Friday 7 January 2011

বাংলাদেশের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক



জাকির হোসেন

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ), ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক এবং যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নেতিবাচক ও হতাশাব্যঞ্জক মন্তব্য করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বেসরকারি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভাব, ব্যবসা-বাণিজ্যে বাধা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি মন্থর বলে জানিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্টেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উচ্চ হারকে উদ্বেগজনক হিসেবে বলা হয়েছে।
বিশ্বে বহুল পরিচিত যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির কান্ট্রি প্রোফাইল সিরিজে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে এবং গত কয়েক বছরে কয়েকশ’ লোক নিহত হয়েছে। বিরোধী দলের সভা সমাবেশ এবং জনসভার ওপর হামলা করা হয়েছে। এসব হামলা বিরোধীদলীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও লক্ষ্য করে করা হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের ওপর আক্রমণ বিশেষ উদ্বেগের সঞ্চার করেছে এবং পুলিশ হেফাজতে থাকা বন্দিদের ওপর শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সংকর জাতীয় শ্রেণীতে রাখা হয়েছে। এই সূচকে চারটি শ্রেণী আছে। সর্বোত্তম হলো পূর্ণ গণতন্ত্র। তারপরে ত্রুটিযুক্ত গণতন্ত্র। এরপর সংকর জাতীয় সরকার এবং চতুর্থ বা শেষ ধাপ হলো স্বেচ্ছাচারী সরকার। এ বছর ইআইইউ গণতন্ত্র সূচকে সর্বোচ্চ বিভাগে ২৬টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩টি, তৃতীয় ধাপে ৩৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫টি দেশ রয়েছে। এই তালিকায় ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম। আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশ অল্প কয়েক ধাপ এগিয়েছে। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্রিডম হাউস ২০১০ সালের শুরুতে ২০০৯-এর যে সূচক প্রকাশ করেছিল তাতে নাগরিক অধিকারের (সিভিল লিবার্টি) ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৭ এর মধ্যে ৪ এবং রাজনৈতিক অধিকারে ৭ এর মধ্যে ৩ পেয়েছিল। সেজন্য সংস্থাটি বাংলাদেশকে আংশিক মুক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। ফ্রিডম হাউসের এই সূচকে সবচেয়ে কম অর্থাত্ এক নম্বর পেলে গণতন্ত্রের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো আছে বলে ধরা হয়।
সংবাদপত্র জগত্ সম্পর্কে ফ্রিডম হাউসের ফ্রিডম অব প্রেস তালিকায় বাংলাদেশের রেটিং ছিল ৬৩তম অবস্থান। এ কারণে ফ্রিডম হাউস ২০০৯ সালে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে স্বাধীন নয় শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করে।
এদিকে ইন্টারনেটে প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক’-এ বাংলাদেশ সরকারকে অযোগ্য এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি অংশে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নিম্নমানের অবকাঠামো, দুর্নীতি, অপ্রতুল বিদ্যুত্ সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের ধীরগতি সত্ত্বেও দেশটির অর্থনীতি ১৯৯৬ সাল থেকে বছরে শতকরা ৫ থেকে ৬ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ এখনও একটি দরিদ্র, অতিরিক্ত জনসংখ্যায় ভারাক্রান্ত এবং অযোগ্যভাবে শাসিত দেশ হয়ে রয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্টে বলেছে, ২০০৯ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি যেখানে শতকরা ৭ ছিল ২০১০ অর্থবছরে এ হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এই সময়ে মূল্যস্ফীতি মার্চ, এপ্রিল (২০১০) ছাড়া প্রত্যেক মাসে বেড়েছে এবং জুন মাসে (২০১০) তা ৮ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছে। এই সময়ে পল্লী অঞ্চলে খাদ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় শতকরা ১০ দশমিক ৪ ভাগ। আর নগরাঞ্চলে জুন মাসে (২০১০) খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি শতকরা ১২ মাত্রায় উঠে যায়। ২০১০ সালে ঢাকায় মোটা চালের যে দাম ছিল তা ২০০৯ সালের তুলনায় শতকরা ৫০ ভাগ বেশি।
এরই মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন ও বিশ্বব্যাংকের ‘ডুই বিজনেস’ প্রকল্পের ‘ইজ ডুইং বিজনেস’—ব্যবসার সুবিধা রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১০৭তম স্থানে রয়েছে। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টস বুকে (২০০৯) বাংলাদেশে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণকে জিডিপির মাত্র ২৮ দশমিক ২ ভাগ বলে দেখানো হয়েছে

No comments:

Post a Comment