বাধা দেয়নি বলে দাবি করেন ডিএমপি কমিশনার।
পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ : মহাখালী ওয়্যারলেস গেটে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আশরাফুল আজিমের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় দুই ছাত্রসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। আহত হয়েছেন সাবেক এমপি কামরুন নাহার পুতুলসহ বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা। আটককৃতরা হচ্ছেন— যুবদল কর্মী ফরিদ, গাড়িচালক সুমন, মো. সেলিম, মো. খায়ের হোসেন, সঞ্জু, রিকশাচালক দীন ইসলাম, আক্তার। এদের মধ্যে সঞ্জু নিজেকে রিকশাচালক, দীন ইসলাম স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং আক্তার চাকরিজীবী বলে দাবি করেছেন।
হরতালের সমর্থনে সকাল থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতা ওসমান ফারুক, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান এবং জেবা রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ওয়্যারলেস গেটের কাছে রাস্তার পাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি নেতারা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে রাস্তার পাশে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন। বেলা পৌনে ১২টায় হঠাত্ গুলশান জোনের এসি আশরাফুল আজিম সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে উপস্থিত হয়ে বিএনপি নেতাদের সরে যেতে বলেন। বিএনপি নেতারা সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা অশালীন ভাষায় সিনিয়র নেতাদের গালাগাল করে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নেতাকর্মীরা সেখান থেকে সরে যাওয়ার আগেই দাঙ্গা পুলিশ নিয়ে মাস্তানি স্টাইলে নিজেই লাঠি দিয়ে হামলা চালান।
দূরপাল্লার কোনো বাস চলেনি : গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে গতকাল কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। হরতালের কারণে বাসটার্মিনালেও কোনো যাত্রীকে দেখা যায়নি। গাবতলী টার্মিনালের সোহাগ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মইনুদ্দিন জানান, গাবতলী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গে প্রতিদিন দুই সহস্রাধিক গাড়ি চলে। গতকাল একটি গাড়িও ছাড়েনি। তিনি বলেন, একটি গাড়ির মূল্য এক থেকে দেড় কোটি টাকা। গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে সরকার তো ক্ষপূিরণ দেবে না। মালিকেরই বহন করতে হবে। এজন্য কোনো মালিকই চায় না তার বড় ধরনের ক্ষতি হোক। একে ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজার বলেন, মহাখালী টার্মিনালের এসআই এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারম্যান চান মিয়া বলেন, এ টার্মিনাল থেকেও কোনো গাড়ি ছাড়েনি। তিনি বলেন, মহাখালী থেকে রংপুর, সৈয়দপুর, নওগাঁ, বগুড়া, ধনবাড়ী, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, রাজশাহীতে ৫ শতাধিক গাড়ি চলাচল করলেও গতকাল কোনো গাড়ি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি এবং ঢাকায় কোনো গাড়ি আসেনি।
মিরপুর : বেলা সোয়া ১১টার দিকে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হানিফের নেতৃত্বে হরতালবিরোধী মিছিল বের হয়। ৬০/৭০ জনের এ মিছিল থেকে হরতালবিরোধী স্লোগান দেয়া হয়। পুলিশ পাহারায় মিছিলটি টেকনিক্যাল মোড় থেকে আবার একনম্বরে গিয়ে পথসভা করে। মিরপুর ১০ নম্বরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে হরতালবিরোধী মিছিল করে। বেলা ১২টার দিকে কয়েকটি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে মিরপুর একনম্বর থেকে ১০ নম্বর গোল চত্বর এবং পল্লবী এলাকায় কয়েকটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার মহড়া দেয়। এসময় পুলিশের গাড়িও তাদের পেছনে পেছনে ছুটে যেতে দেখা গেছে। মিরপুরে কিছু যানবাহন চললেও তাতে যাত্রীর সংখ্যা ছিল খুবই কম। কয়েকটি বাস শ্রমিক লীগের লোকজন নিয়ে এলাকায় ঘোরাফেরা করেছে।
পুরান ঢাকা : গতকাল সকাল থেকে হরতাল চলাকালে পুরান ঢাকায় দুই একটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন হয়েছে। লালবাগ, আজিমপুর, চকবাজার, মিটফোর্ড রোড, বাবু বাজার, নয়াবাজার, বংশাল, সদরঘাট, কাপ্তানবাজার এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান পাটগুলো বন্ধ ছিল। তবে কয়েকটি জায়গায় হকাররা রাস্তার ওপর দোকান নিয়ে বসেছিল। রাস্তায় দুই একটি সিএনজি স্কুটার ছাড়া ইঞ্জিনচালিত গাড়ি দেখা যায়নি। তবে রিকশা চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সকাল থেকে চকবাজার টু গুলিস্তানের লেগুনা টেম্পো চলাচল করলেও দুপুরের দিকে বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একটি মিছিল বের হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে। এতে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমানসহ কয়েকজন। ছত্রভঙ্গের সময় পুলিশ ফারুক ও আসিফ নামে দুই যুবককে আটক করেছে বলে জানা গেছে।
সকাল ১০টার দিকে পুরান ঢাকা জজকোর্ট এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানায় স্থানীয় পান দোকানি জামাল উদ্দিন। তবে পুলিশ ককটেল বিস্ফোরণের কথা অস্বীকার করেছে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে লালবাগ সাতরাওজা এলাকার মাজারের সামনে থেকে যুবদলের সভাপতি কাসাদ্দেক হোসেন বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিমের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। তখন পুলিশ বাধা দিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।
সকাল ১১টার দিকে সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির উদ্যোগে হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন সূত্রাপুর থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদের সদস্য সচিব মো. তারেক জামাল। মিছিলটি দয়াগঞ্জ, স্বামীবাগ হয়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে এসে শেষ হয়।
দুপুরের দিকে বংশাল সুরিটোলা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বংশাল থানার সুরিটোলা মডেল হাইস্কুলের সামনের ওভারব্রিজের নিচে দুপুর ২টার দিকে সদরঘাটগামী তানজিল পরিবহনের বাসটিতে আগুন দেয়া হয়। ওই বাসের আগুন নেভাতে প্রায় ১৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসে। তবে তার আগেই বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। বংশাল থানার ওসি জমিরউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আগুনে কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশ ধারণা করছে, হরতাল সমর্থকরাই বাসটিতে আগুন দিয়েছে।
অপরদিকে যাত্রাবাড়ী এলাকা সকাল থেকেই ছিল থমথমে। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ছিল সক্রিয়। তারা চেষ্টা করেও দূরপাল্লা গাড়ি চালাতে পারেনি। তবে স্থানীয়ভাবে কয়েকটি গাড়ি চলতে দেখা গেছে। সকাল ৯টার দিকে ধোলাইপাড় এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের নেতৃত্বে হরতাল সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। মিছিল প্রধান সড়কের সামনে আসা মাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় কিছুক্ষণ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। তবে কোনো হতাহত হয়নি। সকাল সোয়া ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সরণিতে সাবেক কমিশনার নবী উল্লাহ নবীর নেতৃত্বে দুই থেকে আড়াশ’ কর্মী নিয়ে একটি মিছিল বের হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ঢাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরিবহন চলাচল করেনি। বহিরাগত যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেনি। পুরো ক্যাম্পাস ছিল প্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী শূন্য।
এদিকে হরতালের সমর্থনে ক্যাম্পাসে বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন প্রবেশ করতে পারেনি। তবে ক্যাম্পাসে ও এর আশপাশ এলাকায় হরতালবিরোধী বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ।
ক্যাম্পাসে হরতালের পক্ষে যে কোনো কর্মসূচি ঠেকাতে ভোর ৬টা থেকে সব প্রবেশপথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র অবস্থান নেয়। এছাড়া পুলিশও যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে।
হরতালের বিরোধিতা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌথভাবে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সকাল ও দুপুরে দফায় দফায় তারা ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে। চারুকলা অনুষদের সামনে সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতারা হরতালের কড়া সমালোচনা করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল কর্মীরা হরতালের সমর্থনে পুরনো ঢাকায় মিছিল বের করে। দুপুর ২টার দিকে হরতাল সমর্থকরা রায়সাহেব বাজার এলাকায় মিরপুরগামী তানজিল পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো জ ১১-৩১৯৫) আগুন লাগিয়ে দেয়। তবে সদরঘাটে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
সকাল ১০টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রদল কর্মীরা জজকোর্ট, রায়সাহেব বাজার এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করে। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৫ জন আহত হয়। পুলিশ গ্রেফতার করে মাসুদ ও মৃণাল নামের দুই ছাত্রদল কর্মীকে।
চট্টগ্রামে দফায় দফায় লাঠিচার্জ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সকাল থেকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা নাসিমন ভবনের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এসে জমায়েত হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির মিছিলকে ঘিরে পুলিশ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখে।
সকাল ৭টায় বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে একটি মিছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই সার্জেন্ট সিদ্দিকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মিছিলে বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করে।
খুলনায় গ্রেফতার ৩ : খুলনা অফিস জানায়, হরতাল চলাকালে রূপসা ট্রাফিক মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ করলে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মহিলা কাউন্সিলরসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। মিছিল থেকে ৩ কর্মীকে গ্রেফতার করে। দৌলতপুর ও খালিশপুরে হরতালের সমর্থনে বিএনপি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। দুপুরে হরতালের প্রতিবাদে যুবলীগ নগরীতে মিছিল বের করে। এছাড়া খুলনায় হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমার প্রধান দরজা বন্ধ ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিপণি বিতান, দোকানপাট বন্ধ ছিল। সীমিত আকারে রিকশা-ভ্যান চললেও কোনো ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল করেনি।
রাজশাহীতে গ্রেফতার ৪০ : রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহীতে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ও বিশেষ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফাসহ বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল সকালে হরতালের সমর্থনে মহানগর ও জেলা বিএনপি মিছিল বের করলে তারা আহত ও গ্রেফতার হন।
মানিকগঞ্জে গ্রেফতার ৪ : মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জে সকাল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে পুলিশ রোববার রাতে বিএনপির শ্রমিক নেতাসহ চার জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন শ্রমিক নেতা মাসুদু রানা, গোলাম কিবরিযা টিপু, নুর মোহাম্মদ ও আলীনুর হোসেন।
রাবিতে আটক ১২ : রাবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে হরতাল সমর্থকদের রাস্তায় দাঁড়াতেই দেয়নি পুলিশ। হরতালের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় সাংবাদিকসহ ছাত্রদলের কমপক্ষে ২০ নেতাকর্মী আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়কসহ কমপক্ষে ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।
ময়মনসিংহে দুই মহিলা নেত্রীসহ গ্রেফতার ৪ : ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, জেলার সর্বত্র হরতাল পালিত হয়েছে। পুলিশের তীব্র বাধার মুখে হরতালের সমর্থনে বিএনপি মিছিল করলেও দলীয় কার্যালয় এলাকা থেকে বের হতে পারেনি। তবে বিক্ষিপ্তভাবে অলিগলিতে মিছিল ও পিকেটিং করেছে। সকালে বাউন্ডারিরোডে পিকেটারদের হামলায় একটি টেম্পোর দুই যাত্রী আহত হয়। নতুনবাজার এলাকায় পিকেটিং করায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারজানা রহমান হোসনা, কোতোয়ালি মহিলা দলের সভাপতি খালেদা আতিক, গাঙ্গিনারপাড় থেকে বিএনপি কর্মী বোরহান উদ্দিন ও ভাটিকাশর থেকে ফরহাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নরসিংদীতে সাংবাদিকসহ ৩৩ জন আহত : নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের অতর্কিত হামলায় বিএনপির ২৫ নেতাকর্মী, এক সাংবাদিক ও ৭ পুলিশসহ ৩৩ জন আহত হয়েছে। সকাল ১০ টায় খোকনের বাসভবন থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল ঢাকা সিলেট মহাসড়কের দিকে যাওয়ার সময় জেলখানা মোড়ে পুলিশ বেধড়ক লাঠি চার্জ করে।
টাঙ্গাইলে আটক ৪ : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে পুলিশ ও র্যাবের ব্যাপক তত্পরতা ও নেতাকর্মী আটকের মধ্য দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। হরতালে দোকানপাট খোলেনি। বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। সকালে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এদিকে হরতাল চলাকালে ছাত্রদল ও শিবিরের চার নেতা কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের হামলা : ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, হরতালের পক্ষে পিকেটিং করার সময় ছাত্রলীগের হামলায় ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএ মজিদ গুরুতর আহত হয়েছেন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি নেতা মজিদ ঝিনাইদহ শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের একদল কর্মী তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে মামলা : মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর রোববার সন্ধ্যায় আ’লীগ ক্যাডারদের হামলা এবং অফিস ভাংচুরের পর উল্টো পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এজাহারে নাম দিয়ে এবং অজ্ঞাত আরও ৩ থেকে ৪শ’ নেতাকর্মীর নামে বিস্ফোরক এবং পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদানসহ আহত করার ঘটনায় মামলা করেছে।
কিশোরগঞ্জে গ্রেফতার ৭ : কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকেই বন্ধ ছিল দোকান পাটসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রিকশা ছাড়া সড়কপথে বন্ধ ছিল দূরপাল্লার সব যান চলাচল। তবে ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। হরতালের সমর্থনে সকালে শোলাকিয়ায় জেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে শহরের সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ছাত্রদলের একটি মিছিল পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পিকেটিংয়ের অভিযোগে পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে আটক করে।
জয়পুরহাটে গ্রেফতার ১৬ : জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, হরতালের সমর্থনে শহর প্রদক্ষিণরত বিএনপির মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোসত্মফা পুলিশের লাঠি চার্জে আহত হলে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সমর্থকদের দফায় দফায় ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া। শহরে বর্তমানে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে হরতালে নাশকতা এড়াতে জেলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ ও বিএনপি দলীয় সুত্রে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার ২ : স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ জানান, সকাল সোয়া ৮টার দিকে বিএনপি নেতা সুরুজ্জামান, হাজী শাহীন, সাজেদা খাতুন মিতা, নুরুল হক চৌধুরী দিপু, ফারুক, আবু তাহেরের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি মিছিল শহরের বোস কেবিনের সামনে থেকে বের হয়ে একশ’ গজ দূরে দুই নাম্বার রেলগেট এলাকায় পৌঁছলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। সকালে সোয়া ১০টা ও সোয়া ১১টার দিকে শহরের ডায়মন্ড সিনেমা হল এবং মর্গ্যান স্কুলের সামনে থেকে বিএনপি নেতা জান্নাতুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে মিছিল বের করার চেষ্টা করা হলে পুলিশের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় ওই মিছিল থেকে কাশেম ও জসিম নামের দুই বিএনপি কর্মীকে আটক করা হয়।
হবিগঞ্জে আহত ১০ : হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হরতালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে জেলা বিএনপির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিমকে আটক করেছে। সকাল ১০টায় হবিগঞ্জ শহরের কিবরিয়া ব্রিজ এলাকায় পিকেটিং করার সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদ করায় বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিমকে আটক করে পুলিশ।
চাটমোহরে বিএনপির ৪০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা : পাবনা অফিস জানায়, পাবনার চাটমোহরে হরতাল সমর্থনে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের হামলা, ব্যাপক লাঠিচার্জ করেও পুলিশ বিএনপির ৪০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার মামলা করেছে। এছাড়া পুলিশ এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে ।
যশোরে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত : যশোর অফিস জানায়, যশোরে শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও পুলিশি বাধার কারণে শহরে মিছিল করতে পারেনি। বিকেলে অবশ্য দলটি সমাবেশ করতে সক্ষম হয়।
মুন্সীগঞ্জে আড়িয়ল বিল এলাকায় গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড : মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জে হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। রিকশা, সাইকেল ছাড়া দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। হরতালের সমর্থনে আড়িয়ল বিল এলাকার লোকজন গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে ব্যারিকেড দেয়। সকালে হরতালের সমর্থনে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলতে দেখা যায়নি।
দিনাজপুরে মহিলাদের মিছিল থেকে আটক ৪ : দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলা মহিলা দল মিছিল করার সময় দিনাজপুর শহরের ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে বিএনপি নেত্রী সরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা সংসদ সদস্য বেগম রেজিনা ইসলাম, নবনির্বাচিত দিনাজপুর পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর শাহিন সুলতানা বিউটিসহ ২ জন মহিলা কর্মীকে পুলিশ আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়।
নোয়াখালীতে গ্রেফতার ৪ : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় মহিলাসহ অন্তত ৬ নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ এর আগে রাতে ছাত্রদল ও যুবদলের মো. ফয়সল, বেলায়েত হোসেন, বাহার ও আবদুল কাদেরসহ ৪ নেতাকর্মীকে আটক করে

No comments:

Post a Comment