Tuesday 27 September 2011

ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে জামায়াতের দু’নেতাকে আদালতে হাজির



স্টাফ রিপোর্টার

রাজনীতি করাই তাদের অপরাধ। একটি প্রতিষ্ঠিত বড় রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়াই তাদের অপরাধ। আর এই অপরাধের জন্য একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী অপরাধীর মতোই তাদের হাতে-পায়েও পরানো হয়েছে ডাণ্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ।
জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং দলের প্রচার সম্পাদক ও সাপ্তাহিক সোনার বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অধ্যাপক তাসনীম আলমকে গতকাল সন্ত্রাসী অপরাধীর মতো ডাণ্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরিয়ে হাজির করা হয় আদালতে।
এমনকি তাদের কারাগারে রাখা হয়েছে দুর্ধর্ষ অপরাধীর মতো! তিনটি মামলায় ১৫ দিন রিমান্ড বাকি থাকা অবস্থায়ই নতুন করে রিমান্ডে নেয়ার জন্য গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে তাদের হাজির করা হয়। পুলিশ পাহারায় আদালতে হাজির করার পর বিচারকের সামনেও তারা ছিলেন ডাণ্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায়। রাজনৈতিক দলের নেতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এমন করে ভয়ঙ্কর অপরাধীর মতো ডাণ্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ পরানোর ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে আইনজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতীয় নেতাদের এভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর সংস্কৃতি চালু হলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই ব্যাহত করবে বলে তারা মন্তব্য করেন। আইনজীবীদের বিরোধিতার পরও পুলিশ কেন্দ্রীয় দুই নেতার ডাণ্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ খোলেনি।
১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা পল্টন থানার একটি মামলায় বিকাল ৩টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এটিএম আজহারুল ইসলাম ও অধ্যাপক তাসনীম আলমকে সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। আইনজীবীরা দেখতে পান, পুলিশ ভ্যান থেকে এটিএম আজহার ও তাসনীম আলমকে ডাণ্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় নামানো হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে আদালতে উপস্থিত অনেক আইনজীবী হতবাক হয়ে পড়েন। তারা বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি একাধিকবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। অধ্যাপক তাসনীম আলম সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার পরিচালক ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক। তারা উভয়ই সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তি। জনগণের সামনে তাদের হেয়প্রতিপন্ন করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে। অতীতে জাতীয় কোনো নেতাকেই এভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়নি। তাছাড়া যে মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সে মামলায় তারা আদৌ জড়িত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া মামলাটির ধারাও জামিনযোগ্য। পুলিশের কাজে বাধা, গাড়ি পোড়ানো এবং ভাংচুরের অভিযোগে কথিত এক গাড়িচালকের মামলায় পল্টন থানা পুলিশ জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করে। এ মামলায় পুলিশ তাদের রিমান্ড আবেদন করলে আদালতে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। পরে তাদের আইনজীবীরা অনুমতি নিয়ে দুই নেতার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন।
জামায়াত নেতাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন জানান, আদালতে উপস্থিত করার সময় এটিএম আজহার ও অধ্যাপক তাসনীম আলম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। এটিএম আজহারকে দেখে মনে হয়েছে, আটকের পর তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরপরও তাকে ফের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন জানান, তিনি আদালতকে বলেছেন বিরোধী দলের নেতাদের এমন করে হ্যান্ডকাফ ও ডাণ্ডাবেড়ি পরানোর যে নতুন রীতি চালু করা হলো, এর পরিণাম ভালো নয়। কেননা অতীতে এমন করে কোনো রাজনৈতিক নেতা বা সামাজিক ব্যক্তির চরিত্র হনন করা হয়নি। তিনি বলেন, ডাণ্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করছে পুলিশ। জামায়াত নেতারা তাদের আইনজীবীদের বলেছেন, কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার সময় তাদের ডাণ্ডাবেড়ি ও হ্যান্ডকাফ পরিয়েছে পুলিশ। কারাগারে সাধারণ কয়েদির মতো রাখা হচ্ছে। তবে কারাগারের ভেতরে হ্যান্ডকাফ বা ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয় না।
সূত্র জানায়, জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের পরই তাদের সঙ্গে পুলিশ দুর্ব্যবহার শুরু করে। কারাগারেও তাদের সঙ্গে দুর্ধর্ষ অপরাধী কিংবা সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। এমনকি এ দুই নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই পুলিশ তাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আটকের পরই তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। এমনকি সাধারণ ছিঁচকে অপরাধীর মতো পুলিশ ওই দুই নেতার নাম লেখা স্টিকার বুকে সেঁটে দিয়ে পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ থেকে ছবি তুলে দ্রুত তা মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাগি অপরাধী বা ভয়ঙ্কর অপরাধী ছাড়া কারা কর্তৃপক্ষ সাধারণত কাউকে ডাণ্ডাবেড়ি পরায় না। অতীতেও কারও সঙ্গে এ ধরনের ব্যবহার করা হয়নি

Wednesday 21 September 2011

আজহার-তাসনীমসহ ৪শ’ নেতাকর্মী গ্রেফতার



স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহসহ সারাদেশে প্রায় চারশ’ নেতাকর্মীকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে বিকালে সংঘর্ষ চলাকালে রাজধানী থেকে শতাধিক নেতাকর্মী এবং রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলকে
তার বাসা এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাসনীম আলমসহ ২৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহর থেকে আটক করা হয়েছে। এদিকে সন্ধ্যায় জামায়াতের পক্ষ থেকে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তাদের ৬/৭শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের দাবি করা হয়েছে। গতরাতে এটিএম আজহারুল ইসলামের বাড়িতে ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারকৃতদের পুলিশ প্রথমে রমনা থানায় ও পরে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। রমনা জোনের পুলিশ এ অভিযান চালায়।
জানা গেছে, গতরাত ৮টা ৪০ মিনিটে রমনা জোন, থানা ও ডিবির অর্ধশত পুলিশ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বাসা মগবাজারের ওয়্যারলেস গেটের এফ টাওয়ার ঘিরে ফেলে। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। একই সময় পুলিশ মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস ঘিরে ফেলে। এরপর রমনা জোনের এডিসি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এসি শিবলী নোমানের নেতৃত্বে এক প্লাটুন পুলিশ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে পুলিশ জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক মো. তাসনীম আলম ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ এবং অফিস স্টাফসহ ২৩ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে তাসনীম আলমকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তাসনীম আলম জানান, এটা অন্যায়, অমানবিক। এরপর পুলিশ তাদের রমনা থানায় নিয়ে যায়।
তাদেরকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে এডিসি নুরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত। এজন্য তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে