Wednesday 23 November 2011

যুদ্ধাপরাধের বিচার : নিউইয়র্ক টাইমস ও হেরাল্ড ট্রিবিউনের নিবন্ধ: বিচারের নামে প্রতিহিংসা কি-না প্রশ্ন

ডেস্ক রিপোর্ট

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে চলমান বিচারের ফলাফল নিষ্পত্তিমূলক হবে না কি বিচারের নামে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্রিটিশ আইনজীবী জন কামেহ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই আইনজীবী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমের বেশকিছু মারাত্মক ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরে সর্বজনীন ন্যায়বিচার ও দায়িত্বশীলতার পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন। বিশ্বের অন্যান্য স্থানে এ ধরনের বিচারে যেসব আদালত স্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর মানদণ্ডও এখানে অনুসৃত হচ্ছে না বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
মানবাধিকার আইনজীবী কামেহ বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসের মতামত কলামে এক প্রতিবেদনে বলেন, গত ২০ বছরে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং বেশিরভাগ লোক এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে। হেগের (নেদারল্যান্ড) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং সিয়েরা লিওন, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে এখন সবাই বুঝে ফেলেছে যে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধকারী রাজনীতিবিদ ও যুদ্ধবাজেরা শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না। জন কামেহ’র এই প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে।
সিয়েরা লিওনে যুদ্ধাপরাধ আদালতে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ আইনজীবী ব্যারিস্টার কামেহ ওই প্রতিবেদনে বলেন, বাংলাদেশে এমন এক বিচার হচ্ছে যা যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালাকে বিদ্রূপ করছে। বস্তুত, এটা সর্বজনীন ন্যায়বিচার ও দায়িত্বশীলতার প্রতি ভয়াবহ হুমকি সৃষ্টি করছে। অস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ প্রবীণ নেতার মানবতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে (অপরজন বিএনপির নেতা)। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ঘটনার জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী তখন নৃশংস কার্যক্রম চালিয়েছিল। কিন্তু সেটা স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াতের মতো কোনো রাজনৈতিক দলের অপরাধ প্রমাণ করে না। ৪০ বছর আগের একটি সংঘাতের জন্য বিচার শুরু করার আগে পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত ছিল বলে তিনি জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশের বর্তমান বিচার কার্যক্রমে সে রকম কিছু হচ্ছে না। এই আদালতে সর্বজনীন নীতিমালা অনুসরণের কথা বলা হলেও অন্যান্য দেশে এ ধরনের যেসব ট্রাইব্যুনাল কাজ করেছে, এখানে সেগুলোর বিপরীত কাজ করা হচ্ছে। নাম বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলেও সেখানে বহির্বিশ্বের কিছু নেই, কারণ সেগুলো সেখানে গ্রহণ করা হয় না।
কামেহ বলেন, অভিযুক্ত পক্ষ যে কয়েকজন ব্রিটিশ আইনজীবীর সহায়তা চেয়েছিলেন, আমি তাদের একজন ছিলাম। আমি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আইনজীবী নিযুক্ত হয়েছিলাম। গত মার্চে আমি একবারই ঢাকায় যেতে পেরেছিলাম, সেখানে নিরাপত্তা সংস্থার লোকজন আমার পিছু নেয়। বিচার কার্যক্রমে আমাকে বা অন্য কোনো ব্রিটিশ আইনজীবীকে অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না বা তাদের বাংলাদেশেও যেতে দেয়া হচ্ছে না।
যেকোনো দিক থেকে বিশ্লেষণ করলেই এই বিচার কার্যক্রমের বিচ্যুতিগুলো প্রকটভাবে দেখা যাবে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ও সাক্ষীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, সাঈদীর একজন আইনজীবীকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে মামলা পরিচালনা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চলছে। তাকে গ্রেফতারেরও হুমকি দেয়া হয়েছে। আরেকজন খ্যাতিমান আইনজীবীর বিরুদ্ধে ঢাকায় এক দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ ওই ঘটনার সময় তিনি ইউরোপে ছিলেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও জানায়, বিবাদীপক্ষের একজন প্রধান সাক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আরও ৯টি ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

No comments:

Post a Comment