Friday 7 January 2011

বিরোধী দলকে নির্যাতন ছাড়া সরকারের সফলতা নেই : উচ্ছিষ্টভোগীদের দিয়ে প্রেসক্লাব কলঙ্কিত করা হচ্ছে : এম কে আনোয়ার




স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত মহাজোট সরকারের দুই বছর, সঙ্কটের আবর্তে বাংলাদেশ ও আমাদের করণীয় শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, এই দুই বছরে সরকারের কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য নেই। তবে বিরোধী দলকে নির্যাতনেই শুধু তাদের সফলতা রয়েছে। তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান, আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে একের পর এক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়র এমপি। গোলটেবিলে প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান ফারুকের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া। অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, এনপিপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন নিলু, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব জেবেল রহমান গনি, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিএনপির নির্বাহী সদস্য রফিক সিকদার, শ্রমিক নেতা বাহাউদ্দিন মোহন, বিএনপি নেতা হাফীজুর রহমান কবীর প্রমুখ।
এম কে আনোয়ার বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের লোক দিয়ে একটি উচ্ছিষ্টভোগী সমাজ তৈরির চেষ্টা করছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। ভোটগ্রহণ, গণনা এবং ফলাফল ঘোষণা মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের ওইসব উচ্ছিষ্টভোগীরা ফলাফল তাদের নিজেদের পক্ষে নিতে না পেরে কতিপয় সাংবাদিক দিয়েই প্রেস ক্লাবকে কলঙ্কিত করছে। নির্বাচন নিয়ে মামলা করেছে। জিডি করেছে।
এম কে আনোয়ার বলেন, দুই বছরে সরকারের কোনো সাফল্য নেই। তবে বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের নামে নির্যাতন চালানোতে তাদের সফলতা রয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সাফল্যের বুলি আওড়াচ্ছেন। সরকার দেশের সবগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অকার্যকর করে রেখেছে অভিযোগ করে আনোয়ার বলেন, জাতীয় সংসদ ও মানবাধিকার কমিশন অকার্যকর। দুর্নীতি দমন কমিশনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সরকার কাজ করতে দিচ্ছে না। তারা বিচার বিভাগের ওপর চাপ সষ্টি করছে।
খাদ্যে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি দাবি করে সাবেক এই কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে জনগণের কাছে মিথ্যাচার করছে। গত ছয় মাসে সরকার বিদেশ থেকে ২৫ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করেছে। পাবনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুল, ভাংচুর ও সরকারি কর্মকর্তাদের মারধরের ঘটনায় ছাত্র ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের খালাস দেয়া হয়েছে। এভাবে দেশে একদলীয় অপশাসন অতীতের সব দুঃশাসনকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত এক বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সাংবাদিক নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আনোয়ার বলেন, একদিকে নির্যাতন, হত্যা, গুম চলছে অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষার দিকটি লক্ষ্য রাখতে। তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রশ্ন—কোনটি সঠিক?
এম কে আনোয়ার বলেন, এই সরকার দেশকে ভারতের করদরাজ্য বানানোর জন্য কাজ করছে। তারা ট্রানজিট দিয়েছে, করিডোর দিয়েছে, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে আপত্তি করছে না। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নয় বরং মুখ্যমন্ত্রী হবার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ’৯৬ সালে যখন শেখ হাসিনা কোলকাতা গিয়েছিলেন তখন তাকে মুখ্যমন্ত্রী বলা হয়েছিল। কিন্তু তখন কেউ এর কোনো প্রতিবাদ করেননি। তাই এখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হবার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। তাছাড়া ভারতের বহু মানুষ বাংলাদেশকে এখন আর স্বাধীন সার্বভৌম মনে না করে অঙ্গরাজ্য মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচার ছাড়া বর্তমান সরকারের কোনো সফলতা নেই। এই সরকারের প্রতিটি স্তরে মিথ্যাচার চলছে। ১০ টাকা কেজি চাল ও বিনামূল্যে সার দেয়ার কথা বলে এখন তা অস্বীকার করছে।
এম কে আনোয়ার বলেন, সরকারের দুঃশাসন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তারা ভূরিভূরি ওয়াদা দিয়ে ক্ষমতায় এলেও জনগণের সমস্যার কোনো সমাধান করেনি। বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান হয়নি।
জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, এই সরকারের দুই বছরের সফলতার মধ্যে রয়েছে সংসদকে অকার্যকর করা, কথায় কথায় মামলা দেয়া আর নিজেদের খুনের মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া। এ পর্যন্ত সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সাড়ে ৬ হাজার মামালা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির কাজ ভারত প্রায় শেষ করে আনলেও এই সরকার প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমাদের করণীয় হলো, জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে এই সরকারের পতন ঘটানো।
মূল প্রবন্ধে এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেন, এই সরকারের সফলতার ভাগ শূন্যের কোঠায়। জাতি এক সঙ্কটকালে পতিত হয়েছে। রাজনীতিতে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিরোধী দলকে তারা মাঠেই নামতে দেয়নি। এই সরকার আমার দেশ বন্ধ করেছে, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করেছে। সাংবাদিকদের খুন ও নির্যাতন করেছে

No comments:

Post a Comment