Sunday 1 August 2010

আমার দেশ-এর ছাপাখানা খুলে দেয়া হয়েছে



স্টাফ রিপোর্টার
অবশেষে দুই মাস বন্ধ রাখার পর দৈনিক আমার দেশ-এর ছাপাখানা গতরাতে খুলে দিয়েছে পুলিশ। হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের আদেশের সার্টিফাইট কপি পাওয়ার পরও দৈনিক আমার দেশ-এর ছাপাখানা খুলে না দেয়ায় রোববার আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। ঢাকার জেলা প্রশাসক ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তাকে দায়ী করে দৈনিক আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়। আদালত অবমাননার অভিযোগটির বিষয়ে আজ শুনানি হওয়ার কথা।
এ অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা থেকে আমার দেশ অফিসকে প্রেস খুলে দেয়ার কথা জানালে পত্রিকার সাংবাদিক-কর্মচারীরা খুশি হয়ে থানায় যান। এর পর পুলিশ সেখানে গিয়ে সিলগালা খুলে দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিল্পাঞ্চল থানার এসআই শাহ মোহাম্মদ আহাদ হোসেন রাত ৯টায় থানায় রাখা চাবি দিয়ে তালা খুলে দেয়। মুহূর্তেই আনন্দ ধ্বনি দিয়ে আমার দেশ-এর ছাপাখানায় প্রবেশ করেন এবং আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন। উল্লেখ্য, আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে আমার দেশ-এর একটি প্রতিনিধিদল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় গিয়ে প্রেস খুলে দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু থানার সেকেন্ড অফিসার কালাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ওসি ওমর ফারুক থানায় না আসায় তারা প্রেস খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। যে মামলার ওপর ভিত্তি করে প্রশাসন এ ব্যবস্থা নিয়েছে সে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আহাদ হোসেনও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে থানায় চিঠি পৌঁছানোর কথা স্বীকার করেন। আমার দেশ-এর প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতে সেকেন্ড অফিসার থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাননি বলে জানান।
গত ১ জুন রাতে একটি প্রতারণার মামলার জের ধরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন ছাড়াই জোর করে আমার দেশ-এর ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়। পরে ভোররাতে পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও পরদিন আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বাতিলের চিঠি পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। মাহমুদুর রহমানকে ছাপাখানার রক্ষক হিসেবে সরকারের বৈধ নিয়োগ থাকা ও সেটা ঠিক রেখেই পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের অজুহাতে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জোরপূর্বক পুলিশ ছাপাখানা বন্ধ রাখে। ১০ জুন হাইকোর্ট আমার দেশ-এর ডিক্লারেশন বাতিল ও মাহমুদুর রহমানকে প্রকাশক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার চিঠি দু’টির কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। তখনও পুলিশ নানা অজুহাতে ছাপাখানা খুলে দেয়া থেকে বিরত থাকে। বাধ্য হয়ে অন্য ছাপাখানা থেকে তখন পত্রিকা প্রকাশ করতে হয়। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এ জাতীয় আদেশের ক্ষেত্রে আইনজীবী সার্টিফাইড কপি গ্রহণযোগ্য হলেও পুলিশ সেটাকে আমলে নেয়নি। পরবর্তীতে হাইকোর্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্টিফাইড কপি থানায় পৌঁছালে তখনও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ ছাড়া প্রেসের সিলগালা খোলা যাবে না বলে টালবাহানা করে। এ অবস্থায় ১৫ জুন চেম্বার জজ ৪ সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করলে পত্রিকার ছাপা আবারও বিঘ্নিত হয় এবং ছাপাখানা খুলে দেয়া থেকে পুলিশ বিরত থাকে। গত ১৮ জুলাই আপিল বিভাগের রায়ে আমার দেশ পুনরায় প্রকাশিত হতে শুরু করে। তখনও জেলা প্রশাসন ও পুলিশ আইনজীবীর সার্টিফাইড কপি দেখিয়ে ছাপাখানা খুলে দিতে রাজি হয়নি। গত ২৭ জুলাই আপিল বিভাগের আদেশ চূড়ান্ত হওয়ার পরদিন ২৮ তারিখে সার্টিফাইড কপি জেলা প্রশাসক ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় পৌঁছে। কিন্তু এরপরও পুলিশ প্রশাসন আমার দেশ-এর ছাপাখানা খুলে দেয়নি। সর্বশেষ ২৯ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী আমার দেশ-এর ছাপাখানা খুলে দেয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পরও পুলিশ আমার দেশ-এর ছাপাখানা খুলে দেয়নি। এরই মধ্যে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ছাপাখানা খুলে দেয়ার জন্য উকিল নোটিশও পাঠানো হয়। কিন্তু কিছুতেই তারা কর্ণপাত করেনি। এতদিন ছাপাখানা পুলিশ অন্যায়ভাবে জোর করে বন্ধ রাখার ফলে লাখ লাখ পাঠকের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তাদের কাছে আমার দেশ পৌঁছানো সম্ভব। কর্তৃপক্ষ বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/08/02/37006

No comments:

Post a Comment