Tuesday 26 April 2011

আইন প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন সবাই রাজাকার : বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী










স্টাফ রিপোর্টার

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ চেয়ারম্যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আজ অনেকেই বড় বড় কথা বলছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় তাদের পাওয়া যায়নি। সরকার একজনকে আইনের হাফ মন্ত্রী বানিয়ে রেখেছে। এই আইন প্রতিমন্ত্রী আইনের ‘অ’ জানেন কিনা সন্দেহ। তার আত্মীয়স্বজন সবাই রাজাকার ছিল। এখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের একজন মন্ত্রী—দলে থাকলে মুক্তিযোদ্ধা না থাকলে রাজাকার।
গতকাল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দলের বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীরপ্রতীক) পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, দেশের এক-দশমাংশ এই পার্বত্য চট্টগ্রাম আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অংশ থাকবে কিনা এ সন্দেহ এখন আমার মনে দানাবেঁধে উঠেছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হাছান চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরীন কাদের চৌধুরী প্রমুখ। এতে সারা বাংলাদেশের শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন। সভায় জানানো হয়, বর্ধিত সভায় আলোচনার ভিত্তিতে এ বছরই দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেয়া হবে।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ বারবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গোটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলে এখন ৫০ টাকা কেজি চাল খাওয়াচ্ছে। এ ধরনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়ার কারণে আজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর কোনো সম্মান নেই। রাস্তার ফকিরও তাদের জঘন্য ভাষায় গালি দেয়।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের অবস্থা এখন ভালো নয়। সবকিছুই বিশৃঙ্খলায় ভরে গেছে। প্রতিদিন নারীর সম্মানহানি হচ্ছে। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন নারীর প্রতি অসম্মান করেছে তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আজ প্রতিনিয়ত যে নারীর সম্মানহানি হচ্ছে এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারছি না।
মহাজোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেদিন আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী এরশাদের সঙ্গে জোট করেছে সেদিনই আওয়ামী লীগের সম্মান চলে গেছে। গণতন্ত্রী এবং স্বৈরাচার এখন এক সঙ্গে বসে সরকার চালাচ্ছে। এতে করে ডা. মিলন, নূর হোসেনের আত্মা শান্তি পাচ্ছে!
লন্ডন প্রবাসী কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সম্পর্কে তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর যে অত্যাচার করেছে— আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এদেশের মানুষের সঙ্গে তার চেয়েও বেশি অন্যায় করেছে কলমের মাধ্যমে। স্বাধীনতার পর তিনি বঙ্গবন্ধুকে যাচ্ছেতাই বলেছেন। আর আমি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলায় সেই আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের বেয়াকুবরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক বানিয়ে তাকে ছোট করতে চাইছে। তার সম্মান হানি করতে চাইছে। আমি বেঁচে থাকতে জাতির জনককে ঘোষক হতে দেব না।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নয়— পপুলার হওয়ার জন্য তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলছে।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন একটি অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শান্তিবাহিনী নামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দাবি ছিল সেখান থেকে বাঙালিদের প্রত্যাহার করা। কিন্তু শান্তিচুক্তিতে বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় সরকার এটা করতে পারছে না। সবমিলিয়ে দেশের এক-দশমাংশ এই পার্বত্য চট্টগ্রাম আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অংশ থাকবে কিনা এ সন্দেহ এখন আমার মনে দানাবেঁধে উঠেছে।
তিনি বলেন, দেশ এখন বিপজ্জনক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেড় বছর পর দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুত্ এবং গ্যাস সঙ্কটের কারণে বিক্ষোভের আগুন জ্বলবে। ‘দেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে’— দুই বছর আগে এমন কথা বলে দেশবাসীকে নাচানো হয়েছে। সে গ্যাসের কোনো হদিস এখন নেই। এখন সরকার গ্যাস-বিদ্যুত্ সমস্যার কথা বলে দেশবাসীকে নাচাচ্ছে। এই সমাধানের প্রতিশ্রুতিও কার্যত ভুয়া।
নাসরীন কাদের সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার কথা বলেছিল। কিন্তু এখন প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত সব শ্রেনীর মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তিনি দলকে শক্তিশালী করার জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান।

No comments:

Post a Comment