Tuesday 12 April 2011

শেয়ারবাজার আওয়ামী লীগ আমলে তলাবিহীন ঝুড়ি : আবারও একদিনে ৪৬০ পয়েন্ট পতন হয়েছে সূচকের










জাহেদ চৌধুরী
আওয়ামী লীগ সরকারে এলেই শেয়ারবাজার হয়ে পড়ে তলাবিহীন ঝুড়ি। সাধারণ মানুষের পকেট কাটার হাতিয়ারে পরিণত হয় এই পুঁজিবাজার। নানা প্রলোভন দেখিয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করে একপর্যায়ে সাধারণ মানুষের পুঁজি হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়ে বিশেষ সিন্ডিকেট। এরপর চলে সরকারি কোষাগারে রাখা জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ। আইসিবি ও বিভিন্ন সরকারি ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বাজার সাপোর্টের নামে সরকারি টাকা ঢালা হয় বাজারে। একসময় দেখা যায় সে টাকাও কোনো কাজে আসে না। জনগণেরই করের টাকা চলে যায় ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ গহ্বরে। এর মাধ্যমে জুয়াড়ি সিন্ডিকেট বরং দফায় দফায় এভাবে শেয়ার মার্কেট থেকে জনগণের টাকা লুটে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হয়ে পড়েন দেউলিয়া। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে প্রায় জনগণের সরাসরি পকেট কাটা শেষ হয়েছে। এখন দফায় দফায় সরকারি টাকা ঢালা হচ্ছে। সময়মত সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ায় জনগণের ট্যাক্সের টাকাও কোনো কাজে আসছে না। গতকাল একদিনেই প্রায় ৪৬০ পয়েন্ট সূচকের পতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। ২৫৫টি কোম্পানির ট্রেডিং হয়েছে। এর মধ্যে দাম কমেছে ২৪৫টির। এর অধিকাংশই নিচের সার্কিটব্রেকারে গিয়ে ঠেকেছে। গতকাল একদিনে ডিএসইতে গড় দরপতন প্রায় ৭ শতাংশ। তবে এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১০ শতাংশ করে।
শেয়ারবাজারে অতিমূল্যায়িত শেয়ারের ব্যাপারে যখন সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ছিল, তখন এ নিয়ে কেউ কিছু বলেনি। সরকার বরং অর্থনীতির ইতিবাচক দিক বলে বাহাবা নেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সাধারণ জনগণকে অতিমূল্যায়িত বাজারে বিনিয়োগে উস্কে দিয়েছে।
কেউ এ নিয়ে কথা বললে ভিন্ন চোখে সেটাকে দেখা হয়েছে। গত মে মাসে বাজার যখন তুঙ্গে, তখন আমার দেশ-এর প্রথম পাতায় ৩ কলাম শিরোনামে পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এ নিয়ে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছিলেন। দেশের অর্থনীতি নিয়ে লেখা ওই মন্তব্য প্রতিবেদনের একটি বড় অংশ ছিল শেয়ারবাজার নিয়ে। ৩০ মে আমার দেশ-এ প্রকাশিত মাহমুদুর রহমানের ওই মন্তব্য প্রতিবেদনে তিনি শেয়ারবাজার নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু পরদিনই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। তখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ৩৬শ’ পয়েন্ট থেকে কমে একপর্যায়ে মাত্র ৬শ’ পয়েন্টে ঠেকেছিল। ৭ দিনে সূচকের পতন ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। এবারও গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে সূচক কমেছে ৩ হাজার ৭১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শতকরা হিসাবে ৪০ ভাগের বেশি। ৫ ডিসেম্বর যেখানে সূচক ছিল ৮ হাজার ৯১৮ দশমিক ৫১, সেখানে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দফায় দফায় কমে গিয়ে সূচক দাঁড়ায় ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ৪৩ ভাগ। এরপর সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা আইসিবি এবং সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী ব্যাংক, সাধারণ বীমা করপোরেশন, জীবন বীমা করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনের ঘোষণা দিলে গত সপ্তাহে শেয়ারবাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সূচকও ৬ কার্যদিবসে ১৪শ’ পয়েন্ট বেড়ে গত বৃহস্পতিবার দাঁড়িয়েছিল ৬ হাজার ৬৩৯ দশমিক ১৮ পয়েন্ট। কিন্তু গতকাল একদিনেই ডিএসইতে সূচকের পতন হয়েছে ৪৫৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। কমেছে প্রায় সব শেয়ারের দাম। ৫ ডিসেম্বর যেখানে বাজার মূলধন পৌঁছেছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭১ কোটি টাকা; সেখানে এই মূলধন ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৪ কোটি ১২ লাখ টাকা কমে গিয়ে গত মাসের শেষদিনে পৌঁছেছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ৩০৭ কোটি ২৯ লাখ টাকায়। গত ক’দিনে কিছুটা বেড়ে গতকাল দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। শেয়ারবাজার থেকে কম-বেশি ১ লাখ কোটি টাকার মূলধন উধাও হয়ে গেছে। তার বড় একটি অংশই একটি সিন্ডিকেট লুটে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
’৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত কমিটি হয়েছিল। সে কমিটির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনও জনসমক্ষে আসেনি। তখন এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছিল। সে মামলাও ঝুলে আছে। তখন সরকারি দলের লোকজন জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছিল তদন্ত কমিটি। তখনকার অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন না। আর এবার শেয়ারবাজারে ধস নামার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, শেয়ারবাজার ধসের পেছনে তার ও সিএসই’র সিদ্ধান্তে বেশকিছু ভুল ছিল, সেগুলো তিনি শোধরানোর চেষ্টা করছেন। কিছুদিন আগে সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন শেয়ারবাজার তিনি বোঝেন না। প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী স্বীকারোক্তি দিলেও জনগণের পকেট কেটে যে টাকা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত বা দুর্বলতার কারণে লুট হয়েছে, তার দায় তারা কীভাবে এড়াবেন—এ প্রশ্ন উঠেছে। জনগণের পকেট কাটার পর দফায় দফায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের ট্যাক্সের টাকা আইসিবিসহ শেয়ারবাজারে ঢালার পর কিছুই বাস্কেটে থাকছে না। এজন্য শেয়ারবাজার এখন তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
অথচ শেয়ারবাজারের সূচক যখন ধাই ধাই করে ওপরের দিকে উঠছিল, তখন বার বার সরকারকে সতর্ক করে দেয়ার পরও এ নিয়ে তারা কোনো গরজ দেখায়নি। বরং বার বারই বলা হয়েছে—এটা দেশের অর্থনীতিতে ভালো লক্ষণ।
শেয়ারবাজার নিয়ে মাহমুদুর রহমান আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন : গত ১ জুন রাতে আমার দেশ কার্যালয় থেকে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। মাত্র একদিন আগে ৩০ মে ‘টাকার পাহাড় যাচ্ছে কোথায়’ শিরোনামে মাহমুদুর রহমান আমার দেশ-এ প্রকাশিত তার মন্তব্য প্রতিবেদনের একটি প্যারায় উল্লেখ করেছিলেন—‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও একটি বৈপরীত্য এখন ক্রিয়াশীল রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকেই শিল্পখাতে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে শেয়ারবাজারে দর ও মূলধন বৃদ্ধির এক অবিশ্বাস্য প্রতিযোগিতা চলছে। ১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারির সময় মূল্যসূচক সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্ট স্পর্শ করেছিল। আর এখন সেটি ৬ হাজার অতিক্রম করেছে। প্রতিদিনের লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। বছরে ২২৫ দিন শেয়ার মার্কেট খোলা থাকলে কেবল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জেই বার্ষিক লেনদেন এখন ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। শেয়ার কেনাবেচায় বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে হয়তো এবছরের মধ্যেই টাকার অংকে শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ আমাদের মোট জাতীয় আয়কে অতিক্রম করবে, যা বর্তমানে ৬ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। আমার বিবেচনায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারে এখন যা চলছে, তাকে স্রেফ জুয়া ছাড়া আর কোনো নামে ডাকার উপায় নেই। ফটকাবাজ গোষ্ঠীর কারসাজিতে সৃষ্ট এই বিশালকায় বেলুন ফুটো হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।’ মাহমুদুর রহমান আরও মন্তব্য করেছিলেন—‘এই বেলুন যখন ফুটো হবে, তখন অসংখ্য দেউলিয়া মনুষের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেউলিয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানও দেখা যাবে।’
তবে প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে মাহমুদুর রহমান যে মন্তব্যটি করেছিলেন, সেটি ছিল—‘চোখের সামনে অর্থনীতির মৌলিক তত্ত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক একটি অগ্রহণযোগ্য কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে, অথচ আমাদের সব ধীমান অর্থনীতিবিদরা নীরব।’
মাহমুদুর রহমানের আগাম সতর্কবার্তা এরই মধ্যে সত্যে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তার এ সতর্ক বার্তাকে সময়মত আমলে নিলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির দায় থেকে সরকার রক্ষা পেত। দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীও তাদের সর্বস্ব হারানো থেকে রক্ষা পেতেন।
লাখো-কোটি টাকার মূলধন উধাও : মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসই থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকার মূলধন উধাও হওয়ার পর সরকারি ব্যাংক ও আইসিবিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের ট্যাক্সের টাকা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের কয়েকটি চেষ্টাও সফল হয়নি। টাকা ঢালার পর সূচক কিছুটা বাড়ছে; আবার সপ্তাহ না ঘুরতেই সূচক পড়ে যাচ্ছে। গত ৩ মাসে অন্তত ৭ বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে প্রতিবারই আইসিবির মাধ্যমে কিছু শেয়ার কিনেছে সরকার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সর্বশেষ সরকারি পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সঙ্কট কাটাতে বাংলাদেশ ফান্ড নামে একটি ওপেন অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয় সরকারি উদ্যোগে। ফান্ডের প্রাথমিক আকার ধরা হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে পরিবর্তিত এ ফান্ডের আকার বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। সম্প্রতি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) কার্যালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৩ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান। আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন জনতা, সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ব্যাংক, সাধারণ বীমা করপোরেশন, জীবন বীমা করপোরেশন এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই এই ফান্ড গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে। ফান্ডের মোট আকারের ৫০ শতাংশ মানি মার্কেটে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। যেহেতু এটি একটি আপদকালীন ফান্ড, তাই সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে ফান্ড পরিচালনায় আলাদা সুযোগ দিতে হবে।
একদিনেই ডিএসই সূচক কমেছে ৪৬০ পয়েন্ট : অর্থনৈতিক রিপোর্টার জানান, বড় ধরনের দরপতন দিয়েই শুরু হয়েছে এ সপ্তাহের শেয়ারবাজারের লেনদেন। গতকাল একদিনেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪৫৯ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। দিনশেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭৯ পয়েন্টে। লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সব কয়টি কোম্পানির শেয়ারের বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। লেনদেনকৃত ২৫৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১০টির। বাকি ২৪৫টি কোম্পানিরই শেয়ারের বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এর আগে টানা ৬ দিন শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরবৃদ্ধির ঘটনা ঘটে।
বাজার বিশ্লেষকরা জানান, টানা দরবৃদ্ধির পর বাজারে মূল্য সংশোধন হওয়াই স্বাভাবিক। তবে যেভাবে বাজারে দরবৃদ্ধি এবং দরপতন হচ্ছে তা স্বাভাবিক নয়। তারা বলেন, যখন দর বাড়ে তখন প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ে আবার যখন পতন হয় তখন প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির মৌলভিত্তি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গতকাল সূচকের পতন দিয়ে শুরু হয় দিনের লেনদেন। কিন্তু পরবর্তী ১০ মিনিট সূচকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হলেও তা খুব একটা স্থাযী হয়নি। ফের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। শেয়ারের দর কমতে থাকায় আরও পতন হবে, এমন আশঙ্কায় শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। এছাড়া ৬ দিন টানা দরবৃদ্ধির কারণে গতকাল মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতাও ছিল বেশি। ফলে দুইবাবেই শেয়ার বিক্রির চাপ তৈরি হওয়ায় অধিকাংশ কোম্পানিই দর হারায়। তবে একদিনে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর হারানো কিংবা দরপতনের ঘটনা বাজারের জন্য স্বাভাবিক ঘটনা নয় বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এ ধরনের প্রবণতা বাজারকে আবারও অস্থির করে তুলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস ফার্স্ট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, যখন দাম বাড়ছে তখন দেখা যাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে। আবার যখন দর কমছে তখন ভালো মৌলভিত্তির এবং ক্রয়ানুকূলে রয়েছে এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারেরও দর কমছে। বিনিয়োগকারীরা হুজুগে শেয়ার কিনছেন বা বিক্রি করছেন কিন্তু কোম্পানির মৌলভিত্তি বিবেচনা করছেন না। এ ধরনের ঘটনা বাজারের জন্য ইতিবাচক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে গতকাল দরপতনের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার।
মার্চেন্ট ব্যাংকার বৃদ্ধির চিন্তা করছে সরকার : অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সংসদে বলেছেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা এবং পুঁজি তারল্য বাড়ানোর জন্য সরকার মার্চেন্ট ব্যাংকার আরও বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছে। কার্যদিবস শুরুর পর টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা জানান। মন্ত্রী জানান, পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সরাসরি বিনিয়োগের ব্যাপারে সরকার কোনো বিধি-নিষেধ আরোপ করেনি। তিনি জানান, চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে মূল্য নিরূপিত হয়। সমপ্রতি শেয়ারের চাহিদা যোগানের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই বাজারের মূল্য সংশোধনের অংশ হিসাবে শেয়ারের দরপতন হয়। তবে সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে শিগগিরই বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায়। অর্থমন্ত্রী জানান, বাজার উত্থান-পতনের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনে যদি সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর আরও শেয়ার দ্রুত পুঁজিবাজারে ছাড়ার ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। আশা করা যায়- সরকারি কোম্পানির শেয়ার অচিরেই বাজারে আসবে।
‘বাংলাদেশ ফান্ড’ গঠনে কোনো অনিশ্চয়তা নেই : আইসিবি : এদিকে গতকালের দরপতনের পেছনে একটি বার্তা সংস্থা পরিবেশিত প্রতিবেদনকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ফান্ড গঠনের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলা হয়। তবে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ গঠনের বিষয়ে কোনো রকম সংশয় নেই। তিনি বলেন, মেয়াদহীন (ওপেন এন্ড) মিউচুয়াল ফান্ডের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী উদ্যোক্তা অংশের অর্থ নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই তহবিলের কার্যক্রম শুরু হবে। এরই মধ্যে আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ এই ফান্ড গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে ফান্ডের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পরে আইসিবির পক্ষ থেকে সহযোগী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই সব প্রতিষ্ঠানকে তাদের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। ফলে পুরো বিষয়টিই খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
ডিএসইর ওয়েবসাইট বিভ্রাট : এদিকে গতকাল লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা পর ডিএসইর ওয়েবসাইটে বড় ধরনের বিভ্রাট তৈরি হয়। বেলা ১২টার পর থেকে সোয়া একটা পর্যন্ত ডিএসইর ওয়েবসাইটটি কাজ করছিল না। এতে অনেক বিনিয়োগকারী নানা ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা খায়রুজ্জামান বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসইর ওয়েবসাইট বন্ধ থাকে। লেনদেনের সঙ্গে ওয়েবসাইটের কোনো সম্পর্ক নেই। লেনদেনের জন্য ডিএসইর নিজস্ব ট্রেড সার্ভার রয়েছে। ওয়েবসাইট কাজ না করলেও লেনদেন নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। তিনি আরও জানান, ডিএসইর ওয়েবসাইটটিতে কিছুটা ধীর গতি দেখা দেয়ায় তা আপগ্রেড করতে বন্ধ রাখতে হয়েছে। ১টা ৭ মিনিটে ফের ওয়েবসাইটটি চালু হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে এসইসির সার্ভিলেন্স বিভাগের প্রধান সাইফুর রহমান বলেন, ডিএসইর ওয়েবসাইট বন্ধ থাকলেও বাজারে যথারীতি লেনদেন হয়েছে। ট্রেড সার্ভারের মাধ্যমে ডিএসইর লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে। ওয়েবসাইট বন্ধ হলেও তাতে লেনদেন কার্যক্রমে কোনো ধরনের সমস্যা নেই।


No comments:

Post a Comment