Tuesday 31 May 2011

সংবিধান সংশোধন কমিটিতে আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সুপারিশ : বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা যাবে না








সংসদ রিপোর্টার

সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল না রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন আওয়ামীপন্থী কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। তাদের মতে, সংবিধানের চার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ বিষয়গুলো রাখা যাবে না। দু’একজন বুদ্ধিজীবী আবার রাষ্ট্রধর্মের বিরোধিতা করলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বহাল রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। এদিকে বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংশোধনের জন্য দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিবর্তন বা সংশোধন একটি রাজনৈতিক সমঝোতা। এ বিষয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দল একমত না হয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা অর্থবহ হবে না; বরং এতে সংঘাত-সংঘর্ষ আরও বাড়বে। কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাব দেন। একজন বুদ্ধিজীবী বিতর্ক এড়াতে সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
গতকাল সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেশের এসব বুদ্ধিজীবী তাদের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। বিশেষ কমিটির সভাপতি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে ১১টার দিকে এ সভা শুরু হয়ে দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে ২৬ জন বুদ্ধিজীবীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের মধ্যে ১৯ জন কমিটির সামনে তাদের মতামত তুলে ধরেন। বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সংশোধন, রাষ্ট্রধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, সংবিধানের মূলনীতি, বিচার বিভাগের জবাবদিহিতা, মৌলিক অধিকার, সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও জাতির জনকের নাম অন্তর্ভুক্তি, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের ভোটদান, নারী আসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বুদ্ধিজীবীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান, সাবেক উপদেষ্টা এএসএম শাহজাহান, টিআইবি চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সদস্য সচিব ড. বদিউল আলম মজুমদার, সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, কবি সৈয়দ শামসুল হক, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানিক) নেতা শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান অংশ নেন। বিশেষ কমিটির আমন্ত্রণ পেলেও অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ড. অজয় রায়, সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও কলামিস্ট মাহফুজউল্লাহ অংশ নেননি।
কবীর চৌধুরী : বৈঠক থেকে বেরিয়ে আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম এবং ধর্মীয় রাজনীতি সংবিধানে থাকতে পারে না। তিনি ’৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ সংবিধান থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও ধর্মের অপব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দেন। তিনি মৌলিক অধিকারের বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলেছেন বলে জানান।
কবীর চৌধুরী জানান, বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আজ মিশ্র প্রস্তাব এসেছে। অনেকে বলছেন এই ব্যবস্থার দরকার নেই। অনেকে বলেছেন দুই মেয়াদের পর এই বিধান উঠিয়ে দেয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ।
আকবর আলি খান : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এটি একটি রাজনৈতিক সমঝোতা। এটার জন্য বড় দুটি রাজনৈতিক দল একমত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে কোনো লাভ হবে না বরং সংঘাত আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সমঝোতা করে সংশোধন করা উচিত। এ সরকারের মেয়াদ ৯০ দিন নিয়ে কোনো প্রশ্ন না থাকলেও তাদের বাজেট প্রণয়নের ক্ষমতার পথ বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচন পদ্ধতি বলতে যা আছে তাতে জালিয়াতি হয়। এতে সঠিকভাবে জনমত প্রতিফলিত হয় না। এজন্য কী ধরনের নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতাই নেই। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা হওয়া উচিত। তার মতে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি যদি প্রধানমন্ত্রীর কোনো সুপারিশে একমত না হন তবে তা পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর বিধান রাখার প্রস্তাব করেছি।
রেহমান সোবহান : আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রয়োগসীমার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার কথা বলেছি। তার মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব উপদেষ্টা নির্দলীয় না হোক অন্তত নিরপেক্ষ হতে হবে।
সুলতানা কামাল : অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে রেহমান সোবহানের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি মানুষের পূর্ণ আস্থা নেই। এ অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবে যতদিন এটা বহাল থাকছে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মনোনীত করতে হবে। প্রধান বিচারককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তার মতে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের ভোটদানের ক্ষেত্রে বাজেট সংক্রান্ত এবং অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি বাদ রেখে বাকি বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবার দরকার আছে। তিনি বলেন, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেয়ার বিধান যুক্ত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ : সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সংবিধানে জাতির জনক ও ঘোষকের নাম যুক্ত করা উচিত নয়। এ বিষয়টি যাতে না থাকে সেজন্য কমিটির কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তিনি জানান, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তার মতে, স্পর্শকাতর বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে অন্যদের ইস্যু তৈরির সুযোগ যেন না দেয়া হয়। মুজিবনগর সরকারের ওই দিনটি সংবিধানে থাকলেই চলে। আমি বলেছি, এমন কোনো বিধান রাখা যাবে না যাতে পরবর্তী সরকার এসে তা পরিবর্তন করতে পারে। এছাড়া তিনি সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের সমর্থনের স্থলে তিন-চতুর্থাংশ রাখার প্রস্তাব করেছেন।
আবুল মকসুদ বলেন, সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানোর বিরোধিতা করেছি। মনোনয়ন বাড়িয়ে সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছি।
আসিফ নজরুল : অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল তার প্রস্তাবে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল চালু রাখার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম এক সঙ্গে থাকতে পারে না। তাই আমি বলেছি, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা হলে রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে, অবশ্যই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ থাকা উচিত। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অতিমাত্রায় ক্ষমতা ভোগ করছে মন্তব্য করে আসিফ নজরুল তার প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলেন। তিনি বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে ’৭২ সালের সংবিধানের বিধান হুবহু প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদের মতামত নেয়ার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। তিনি বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি সংসদে উত্থাপনের বিধান রাখার প্রস্তাব দেন।
সৈয়দ শামসুল হক : আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী কবি সৈয়দ শামসুল হক বলেন, রাষ্ট্রধর্ম, বিসমিল্লাহ ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাহাত্তরের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এগুলো সংবিধানে রাখা যাবে না। দুই জেনারেল (জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ) সম্পূর্ণ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এটা ছিল তাদের মতলবি কাজ। এখন সেটা করার তো দরকার নেই। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৭২-এর সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম বাদ রেখে যদি নিজেকে মুসলমান প্রমাণ করতে পারেন তবে এখন কিসের সমস্যা?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ সব মৌলিক অধিকার সংবিধানে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন। এ বিষয়টি নিয়ে কমিটির কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ৭০ অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান আরও নমনীয় করা দরকার বলে আমরা জানিয়েছি।
তিনি রাষ্ট্রধর্মের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, কোনো বিশেষ ধর্মকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হলে স্বাভাবিকভাবেই বৈষম্যের সৃষ্টি হবে।
আরেফিন সিদ্দিক : অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক সংবিধান সংশোধনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রস্তাব সমর্থন করেছেন বলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের জাতীয় দলিল। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহন করে। তাই এই বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কমিটিতে অভিমত দিয়েছি। এছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্ধারিত ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে সংসদ পুনরুজ্জীবিত করে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি তিনি ৭ মার্চের ভাষণকে সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব করেন।
ড. মিজানুর রহমান : ড. মিজানুর রহমান সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, ওই অনুচ্ছেদে লেখা আছে—কোনো নাগরিকের প্রতি অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করা যাবে না। এই বিষয়টির সঙ্গে যদি এটি লঙ্ঘন করা হয় তাহলে ওই ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য এটা অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে আমি মত দিয়েছি।
এবিএম মূসা : প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়েছে। এই খণ্ডকালীন সরকারকে নির্দলীয় বলা হলেও ‘নিরপেক্ষ’ কোথাও উল্লেখ নেই। এই বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছি।
শাহরিয়ার কবির : আওয়ামী লীগকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে বিশেষ কমিটির বৈঠকে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী ও ঘাদানিক নেতা শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেছেন, সংশোধিত সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ রাখার প্রস্তাব দিয়ে দলটি (আওয়ামী লীগ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। বৈঠকে শাহরিয়ার কবির উত্থাপিত ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালত ৫ম সংশোধনী বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে আদি সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণভাবে পুনঃস্থাপিত হয়েছে। ৫ম ও ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ যুক্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, ওই সংশোধনী দুটি ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যার সঙ্গে ইসলামপ্রীতির কোনো সম্পর্ক নেই।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : আওয়ামী বুদ্ধিজীবী সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও রাষ্ট্রধর্মের বিরোধিতা করে বৈঠকে বলেন, একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান আর অন্যদিকে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে রাখা সাংঘর্ষিক। তাছাড়া রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান করলে সেটা সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হবে। তিনি বলেন, সংবিধান শুধু বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক আর বিশিষ্টজনদের জন্য নয়; এর মালিক জনগণ। তাই এটি সংশোধনের আগে তাদের মতামত নেয়ার সুপারিশ করেছি।
এম হাফিজউদ্দিন আহমদ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন আহমদ জানান, একমাত্র তিনিই সবার মতের বিরুদ্ধে প্রস্তাব রেখেছেন। তিনি বলেন, ওই তিনটি (বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ও ধর্মভিত্তিক দল) বিষয়ে আমি তাদের সঙ্গে (বিশেষ কমিটির আমন্ত্রিত) একমত, বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এগুলোর বিরুদ্ধে বলেছিও। কিন্তু বৈঠকে এবার জানিয়েছি, এখন সংশোধনীতে এসব বাদ দিলে নতুন করে গণ্ডগোল লাগবে, অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ‘বাস্তবতা’ বিবেচনায় বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ও ধর্মভিত্তিক দলের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়ার কথা জানান এম হাফিজউদ্দিন।
আজ সম্পাদকদের মতামত : আজ সকালে বিশেষ কমিটি দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করবে। বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে ২০টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদককে মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যেসব পত্রিকার সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেগুলো হলো—প্রথম আলো, আমার দেশ, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, দৈনিক ইত্তেফাক, ইনকিলাব, দিনকাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন, নয়া দিগন্ত, মানবজমিন, আমাদের সময়, জনকণ্ঠ, সমকাল, খবর, ডেইলি স্টার, নিউ নেশন, নিউএজ, ইনডিপেন্ডেন্ট, যায়যায়দিন, সংবাদ, ডেসটিনি, ভোরের কাগজ, নিউজ টুডে ও ডেইলি সান।
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটি সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে। ২৫ এপ্রিল প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানায় কমিটি। তবে বিএনপি ওই বৈঠকে অংশ নেয়নি

No comments:

Post a Comment