Wednesday 23 February 2011

সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে অভিমত : কুশাসনের প্রতিযোগিতা দিয়ে দিনবদল সম্ভব নয়










স্টাফ রিপোর্টার
টিআইবি চেয়ারম্যান ও সুজন সহ-সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। দুঃখজনকভাবে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে দিনবদলের স্লোগান কখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ‘দিনবদলের সনদ’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। জাতীয় সংসদ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সেখানে জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় আলোচিত হয় না। সরকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বন্ধের কথা বললেও নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, প্রশাসনে চরম দলীয়করণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সরকারকে বিতর্কিত করে তুলেছে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে দিনবদলের অঙ্গীকার ও বাস্তবতা শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ড. রওনক জাহান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাসদ (জেএসডি) সভাপতি আ.স.ম. আবদুর রব, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না, সুভাষ সিংহ রায়, ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, ড. মাসুম, অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বিচার ব্যবস্থা বিশেষত বিচার বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে বলেন, দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ, যোগ্য বিচারপতিদের নিয়োগ দেয়া উচিত। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পরিবর্তনের আশা আমরা তখনই করতে পারি যখন রাজনীতির স্রোতে গুণগত পরিবর্তন যুক্ত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিল, তা দেখে মনে হয়নি দিনবদলের মতো কঠিন কাজ তারা সাফল্যের সঙ্গে করতে পারবেন। দিনবদল করতে চাইলে এমন মানুষদের নেতৃত্ব প্রয়োজন যাদের মন বড় এবং যারা চিন্তাশীল।
আ.স.ম. আবদুর রব বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে ধরনের কল্যাণকামী ও দক্ষ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন, তা আমাদের দেশে এখনও গড়ে ওঠেনি। নির্বাচিত হলে প্রতি ঘরে একজনকে চাকরি দেয়া হবে, দিনবদলের সনদের এরকম অদূরদর্শী প্রতিশ্রুতির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দিনবদলের স্লোগান কেবলই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সরকার শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, দুদক সম্পর্কিত মন্ত্রিপরিষদের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত দেশের বিচার ব্যবস্থাকে নাজুক করে ফেলবে। পুলিশ বাহিনীকে সরকারের আজ্ঞাবহ বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সংসদে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০১১ সালের মধ্যে জনগণকে সরকার সুপেয় পানি খাওয়াবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেও তার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কুশাসনের প্রতিযোগিতা দিয়ে দিনবদল সম্ভব নয় বলেও অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন সরকারের ‘রাডার’ থেকে সরে গেছে। সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে সরকার অপ্রাসঙ্গিক কিছু কূটতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে দেশে লাল বাতি-সবুজ বাতির যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। শেয়ারবাজারে যারা হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি করেছে, তারা সমাজে বীরদর্পে হেঁটে বেড়াচ্ছে। এসবের অবসান এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে দিনবদল সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

No comments:

Post a Comment