Saturday 29 January 2011

অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে গণবিদ্রোহ হতে পারে : অলি : বিরোধী দমনে সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ : দ্রব্যমূল্য ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ : ৩৫ বছরেও এত বেশি দুর্নীতি হয়নি



চট্টগ্রাম ব্যুরো

মহাজোটের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এক বিশেষ সাক্ষাত্-কারে বলেছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিমাতাসুলভ ও অসহিষ্ণু আচরণ করা হচ্ছে। বিরোধী দলকে দমন করার জন্য সরকারের মধ্যে এক ধরনের প্রতিহিংসা ও অস্থিরতা কাজ করছে। সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ফলে জনগণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। সঠিক সময়ে এই বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গণবিদ্রোহ দেখা দিতে পারে।
কর্নেল (অব.) অলি সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য এবং সম্মেলনের আগে ও পরে আমার দেশকে দেয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে এসব কথা বলেন।
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। বর্তমানে নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। জনগণের দুর্ভোগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে কখনও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হতে থাকলে নিম্নআয়ের কর্মচারী, শ্রমিক, দরিদ্র ভূমিহীন ও ক্ষুদ্র কৃষকদের অনাহারে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অনেক সমস্যা রয়েছে। সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিতে হবে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্নেল (অব.) অলি বলেন, গত এক বছরে ৪৩৬টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭৫ জন নিহত ও ৭ হাজার ১০৩ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৫৭৬টি ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৯২টি ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ৩৮ জন নিহত ও ৫৬১৪ জন আহত হয়েছে। বিএনপির ৭ জন নিহত ও ১১৪৬ জন আহত হয়েছে। গত বছরে ১৩৩ জন বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। গণপিটুনীতে নিহত হয়েছে ১২৮ জন। নিখোঁজ ও গুপ্ত হত্যার ঘটনা আতঙ্কজনক। ১৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা সংস্থার হেফাজতে ২০১০ সালে মারা গেছেন ১১০ জন। গত বছর ৬২৫ জন নারী ধর্ষিত হয়েছে। ধর্ষণের পর ৭৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অপমান সইতে ও প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ২০ জন। বিগত বছরে সর্বমোট ৪১৬২টি হত্যা ও ৮৭১টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে।
বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কট সম্পর্কে কর্নেল (অব.) অলি বলেন, বিদ্যুত্ ও গ্যাসের অবস্থা ভয়াবহ। গ্যাসের অভাবে সার কারখানা, বিদ্যুত্ ও শিল্প কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুত্ সঙ্কট নিরসনে গত দু’বছরে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। চুক্তির পর চুক্তি করেও বাড়েনি বিদ্যুত্। অযোগ্য ও অসত্ লোক দিয়ে এ ধরনের কঠিন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে কর্নেল (অব.) অলি বলেন, প্রতিদিন দেশে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি বাড়ছে। বিগত ৩৫ বছরেও দেশে এত বেশি দুর্নীতির ঘটনা ঘটেনি। দুর্নীতি বন্ধের নেই কোনো পদক্ষেপ। সরকার আইন সংশোধন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করেছে বিধায় বিচার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। দুর্নীতির ব্যাপারে টিআইবি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর সরকার ও বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব দেখিয়েছেন। এতে সরকারের একনায়কত্বসুলভ আচরণ প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে। সরকারের উচিত ছিল টিআইবির তথ্য কাজে লাগিয়ে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন করা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। তা না করে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অহঙ্কারীর পতন অপরিহার্য। আত্মঅহঙ্কার আল্লাহ কখনও সহ্য করে না।
জনশক্তি রফতানি, শ্রমবাজার ও রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে কর্নেল (অব.) অলি বলেন, মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলোর ব্যর্থতার কারণে ধীরে ধীরে শ্রমবাজার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর দখলে চলে যাচ্ছে। নানামুখী কূটনৈতিক তত্পরতা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ মন্ত্রীদের সফরের পর সৌদিআরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করা যায়নি। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যাগুলো নিরসন হয়নি। বরং সরকারের অর্থ অপচয় হয়েছে। তিনি বলেন, যেখানে ২০০৮ সালে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন বিদেশে যায় সেখানে ২০০৯ সালে গিয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২২৮ জন, ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩ জন। ফলে বিদেশে জনশক্তি রফতানি হ্রাস পাওয়ায় প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সের উপরে। ২০১০ সালে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ৬৯ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। অথচ ২০০৯ সালে রেমিট্যান্স ছিল ৭৩ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা।
রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে কর্নেল (অব.) অলি বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার যে কটি সুপারিশ করেছে তার সবকটি সরকারদলীয় সমর্থকদের। আবার এমন মামলাও প্রত্যাহার করা হয়েছে যেসব মামলার বাদী-বিবাদী কেউ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এভাবেই দুর্নীতি, খুন, ডাকাতের অনেক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে অবনতি ঘটছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির।
কর্নেল (অব.) অলি বলেন, ২০১১ সাল বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। তাই অহঙ্কারী ও সবজান্তা মনোভাব পরিহার করতে হবে। সব ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। অন্যথায় যা হওয়ার তাই হবে

No comments:

Post a Comment