Tuesday 26 April 2011

৫৫ ভাগ কোটায় মেধাশূন্য প্রশাসন






কাদের গনি চৌধুরী

সরকারি চাকরিতে ৫৫ ভাগ কোটা চালু হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবীরা। ফলে প্রশাসন মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে দলবাজি। মাত্র ৪৫ ভাগ রাখা হয়েছে মেধা কোটা। সেখানেও আবার দলীয়করণ আর তদবির। এতে মেধাবীরা শেষ পর্যন্ত টিকতে পারছেন না প্রতিযোগিতায়। লিখিত পরীক্ষায় টিকলেও কোটার কারণে বাদ পড়ছেন মৌখিক পরীক্ষায়। পিএসসি সূত্রে জানা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদগুলোতে ৫৫ ভাগই নিয়োগ দেয়া হয় নির্ধারিত কোটা পদ্ধতিতে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা এবং উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র ও কন্যা ৩০ ভাগ, মহিলাকোটা ১০ ভাগ, উপজাতি কোটা ৫ ভাগ এবং জেলা কোটা ১০ ভাগ হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সাইদুর রহমান আমার দেশকে জানান, তিনি দু’বার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন। দু’বারই মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়েছেন। অথচ তারই আরেক ইয়ারমেট তার চেয়ে অনেক খারাপ ফলাফল করার পরও কোটার সুযোগ নিয়ে প্রথমবারই চাকরি পেয়ে গেছেন। সাইদুর তার কষ্টটা প্রকাশ করলেন এভাবে—‘তাহলে ওর চেয়ে বেশি পড়ালেখা ও ভালো রেজাল্ট করে লাভটা হলো কি?’ সাইদুরের মতো এমন অভিযোগ অনেক মেধাবীরই। সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায়ও ঘটেছে একই ঘটনা। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক প্রার্থী ৭০ নম্বর পেয়েও বাদ পড়েছেন। অথচ কোটার সুবাদে অনেকে ৬০ পেয়েই মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পেয়েছেন।
কোটা প্রথা তুলে দেয়ার দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনও করেছে ছাত্রছাত্রীরা। পিএসসিও বলছে এতে সংস্কার দরকার। এরপরও কোটা থাকছেই। এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আশরাফুল মকবুল আমার দেশকে বলেন, কোটা প্রথা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসে গেছে। দানছদকা নিয়ে আর যাই হোক প্রশাসন চালানো যাবে না।
জানা গেছে, প্রতি বছর বিসিএস-এ সাধারণত ৭ হাজার প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত যেতে পারে। এই হিসাবে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রার্থী থাকার কথা ২১০০ জন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, মৌখিক পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মধ্য থেকে যেতে পারে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ জন। অথচ মেধা কোটায় ৭ হাজারের মধ্যে ৬ হাজার গেলেও জেনারেল ক্যাডারে চাকরি হয় মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ জনের। ২৯তম বিসিএসে ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৪৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এদের মধ্যে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় ৭২১৭ জন প্রার্থী পাস করে। ১৭ আগস্ট থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষায় ৬৫২৩ জন প্রার্থী অংশ নেয়। অনুপস্থিত ছিল ৬৯৪ জন। এদের মধ্যে ৫০৬২ জন চূড়ান্তভাবে পাস করলেও ক্যাডার পদে নিয়োগ পাচ্ছে মাত্র ১৭২২ জন। পিএসসি সূত্রে জানা যায়, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও শূন্য পদের সংখ্যা কম থাকায় সবাইকে বিসিএস ক্যাডার পদে সুপারিশ সম্ভব হয়নি। অথচ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় লোক না পাওয়ায় ৫৩৮টি পদ খালি থাকছে। এছাড়া উপজাতি ১১১ ও মহিলা কোটায় ৮১টি পদ পূরণ করা যাচ্ছে না। মোট অপূরণকৃত পদের সংখ্যা ৭৯২টি। ২৮তম বিসিএসেও ঘটেছে একই ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধার
সন্তানদের নির্ধারিত কোটায় পূরণ হয়েছে শতকরা ১৯ ভাগ। বাকি ১১ ভাগ এখনও পূরণ হয়নি। ভ্যাট ও রাজস্ব অধিদফতরে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য জানুয়ারিতে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এতে ১৫২টি পদের কথা উল্লেখ করা হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাশেষে ফল প্রকাশিত হয় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শতকরা ৩০ ভাগ হিসাবে ১৫২ জনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান থাকার কথা ৪৫ জন। অথচ পাওয়া গেছে মাত্র ৪ জন। ৪১টি খালি রয়েছে। শতকরা ৫ ভাগ হিসেবে ৭ জন উপজাতির মধ্যে প্রার্থী ছিল না একজনও। সব মিলিয়ে নিয়োগ হয়েছে ১০৪ জনের, আর ৪৮টি পদ পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ২০১০ সালে ২৬২৭ জন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৭৩৭টি পদ। অথচ পর পর ৩ বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাত্র ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া গেছে। বাকি ৭১৯টি পদ খালি থাকার পরেও কাউকে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না।
আগে সরকারি চাকরির যে নীতিমালা ছিল সেখানে বলা ছিল মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা কিংবা উপজাতি কোটায় লোক পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে তা পূরণ করা যাবে। কিন্তু ২০১০ সালে সরকার যে আইন পাস করেছে তাতে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে পদ খালি থাকবে। নতুন নিয়মের কারণে বিসিএসসহ সব চাকরির ক্ষেত্রে হাজার হাজার পদ খালি থাকছে অথচ সেখানে মেধাবীরা সুযোগ পাচ্ছেন না ।
সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের ঠাঁই না হওয়ায় সরকারি কর্মকমিশনও উদ্বিগ্ন বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান। পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনেও উদ্বেগের কথা ফুটে উঠেছে। সর্বশেষ পিএসসির ২০০৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা নীতিমালা প্রয়োগে জটিলতার কথা উল্লেখ করে এ পদ্ধতি সরলীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের ২০০৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংসদকার্যে সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা, মহিলা, উপজাতি প্রাধিকার কোটাসমূহ জাতীয় পর্যায়ে বণ্টন করা যেতে পারে। অর্থাত্ প্রাধিকার কোটাসমূহকে পুনরায় জেলা/বিভাগভিত্তিক ভাগ করা যাবে না বা জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্য পদের সর্বোচ্চ সংখ্যা দ্বারা সীমিত করা যাবে না। এ ধরনের কোটার পদসমূহ জাতীয়ভিত্তিক নিজস্ব মেধাক্রম অনুযায়ী কোটায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা যেতে পারে। কোটা বণ্টনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিশন মনে করে, বর্তমান কোটা সংক্রান্ত নীতিমালার প্রয়োগ অত্যন্ত জটিল, দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ। প্রচলিত পদ্ধতির জটিলতার কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবিধ ক্যাডার, প্রার্থীদের বিবিধ চাকরির পছন্দক্রম এবং বিবিধ কোটার সঙ্গে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের জন্য আরোপিত সংখ্যাগত সীমা এমন একটি জটিলতার সৃষ্টি করেছে, যার নির্ভুল সমাধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন মনে করে, বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বর্তমানে প্রচলিত কোটা প্রয়োগ পদ্ধতির সরলীকরণ অপরিহার্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বল্প সময়ে নির্ভুলভাবে বিসিএস পরীক্ষাসহ নন-ক্যাডার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করতে কোটা প্রয়োগ পদ্ধতি সহজ করা প্রয়োজন। অন্যথায় কোটা প্রয়োগ সংশ্লিষ্ট জটিলতা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান আমার দেশকে বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে র্বতমানে যে ৫৫ শতাংশ প্রাধিকার কোটা রয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থী বলে আমি মনে করি। কারণ, সংবিধানে মেধাবীদের চাকরি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে। কিন্তু তা কোনোভাবেই মেধা কোটার বেশি হতে পারে না। তাই পিএসসি যে সুপারিশ করেছে অর্থাত্ ৫০ শতাংশ মেধা ও ৫০ শতাংশ প্রাধিকার কোটার মাধ্যমে চাকরির নিয়োগ দিতে হবে, তা খুবই যৌক্তিক। তিনি বলেন, কোটার ব্যাপারে ভারতের সুপ্রিমকোর্টের একটি রুলিং রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোটা ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ১৯৭২-৭৩ সালে যখন কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল তখন দেশে জেলার সংখ্যা ছিল মাত্র ১৭টি। র্বতমানে ৬৪ জেলা হওয়ায় তা বিন্যাস করা খুবই দুরূহ। এর পরিবর্তে বিভাগ হিসেবে আঞ্চলিক কোটা প্রবর্তন করা হলে অপেক্ষাকৃত বেশি মেধাবীরা চাকরির সুযোগ পাবেন।
কোটা ব্যবস্থার অসঙ্গতি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায়ও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ড. আকবর আলি খান এবং সাবেক সচিব কাজী রকিবুদ্দিন আহমাদ ২০০৮ সালের মার্চ মাসে ‘কোটা সিস্টেম ফর সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট : এন এক্সপ্লোরেটার’ শীর্ষক একটি গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন। ওই গবেষণায় সংবিধান, বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা এবং অন্য দেশের তুলনামূলক অবস্থা পর্যালোচনা করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বিদ্যমান অধিকাংশ কোটাকে সংবিধান ও ন্যায়নীতির পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই গবেষণায়ও বলা হয়েছে, মেধার ভিত্তিতে মাত্র শতকরা ৪৫ জনকে নিয়োগ সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধান বৈষম্যহীনতার কথা বলেছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রম হিসেবে (যেমন, সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য) কোটাকে অনুমোদন করেছে। ব্যতিক্রমী নিয়োগ (শতকরা ৫৫ ভাগ) কখনও সাধারণ নিয়োগের (শতকরা ৪৫ লাভ) চেয়ে বেশি হতে পারে না। পিএসসি এ গবেষণাকর্মটি তাদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছিল।
এতে বলা হয়, সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদ নাগরিকদের ‘অনগ্রসর অংশের’ জন্য চাকরিতে বিশেষ কোটা প্রদান অনুমোদন করেছে। কিন্তু সংবিধান ‘অনগ্রসর অঞ্চলের’ জন্য কোনো কোটাকে অনুমোদন করে না। ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুসারে এ ধরনের কোটার সুবিধা ভোগ করে অনগ্রসর অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত বিত্তবান ও সচ্ছল শ্রেণী, যাদের অবস্থা অন্যান্য অঞ্চলের অনেক মানুষের চেয়ে উন্নত। ফলে জেলা কোটার সাংবিধানিক ভিত্তি সন্দেহজনক।
গবেষণায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই উল্লেখ করে বলা হয়, এই কোটা কেবল তখনই যৌক্তিক হবে যদি প্রমাণ করা যায় যে, মুক্তিযোদ্ধারা নাগরিকদের মধ্যে অনগ্রসর অংশ। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এই কোটার ভিত্তি আইনগতভাবে আরও দুর্বল। নারী ও উপজাতি কোটার ব্যাপারে গবেষণায় বলা হয়, সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে নারী ও উপজাতিদের জন্য কোটা সংরক্ষণ আইনসম্মত ও বৈধ। গবেষণাপত্রে বলা হয়, কোনো কোটাই চিরস্থায়ী হওয়া উচিত নয় এবং প্রতিটি কোটার প্রয়োজনীয়তা সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করা উচিত।
ড. খান ও রকিবের গবেষণা অনুসারে ১৯৭৭ সালে তত্কালীন পে ও সার্ভিস কমিশনের প্রায় সব সদস্য সরকারি নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতা করেন। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র এম এম জামান কোটার পক্ষে অবস্থান নিলেও প্রচলিত কোটাসমূহ প্রথম ১০ বছর বহাল রেখে ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে দশম বছরে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন। অথচ ১৯৯৭ সালেই এই কোটাব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারিত করা হয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এর আওতাভুক্ত করে। মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের জন্য সংরক্ষণ করা নানা বিবেচনায় একটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত ছিল।
কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাদবাকিদের ওপর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৫ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী দুই লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ ২১ হাজার ৩১৮ জন (গড় খানার আকার ৪ দশমিক ৮৫ ধরে)। সে হিসাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানসন্ততির সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশের কম। এদের জন্য মোট শূন্যপদের ৩০ ভাগ সংরক্ষণ সমানুপাতিক নয়, যৌক্তিকও নয়। তা ছাড়া এই কোটা সংরক্ষণের কারণে একদিকে যেমন মেধাতালিকায় শীর্ষস্থানীয় একজন চাকরি থেকে বঞ্চিত হন, অন্যদিকে মেধাতালিকায় অধিকাংশের নিচে থেকেও কারও কারও গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি হয়ে যায়। ফলে সার্বিকভাবে দেশ মেধাবী আমলাদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
তাছাড়া ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা হয় তারা যেন চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ পান। সে কারণে তাদের বয়সের ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করে ৩২ করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের অবদান ও বিড়ম্বনার কথা বিবেচনা করে এটি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বয়সের ঊর্ধ্বসীমার শিথিলতা স্বাধীনতার এক কিংবা দেড় দশক পর জন্ম নেয়া তাদের সন্তানের বেলায় প্রয়োগের কোনো যুক্তি নেই। এ প্রসঙ্গে আরো বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মধ্য থেকে উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে তাদের জন্য নির্ধারিত পদসমূহ শূন্য রাখায় প্রশাসনিক সচলতাও ব্যাহত হচ্ছে। ২৮তম বিসিএসে পেশাগত ও কারিগরি ক্যাডারে বিভিন্ন কোটায় ৮১৩টি পদের জন্য কোনো যোগ্য প্রার্থীই পাওয়া যায়নি। ফলাফল প্রকাশের এক মাসেরও কম সময় আগে পরিবর্তন করা আইনের কারণে পিএসসি কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে এই পদগুলো শূন্য রেখে দিতে। অথচ কোটাহীন শত শত মেধাবী চিকিত্সক, প্রকৌশলী উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি।
ড. আকবর আলি খানের রিপোর্টে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখানো হয়েছে, এ সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত ৩০ ভাগ কোটার খুব সামান্যই পূরণ হয়েছে। যেমন ২১, ২২ ও ২৫তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, এই বিসিএসগুলোতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত কোটার যথাক্রমে মাত্র ১০ দশমিক ৮, ২ দশমিক ২ ও ৫ দশমিক ২ ভাগ পূর্ণ হয়েছে। আর এই বিশাল সংখ্যার পদ অপূর্ণ থেকে যাওয়ার মূল কারণ হলো কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিংবা অন্যান্য কোটায় উপযুক্ত প্রার্থীর স্বল্পতা

No comments:

Post a Comment